alt

জাতীয়

আগে বিচার ও সংস্কার চায় এনসিপি, পরে নির্বাচন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ‘হত্যা ও দমনপীড়নের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে তাদের বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান করার পরই নির্বাচন চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিচার ও সংস্কার কাজ করা জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেয়ার কথাও বলেছে দলটি।

শনিবার, (১৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের মধ্যবর্তী বিরতিতে বেরিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন।

বৈঠকের শুরুতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়। সংলাপে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান।

আরেকটি ফ্যাসিবাদ আসার সব রাস্তা বন্ধ

করেই এগোবো: নাহিদ

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাই মিলে কাজ করার

আহ্বান আলী রীয়াজের

শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা বৈঠকে

নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ও যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন নাহিদ ইসলাম সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা ছিল।’

নাহিদ ইসলাম জানান, তার দল পরিষ্কারভাবে বলেছে, সংস্কার বলতে তারা মৌলিক সংস্কারকে বোঝেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন হবে। বিগত সময়ে আমরা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ দেখেছি। সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাঠামোর বীজ বপন হয়েছিল। ফলে সেই রাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুণ রেখে যে-ই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক, তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে।’

জাতীয় ঐকমত্য ও জুলাই সনদ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতির সামনে আমাদের যে অঙ্গীকার, সেটি পূরণ করতে হবে যে, আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোব। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য যার যার জায়গা থেকে কাজ করব।’

নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘এক নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের কাজ সবাই মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরত না আসে।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে যে

সুপারিশ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু একমত, কিছু ভিন্নমত আছে। যেসব জায়গায় আংশিকভাবে একমত বা ভিন্নমত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

আগে সংস্কার, নির্বাচন পরে

দুপুরে বৈঠকের বিরতিতে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে, তবে তার আগে বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে। এ জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন, সেটি সরকার পেতে পারে।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিকভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগগুলো রয়েছে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি। বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। গণপরিষদের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি।’

বৈঠকে এনসিপি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় শুধু আইন প্রণয়নের ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান এবং আস্থার ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে বলেও জানান আখতার হোসেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আখতার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘নির্বাচন’ শব্দকে যুক্ত করতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের যে দায়িত্ব পালন করবেন, আমরা সেদিকে গুরুত্বারোপ করেছি। সেই রূপরেখা কেমন হতে পারে, উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকতে পারেন, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করছি। আলোচনা শেষ হলে বিস্তারিত বলতে পারব।’

গণপরিষদ নির্বাচন

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দুটি নির্বাচন চাচ্ছি, এমন নয়। আমরা একটি নির্বাচনই চাচ্ছি, যেটি আইনসভার নির্বাচন। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনটিকেই গণপরিষদের স্ট্যাটাস দেয়া হবে।’

সংবিধানের বেসিক ফান্ডামেন্টাল রিফর্মেশনের এখতিয়ার শুধু গণপরিষদের থাকে বলেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা আসন্ন নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভার নির্বাচন ও গণপরিষদের স্ট্যাটাস চাই। যাদের প্রথম কাজ হবে, সংবিধানকে পুনঃলিখন করা। একই সঙ্গে পার্লামেন্টের রুটিন কাজ করবে।’

বিএনপি ও এনসিপি কিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। সেক্ষেত্রে ঐক্য কীভাবে সম্ভব সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হাসনাত বলেন, ‘আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। ঐক্য তো দলীয় নয় বরং জাতীয় স্বার্থে।’ বৈঠকে এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান হাসনাত। সেগুলো হলো, নাগরিকদের অধিকার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর (পিসফুল ট্রানজিশন অব পাওয়ার) এবং সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, আমরা এখনও ওই নীতিতেই আছি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক: নগদের ওপর এখন নিয়ন্ত্রণ নেই, জালিয়াতির আশঙ্কা

পদ ছাড়ার পর নিজেকে একা পাবেন

যৌন হয়রানি: ‘সাময়িক ছুটিতে’ আইসিসি প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান

এনবিআর বিলুপ্তি নিয়ে যে উদ্বেগ জানালো টিআইবি

ক্যান্টনমেন্টসহ আশপাশের এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ

ছবি

বনের জমি দখলে বাধা, বন কর্মকর্তাসহ ৫ জন আহত

আ’লীগের যারা ‘জুলুম করেনি’ তারা বিএনপিতে যোগ দিতে পারবে: খসরু

ছবি

মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পঁচাত্তর বছরে পদার্পণ সংবাদের, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

আবারও বিক্ষোভের ঘোষণা কারিগরি শিক্ষার্থীদের

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের নতুন অভিযান, প্রথম দিনেই নিহত দেড় শতাধিক

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: গ্রেপ্তার তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

নির্বাচনের জন্য যমুনা ঘেরাও হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য: সালাহউদ্দিন আহমেদ

সাত কলেজের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

বাসাবাড়িতে রান্নায় কত গ্যাস লাগে, পরীক্ষা করবে বুয়েট

পুশ-ইন বা পুশ-ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

নগর ভবনে তালা, উপদেষ্টা ‘অবাঞ্ছিত’

মাগুরা শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: একজনের মৃত্যুদণ্ড, তিনজন খালাস

ছবি

সাম্য হত্যা: তিন আসামির ৬ দিনের রিমান্ড

ছবি

প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ড, বাকিদের খালাসে ক্ষুব্ধ ধর্ষণের শিকার শিশুর মা

