alt

বোরোর আশাজাগানিয়া ফলন, তবে রোগে নষ্ট জমির ৮০ ভাগ ধান

প্রতিনিধি, কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইল কালিহাতীতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি শুরু হবে ধান কাটার কাজ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় ফলন বাম্পার, ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় কৃষক

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারদের তারা কখনও জমিতে দেখেননি

যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে

জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কৃষকের মুখে ফুটেছে নবান্নের হাসি। তবে কোথাও কোথাও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হতাশায় কৃষক।

এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। কালিহাতীর কৃষকরা শুধু পরিবারে চালের চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দু’বার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর খড় উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত খড় বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২-৩ হাজার টাকা।

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার ধান কাটার শ্রমিক আজিবুর, দিপরুল রহমান, শাহানুর, রাব্বি, আনিসুল হক, জাহিদুল ও রিয়াজুল এসেছে কালীহাতির হাসড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের জমিতে ধান কাটতেন। এ সময় আজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আমরা সারা বছর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বছরে একবার টাঙ্গাইলে চলে আসি বোরো ধান কাটার সময়। এখানে ২০-২২ দিন কাজ করলে ভালো টাকা নিয়ে বাড়িতে যাইতে পারি। তাছাড়া শুরুতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ১২শ’ টাকা পর্যন্ত হয় প্রতিজনের মজুরি। তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইলের মানুষ জমিতে টাকা খরচ করে, কিন্তু সময়মতো টাকা খরচ করতে পারে না। আমরা যেই মালিকের জমিতে ধান কাটতেছি এই জমিতে কিছু কিছু জায়গায় ধান মরে গেছে।

সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের সফিকুল ইসলামের ৪০ শতাংশ বি-৮৯ ধান চাষ করেন। ধান কাটা পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে ২৫ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ ৭০-৮০% শতাংশ ধান মরে গেছে। এখন শুধু ৫ মণ ধান হবে কিনা সম্ভাবনা কম। চকের বিভিন্ন খেতে দেখা যাচ্ছে বি-৮৯ জাতের ধানে পোকার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এলাকায় যে কৃষি ব্লক সুপারভাইজার রয়েছে তাকে কখনও দেখা যায় না। তাদের উচিত কৃষকদের সচেতন করা।

হাসড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির ৮০% ধান ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে। জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান ঘরে তোলা নিয়ে সব খরচ মিলে পুরোটাই লস হবে। ৪৫ শতাংশ জমির পুরো ধান মরে গেছে। জমি পরিষ্কার করতে ৫ জন শ্রমিক এনেছি, প্রতিজনের মজুরি ৭শ’ টাকা করে।

এ সময় ধান কাটার শ্রমিক কুড়িগ্রাম তৈইব আলী, রাশেদুল, আফিজুর, জলু মিয়া, লাল মিয়া বলেন, জমির মালিক আমাদের নিয়ে এসেছেন ধান কাটার জন্য, এসে দেখি সব ধান চিটা হয়ে গেছে। মালিক কান্না করতেছে শ্রমিকের মজুরি কোথা থেকে দেবে। ৪৫ শতাংশ জমিতে ৫ মণ ধানের বেশি হবে না।

একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মণ ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মণ হবে কিনা। তিনি আরও জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারকে কখনও এলাকায় আসতে দেখি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোনো তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদের চোখে পড়ে না।

পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উফশী : বি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছি। জমির আশপাশে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেলকে কখনও দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভ থাকবে। ফলন এবার খুব ভালো হবে বলে আশা করছি। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও

শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পাইকড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পাইকড়া, ২নং ওয়ার্ড হাসড়া উত্তর ও ৩নং ওয়ার্ড হাসড়া দক্ষিণে কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়নি।

সহদেবপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার, ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার, ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার বলেন, আমি নিয়মিতই আমার ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যেই কর্মকর্তারা ঠিকমতো আসেন না তাদের কৃষকের চোখে পড়ে না।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার এ বিষয়ে জানান, আমরাও এখনও কৃষকদের লিফলেট দিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য অবগত করছি। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করলেও হয়, এটা এক ধরনের ছত্রাক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মো. রাসেল এ বিষয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নে আমি একাই কাজ করি। সিদ্দিক নামের আরেকজন আছে সে ছয় মাস ধরে অসুস্থ। আমি একা কয়দিক সামলাবো।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না।

ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমরা কৃষি ব্লক সুপারভাইজাদের নিয়ে কৃষকের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পিং করে তাদের সচেতন করি। যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকদের ৮০% ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

ছবি

নির্বাচন পর্যন্ত ‘অপরিহার্য কারণ’ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ নয়: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

ছবি

মায়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ: বাঁচলেন না বিজিবি সদস্য আক্তার

ছবি

মোন্থার প্রভাবে বৃষ্টি, চলবে ৫ দিন বলে পূর্বাভাস

ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুতই শেষ হবে: র‌্যাব

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার, মৃত্যু ২৭৮

আওয়ামী লীগের ‘সব খারাপ কাজ’ অন্য দলগুলো কন্টিনিউ করছে: আসিফ নজরুল

ছবি

চালু হলো খুলনার নতুন কারাগার, প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ

ছবি

শন্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিতে তিন বাহিনী প্রধানকে নির্দেশ মুহাম্মদ ইউনূসের

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’র প্রভাবে বৃষ্টি, সাগরে ফের লঘুচাপের আভাস

ছবি

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে, অক্টোবর মাসে হাসপাতালে ভর্তি সর্বোচ্চ

ছবি

সংস্কারের পক্ষে যারা থাকবে সংসদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে হাসনাত আব্দুল্লাহ

ছবি

শনিবার থেকে এক ব্যক্তির নামে ১০টির বেশি সিম বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করবে বিটিআরসি

ছবি

বেস্টিনেটের আমিনুল, রুহুলকে প্রত্যর্পণে দুই দেশের পুলিশ সমন্বয় করছে: মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আগামী সংসদ নির্বাচনে কয়েদিরাও ভোট দিতে পারবেন: নির্বাচন কমিশনার

ছবি

গণভোট নিয়ে যে সিদ্ধান্তই হোক, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে হবে: প্রেস সচিব

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: হাসিনাসহ ২৬১ জনকে ‘পলাতক’ দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

ছবি

ভারতের লঘুচাপের প্রভাবে বাংলাদেশে তিনটি বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অনিবন্ধিত মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর

দুর্ঘটনার সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর সিলেট ছাড়লো লন্ডনগামী বিমান

‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মুখে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ: কর্মশালায় বিশ্লেষণ

ছবি

দুদক সংস্কার কমিশনের ‘কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে’ খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন, টিআইবির উদ্বেগ

ছবি

ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

ছবি

ভোট কবে, জানা যাবে ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে’

টিভি সূচি

ছবি

পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে উন্নয়ন ‘টেকসই হতে পারে না’: সৈয়দা রিজওয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

হালদা নদী রক্ষায় গেজেট পরিবর্তন করা হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

‘সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে থাকা’ নিয়ে মন্তব্যের ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের

ছবি

নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিএমপিকে ইসির চিঠি

ছবি

সংবিধান সংস্কার ‘জুলাই সনদ অনুসারে’: ২৭০ পঞ্জিকা দিবসে না হলে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পাস’

আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে এমপিও নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ বিলুপ্ত, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ যোগ্যতায় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অতীত থেকে মুক্তির পথ দেখাবে: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে সরকারের জন্য দুটি বিকল্প পথ প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

ছবি

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বডি-ওর্ন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

tab

বোরোর আশাজাগানিয়া ফলন, তবে রোগে নষ্ট জমির ৮০ ভাগ ধান

প্রতিনিধি, কালিহাতী (টাঙ্গাইল)

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইল কালিহাতীতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি শুরু হবে ধান কাটার কাজ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় ফলন বাম্পার, ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় কৃষক

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারদের তারা কখনও জমিতে দেখেননি

যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে

জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কৃষকের মুখে ফুটেছে নবান্নের হাসি। তবে কোথাও কোথাও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হতাশায় কৃষক।

এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। কালিহাতীর কৃষকরা শুধু পরিবারে চালের চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দু’বার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর খড় উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত খড় বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২-৩ হাজার টাকা।

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার ধান কাটার শ্রমিক আজিবুর, দিপরুল রহমান, শাহানুর, রাব্বি, আনিসুল হক, জাহিদুল ও রিয়াজুল এসেছে কালীহাতির হাসড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের জমিতে ধান কাটতেন। এ সময় আজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আমরা সারা বছর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বছরে একবার টাঙ্গাইলে চলে আসি বোরো ধান কাটার সময়। এখানে ২০-২২ দিন কাজ করলে ভালো টাকা নিয়ে বাড়িতে যাইতে পারি। তাছাড়া শুরুতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ১২শ’ টাকা পর্যন্ত হয় প্রতিজনের মজুরি। তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইলের মানুষ জমিতে টাকা খরচ করে, কিন্তু সময়মতো টাকা খরচ করতে পারে না। আমরা যেই মালিকের জমিতে ধান কাটতেছি এই জমিতে কিছু কিছু জায়গায় ধান মরে গেছে।

সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের সফিকুল ইসলামের ৪০ শতাংশ বি-৮৯ ধান চাষ করেন। ধান কাটা পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে ২৫ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ ৭০-৮০% শতাংশ ধান মরে গেছে। এখন শুধু ৫ মণ ধান হবে কিনা সম্ভাবনা কম। চকের বিভিন্ন খেতে দেখা যাচ্ছে বি-৮৯ জাতের ধানে পোকার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এলাকায় যে কৃষি ব্লক সুপারভাইজার রয়েছে তাকে কখনও দেখা যায় না। তাদের উচিত কৃষকদের সচেতন করা।

হাসড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির ৮০% ধান ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে। জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান ঘরে তোলা নিয়ে সব খরচ মিলে পুরোটাই লস হবে। ৪৫ শতাংশ জমির পুরো ধান মরে গেছে। জমি পরিষ্কার করতে ৫ জন শ্রমিক এনেছি, প্রতিজনের মজুরি ৭শ’ টাকা করে।

এ সময় ধান কাটার শ্রমিক কুড়িগ্রাম তৈইব আলী, রাশেদুল, আফিজুর, জলু মিয়া, লাল মিয়া বলেন, জমির মালিক আমাদের নিয়ে এসেছেন ধান কাটার জন্য, এসে দেখি সব ধান চিটা হয়ে গেছে। মালিক কান্না করতেছে শ্রমিকের মজুরি কোথা থেকে দেবে। ৪৫ শতাংশ জমিতে ৫ মণ ধানের বেশি হবে না।

একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মণ ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মণ হবে কিনা। তিনি আরও জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারকে কখনও এলাকায় আসতে দেখি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোনো তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদের চোখে পড়ে না।

পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উফশী : বি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছি। জমির আশপাশে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেলকে কখনও দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভ থাকবে। ফলন এবার খুব ভালো হবে বলে আশা করছি। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও

শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পাইকড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পাইকড়া, ২নং ওয়ার্ড হাসড়া উত্তর ও ৩নং ওয়ার্ড হাসড়া দক্ষিণে কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়নি।

সহদেবপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার, ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার, ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার বলেন, আমি নিয়মিতই আমার ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যেই কর্মকর্তারা ঠিকমতো আসেন না তাদের কৃষকের চোখে পড়ে না।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার এ বিষয়ে জানান, আমরাও এখনও কৃষকদের লিফলেট দিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য অবগত করছি। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করলেও হয়, এটা এক ধরনের ছত্রাক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মো. রাসেল এ বিষয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নে আমি একাই কাজ করি। সিদ্দিক নামের আরেকজন আছে সে ছয় মাস ধরে অসুস্থ। আমি একা কয়দিক সামলাবো।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না।

ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমরা কৃষি ব্লক সুপারভাইজাদের নিয়ে কৃষকের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পিং করে তাদের সচেতন করি। যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকদের ৮০% ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

back to top