ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের (OHCHR) এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ধরনের লঙ্ঘনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ
বুধবার (৫ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জেনেভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলসহ বাংলাদেশ সরকারের একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সেই সময়কার পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত "যাত্রাবাড়ীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন" শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ
ভলকার তুর্ক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্বাধীনভাবে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে এবং এতে প্রকৃত বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য উন্মোচন, নিরাময়, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার কার্যালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।"
আসিফ নজরুলের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, "গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।”
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের সাক্ষ্য
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার ছোট ভাই স্নিগ্ধ জেনেভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, “আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে না পারব, ততক্ষণ ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাব।”
এক আহত শিক্ষার্থীর বোন জানান, "আমার ভাইসহ যারা আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তারা সঠিক চিকিৎসা পাননি, কারণ সরকার হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা না দেন।"
প্রতিবেদনের চাঞ্চল্যকর তথ্য
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ১,৪০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।** হাজারো মানুষ আহত হন, যাদের অধিকাংশই পুলিশের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে:
> নিহতদের ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু।
> বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
> ৭৮ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে গুলির কারণে, যার মধ্যে—
৬৬% মিলিটারি রাইফেলের গুলি
১২% শটগানের গুলি
২%** পিস্তলের গুলি
২০% অন্যান্য অস্ত্রের গুলি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিন্দু-শূন্য পরিসীমা থেকে গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।
আবু সাঈদের বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রমাণ
জাতিসংঘের তদন্তে দেখা গেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় এক শিক্ষার্থী দুই বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করেন। পরে তাকে গুলি করা হয়। ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি ১৪ মিটার দূর থেকে ধাতব গুলি বোঝাই শটগানের দুটি গুলিতে আহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।"
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা দাবি
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর এমন মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।"
তাই সংস্থাটি ফৌজদারি তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের (OHCHR) এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ধরনের লঙ্ঘনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ
বুধবার (৫ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জেনেভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলসহ বাংলাদেশ সরকারের একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সেই সময়কার পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত "যাত্রাবাড়ীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন" শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ
ভলকার তুর্ক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্বাধীনভাবে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে এবং এতে প্রকৃত বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য উন্মোচন, নিরাময়, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার কার্যালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।"
আসিফ নজরুলের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, "গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।”
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের সাক্ষ্য
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার ছোট ভাই স্নিগ্ধ জেনেভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, “আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে না পারব, ততক্ষণ ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাব।”
এক আহত শিক্ষার্থীর বোন জানান, "আমার ভাইসহ যারা আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তারা সঠিক চিকিৎসা পাননি, কারণ সরকার হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা না দেন।"
প্রতিবেদনের চাঞ্চল্যকর তথ্য
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ১,৪০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।** হাজারো মানুষ আহত হন, যাদের অধিকাংশই পুলিশের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে:
> নিহতদের ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু।
> বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
> ৭৮ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে গুলির কারণে, যার মধ্যে—
৬৬% মিলিটারি রাইফেলের গুলি
১২% শটগানের গুলি
২%** পিস্তলের গুলি
২০% অন্যান্য অস্ত্রের গুলি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিন্দু-শূন্য পরিসীমা থেকে গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।
আবু সাঈদের বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রমাণ
জাতিসংঘের তদন্তে দেখা গেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় এক শিক্ষার্থী দুই বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করেন। পরে তাকে গুলি করা হয়। ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি ১৪ মিটার দূর থেকে ধাতব গুলি বোঝাই শটগানের দুটি গুলিতে আহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।"
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা দাবি
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর এমন মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।"
তাই সংস্থাটি ফৌজদারি তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।