দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা "খুবই ভঙ্গুর" এবং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণই হবে তার কাজের অগ্রাধিকার—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘ দুই যুগ অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিশ্লেষণ এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন’ বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই, আপনারা বুঝে নেবেন।" প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতির এই পরিস্থিতিকে গাজা সিটির সঙ্গে তুলনা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আকেলমন্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়, আপনারা বুঝে নেবেন।"
অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "আপনি যখন একটি সরকারকে ‘অন্তর্বর্তী’ বলছেন, তখনই বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা ভাববে, এই সরকারের নীতিগুলো কতটা স্থায়ী হবে? বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে তাদের দ্বিধায় পড়তে হবে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।"
দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, "অত্যন্ত সম্ভব। অনেকেই ইতোমধ্যে পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি প্রধান উপদেষ্টা নিজেই। তার ওজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বেশি, যা ইতোমধ্যে আপনারা বুঝতে পারছেন।"
তিনি জানান, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কারণ যেসব দেশে এসব টাকা গেছে, তারাও এতে উপকৃত হয়েছে। "এ ধরনের দেশগুলো সহজে টাকা ফেরত দেবে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ করছি এবং সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।"
কোন কোন পক্ষ এই প্রস্তাব দিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। "এটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়, কারণ এতে আমাদের কাজের গতি ব্যাহত হতে পারে। টাকা পাচারকারীরা বসে নেই, তাই কিছু গোপনীয়তা রক্ষা করতেই হবে।"
তিনি আরও বলেন, "পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে যথাযথ আইনগত কাঠামো দরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে।"
বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক তথ্য নির্ভরযোগ্য নয় উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "২০১৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ট্রেড ডেটা জাতিসংঘকে সরবরাহ করেনি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার রোধে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তথ্য সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় তখনই বোঝা গেছে কিছু একটা হচ্ছে।"
তিনি জানান, "ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলডিসি থেকে উত্তরণের যে উন্নয়ন বর্ণনা তৈরি করা হয়েছে, তা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে গেছে। ২০১০ সালের পর থেকে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়েছে, অথচ অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ কমে গেছে। একসময় কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ১১-১২ শতাংশ, যা এখন ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।"
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, "আমাদের আয় বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব আদায় সেই তুলনায় বাড়েনি। এই ব্যবধান দূর করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।"
অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার দ্রুত উত্তরণ এবং পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা "খুবই ভঙ্গুর" এবং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণই হবে তার কাজের অগ্রাধিকার—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘ দুই যুগ অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিশ্লেষণ এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন’ বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই, আপনারা বুঝে নেবেন।" প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতির এই পরিস্থিতিকে গাজা সিটির সঙ্গে তুলনা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আকেলমন্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়, আপনারা বুঝে নেবেন।"
অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "আপনি যখন একটি সরকারকে ‘অন্তর্বর্তী’ বলছেন, তখনই বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা ভাববে, এই সরকারের নীতিগুলো কতটা স্থায়ী হবে? বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে তাদের দ্বিধায় পড়তে হবে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।"
দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, "অত্যন্ত সম্ভব। অনেকেই ইতোমধ্যে পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি প্রধান উপদেষ্টা নিজেই। তার ওজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বেশি, যা ইতোমধ্যে আপনারা বুঝতে পারছেন।"
তিনি জানান, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কারণ যেসব দেশে এসব টাকা গেছে, তারাও এতে উপকৃত হয়েছে। "এ ধরনের দেশগুলো সহজে টাকা ফেরত দেবে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ করছি এবং সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।"
কোন কোন পক্ষ এই প্রস্তাব দিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। "এটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়, কারণ এতে আমাদের কাজের গতি ব্যাহত হতে পারে। টাকা পাচারকারীরা বসে নেই, তাই কিছু গোপনীয়তা রক্ষা করতেই হবে।"
তিনি আরও বলেন, "পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে যথাযথ আইনগত কাঠামো দরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে।"
বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক তথ্য নির্ভরযোগ্য নয় উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "২০১৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ট্রেড ডেটা জাতিসংঘকে সরবরাহ করেনি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার রোধে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তথ্য সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় তখনই বোঝা গেছে কিছু একটা হচ্ছে।"
তিনি জানান, "ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলডিসি থেকে উত্তরণের যে উন্নয়ন বর্ণনা তৈরি করা হয়েছে, তা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে গেছে। ২০১০ সালের পর থেকে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়েছে, অথচ অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ কমে গেছে। একসময় কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ১১-১২ শতাংশ, যা এখন ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।"
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, "আমাদের আয় বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব আদায় সেই তুলনায় বাড়েনি। এই ব্যবধান দূর করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।"
অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার দ্রুত উত্তরণ এবং পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।