গুলশানে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের প্রাক্তন স্ত্রীর বাসায় ঢুকে তল্লাশির নামে ‘লুটপাট’ চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন -সংবাদ
মধ্যরাতে ‘মব’ তৈরি করে ঢাকার গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় ঢুকে তল্লাশির নামে ‘মালামাল তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টার’ নেপথ্যে ওই ভবনের সাবেক তত্ত্বাবধায়কের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের এ ঘটনায় ভবনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক শাকিল আহমেদ (২৮), জুয়েল খন্দকার (৪৮) এবং তার ছেলে শাকিল খন্দকার (২৪) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে।
তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রী গুলশান-২ নম্বরে (শাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে) ৮১ নম্বর সড়কের ৮আই নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তানভীর ইমামের সঙ্গে তার এই স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ২৫ বছর আগে।
শাকিল আহমেদ নামের ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে কিছু লোক জড়ো করে ভবনটি ঘেরাও করেন। ভবনের একটি ফ্ল্যাটে তানভীর ইমামের কয়েকশ’ কোটি টাকা রাখা আছে, এমন তথ্যা দিয়ে সেখানে তল্লাশি চালাতে উসকানি দেন শাকিল। ভবনে ‘অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীরা’ লুকিয়ে আছে এমন অভিযোগও তোলা হয়। শাকিলসহ কিছু লোক রাত ১২টার পর ওই ভবনে প্রবেশ করেন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পুলিশ যায়। রাত দেড়টার দিকে যান সেনা সদস্যরা। ততক্ষণে ভবনটির একটি ফ্ল্যাটের ভেতরে সবকিছু তল্লাশির নামে তছনছ করে ফেলা হয়।
প্রেস উইংয়ের বক্তব্য
বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছেন, গুলশানের ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়েন। তারা তল্লাশির অজুহাতে বাসায় ঢুকে মালামাল তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করেন।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান
জোনের পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি), থানার ওসি ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে শাকিল আহমেদ একসময় ওই বাসায় কেয়ারটেকারের (তত্ত্বাবধায়ক) কাজ করতেন। তিনিই মূলত জনতাকে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে, এমন তথ্যা দিয়ে বাসায় তল্লাশি চালাতে উসকানি দেন।
প্রেস উইং থেকে আরও বলা হয়, এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকেও একই অজুহাতে একদল জনতা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
*স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা*
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মর্মে আবারও সতর্ক করছে যে, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী থানাকে জানানো হয়। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।
*পুলিশের বক্তব্য*
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পরপরই জুয়েল খন্দকার, শাকিল খন্দকার ও শাকিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (মিডিয়া) উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাছে সোনার আংটি ও গলার চেইন পাওয়া গেছে।
ঘটনার সময় জাতীয়তাবাদী চালক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেয়া জুয়েল খন্দকারকে লোকজনকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে দেখা গিয়েছিল। আর শাকিল আহমেদ গুলশান-২ এর ৮১ নম্বর সড়কের ৮আই নম্বর বাড়িতে এক সময় কেয়ারটেকার ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান গুলশান থানার ওসি মাহবুবুর রহমান।
*গুলশানে মামলা*
এই ঘটনায় বাসার কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গ্রেপ্তার তিনজনসহ ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে গুলশান থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, যারা বাসায় ঢুকেছিল তারা মূলত লুটপাটের জন্যই ঢুকেছিল বলে ধারণা তার।
*সে রাতে যা ঘটেছিল*
তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রী ফ্ল্যাটে লোকজনের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ার দৃশ্য মঙ্গলবার মধ্যরাতে ফেইসবুকে সরাসরি প্রচার করে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন। তাতে দেখা যায়, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ স্লোগান দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়া লোকজন বাড়ির আলমারি, জুতার বাক্স, বিছানাপত্র সব ওলটপালট ও তছনছ করছে। এ সময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সেখানে ঢুকে পড়া এক তরুণ নিজেকে শাকিল আহমেদ পরিচয় দিয়ে বলেন, তারা স্থানীয় বাসিন্দা। ওই বাড়িতে ‘তানভীর ইমামের মেয়ে’ আছে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে- এমন খবর তাদের কাছে ছিল। বাড়িতে অনেক ‘অবৈধ জিনিসপত্র’ রয়েছে বলেও খবর ছিল তাদের কাছে।
