আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে এসির (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র) ব্যবহার ২৫ ডিগ্রি রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সে এলাকায় লোডশেডিং করা হবে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কার্য অধিবেশনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে একটি ‘ভঙ্গুর’ অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছে মন্তব্য করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য পরিশোধে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সবরকম আয়োজন নিয়েছি।’ শীতকালে সারাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মে সেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট। এই যে চাহিদাটা বেড়ে যাওয়া তার অন্যতম দুটো কারণ হচ্ছে সেচ ও এসির ব্যবহার বা কুলিং লোড।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। কিন্তু এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।’
‘কুলিং লোড’ কমাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন প্রত্যেকটা মসজিদে তারাবির সময় এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিসেও এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হবে।’
গ্যাস সংকটের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কূপ খনন করা হচ্ছে। যেখান থেকে অল্প অল্প করে উৎপাদন বাড়ছে। এ ছাড়া গ্যাসের অবৈধ যেসব সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এতেও কিন্তু ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।’
এ ছাড়া এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ‘যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা যেন’ পাওয়া যায় সে বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিন্তু সক্ষমতার অভাব নেই, অভাব হলো জ্বালানির।’
বর্তমানে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হয় উল্লেখ করে জা্বলানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সেক্ষেত্রে কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কী পরিমাণে, কত দামে বিদ্যুৎ কেনা হবে, সে বিষয়ে একটি মানদ- ঠিক করা হবে।’
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে কিংবা আরও অন্যান্য আইনি যেসব ব্যবস্থা আছে, সেসব আমরা গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এসি ঢাকা শহর বা জেলা শহরের নয়, সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। আমাদের এসির লোড পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনি যদি ২৫ বা তার ওপরে এসি চালান, তাহলে আমরা দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করতে পারব।
এসি ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নেই জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু এটা ২৫ বা তার বেশি ডিগ্রিতে রাখতে হবে। সচিবালয়ের জন্যও একই। কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি আধা সরকারি চিঠি দিচ্ছি যেন সচিবালয়ে এটা করা হয়। কারণ এনফোর্সমেন্টটা শুরু হতে হবে আমাদের ঘর থেকেই।’
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমি বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাব; বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানাব, যেন তারা রমজান ও গ্রীষ্মে এসির বিষয়টা দেখেন।’ এসির তাপমাত্রায় নজরদারির কৌশল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও আমাদের যেগুলো ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আছে, প্রত্যেকটার একাধিক মনিটরিং টিম থাকবে; তারা দেখবে। আমরা বুঝতে পারব কে কীভাবে ব্যবহার করছে। যেসব লাইনে আমরা দেখব বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেগুলোয় আমরা লোডশেডিং করব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি বাধ্য হই কোনো কারণে লোডশেডিং দিতে, তাহলে আমরা আগেই জানিয়ে দেব। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা শহর এবং গ্রামের মধ্যে পার্থক্য করব না। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব জায়গায় আমরা সমানভাবে লোডশেডিং করব।’
চিকিৎসক ও গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা করের আওতায় আসছেন:
জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যেসব ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত আয় করেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না সেসব ব্যবসায়ী ও চিকিৎসককে ট্যাক্সের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার সকালে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক ও আইনজীবীরা যে ফি নেন সেটা রসিদ বা ‘ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে’ এনে তাদেরও করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সরকার চিকিৎসক ও আইনজীবীদের অর্থের (ফি বা ভিজিট) হিসাব নেবে জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসিদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকরা রোগীদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় করেন, তার কোনো রসিদ দেয়া হয় না। তাদের আদায়ের অর্থ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে ডিসি সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে।
চিকিৎসকদের কাছ থেকে পাকা রসিদ আদায়ের কথা বলেছেন উপদেষ্টা। এ জন্য তাদের লেনদেন ডিজিটাল করা যায় কিনা, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকরা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের যেমন রিসিট দেন না, আইনজীবীরাও মক্কেলদের এমন কিছু দেন না। সেই বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, আইনজীবীদের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করার নির্দেশ:
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
তিনি সোমবার ডিসিদের সঙ্গে পৃথক কার্য অধিবেশনে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘অনেক ডিসি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জেলা প্রশাসকদের মধ্য থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তারা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান।’
কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন হয়েছে। জামুকার যে আইনটি ছিল, তারা সেটিতে সংশোধনী আনছেন।’
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার নিরিখে এই সংশোধনী আসছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংশোধনী আসার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদও পুনর্গঠিত হবে। সংসদ পুনর্গঠিত হলে প্রত্যেক জেলায় জেলায় আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করবো। যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারবো তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
মাঠপর্যায়ের প্রকল্প .িনবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা তাদের পর্যবেক্ষণ সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সেগুলো তারা শুনেছেন। যেগুলো তাৎক্ষণিক তাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার, সেটি তাদের দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আর যেসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেগুলো ‘নোট করে’ নেয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। তাদের চাহিদামতো স্থানীয় পর্যায়ে যে পুনর্বাসন কার্যক্রম, কাবিখা ইত্যাদি বিষয়ে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বলা হয়েছে।’
এই বরাদ্দের নিরিখে যেসব প্রকল্প গ্রামীণ অবকাঠামোতে গ্রহণ করা হবে সেগুলো যাতে যথাযথভাবে হয় সেটি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করার জন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান ত্রাণ উপদেষ্টা।
এ ছাড়া গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো রকমের বৈষম্য যাতে সৃষ্টি না হয় সে সম্পর্কে ডিসিদের ‘সতর্ক’ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা স্থানীয়পর্যায়ে এই বিষয়গুলো খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং আমাদের জানাবেন।’
