alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫

আমার সামনে আজ
জিললুর রহমান

আমার সামনে আজ সূর্য নতজানু

সূর্যের উত্তাপ যত ম্লান হলো পশ্চিমের ঘাটে

চাঁদের থালায় আজ আমার নির্লিপ্ত চোখ

অমাবস্যার বিষণœ পাতে আলো ঢালতে কেউ নেই

আমার ভেতর তুমি সে আলোক জ্বেলে দাও

হৃদয় উথলে যেন অমাবস্যা ডুবে যায়

আমি কিংবা সূর্যালোক অথবা চাঁদের

কারিগর প্রকৃতির সে কোন্ খেয়াল

অনন্তের ওপারে আঁধার তবু ছড়ানো রোশনাই

খেয়ালের অন্তরালে একাকার, কে কার জানিনি

ঘোরগ্রস্ত স্টেশনে
হাসান কল্লোল

আবেগকে প্রোথিত করবো তমাল গাছের মতো পুকুরের ভাঙা পারে

তার দুপাশে রোপণ হবে জনপ্রিয় হাস্নাহেনার দুটো চারা!

বুনোগন্ধের কামিনী শিউলি, করমচা সফেদার চাষবাসও!

আমার বাগানবিলাসের সাথে টুনটুনি পাখি পোষার খুব অভিলাষ

তাই দুঃস্বপ্নের কোটরেও দেখি কিছু পাখি

ঠোঁটে রাখে ঠোঁট আর ছোট ছোট ডানায় কাটে বেদনার লাশ!

ঘাসের ডগায় দেখো ফুটেছে হেমন্তের শিশির,

নিশির ঘোর নিয়ে হেঁটে যায় কতিপয় তুমুল কবি

তাদের প্রতিচ্ছবি ভাসে শাপলাভেজা ডোবার বুকে!

রাতের ঘন নিঃশ্বাসের পাশে কে কাঁদে একা;

তার যাবতীয় অস্থাবর আনন্দ

নিয়ে গেছে কোন সওদাগর!

ধর ধর করে তোমরা এঁকেছো শুধু

অবিশ্বাসের আঁচড়।

বর্ষায় যেমন বিহ্বল হয় হাওরের চাষী

মাতাল পূর্ণিমায় কে যায় হেঁটে পুরাতন

ব্রহ্মপুত্রের উপর দিয়ে মোহনায়

শংকায় ফেলে

মংগলে যাদের সাথে দেখা এলিয়েনের

তারা কি দৃষ্টিহীন অথবা সোনা-ব্যাঙ?

বেশি অজানা অমানা বসে চা খায়

আঁঠালো রাস্তায় ঘোর অমাবস্যায়

জগত এক আজব স্টেশন

ভুল ট্রেনে তুলে দেয়ার ধান্ধা তাহার!!

বসন্ত
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

যৌবন-জোয়ারে অচেনা বসন্ত আজ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কোকিলের ডাক কিংবা বাহারি ফুলের সমাহারে নয়, নারীর শাড়ি পরা স্বাধীনতা কিংবা শিল্পীর তুলিতে নয়, এ বসন্ত দ্রষ্টব্য হয়েছে পাতা ঝরাবার দিনের জন্যে। পাতা ঝরে যাচ্ছে বৃক্ষের, পাতা ঝরে যাচ্ছে জীবনের; জোর করে পাতা ঝরানো হচ্ছে ইতিহাসের। পাতা ঝরানো হলো স্মৃতির, পাতা ঝরানো হলো সম্প্রীতির, পাতা ঝরে যাচ্ছে শেকড় ও সংস্কৃতির। যে হলুদ আজ বসন্ত মেখেছে গায়ে, তাতে জীবাণু নাশক নেই, আছে স্বস্তি নাশের অস্বস্তি; আছে নারীবৃক্ষের ঐশ্বর্যের পাতাগুলো দুমড়ে মুচড়ে ঝরিয়ে দেওয়ার গোপন বার্তা। মলয় মাধুর্য নয়, বসন্তে আজ মাখা আছে আদিম আফিম আর যুগের নতুন প্রলেপ। ক্ষত সারাতে নয়, বরং অক্ষয়কে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলাই আজকের বসন্তের মুখ্য বার্তা।

