alt

জাতীয়

আবারও ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থামে বিকেল ৪টার দিকে -সংবাদ

আবারও ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় কলেজের ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং উভয় কলেজের শিক্ষকরা দফায়-দফায় চেষ্টা চালান। পুলিশও লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে দফায় দফায় সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সর্বশেষ বিকেল ৪টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা চার ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘর্ষে সায়েন্সল্যাব মোড় ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। এমন পরিস্থিতিতে দুই দিন সিটি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কী নিয়ে সংঘর্ষ, সেই তথ্য বরাবরের মতো এবারও অজানাই রয়ে গেল।

এদিকে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও মারামারিতে আহত অন্তত ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব (১৮), সিয়াম (১৭), রাজীন (১৮), সাফাত (১৮), আবিদ (২২), নিলয় (২৫), তানভির ইসলাম তুহিদ (২৪) সিয়াম। সিটি কলেজের শামীম (১৮)। এছাড়া আহত হয়েছেন বাসযাত্রী সানি (৩২)। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আহতদের সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কারও অবস্থা গুরুতর নয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা বাঁশ, কাঠ ও লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে অবস্থান নেয় আর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয়। দুই প্রান্ত থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা টার্গেট করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। মাঝখানে থেকে পুলিশ দুই গ্রুপকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। একবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। আবার সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘক্ষণ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা কলেজ চত্বরে ভাঙচুর করে। পরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি। কেউ কেউ জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার ভিডিও ও তথ্য ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরেই সিটি কলেজে হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বেলা ১টার পর পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের দেখে তেড়ে এসে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কোথায় ছিলেন যখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করছিল। আপনারা এখন আমাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন, আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করছেন। পরে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সিটি কলেজ থেকে পিছু হটতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

বিকেলে সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, সোমবারের একটি ঘটনার ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। সেদিন ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে সাইন্সল্যাব এলাকায় মারধর করা হয়েছে। যার জন্য ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা মনে করেছেন এর সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িত। সেই জেরেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত।

পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই তাদের ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়েছেন। আমরা তাদের সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত করেছি। তবে এখনই পুলিশ প্রটোকল উঠিয়ে নেয়া হবে না। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাবেন। এছাড়া ঘটনায় সংঘর্ষের মাঝামাঝি পড়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। দুই দিন অর্থাৎ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, সিটি কলেজের স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। এ ঘটনাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। মারামারি করে এসব সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান। তিনি বলেন, এতে সিটি কলেজের স্থাপনার ক্ষতি হবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এবং আশপাশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে।

অন্যদিকে, বিকেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক এবং মিরপুর সড়কের যান চলাচল সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এর আগে ওখানকার সড়ক দিয়ে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যান চলাচল সম্পন্ন হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ, পথচারী ও রোগী নিয়ে স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।

ঢাকা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে হাসান বলেন, আমাদের কলেজের ছোটভাইদের মারধর করে অশ্লীল ছবি ধারণ করেছে। এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়। আমি তাদের ফেরাতে গিয়ে আহত হয়েছি।’ চলতি মাসের ১৫ তারিখেও এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। ওইদিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরুর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ক্যাম্পাস। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই কয়েকবার করে সংঘর্ষে জড়ায় নানা কারণে।

কদিন পরপর সংঘর্ষ, দুই কলেজের সঙ্গে ‘বসবে’ পুলিশ

কয়েক দিন পরপর রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষ ঠেকাতে ‘শিগগিরই’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলোচনায় বসবে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন,‘আমরা শিগগিরই কলেজ দুটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’ এদিন দুপুর থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা জানান মোস্তফা তারিকুজ্জামান। তবে এই সংঘাতে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

ছবি

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে সেনাবাহিনী: ডিএনসিসি প্রশাসক

আজহারুলের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ৬ মে

ছবি

যশোরের দুঃখ ‘ভবদহ এলাকা’ পরিদর্শনে তিন ৩ উপদেষ্টা

চার জেলায় চার খুন

ছবি

সাগর-রুনি হত্যার তদন্তে টাস্কফোর্সকে আরও ৬ মাস সময় দিয়েছে হাইকোর্ট

এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা গ্রেপ্তার

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে দ্বিমত বিএনপির

৫ আগস্টের আগে তৈরি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নয়: পিএসসি

ছবি

বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে, কাতারে প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত

ছবি

রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন সংকট ভুলে না যেতে বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃষক-জনতার সমাবেশ

ছবি

শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিককে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু: দুদক কমিশনার

৯ বছরে ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছে ঢাকাবাসী

৫ আগস্টের আগে তৈরি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নয়: পিএসসি

ছবি

মব জাস্টিস আর অ্যালাও করা যাবেনা, অনেক হয়েছে: স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা

চানখাঁরপুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযোগ দাখিলের দিন ২৫ মে ধার্য