তার দাবি, এসব খবর নিয়ে তাদের লোকজন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে গেলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে কিছু লোকজন মিলে নিজেরাই বাসায় তল্লাশি করতে ঢুকে পড়েছেন।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লোকজন দরজার সিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাড়ি তছনছ করে ফেলে।
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এটা এইচ টি ইমামের বাড়ি নয়, এটা রহমান সাহেবের বাড়ি। রহমান সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে। ২০০১ সালের দিকে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রহমান সাহেব ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন।’
আরেক তরুণ নিজেকে পথচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, বাসায় ঢুকে পড়া লোকজনের সঙ্গে তিনি ঢুকেছিলেন কেবল ভিডিও করতে।
সেখানে একজন নেতাগোছের ব্যক্তি সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন যিনি নিজের পরিচয় দেন জাতীয়তাবাদী চালক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার হিসেবে।
সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে জুয়েল দাবি করেন, এখানে ‘ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের লোকজন’ লুকিয়ে আছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। এছাড়া বাড়িতে ‘অস্ত্র’ রয়েছে বলেও তারা জেনেছিলেন। এমন খবর শুনে তারা প্রথমে সেনাবাহিনীকে জানালে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিনি পুলিশকে ফোন করেছিলেন। পুলিশ না আসায় তারা দেড় থেকে দুইশ ছাত্র-জনতা বাড়িতে তল্লাশি চালাতে ঢোকেন।
রাত ১টার দিকে জুয়েল বলেন, তখন পর্যন্ত তারা তল্লাশি করে কিছু পাননি।
পরে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং বাসায় টাকা ও অস্ত্র মজুদ আছে এমন অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার পর তারাও নেমে যায়, সেনাবাহিনীর টিমও আসে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় কেয়ারটেকারসহ তিন জন ছিলেন বাসায়, বাসার মালিক ছিলেন না। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি।’
গুলশানে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের প্রাক্তন স্ত্রীর বাসায় ঢুকে তল্লাশির নামে ‘লুটপাট’ চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন -সংবাদ
বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫
মধ্যরাতে ‘মব’ তৈরি করে ঢাকার গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় ঢুকে তল্লাশির নামে ‘মালামাল তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টার’ নেপথ্যে ওই ভবনের সাবেক তত্ত্বাবধায়কের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের এ ঘটনায় ভবনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক শাকিল আহমেদ (২৮), জুয়েল খন্দকার (৪৮) এবং তার ছেলে শাকিল খন্দকার (২৪) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে।
তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রী গুলশান-২ নম্বরে (শাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে) ৮১ নম্বর সড়কের ৮আই নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তানভীর ইমামের সঙ্গে তার এই স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ২৫ বছর আগে।
শাকিল আহমেদ নামের ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে কিছু লোক জড়ো করে ভবনটি ঘেরাও করেন। ভবনের একটি ফ্ল্যাটে তানভীর ইমামের কয়েকশ’ কোটি টাকা রাখা আছে, এমন তথ্যা দিয়ে সেখানে তল্লাশি চালাতে উসকানি দেন শাকিল। ভবনে ‘অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীরা’ লুকিয়ে আছে এমন অভিযোগও তোলা হয়। শাকিলসহ কিছু লোক রাত ১২টার পর ওই ভবনে প্রবেশ করেন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পুলিশ যায়। রাত দেড়টার দিকে যান সেনা সদস্যরা। ততক্ষণে ভবনটির একটি ফ্ল্যাটের ভেতরে সবকিছু তল্লাশির নামে তছনছ করে ফেলা হয়।
প্রেস উইংয়ের বক্তব্য
বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছেন, গুলশানের ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়েন। তারা তল্লাশির অজুহাতে বাসায় ঢুকে মালামাল তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করেন।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান
জোনের পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি), থানার ওসি ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে শাকিল আহমেদ একসময় ওই বাসায় কেয়ারটেকারের (তত্ত্বাবধায়ক) কাজ করতেন। তিনিই মূলত জনতাকে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে, এমন তথ্যা দিয়ে বাসায় তল্লাশি চালাতে উসকানি দেন।
