alt

জাতীয়

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ‘অকালীন উত্তরণ’, ভারতের ‘বেশি লাভ’ দেখছেন অর্থনীতিবিদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নভেম্বরে বেরিয়ে যাওয়ার যে সূচি তা ‘অকালীন’ মনে করছেন অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান। তার মতে, এখানে প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। আর এতে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে বলেই তার মত।

আর এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো, বিশেষত ভারত ‘সবচেয়ে লাভবান’ হবে বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের দ্য স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের এই অধ্যাপক।

বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কছাড় সুবিধা কমবে, বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়বে এবং দেশি শিল্পকারখানা তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ে অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বলেই মত মুশতাক খানের।

উত্তরণের পর, মুশতাক খানের প্রশ্ন, চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উৎপাদকরা কি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে? বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক শিল্প, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প, ওষুধ শিল্প এসব খাত কি প্রস্তুত? সার্বিকভাবে বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? তার উত্তর: ‘আমি প্রমাণ দেখছি না।’

মুশতাক খান বুধবার (২৩ এপ্রিল) তার এই মতামত জানান ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা’ শিরোনামের একটি গোলটেবিল বৈঠকে। রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংস্থা এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে

কয়েকজন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও আমলা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণাপ্রধান ইশতিয়াক বারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ এ তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিছু দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে শুল্কছাড় সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে। আর ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্বে ছাড় সুবিধা থাকবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।

ইশতিয়াক বারী তার উপস্থাপনায় বলেন, কোনো দেশ নিজের সিদ্ধান্তে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে পারে না। পেছাতে চাইলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে আবেদন করতে পারে। অবশ্য এজন্য শক্ত যুক্তি থাকতে হয়। আবেদন সিডিপি যাচাই করবে এবং সিদ্ধান্ত হবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার আলোচনা ছিল। তবে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরেই উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মুশতাক খান বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলো চাইবে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাক। তাহলে তাদের সুবিধা হয়। জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে প্রতিযোগীরা। তারা চাইবে, বাংলাদেশের আবেদন যেন বিবেচনা করা না হয়।

ইউরোপের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশের অকালীন (প্রিম্যাচিউর) উত্তরণ নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি উদ্বিগ্ন।

তিনি বলছেন, ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি এখন এমনিতেই বড় দুশ্চিন্তা। কারণ সেখানে কোনো দেশের কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্কারোপ হয়। বাংলাদেশের পোশাক সেই সীমা অতিক্রম করে গেছে। ইউরোপ বাংলাদেশকে আরও তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও স্বয়ংক্রিয় শুল্কের কারণে বাংলাদেশের পোশাক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে বলেই জানালেন মুশতাক খান।

বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য বাড়তি সময় চাওয়ার সুযোগ আছে কিনা সেই প্রশ্নে মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণভিত্তিক তিনটি যুক্তি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) কাছে তুলে ধরতে পারে। প্রথমত, অকালীন উত্তরণের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটি ইকোসক বিবেচনায় নেয়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের উত্তরণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তৃতীয়ত, সাড়ে ১৫ বছরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের সময় দরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত নেপাল, ভুটানের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যারা উত্তরণ পিছিয়ে দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ একা পিছিয়ে দিতে চাইলে প্রতিযোগীরা সেটা আটকে দিতে পারে। বাংলাদেশ কয়েকটি দেশকে নিয়ে একটি ব্লক (জোট) করে জাতিসংঘে যেতে পারলে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার সুযোগটি পেতে পারে বলে মনে করেন মুশতাক খান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা অর্থনীতির নানা পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, যার ওপর ভিত্তি করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি আর্থিক খাতের দুরবস্থা, ব্যাংক খাতের সংকটে থাকা, রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য না আসাসহ নানা সংকটের কথা উল্লেখ করেন।

আমীর খসরু বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। বিগত ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। এখন বাংলাদেশ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশা করছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার আসবে। উত্তরণের বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত এবং পরে জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।

বৈঠকে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এএফডির কান্ট্রি ডিরেক্টর সিনথিয়া মেলা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেইন খান বক্তব্য দেন।

পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নে দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

শার্শায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ

তিন জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩২ জনকে ‘পুশইন’ ভারতের

নিখোঁজ খিলক্ষেতের ব্যাংক কর্মকর্তার অবস্থান শনাক্তের দাবি পুলিশের

ছবি

গ্যাব পদ্ধতিতে আম চাষে সফল চাষি হিলির নিরঞ্জন

তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের সতর্কবার্তা

মোবাইল চুরির ঘটনায় মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা: র‌্যাব

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে তরুণদের, বিশেষ ঝুঁকিতে ছেলেরা

রবিবার পবিত্র আশুরা

ছবি

সঞ্চয়পত্রে সুদহার বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: উপদেষ্টা

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন প্রতিপক্ষ ছিল ভারতের, দাবি উপ-সেনাপ্রধানের

ছবি

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ২৪

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসেনি: নজরুল ইসলাম খান

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা মারা গেছেন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘ন্যূনতম হস্তক্ষেপ’ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার: প্রেস সচিব

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন কারাগারে

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

সৌরবিদ্যুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ‘আশানুরূপ নয়’

শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি’ প্রাপ্তির সম্ভাবনা

ছবি

‘মব’ তৈরি করে নগদ টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট, থানায় অভিযোগ হাবিবার

ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে: প্রেস সচিব

ছবি

‘ব্যাংকগুলোর টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’ — সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

ছবি

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জন কারাগারে

ছবি

তিন বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা আর নেই

ছবি

বিএনপি পুরনো খসড়া দেখে মন্তব্য করেছে: তৈয়্যব

ছবি

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ: আসিফ নজরুল

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলন

সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করলেন স্কুল শিক্ষক ছেলে

রাজধানীতে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন

কোভিড পরীক্ষার খরচ কমলো

ছবি

রাবিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গাছ কর্তন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে আপাতত বন্ধ

ছবি

পানিতে ডুবে ঠাকুরগাঁও ও বরুড়ায় চার শিশুর মৃত্যু

ছবি

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবো: নাহিদ

ছবি

তেঁতুলিয়ায় সরকারি ধান সংগ্রহে অনিয়ম

tab

জাতীয়

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ‘অকালীন উত্তরণ’, ভারতের ‘বেশি লাভ’ দেখছেন অর্থনীতিবিদ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নভেম্বরে বেরিয়ে যাওয়ার যে সূচি তা ‘অকালীন’ মনে করছেন অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান। তার মতে, এখানে প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। আর এতে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে বলেই তার মত।

আর এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো, বিশেষত ভারত ‘সবচেয়ে লাভবান’ হবে বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের দ্য স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের এই অধ্যাপক।

বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কছাড় সুবিধা কমবে, বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়বে এবং দেশি শিল্পকারখানা তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ে অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বলেই মত মুশতাক খানের।

উত্তরণের পর, মুশতাক খানের প্রশ্ন, চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উৎপাদকরা কি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে? বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক শিল্প, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প, ওষুধ শিল্প এসব খাত কি প্রস্তুত? সার্বিকভাবে বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? তার উত্তর: ‘আমি প্রমাণ দেখছি না।’

মুশতাক খান বুধবার (২৩ এপ্রিল) তার এই মতামত জানান ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা’ শিরোনামের একটি গোলটেবিল বৈঠকে। রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংস্থা এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে

কয়েকজন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও আমলা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণাপ্রধান ইশতিয়াক বারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ এ তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিছু দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে শুল্কছাড় সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে। আর ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্বে ছাড় সুবিধা থাকবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।

ইশতিয়াক বারী তার উপস্থাপনায় বলেন, কোনো দেশ নিজের সিদ্ধান্তে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে পারে না। পেছাতে চাইলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে আবেদন করতে পারে। অবশ্য এজন্য শক্ত যুক্তি থাকতে হয়। আবেদন সিডিপি যাচাই করবে এবং সিদ্ধান্ত হবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার আলোচনা ছিল। তবে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরেই উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মুশতাক খান বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলো চাইবে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাক। তাহলে তাদের সুবিধা হয়। জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে প্রতিযোগীরা। তারা চাইবে, বাংলাদেশের আবেদন যেন বিবেচনা করা না হয়।

ইউরোপের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশের অকালীন (প্রিম্যাচিউর) উত্তরণ নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি উদ্বিগ্ন।

তিনি বলছেন, ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি এখন এমনিতেই বড় দুশ্চিন্তা। কারণ সেখানে কোনো দেশের কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্কারোপ হয়। বাংলাদেশের পোশাক সেই সীমা অতিক্রম করে গেছে। ইউরোপ বাংলাদেশকে আরও তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও স্বয়ংক্রিয় শুল্কের কারণে বাংলাদেশের পোশাক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে বলেই জানালেন মুশতাক খান।

বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য বাড়তি সময় চাওয়ার সুযোগ আছে কিনা সেই প্রশ্নে মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণভিত্তিক তিনটি যুক্তি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) কাছে তুলে ধরতে পারে। প্রথমত, অকালীন উত্তরণের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটি ইকোসক বিবেচনায় নেয়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের উত্তরণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তৃতীয়ত, সাড়ে ১৫ বছরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের সময় দরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত নেপাল, ভুটানের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যারা উত্তরণ পিছিয়ে দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ একা পিছিয়ে দিতে চাইলে প্রতিযোগীরা সেটা আটকে দিতে পারে। বাংলাদেশ কয়েকটি দেশকে নিয়ে একটি ব্লক (জোট) করে জাতিসংঘে যেতে পারলে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার সুযোগটি পেতে পারে বলে মনে করেন মুশতাক খান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা অর্থনীতির নানা পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, যার ওপর ভিত্তি করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি আর্থিক খাতের দুরবস্থা, ব্যাংক খাতের সংকটে থাকা, রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য না আসাসহ নানা সংকটের কথা উল্লেখ করেন।

আমীর খসরু বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। বিগত ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। এখন বাংলাদেশ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশা করছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার আসবে। উত্তরণের বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত এবং পরে জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।

বৈঠকে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এএফডির কান্ট্রি ডিরেক্টর সিনথিয়া মেলা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেইন খান বক্তব্য দেন।

back to top