সব বসন্ত জীবনের গান শোনায় না, কিছু বসন্ত বিশ্বাসঘাতকও হয় বটে।

দুটি কবিতা
শারদুল সজল
অদৃশ্যের দিকে

মানুষের ভাগ্যরেখা বলে কিছু নেই।

তবে সময়ফণা ভেঙে দিতে পারে

গ্রহ-নক্ষত্রের গতিরেখা

এই কথা জানার পর

ঘরভর্তি সোনার মোহরে হাত দিয়ে দেখেছি-

সব পাথর হয়ে গেছে;

কপাল নিঙরে, দুয়ারে দুয়ারে দাঁড়িয়েছি

দেখি সব মুখ ঘরে ফিরে গেছে;

শুধু বাইরে-

গোধূলির আভায়- অস্পষ্ট ঝুলিয়ে রেখেছে

আমার মুখ

এই ভাবে ঘরহীন, একা হয়ে

পূর্ণাঙ্গ শক্তি দিয়ে পৃথিবীর কুয়াশা ভাঙতে পারিনি

স্মৃতি আর কোলাহলের ভেতর দিয়ে

আমার মুখ নিয়ে আমি নিজেই

অদৃশ্যের দিকে দৌঁড়ে ছুটছি

আর দূরে

মাটির গভীরে একটি ঘাস হতে দেখছি

পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির সন্ধ্যার মতো

সংহাসন

পৃথিবীর সকল কবর আমার কবরে ঢুকে গেছে

এখন আমি কবরের রাজাধিরাজ; মসনদে বসে তাকিয়ে দেখি

কার কার বুক ফুঁড়ে বৃক্ষ গজিয়েছে... সেখানে কী কী পাখি বসছে

কী গান করছে আমি দেখি- নতুন নতুন আরও কবর আমার কবরে

ঢুকে যাচ্ছে

এবং তাদের হৃৎপি-ের ফুটোয় সুখ দুঃখ

পাওয়া না পাওয়াগুলো সন্ধ্যা তারার আগুনে জ¦লজ¦ল করছে

তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি মুচি ব্যবসায়ী

চোর খুনি রাজা রাণী রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী প্রেমিক ও প্রতারক

আমি কবরসিংহাসনে বসে মুনিয়াপবিত্রতায় প্রথম উচ্চারণ করে বলি

রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী পেছনে গিয়ে বসুন

যাতে আমার মেজাজ খারাপ না হয়

প্রেমিক আর খুনি সামনে এসে বসুন

কারণ প্রেমের মতো ধ্যান একমাত্র খুনিই করতে পারে

খুনের মতো ধ্যান একমাত্র প্রেমিকেই করতে পারে

সময়-অসময়
অনিন্দ্য শরীফ

ভরা বসন্তে এসেছিলে কোকিল তুমি,

এরপর আর খোঁজ নেই;

মনে রেখো শৈত্য খরা দাবদাহ পেরিয়ে

বসন্ত ফিরে আসবেই।

ভুলে গেছ তুমিও শরতের শিশির;

কতোদিন থাকবে এই নিরুত্তাপ রোদ?

আবার ফিরতে হবে যেদিন এই বুকে,

শরতেই খরতাপে নেব প্রতিশোধ।

সুসময়ের বন্ধু তুমি দুধের মাছি-

স্নেহের গন্ধে স্নায়ু করে নিশপিশ;

মিলবে না, শোনো, রেহাই সেদিন-

পেয়ালায় দুধ ভেবে স্বাদ নেবে বিষ!

যদিও ভুলে গেছ পুরাতন হিসাব

হালখাতা ভরা শুধু প্রতারণা-ঋণ,

দু’একটি ভরতের ডাক শুনে ভেবো না-

এসে গেলো বুঝি ওই গ্রীষ্মের দিন।

ভেবেছ কি শুধু এক মাসে ইতিহাস

হয়ে যাবে তোমার এই শীত?

সময়ের হিসাবেই তোমার আজকের দিন

কাল মোড় নিবে ঠিক বিপরীত!