ছবি

দুই-তিন মাসের মধ্যে ইন্টারনেটের দাম কমছে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছবি

পুশ ইন ‘উসকানি নয়’, থামাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মবতন্ত্র বন্ধ করুন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: সাকি

খিলগাঁওয়ে অধ্যক্ষের যোগদান নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ

যুব সংগঠন গঠন করলো এনসিপি, নাম জাতীয় যুবশক্তি

ঠিকাদার যুবলীগ নেতার সঙ্গে কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ

ছবি

‘যে চেনে সে কেনে, সাদেকের সৃষ্টি জামতলার মিষ্টি’

ছবি

ট্রাম্পের সফর : এবার আমিরাতের সঙ্গে হলো ২০ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি

ছবি

সোনাদিয়ায় পেট্রোল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে চিংড়িঘের নির্মাণ!

ছবি

জাহাজ রপ্তানিতে ‘সুদিন ফিরছে’

ছবি

রঙিন আমে ভরে উঠছে রাজশাহী, ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

তথ্য উপদেষ্টাকে বোতল নিক্ষেপ: শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিবারের জিম্মায়

চাল, মুরগি ও সবজির দাম কমেছে, বেড়েছে ডিমের

ছবি

নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা, গুজব ও ধর্মীয় উসকানির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থার দাবি

সাম্য হত্যা: জড়িতদের গ্রেপ্তারে সময় বেঁধে দিলো ছাত্রদল

ছবি

পড়ে গেল চাকা, ৭১ যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে বাংলাদেশ বিমান

tab

জাতীয়

আগে বিচার ও সংস্কার চায় এনসিপি, পরে নির্বাচন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ‘হত্যা ও দমনপীড়নের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে তাদের বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান করার পরই নির্বাচন চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিচার ও সংস্কার কাজ করা জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেয়ার কথাও বলেছে দলটি।

শনিবার, (১৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের মধ্যবর্তী বিরতিতে বেরিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন।

বৈঠকের শুরুতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়। সংলাপে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান।

আরেকটি ফ্যাসিবাদ আসার সব রাস্তা বন্ধ

করেই এগোবো: নাহিদ

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাই মিলে কাজ করার

আহ্বান আলী রীয়াজের

শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা বৈঠকে

নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ও যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন নাহিদ ইসলাম সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা ছিল।’

নাহিদ ইসলাম জানান, তার দল পরিষ্কারভাবে বলেছে, সংস্কার বলতে তারা মৌলিক সংস্কারকে বোঝেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন হবে। বিগত সময়ে আমরা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ দেখেছি। সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাঠামোর বীজ বপন হয়েছিল। ফলে সেই রাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুণ রেখে যে-ই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক, তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে।’

জাতীয় ঐকমত্য ও জুলাই সনদ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতির সামনে আমাদের যে অঙ্গীকার, সেটি পূরণ করতে হবে যে, আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোব। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য যার যার জায়গা থেকে কাজ করব।’

নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘এক নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের কাজ সবাই মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরত না আসে।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে যে

সুপারিশ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু একমত, কিছু ভিন্নমত আছে। যেসব জায়গায় আংশিকভাবে একমত বা ভিন্নমত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

আগে সংস্কার, নির্বাচন পরে

দুপুরে বৈঠকের বিরতিতে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে, তবে তার আগে বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে। এ জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন, সেটি সরকার পেতে পারে।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিকভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগগুলো রয়েছে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি। বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। গণপরিষদের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি।’

বৈঠকে এনসিপি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় শুধু আইন প্রণয়নের ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান এবং আস্থার ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে বলেও জানান আখতার হোসেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আখতার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘নির্বাচন’ শব্দকে যুক্ত করতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের যে দায়িত্ব পালন করবেন, আমরা সেদিকে গুরুত্বারোপ করেছি। সেই রূপরেখা কেমন হতে পারে, উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকতে পারেন, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করছি। আলোচনা শেষ হলে বিস্তারিত বলতে পারব।’

গণপরিষদ নির্বাচন

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দুটি নির্বাচন চাচ্ছি, এমন নয়। আমরা একটি নির্বাচনই চাচ্ছি, যেটি আইনসভার নির্বাচন। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনটিকেই গণপরিষদের স্ট্যাটাস দেয়া হবে।’

সংবিধানের বেসিক ফান্ডামেন্টাল রিফর্মেশনের এখতিয়ার শুধু গণপরিষদের থাকে বলেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা আসন্ন নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভার নির্বাচন ও গণপরিষদের স্ট্যাটাস চাই। যাদের প্রথম কাজ হবে, সংবিধানকে পুনঃলিখন করা। একই সঙ্গে পার্লামেন্টের রুটিন কাজ করবে।’

বিএনপি ও এনসিপি কিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। সেক্ষেত্রে ঐক্য কীভাবে সম্ভব সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হাসনাত বলেন, ‘আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। ঐক্য তো দলীয় নয় বরং জাতীয় স্বার্থে।’ বৈঠকে এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান হাসনাত। সেগুলো হলো, নাগরিকদের অধিকার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর (পিসফুল ট্রানজিশন অব পাওয়ার) এবং সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, আমরা এখনও ওই নীতিতেই আছি।’

back to top