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে এসির (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র) ব্যবহার ২৫ ডিগ্রি রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সে এলাকায় লোডশেডিং করা হবে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কার্য অধিবেশনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে একটি ‘ভঙ্গুর’ অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছে মন্তব্য করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য পরিশোধে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সবরকম আয়োজন নিয়েছি।’ শীতকালে সারাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মে সেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট। এই যে চাহিদাটা বেড়ে যাওয়া তার অন্যতম দুটো কারণ হচ্ছে সেচ ও এসির ব্যবহার বা কুলিং লোড।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। কিন্তু এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।’
‘কুলিং লোড’ কমাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন প্রত্যেকটা মসজিদে তারাবির সময় এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিসেও এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হবে।’
গ্যাস সংকটের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কূপ খনন করা হচ্ছে। যেখান থেকে অল্প অল্প করে উৎপাদন বাড়ছে। এ ছাড়া গ্যাসের অবৈধ যেসব সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এতেও কিন্তু ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।’
এ ছাড়া এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ‘যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা যেন’ পাওয়া যায় সে বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিন্তু সক্ষমতার অভাব নেই, অভাব হলো জ্বালানির।’
বর্তমানে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হয় উল্লেখ করে জা্বলানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সেক্ষেত্রে কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কী পরিমাণে, কত দামে বিদ্যুৎ কেনা হবে, সে বিষয়ে একটি মানদ- ঠিক করা হবে।’
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে কিংবা আরও অন্যান্য আইনি যেসব ব্যবস্থা আছে, সেসব আমরা গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এসি ঢাকা শহর বা জেলা শহরের নয়, সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। আমাদের এসির লোড পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনি যদি ২৫ বা তার ওপরে এসি চালান, তাহলে আমরা দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করতে পারব।
এসি ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নেই জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু এটা ২৫ বা তার বেশি ডিগ্রিতে রাখতে হবে। সচিবালয়ের জন্যও একই। কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি আধা সরকারি চিঠি দিচ্ছি যেন সচিবালয়ে এটা করা হয়। কারণ এনফোর্সমেন্টটা শুরু হতে হবে আমাদের ঘর থেকেই।’
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমি বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাব; বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানাব, যেন তারা রমজান ও গ্রীষ্মে এসির বিষয়টা দেখেন।’ এসির তাপমাত্রায় নজরদারির কৌশল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও আমাদের যেগুলো ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আছে, প্রত্যেকটার একাধিক মনিটরিং টিম থাকবে; তারা দেখবে। আমরা বুঝতে পারব কে কীভাবে ব্যবহার করছে। যেসব লাইনে আমরা দেখব বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেগুলোয় আমরা লোডশেডিং করব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি বাধ্য হই কোনো কারণে লোডশেডিং দিতে, তাহলে আমরা আগেই জানিয়ে দেব। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা শহর এবং গ্রামের মধ্যে পার্থক্য করব না। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব জায়গায় আমরা সমানভাবে লোডশেডিং করব।’
চিকিৎসক ও গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা করের আওতায় আসছেন:
জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যেসব ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত আয় করেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না সেসব ব্যবসায়ী ও চিকিৎসককে ট্যাক্সের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার সকালে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক ও আইনজীবীরা যে ফি নেন সেটা রসিদ বা ‘ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে’ এনে তাদেরও করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সরকার চিকিৎসক ও আইনজীবীদের অর্থের (ফি বা ভিজিট) হিসাব নেবে জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসিদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকরা রোগীদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় করেন, তার কোনো রসিদ দেয়া হয় না। তাদের আদায়ের অর্থ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে ডিসি সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে।
চিকিৎসকদের কাছ থেকে পাকা রসিদ আদায়ের কথা বলেছেন উপদেষ্টা। এ জন্য তাদের লেনদেন ডিজিটাল করা যায় কিনা, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকরা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের যেমন রিসিট দেন না, আইনজীবীরাও মক্কেলদের এমন কিছু দেন না। সেই বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, আইনজীবীদের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করার নির্দেশ:
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
তিনি সোমবার ডিসিদের সঙ্গে পৃথক কার্য অধিবেশনে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘অনেক ডিসি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জেলা প্রশাসকদের মধ্য থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তারা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান।’
কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন হয়েছে। জামুকার যে আইনটি ছিল, তারা সেটিতে সংশোধনী আনছেন।’
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার নিরিখে এই সংশোধনী আসছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংশোধনী আসার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদও পুনর্গঠিত হবে। সংসদ পুনর্গঠিত হলে প্রত্যেক জেলায় জেলায় আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করবো। যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারবো তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
মাঠপর্যায়ের প্রকল্প .িনবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা তাদের পর্যবেক্ষণ সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সেগুলো তারা শুনেছেন। যেগুলো তাৎক্ষণিক তাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার, সেটি তাদের দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আর যেসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেগুলো ‘নোট করে’ নেয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। তাদের চাহিদামতো স্থানীয় পর্যায়ে যে পুনর্বাসন কার্যক্রম, কাবিখা ইত্যাদি বিষয়ে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বলা হয়েছে।’
এই বরাদ্দের নিরিখে যেসব প্রকল্প গ্রামীণ অবকাঠামোতে গ্রহণ করা হবে সেগুলো যাতে যথাযথভাবে হয় সেটি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করার জন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান ত্রাণ উপদেষ্টা।
এ ছাড়া গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো রকমের বৈষম্য যাতে সৃষ্টি না হয় সে সম্পর্কে ডিসিদের ‘সতর্ক’ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা স্থানীয়পর্যায়ে এই বিষয়গুলো খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং আমাদের জানাবেন।’