ভেবেছ শূন্য মৌচাক- শোষণের শেষে

নিষ্ফলা মধুকর প্রয়োজন কই?

মধুমাসে ফের যদি দেখি আশপাশে

মৌ-লোভী তোমাকে হুল ফুটাবোই।

অনিচ্ছায় প্রস্থান
খালেদ মাহবুব মোর্শেদ

আমাকে ডেকো না সখা

পিছু ফেলা প্রণয়ের মাঠে

যদিও দেখার আশা

প্রাণে পুষে রাতগুলো কাটে;

থেমে গেলে যোগাযযোগ সহসা থামুক...

শাশ্বত স্বপ্নের সিঁড়ি ফিরে যাক জীবনের ঘাটে

ভালোবাসা এভাবেই নির্বাক নামুক।

সহমর্মী স্বজনের পাশে

ধূ¤্রােজ্জ্বল আলোকের সভা

আমাকে যেতেই হয় ছেড়ে

অনিচ্ছার পথ রেখা পার হই রোজ

আমি কি এড়িয়ে যাবো দীপ্ত ভূরিভোজ!

সমর্পণ
শরীফ আস্-সাবের

আয়নাতে প্রসন্ন চোখ রেখে দেখো মেয়ে,

চেয়ে দেখো তোমার চারুতা, হাসির চমক-

কারুময়মুখ, মরালীর মত গ্রীবা, ঠোঁট,

আর অঙ্গে জড়ানো যত গহনার ঠাম।

তন্ময়হয়েআমি শুধু তোমাকেই দেখি,

তোমার কুন্তলরাশি, বুকের ক্যানভাস:

গোলাপি গাল, আলুথালু নিতম্বের ঢেউ,

দেখি মায়াবী চোখের ঠারে নাচের ঠমক!

রোম কিংবা এথেন্সের অবাক নগরে

পাথরে খোদাই করা পুরনারী যেন তুমি!

তোমার নিটোল হাতের বাজুতে খেলা করে

প্রণয়ের উন্মাতাল মদির উচ্ছ্বাস।

ফুল আর আভরণ কপটে আড়াল করে

তোমার মায়াবী শরীরের সুনিপুণ ভাঁজ;

উষসী বাতাসে অমল মাধুরী উবে যায়,

দুঃসহ জ্বরে কামুক হৃদয়পুড়েছাই!

দিগন্তের সূর্যধোয়া আবীরের রাগে

তোমার রূপের কুহক সাজে দুর্বিনীত!

কী করে যৌবন ভার আগলে তুমি রাখো?

চৈত্রের দাবদাহে চাতকের মিটে না তিয়াস।

মেঘেরা বেড়াতে গেলে আকাশ চকিতে হাসে,

নিজেকে উজাড়করে ছড়ায়নীলের প্রভা;

তুমিও বাদামী ভোরে যা কিছু অহংকার

নিসর্গের মিনারে এসে করো সমর্পণ!

তারপর, পেট্রা কিংবা উজ্জ্বয়িনীর

প্রাচীন মানবী হয়েকাছে আসো একবার-

আফ্রোদিতির মত দেহের পসরা মেলে

ছুড়ে ফেলো অনাবশ্যক বসন ভূষণ!

