দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ‘মোটামুটি ভালো’ অবস্থায় আছে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা । আইএমএফ এর এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ
দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিলম্বিত আইএমএফ এর ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির সঙ্গে পঞ্চম কিস্তির অর্থ জুন মাসে একসঙ্গে ছাড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উভয়পক্ষের সমঝোতারভিত্তিতে’ আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের পরের দুই কিস্তি ছাড় করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা তাদের বলেছি, এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না। তারাও সাজেস্ট করেছে, আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার।’
আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হল অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভঙ্গি আরও সঙ্কুচিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
আগে বলা হয়েছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি এর বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে আইএমএফ। তবে সেই সভা ১২ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন।
ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বরে আইএমএফ মিশনের সফর শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজনৈতিক পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ধীর হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই। অর্থপাচার বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ বের হওয়া চাপে পড়েছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় কমার বিপরীতে সরকারি ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। এগুলোর চাপ পড়েছে আর্থিক খাতে। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসার আভাস দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ‘মোটামুটি ভালো’ অবস্থায় আছে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আইএমএফ এর পরের কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সরকার ‘মরিয়া’ হয়ে নেই।’
সব শর্ত একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু কাজ আছে। আমরা তাড়া করছি না। অনেকে মনে করছে, আমরা সব ভিক্ষা করে নিয়ে আসছি, টাকা পয়সা। আমরা কিন্তু সব নিয়ম কানুন, শর্ত মেনে কাজ করছি। তারা বললেই যে সব হবে তা না, আমরা কিন্তু সরকার। আমরা আমাদের মতো করে করবো, আমরা বলেছি সব একসঙ্গে করতে পারব না।’
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিটেন্স ভালো। এমন না যে, মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ এর অর্থটা পেতে। আমরা বলেছি, আমরা একটু অপেক্ষা করব। একসঙ্গে দুটো কিস্তি পাবে জুনে। তাহলে অঙ্কটা বড় হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত আছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। চলতি হিসাব ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে সরকারকে ঋণ করতে হয়। তখন স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ণ শুরু হয়। আমদানি খরচ বেড়ে যায়। গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত আছে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের এই সময়ে যা ছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ‘মোটামুটি ভালো’ অবস্থায় আছে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা । আইএমএফ এর এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিলম্বিত আইএমএফ এর ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির সঙ্গে পঞ্চম কিস্তির অর্থ জুন মাসে একসঙ্গে ছাড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উভয়পক্ষের সমঝোতারভিত্তিতে’ আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের পরের দুই কিস্তি ছাড় করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা তাদের বলেছি, এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না। তারাও সাজেস্ট করেছে, আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার।’
আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হল অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভঙ্গি আরও সঙ্কুচিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
আগে বলা হয়েছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি এর বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে আইএমএফ। তবে সেই সভা ১২ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন।
ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বরে আইএমএফ মিশনের সফর শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজনৈতিক পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ধীর হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই। অর্থপাচার বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ বের হওয়া চাপে পড়েছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় কমার বিপরীতে সরকারি ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। এগুলোর চাপ পড়েছে আর্থিক খাতে। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসার আভাস দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ‘মোটামুটি ভালো’ অবস্থায় আছে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আইএমএফ এর পরের কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সরকার ‘মরিয়া’ হয়ে নেই।’
সব শর্ত একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু কাজ আছে। আমরা তাড়া করছি না। অনেকে মনে করছে, আমরা সব ভিক্ষা করে নিয়ে আসছি, টাকা পয়সা। আমরা কিন্তু সব নিয়ম কানুন, শর্ত মেনে কাজ করছি। তারা বললেই যে সব হবে তা না, আমরা কিন্তু সরকার। আমরা আমাদের মতো করে করবো, আমরা বলেছি সব একসঙ্গে করতে পারব না।’
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিটেন্স ভালো। এমন না যে, মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ এর অর্থটা পেতে। আমরা বলেছি, আমরা একটু অপেক্ষা করব। একসঙ্গে দুটো কিস্তি পাবে জুনে। তাহলে অঙ্কটা বড় হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত আছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। চলতি হিসাব ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে সরকারকে ঋণ করতে হয়। তখন স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ণ শুরু হয়। আমদানি খরচ বেড়ে যায়। গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত আছে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের এই সময়ে যা ছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।