প্রেস উইং থেকে আরও বলা হয়, এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকেও একই অজুহাতে একদল জনতা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
*স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা*
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মর্মে আবারও সতর্ক করছে যে, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী থানাকে জানানো হয়। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।
*পুলিশের বক্তব্য*
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পরপরই জুয়েল খন্দকার, শাকিল খন্দকার ও শাকিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (মিডিয়া) উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাছে সোনার আংটি ও গলার চেইন পাওয়া গেছে।
ঘটনার সময় জাতীয়তাবাদী চালক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেয়া জুয়েল খন্দকারকে লোকজনকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে দেখা গিয়েছিল। আর শাকিল আহমেদ গুলশান-২ এর ৮১ নম্বর সড়কের ৮আই নম্বর বাড়িতে এক সময় কেয়ারটেকার ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান গুলশান থানার ওসি মাহবুবুর রহমান।
*গুলশানে মামলা*
এই ঘটনায় বাসার কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গ্রেপ্তার তিনজনসহ ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে গুলশান থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, যারা বাসায় ঢুকেছিল তারা মূলত লুটপাটের জন্যই ঢুকেছিল বলে ধারণা তার।
*সে রাতে যা ঘটেছিল*
তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রী ফ্ল্যাটে লোকজনের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ার দৃশ্য মঙ্গলবার মধ্যরাতে ফেইসবুকে সরাসরি প্রচার করে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন। তাতে দেখা যায়, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ স্লোগান দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়া লোকজন বাড়ির আলমারি, জুতার বাক্স, বিছানাপত্র সব ওলটপালট ও তছনছ করছে। এ সময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সেখানে ঢুকে পড়া এক তরুণ নিজেকে শাকিল আহমেদ পরিচয় দিয়ে বলেন, তারা স্থানীয় বাসিন্দা। ওই বাড়িতে ‘তানভীর ইমামের মেয়ে’ আছে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে- এমন খবর তাদের কাছে ছিল। বাড়িতে অনেক ‘অবৈধ জিনিসপত্র’ রয়েছে বলেও খবর ছিল তাদের কাছে।
তার দাবি, এসব খবর নিয়ে তাদের লোকজন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে গেলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে কিছু লোকজন মিলে নিজেরাই বাসায় তল্লাশি করতে ঢুকে পড়েছেন।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লোকজন দরজার সিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাড়ি তছনছ করে ফেলে।
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এটা এইচ টি ইমামের বাড়ি নয়, এটা রহমান সাহেবের বাড়ি। রহমান সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে। ২০০১ সালের দিকে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রহমান সাহেব ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন।’
আরেক তরুণ নিজেকে পথচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, বাসায় ঢুকে পড়া লোকজনের সঙ্গে তিনি ঢুকেছিলেন কেবল ভিডিও করতে।
সেখানে একজন নেতাগোছের ব্যক্তি সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন যিনি নিজের পরিচয় দেন জাতীয়তাবাদী চালক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার হিসেবে।
সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে জুয়েল দাবি করেন, এখানে ‘ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের লোকজন’ লুকিয়ে আছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। এছাড়া বাড়িতে ‘অস্ত্র’ রয়েছে বলেও তারা জেনেছিলেন। এমন খবর শুনে তারা প্রথমে সেনাবাহিনীকে জানালে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিনি পুলিশকে ফোন করেছিলেন। পুলিশ না আসায় তারা দেড় থেকে দুইশ ছাত্র-জনতা বাড়িতে তল্লাশি চালাতে ঢোকেন।
রাত ১টার দিকে জুয়েল বলেন, তখন পর্যন্ত তারা তল্লাশি করে কিছু পাননি।
পরে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং বাসায় টাকা ও অস্ত্র মজুদ আছে এমন অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার পর তারাও নেমে যায়, সেনাবাহিনীর টিমও আসে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় কেয়ারটেকারসহ তিন জন ছিলেন বাসায়, বাসার মালিক ছিলেন না। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি।’