নিমগ্ন সত্তার আলো
মেজবাহ উদ্দিন

ক্রমশ তোমার কাছে আসতে থাকি

নির্ভরতার রাত অন্ধকার কেটে

আলো দেয় তোমার প্রজ¦লনে।

আমার নিমগ্ন সত্তায়ও সেই আলো

জ¦লে জ¦লে প্রমাণ করে তুমি যেভাবে আছো।

সহ¯্র গানের প্রথম কলিগুলো

শুনিয়ে দিয়েছিলে সেই কবে

আবেগাশ্রুত নয়নে নিয়েছিলে কাছে।

গাছের শীর্ষ শাখায় যে পাখি বসে

সন্ধ্যা-প্রার্থনা জানাতো

সে পাখি ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।

চির আহ্বানে বেদনার সুরে

তোমাকে আমাকে তার খুব কাছে না পেয়ে।

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫

আমার সামনে আজ
জিললুর রহমান

আমার সামনে আজ সূর্য নতজানু

সূর্যের উত্তাপ যত ম্লান হলো পশ্চিমের ঘাটে

চাঁদের থালায় আজ আমার নির্লিপ্ত চোখ

অমাবস্যার বিষণœ পাতে আলো ঢালতে কেউ নেই

আমার ভেতর তুমি সে আলোক জ্বেলে দাও

হৃদয় উথলে যেন অমাবস্যা ডুবে যায়

আমি কিংবা সূর্যালোক অথবা চাঁদের

কারিগর প্রকৃতির সে কোন্ খেয়াল

অনন্তের ওপারে আঁধার তবু ছড়ানো রোশনাই

খেয়ালের অন্তরালে একাকার, কে কার জানিনি

ঘোরগ্রস্ত স্টেশনে
হাসান কল্লোল

আবেগকে প্রোথিত করবো তমাল গাছের মতো পুকুরের ভাঙা পারে

তার দুপাশে রোপণ হবে জনপ্রিয় হাস্নাহেনার দুটো চারা!

বুনোগন্ধের কামিনী শিউলি, করমচা সফেদার চাষবাসও!

আমার বাগানবিলাসের সাথে টুনটুনি পাখি পোষার খুব অভিলাষ

তাই দুঃস্বপ্নের কোটরেও দেখি কিছু পাখি

ঠোঁটে রাখে ঠোঁট আর ছোট ছোট ডানায় কাটে বেদনার লাশ!

ঘাসের ডগায় দেখো ফুটেছে হেমন্তের শিশির,

নিশির ঘোর নিয়ে হেঁটে যায় কতিপয় তুমুল কবি

তাদের প্রতিচ্ছবি ভাসে শাপলাভেজা ডোবার বুকে!

রাতের ঘন নিঃশ্বাসের পাশে কে কাঁদে একা;

তার যাবতীয় অস্থাবর আনন্দ

নিয়ে গেছে কোন সওদাগর!

ধর ধর করে তোমরা এঁকেছো শুধু

অবিশ্বাসের আঁচড়।

বর্ষায় যেমন বিহ্বল হয় হাওরের চাষী

মাতাল পূর্ণিমায় কে যায় হেঁটে পুরাতন

ব্রহ্মপুত্রের উপর দিয়ে মোহনায়

শংকায় ফেলে

মংগলে যাদের সাথে দেখা এলিয়েনের

তারা কি দৃষ্টিহীন অথবা সোনা-ব্যাঙ?

বেশি অজানা অমানা বসে চা খায়

আঁঠালো রাস্তায় ঘোর অমাবস্যায়

জগত এক আজব স্টেশন

ভুল ট্রেনে তুলে দেয়ার ধান্ধা তাহার!!

বসন্ত
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

যৌবন-জোয়ারে অচেনা বসন্ত আজ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কোকিলের ডাক কিংবা বাহারি ফুলের সমাহারে নয়, নারীর শাড়ি পরা স্বাধীনতা কিংবা শিল্পীর তুলিতে নয়, এ বসন্ত দ্রষ্টব্য হয়েছে পাতা ঝরাবার দিনের জন্যে। পাতা ঝরে যাচ্ছে বৃক্ষের, পাতা ঝরে যাচ্ছে জীবনের; জোর করে পাতা ঝরানো হচ্ছে ইতিহাসের। পাতা ঝরানো হলো স্মৃতির, পাতা ঝরানো হলো সম্প্রীতির, পাতা ঝরে যাচ্ছে শেকড় ও সংস্কৃতির। যে হলুদ আজ বসন্ত মেখেছে গায়ে, তাতে জীবাণু নাশক নেই, আছে স্বস্তি নাশের অস্বস্তি; আছে নারীবৃক্ষের ঐশ্বর্যের পাতাগুলো দুমড়ে মুচড়ে ঝরিয়ে দেওয়ার গোপন বার্তা। মলয় মাধুর্য নয়, বসন্তে আজ মাখা আছে আদিম আফিম আর যুগের নতুন প্রলেপ। ক্ষত সারাতে নয়, বরং অক্ষয়কে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলাই আজকের বসন্তের মুখ্য বার্তা।

