alt

জাতীয়

নাগলিঙ্গমের সুবাসে বিমোহিত বিটিআরআই প্রাঙ্গণ

প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছে ফুটেছে শত শত ফুল -সংবাদ

সবুজ চা পাতার রাজ্য সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে নাগলিঙ্গম। বিরল প্রজাতির এই ফুলটি অনেকের কাছে নাগকেশর নামেও পরিচিত। গত কয়েক দিন ধরে তার মাতাল সুবাসে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এলাকা মোহিত।

বিটিআরআই-এর প্রাঙ্গনে নাগলিঙ্গম গাছে ফুটেছে শত শত ফুল। অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি সুগন্ধ ছড়াচ্ছে ফুলগুলো।

প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাই মাসে ‘নাগলিঙ্গম’ বা ‘নাগকেশর’ ফোটে

ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। পাপড়ি ছয়টি, তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্যভাগে থাকা গর্ভাশয়টি অনেকটা ফণা তোলা সাপের মতো

জানা গেছে, পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে মাত্র দু’টি নাগালিঙ্গম গাছ। একটি গাছ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনিস্টিটিউট -এর পুকুরের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে, যা ১৯৯৩ সালে চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হোসেন রোপণ করেছিলেন। অন্যটি শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের সাবেক নৌ-কর্মকর্তা মো. গউছ উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম। দুর্লভ নাগলিঙ্গম গাছে রাশি রাশি ফুল ফুটে। প্রায় ৫০ বছর আগে লাগানো এই গাছ এখন শত শত ফুলে পল্লবিত।

এই গাছের ফুলগুলো বেশ আকর্ষণীয়, চোখে পড়লেই পথচারীকে থমকে দাঁড়াতে হয়। ফুটবলের মতো জাম্বুরা আকৃতির ফলগুলো খয়েরি রঙের। এই ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। আকারে বড়। পাপড়ি ছয়টি এবং তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্যভাগে রয়েছে গর্ভাশয়। এর গর্ভাশয়টি অনেকটা ফণা তোলা সাপের মতো। এর জন্যই ফুলটির নাম ‘নাগলিঙ্গম’ বা নাগকেশর।

এ গাছের বিশেষত্ব হচ্ছে, একই সময়ে ফল এবং ফুল শোভা পায়। নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। দিন-রাতের যে কোনো সময় নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণে একধরনের মাদকতা তৈরি করে। যা আপনাকে কাছে টানবেই। ফুলের গন্ধে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ।নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। নাগলিঙ্গমের টুকটুকে লাল ফুলগুলো খুবই সুন্দর, সবার দৃষ্টি কাড়ে। গাছগুলো মেহগনি গাছের মতো দীর্ঘ, মোটা এবং লম্বা।

নাগলিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম ‘কুরুপিটা গুইয়ানেন্সিস’ এবং তা লিসিসিবেসি পরিবারভুক্ত। প্রায় তিন হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান বনের জঙ্গলে প্রথমে এই গাছের সন্ধান মেলে। গাছগুলো ‘ক্যানন বল’ (কামানের গোলা) নামেও পরিচিতি। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।

দুর্লভ প্রকৃতির এ গাছের কা- থেকে শিকড়ের মতো বের হয়। সেই শিকড়ে ফুল ফোটে। একটি শিকড়ে অনেকগুলো ফুল থাকে। ফুলে ফুলে গাছের কা- আচ্ছাদিত হয়ে যায়।

ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে গোলাকৃতির বাদামি-খয়েরি বর্ণের ফল হয়। এই ফল হাতির পেটের রোগের জন্য উপকারী। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ।

শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই গাছটি বিশাল আকৃতির। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু এ গাছটি পরিদর্শনে আসেন। তারা নাগলিঙ্গম গাছ ও এর ফুলে আকৃষ্ট হন। নাগলিঙ্গম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন।

নাগলিঙ্গম গাছের দেখা খুব বেশি মেলে না। দেশে শতাধিকের ওপর এই গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাই মাসে নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ঐতিহ্যবাহী আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে চারটি বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম গাছ।

সত্তরের দশকে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বৃক্ষপ্রেমী প্রধান শিক্ষক প্রয়াত মতিউর রহমান তার এক ছাত্রকে দিয়ে বিদেশ থেকে নাগলিঙ্গমের চারা এনে স্কুলের মাঠের পূর্ব প্রান্তে চারা রোপণ করলে সেই গাছের ফল থেকে এখন চারটি গাছ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় (সেগুনবাগিচা, ঢাকা), পি.জি হসপিটাল সি ব্লগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালী ডিওএইচএস, দিনাজপুর রায়সাহেব বাড়ি লোকনাথ বাবা মন্দির, মুন্সিগঞ্জ (বিক্রমপুর) এর শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে জমিদার সাহেব বাবুর দীঘির পাশে, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরসহ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইগঞঞও), বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভাটিয়ারী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহীর

শাহ্ মখদুম কলেজ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অযাচক আশ্রম-বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়- মুরাদনগর, কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলা প্রশাষকের বাসভবন, শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়া, কুমিল্লা, জাতীয় ঈদগাঁ, গাজীপুর বা জয়দেবপুর ভাওয়াল রাজার বাড়ি (বর্তমানে ডি সি অফিস), একমি ল্যাবরেটরি, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলাস্থ জয়াগ নামক গ্রামের গান্ধী আশ্রমে এবং ধামরাইসহ সারাদেশে প্রায় শতাধিকের ওপর গাছ রয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। দক্ষিণ আমেরিকায় এ বৃক্ষেও কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। সুগন্ধী ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে বা বাড়ির আঙ্গিণায় রোপন করা হয়। বিরল প্রজাতির এই ফুলের গাছ পৃথিবীর অনেক জায়গায় চাষ করা হয়। বিরল প্রজাতির এই ফুলের গাছ চাষ করেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

ওষুধ হিসেবে এ বৃক্ষের ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেটের পীড়া দূরীকরণে এর জুঁড়ি নেই। পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। দক্ষিণ আমেরিকার সামানরা এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে।

পুলিশ সংস্কার বাস্তবায়নে দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

শার্শায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ

তিন জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩২ জনকে ‘পুশইন’ ভারতের

নিখোঁজ খিলক্ষেতের ব্যাংক কর্মকর্তার অবস্থান শনাক্তের দাবি পুলিশের

ছবি

গ্যাব পদ্ধতিতে আম চাষে সফল চাষি হিলির নিরঞ্জন

তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের সতর্কবার্তা

মোবাইল চুরির ঘটনায় মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা: র‌্যাব

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে তরুণদের, বিশেষ ঝুঁকিতে ছেলেরা

রবিবার পবিত্র আশুরা

ছবি

সঞ্চয়পত্রে সুদহার বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: উপদেষ্টা

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন প্রতিপক্ষ ছিল ভারতের, দাবি উপ-সেনাপ্রধানের

ছবি

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ২৪

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসেনি: নজরুল ইসলাম খান

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা মারা গেছেন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘ন্যূনতম হস্তক্ষেপ’ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার: প্রেস সচিব

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন কারাগারে

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

সৌরবিদ্যুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ‘আশানুরূপ নয়’

শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি’ প্রাপ্তির সম্ভাবনা

ছবি

‘মব’ তৈরি করে নগদ টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট, থানায় অভিযোগ হাবিবার

ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে: প্রেস সচিব

ছবি

‘ব্যাংকগুলোর টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’ — সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

সন্ত্রাসবাদ তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তার আশ্বাস বাংলাদেশের

ছবি

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জন কারাগারে

ছবি

তিন বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা

ছবি

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা আর নেই

ছবি

বিএনপি পুরনো খসড়া দেখে মন্তব্য করেছে: তৈয়্যব

ছবি

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছে, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ: আসিফ নজরুল

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলন

সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করলেন স্কুল শিক্ষক ছেলে

রাজধানীতে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন

কোভিড পরীক্ষার খরচ কমলো

ছবি

রাবিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গাছ কর্তন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে আপাতত বন্ধ

ছবি

পানিতে ডুবে ঠাকুরগাঁও ও বরুড়ায় চার শিশুর মৃত্যু

ছবি

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবো: নাহিদ

ছবি

তেঁতুলিয়ায় সরকারি ধান সংগ্রহে অনিয়ম

tab

জাতীয়

নাগলিঙ্গমের সুবাসে বিমোহিত বিটিআরআই প্রাঙ্গণ

প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছে ফুটেছে শত শত ফুল -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সবুজ চা পাতার রাজ্য সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে নাগলিঙ্গম। বিরল প্রজাতির এই ফুলটি অনেকের কাছে নাগকেশর নামেও পরিচিত। গত কয়েক দিন ধরে তার মাতাল সুবাসে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এলাকা মোহিত।

বিটিআরআই-এর প্রাঙ্গনে নাগলিঙ্গম গাছে ফুটেছে শত শত ফুল। অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি সুগন্ধ ছড়াচ্ছে ফুলগুলো।

প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাই মাসে ‘নাগলিঙ্গম’ বা ‘নাগকেশর’ ফোটে

ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। পাপড়ি ছয়টি, তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্যভাগে থাকা গর্ভাশয়টি অনেকটা ফণা তোলা সাপের মতো

জানা গেছে, পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে মাত্র দু’টি নাগালিঙ্গম গাছ। একটি গাছ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনিস্টিটিউট -এর পুকুরের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে, যা ১৯৯৩ সালে চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ আল হোসেন রোপণ করেছিলেন। অন্যটি শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের সাবেক নৌ-কর্মকর্তা মো. গউছ উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম। দুর্লভ নাগলিঙ্গম গাছে রাশি রাশি ফুল ফুটে। প্রায় ৫০ বছর আগে লাগানো এই গাছ এখন শত শত ফুলে পল্লবিত।