ছবি

পরমাণু শক্তি কমিশনে দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ স্বায়ত্তশাসনের দাবি বিজ্ঞানী,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের

মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারুলের আপিল শুনানি ৬ মে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

এসএসসিতে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ

মহানবীকে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ

মেঘনার সহযোগী সমির আরও ৪ দিনের রিমান্ডে

আন্দোলনরত পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা *কর্মসূচি স্থগিত- শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি : বাংলাদেশের ৬২ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ

ছবি

নতুন সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

কাতারে দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ সেনাসদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত

ছবি

শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে কাতারে নারী ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা মামলা: তদন্তে টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিল হাইকোর্ট

ছবি

সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন প্রস্তাব আসছে: আলী রীয়াজ

ছবি

তিন বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের

ছবি

বিএনপির সঙ্গে তৃতীয় দিনের বৈঠকে বসেছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

দুই উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে সরানো হযেছে

ছবি

৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের তথ্য গোপনে প্রশ্ন, হাইকোর্টের রুল

মারা গেছেন পোপ ফ্রান্সিস

এনএসআই’র সাবেক ডিজি জোবায়েরের ৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

‘রেডিওলজির সিরিয়াল পেতে লোকজন আগে থেকে এসে ঘুমায়’

tab

জাতীয়

আবারও ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থামে বিকেল ৪টার দিকে -সংবাদ

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

আবারও ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় কলেজের ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং উভয় কলেজের শিক্ষকরা দফায়-দফায় চেষ্টা চালান। পুলিশও লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে দফায় দফায় সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সর্বশেষ বিকেল ৪টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা চার ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘর্ষে সায়েন্সল্যাব মোড় ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। এমন পরিস্থিতিতে দুই দিন সিটি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কী নিয়ে সংঘর্ষ, সেই তথ্য বরাবরের মতো এবারও অজানাই রয়ে গেল।

এদিকে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও মারামারিতে আহত অন্তত ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব (১৮), সিয়াম (১৭), রাজীন (১৮), সাফাত (১৮), আবিদ (২২), নিলয় (২৫), তানভির ইসলাম তুহিদ (২৪) সিয়াম। সিটি কলেজের শামীম (১৮)। এছাড়া আহত হয়েছেন বাসযাত্রী সানি (৩২)। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আহতদের সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কারও অবস্থা গুরুতর নয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা বাঁশ, কাঠ ও লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে অবস্থান নেয় আর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয়। দুই প্রান্ত থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা টার্গেট করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। মাঝখানে থেকে পুলিশ দুই গ্রুপকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। একবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। আবার সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘক্ষণ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা কলেজ চত্বরে ভাঙচুর করে। পরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি। কেউ কেউ জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার ভিডিও ও তথ্য ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরেই সিটি কলেজে হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বেলা ১টার পর পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের দেখে তেড়ে এসে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কোথায় ছিলেন যখন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করছিল। আপনারা এখন আমাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন, আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করছেন। পরে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সিটি কলেজ থেকে পিছু হটতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

বিকেলে সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, সোমবারের একটি ঘটনার ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। সেদিন ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে সাইন্সল্যাব এলাকায় মারধর করা হয়েছে। যার জন্য ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা মনে করেছেন এর সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িত। সেই জেরেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত।

পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই তাদের ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়েছেন। আমরা তাদের সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত করেছি। তবে এখনই পুলিশ প্রটোকল উঠিয়ে নেয়া হবে না। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাবেন। এছাড়া ঘটনায় সংঘর্ষের মাঝামাঝি পড়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। দুই দিন অর্থাৎ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, সিটি কলেজের স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। এ ঘটনাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। মারামারি করে এসব সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান। তিনি বলেন, এতে সিটি কলেজের স্থাপনার ক্ষতি হবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এবং আশপাশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে।

অন্যদিকে, বিকেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক এবং মিরপুর সড়কের যান চলাচল সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এর আগে ওখানকার সড়ক দিয়ে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যান চলাচল সম্পন্ন হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ, পথচারী ও রোগী নিয়ে স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।

ঢাকা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে হাসান বলেন, আমাদের কলেজের ছোটভাইদের মারধর করে অশ্লীল ছবি ধারণ করেছে। এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়। আমি তাদের ফেরাতে গিয়ে আহত হয়েছি।’ চলতি মাসের ১৫ তারিখেও এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। ওইদিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরুর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ক্যাম্পাস। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই কয়েকবার করে সংঘর্ষে জড়ায় নানা কারণে।

কদিন পরপর সংঘর্ষ, দুই কলেজের সঙ্গে ‘বসবে’ পুলিশ

কয়েক দিন পরপর রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষ ঠেকাতে ‘শিগগিরই’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলোচনায় বসবে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন,‘আমরা শিগগিরই কলেজ দুটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’ এদিন দুপুর থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা জানান মোস্তফা তারিকুজ্জামান। তবে এই সংঘাতে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

back to top