সব বসন্ত জীবনের গান শোনায় না, কিছু বসন্ত বিশ্বাসঘাতকও হয় বটে।

দুটি কবিতা
শারদুল সজল
অদৃশ্যের দিকে

মানুষের ভাগ্যরেখা বলে কিছু নেই।

তবে সময়ফণা ভেঙে দিতে পারে

গ্রহ-নক্ষত্রের গতিরেখা

এই কথা জানার পর

ঘরভর্তি সোনার মোহরে হাত দিয়ে দেখেছি-

সব পাথর হয়ে গেছে;

কপাল নিঙরে, দুয়ারে দুয়ারে দাঁড়িয়েছি

দেখি সব মুখ ঘরে ফিরে গেছে;

শুধু বাইরে-

গোধূলির আভায়- অস্পষ্ট ঝুলিয়ে রেখেছে

আমার মুখ

এই ভাবে ঘরহীন, একা হয়ে

পূর্ণাঙ্গ শক্তি দিয়ে পৃথিবীর কুয়াশা ভাঙতে পারিনি

স্মৃতি আর কোলাহলের ভেতর দিয়ে

আমার মুখ নিয়ে আমি নিজেই

অদৃশ্যের দিকে দৌঁড়ে ছুটছি

আর দূরে

মাটির গভীরে একটি ঘাস হতে দেখছি

পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির সন্ধ্যার মতো

সংহাসন

পৃথিবীর সকল কবর আমার কবরে ঢুকে গেছে

এখন আমি কবরের রাজাধিরাজ; মসনদে বসে তাকিয়ে দেখি

কার কার বুক ফুঁড়ে বৃক্ষ গজিয়েছে... সেখানে কী কী পাখি বসছে

কী গান করছে আমি দেখি- নতুন নতুন আরও কবর আমার কবরে

ঢুকে যাচ্ছে

এবং তাদের হৃৎপি-ের ফুটোয় সুখ দুঃখ

পাওয়া না পাওয়াগুলো সন্ধ্যা তারার আগুনে জ¦লজ¦ল করছে

তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি মুচি ব্যবসায়ী

চোর খুনি রাজা রাণী রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী প্রেমিক ও প্রতারক

আমি কবরসিংহাসনে বসে মুনিয়াপবিত্রতায় প্রথম উচ্চারণ করে বলি

রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী পেছনে গিয়ে বসুন

যাতে আমার মেজাজ খারাপ না হয়

প্রেমিক আর খুনি সামনে এসে বসুন

কারণ প্রেমের মতো ধ্যান একমাত্র খুনিই করতে পারে

খুনের মতো ধ্যান একমাত্র প্রেমিকেই করতে পারে

সময়-অসময়
অনিন্দ্য শরীফ

ভরা বসন্তে এসেছিলে কোকিল তুমি,

এরপর আর খোঁজ নেই;

মনে রেখো শৈত্য খরা দাবদাহ পেরিয়ে

বসন্ত ফিরে আসবেই।

ভুলে গেছ তুমিও শরতের শিশির;

কতোদিন থাকবে এই নিরুত্তাপ রোদ?

আবার ফিরতে হবে যেদিন এই বুকে,

শরতেই খরতাপে নেব প্রতিশোধ।

সুসময়ের বন্ধু তুমি দুধের মাছি-

স্নেহের গন্ধে স্নায়ু করে নিশপিশ;

মিলবে না, শোনো, রেহাই সেদিন-

পেয়ালায় দুধ ভেবে স্বাদ নেবে বিষ!

যদিও ভুলে গেছ পুরাতন হিসাব

হালখাতা ভরা শুধু প্রতারণা-ঋণ,

দু’একটি ভরতের ডাক শুনে ভেবো না-

এসে গেলো বুঝি ওই গ্রীষ্মের দিন।

ভেবেছ কি শুধু এক মাসে ইতিহাস

হয়ে যাবে তোমার এই শীত?

সময়ের হিসাবেই তোমার আজকের দিন

কাল মোড় নিবে ঠিক বিপরীত!