এই গাছের ফুলগুলো বেশ আকর্ষণীয়, চোখে পড়লেই পথচারীকে থমকে দাঁড়াতে হয়। ফুটবলের মতো জাম্বুরা আকৃতির ফলগুলো খয়েরি রঙের। এই ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। আকারে বড়। পাপড়ি ছয়টি এবং তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্যভাগে রয়েছে গর্ভাশয়। এর গর্ভাশয়টি অনেকটা ফণা তোলা সাপের মতো। এর জন্যই ফুলটির নাম ‘নাগলিঙ্গম’ বা নাগকেশর।

এ গাছের বিশেষত্ব হচ্ছে, একই সময়ে ফল এবং ফুল শোভা পায়। নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। দিন-রাতের যে কোনো সময় নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণে একধরনের মাদকতা তৈরি করে। যা আপনাকে কাছে টানবেই। ফুলের গন্ধে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ।নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। নাগলিঙ্গমের টুকটুকে লাল ফুলগুলো খুবই সুন্দর, সবার দৃষ্টি কাড়ে। গাছগুলো মেহগনি গাছের মতো দীর্ঘ, মোটা এবং লম্বা।

নাগলিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম ‘কুরুপিটা গুইয়ানেন্সিস’ এবং তা লিসিসিবেসি পরিবারভুক্ত। প্রায় তিন হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান বনের জঙ্গলে প্রথমে এই গাছের সন্ধান মেলে। গাছগুলো ‘ক্যানন বল’ (কামানের গোলা) নামেও পরিচিতি। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।

দুর্লভ প্রকৃতির এ গাছের কা- থেকে শিকড়ের মতো বের হয়। সেই শিকড়ে ফুল ফোটে। একটি শিকড়ে অনেকগুলো ফুল থাকে। ফুলে ফুলে গাছের কা- আচ্ছাদিত হয়ে যায়।

ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে গোলাকৃতির বাদামি-খয়েরি বর্ণের ফল হয়। এই ফল হাতির পেটের রোগের জন্য উপকারী। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ।

শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই গাছটি বিশাল আকৃতির। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু এ গাছটি পরিদর্শনে আসেন। তারা নাগলিঙ্গম গাছ ও এর ফুলে আকৃষ্ট হন। নাগলিঙ্গম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন।

নাগলিঙ্গম গাছের দেখা খুব বেশি মেলে না। দেশে শতাধিকের ওপর এই গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাই মাসে নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ঐতিহ্যবাহী আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে চারটি বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম গাছ।

সত্তরের দশকে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বৃক্ষপ্রেমী প্রধান শিক্ষক প্রয়াত মতিউর রহমান তার এক ছাত্রকে দিয়ে বিদেশ থেকে নাগলিঙ্গমের চারা এনে স্কুলের মাঠের পূর্ব প্রান্তে চারা রোপণ করলে সেই গাছের ফল থেকে এখন চারটি গাছ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় (সেগুনবাগিচা, ঢাকা), পি.জি হসপিটাল সি ব্লগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালী ডিওএইচএস, দিনাজপুর রায়সাহেব বাড়ি লোকনাথ বাবা মন্দির, মুন্সিগঞ্জ (বিক্রমপুর) এর শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে জমিদার সাহেব বাবুর দীঘির পাশে, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরসহ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইগঞঞও), বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভাটিয়ারী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহীর

শাহ্ মখদুম কলেজ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অযাচক আশ্রম-বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়- মুরাদনগর, কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলা প্রশাষকের বাসভবন, শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়া, কুমিল্লা, জাতীয় ঈদগাঁ, গাজীপুর বা জয়দেবপুর ভাওয়াল রাজার বাড়ি (বর্তমানে ডি সি অফিস), একমি ল্যাবরেটরি, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলাস্থ জয়াগ নামক গ্রামের গান্ধী আশ্রমে এবং ধামরাইসহ সারাদেশে প্রায় শতাধিকের ওপর গাছ রয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। দক্ষিণ আমেরিকায় এ বৃক্ষেও কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। সুগন্ধী ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে বা বাড়ির আঙ্গিণায় রোপন করা হয়। বিরল প্রজাতির এই ফুলের গাছ পৃথিবীর অনেক জায়গায় চাষ করা হয়। বিরল প্রজাতির এই ফুলের গাছ চাষ করেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

ওষুধ হিসেবে এ বৃক্ষের ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেটের পীড়া দূরীকরণে এর জুঁড়ি নেই। পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। দক্ষিণ আমেরিকার সামানরা এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে।

back to top