শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত পাঁচটি কমিশনের একটি হলো- শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
কর্মক্ষেত্রে ‘তুই/তুমি’ সম্বোধন নয়
সোমবার, (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। এর পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পান ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যাদের কাজ ছিল শ্রম খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সুপারিশ প্রণয়ন করা।
শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন দেশের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে প্রেস উইং জানিয়েছে, দেশে ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা সাত কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে।
সংস্কার কমিশন দেশের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোনো শ্রমিক যেন তার চেয়ে কম মজুরি না পান, তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে কমিশন।
এ ছাড়া শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে ‘তুই/তুমি’ সম্বোধন নয়
কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করো হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো, শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে তুই/তুমি সম্বোধন বন্ধ করা।
সংস্কার কমিশন শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশও করেছে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনে ২৫টি মৌলিক সুপারিশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব সুপারিশের মূল লক্ষ্য দেশের শ্রম পরিবেশকে মানবিক, সুরক্ষিত ও ন্যায্য ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা।
অন্য সুপারিশের মধ্যে ১৯৭১-পরবর্তী সময়সহ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শহীদ’ স্বীকৃতি দেয়া, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা অবহেলাজনিত মৃত্যু ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন করা।
তবে রানা প্লাজা ধস, তাজরিন গার্মেন্টসের অগ্নিকা- এবং হাসেম ফুড কারখানার আগুনে প্রাণহানির ঘটনার দায়ীদের এখনও বিচারের আওতায় না আনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
পলাতক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনা সরকারের পলাতক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
গত অক্টোবর প্রথম ধাপে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার ছাড়া বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আসছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।
দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয় গত ১৮ নভেম্বর। এসব কমিশনের প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, শ্রম, নারী সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন শুধু স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি রয়েছে।
শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত পাঁচটি কমিশনের একটি হলো- শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
কর্মক্ষেত্রে ‘তুই/তুমি’ সম্বোধন নয়
সোমবার, (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। এর পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পান ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যাদের কাজ ছিল শ্রম খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সুপারিশ প্রণয়ন করা।
শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন দেশের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে প্রেস উইং জানিয়েছে, দেশে ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা সাত কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে।
সংস্কার কমিশন দেশের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোনো শ্রমিক যেন তার চেয়ে কম মজুরি না পান, তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে কমিশন।
এ ছাড়া শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে ‘তুই/তুমি’ সম্বোধন নয়
কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করো হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো, শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে তুই/তুমি সম্বোধন বন্ধ করা।
সংস্কার কমিশন শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশও করেছে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনে ২৫টি মৌলিক সুপারিশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব সুপারিশের মূল লক্ষ্য দেশের শ্রম পরিবেশকে মানবিক, সুরক্ষিত ও ন্যায্য ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা।
অন্য সুপারিশের মধ্যে ১৯৭১-পরবর্তী সময়সহ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শহীদ’ স্বীকৃতি দেয়া, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা অবহেলাজনিত মৃত্যু ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন করা।
তবে রানা প্লাজা ধস, তাজরিন গার্মেন্টসের অগ্নিকা- এবং হাসেম ফুড কারখানার আগুনে প্রাণহানির ঘটনার দায়ীদের এখনও বিচারের আওতায় না আনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
পলাতক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনা সরকারের পলাতক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
গত অক্টোবর প্রথম ধাপে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার ছাড়া বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আসছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।
দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয় গত ১৮ নভেম্বর। এসব কমিশনের প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, শ্রম, নারী সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন শুধু স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি রয়েছে।