ভেবেছ শূন্য মৌচাক- শোষণের শেষে

নিষ্ফলা মধুকর প্রয়োজন কই?

মধুমাসে ফের যদি দেখি আশপাশে

মৌ-লোভী তোমাকে হুল ফুটাবোই।

অনিচ্ছায় প্রস্থান
খালেদ মাহবুব মোর্শেদ

আমাকে ডেকো না সখা

পিছু ফেলা প্রণয়ের মাঠে

যদিও দেখার আশা

প্রাণে পুষে রাতগুলো কাটে;

থেমে গেলে যোগাযযোগ সহসা থামুক...

শাশ্বত স্বপ্নের সিঁড়ি ফিরে যাক জীবনের ঘাটে

ভালোবাসা এভাবেই নির্বাক নামুক।

সহমর্মী স্বজনের পাশে

ধূ¤্রােজ্জ্বল আলোকের সভা

আমাকে যেতেই হয় ছেড়ে

অনিচ্ছার পথ রেখা পার হই রোজ

আমি কি এড়িয়ে যাবো দীপ্ত ভূরিভোজ!

সমর্পণ
শরীফ আস্-সাবের

আয়নাতে প্রসন্ন চোখ রেখে দেখো মেয়ে,

চেয়ে দেখো তোমার চারুতা, হাসির চমক-

কারুময়মুখ, মরালীর মত গ্রীবা, ঠোঁট,

আর অঙ্গে জড়ানো যত গহনার ঠাম।

তন্ময়হয়েআমি শুধু তোমাকেই দেখি,

তোমার কুন্তলরাশি, বুকের ক্যানভাস:

গোলাপি গাল, আলুথালু নিতম্বের ঢেউ,

দেখি মায়াবী চোখের ঠারে নাচের ঠমক!

রোম কিংবা এথেন্সের অবাক নগরে

পাথরে খোদাই করা পুরনারী যেন তুমি!

তোমার নিটোল হাতের বাজুতে খেলা করে

প্রণয়ের উন্মাতাল মদির উচ্ছ্বাস।

ফুল আর আভরণ কপটে আড়াল করে

তোমার মায়াবী শরীরের সুনিপুণ ভাঁজ;

উষসী বাতাসে অমল মাধুরী উবে যায়,

দুঃসহ জ্বরে কামুক হৃদয়পুড়েছাই!

দিগন্তের সূর্যধোয়া আবীরের রাগে

তোমার রূপের কুহক সাজে দুর্বিনীত!

কী করে যৌবন ভার আগলে তুমি রাখো?

চৈত্রের দাবদাহে চাতকের মিটে না তিয়াস।

মেঘেরা বেড়াতে গেলে আকাশ চকিতে হাসে,

নিজেকে উজাড়করে ছড়ায়নীলের প্রভা;

তুমিও বাদামী ভোরে যা কিছু অহংকার

নিসর্গের মিনারে এসে করো সমর্পণ!

তারপর, পেট্রা কিংবা উজ্জ্বয়িনীর

প্রাচীন মানবী হয়েকাছে আসো একবার-

আফ্রোদিতির মত দেহের পসরা মেলে

ছুড়ে ফেলো অনাবশ্যক বসন ভূষণ!

নিমগ্ন সত্তার আলো
মেজবাহ উদ্দিন

ক্রমশ তোমার কাছে আসতে থাকি

নির্ভরতার রাত অন্ধকার কেটে

আলো দেয় তোমার প্রজ¦লনে।

আমার নিমগ্ন সত্তায়ও সেই আলো

জ¦লে জ¦লে প্রমাণ করে তুমি যেভাবে আছো।

সহ¯্র গানের প্রথম কলিগুলো

শুনিয়ে দিয়েছিলে সেই কবে

আবেগাশ্রুত নয়নে নিয়েছিলে কাছে।

গাছের শীর্ষ শাখায় যে পাখি বসে

সন্ধ্যা-প্রার্থনা জানাতো

সে পাখি ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।

চির আহ্বানে বেদনার সুরে

তোমাকে আমাকে তার খুব কাছে না পেয়ে।

back to top