alt

জাতীয়

বোরোর আশাজাগানিয়া ফলন, তবে রোগে নষ্ট জমির ৮০ ভাগ ধান

প্রতিনিধি, কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইল কালিহাতীতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি শুরু হবে ধান কাটার কাজ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় ফলন বাম্পার, ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় কৃষক

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারদের তারা কখনও জমিতে দেখেননি

যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে

জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কৃষকের মুখে ফুটেছে নবান্নের হাসি। তবে কোথাও কোথাও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হতাশায় কৃষক।

এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। কালিহাতীর কৃষকরা শুধু পরিবারে চালের চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দু’বার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর খড় উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত খড় বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২-৩ হাজার টাকা।

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার ধান কাটার শ্রমিক আজিবুর, দিপরুল রহমান, শাহানুর, রাব্বি, আনিসুল হক, জাহিদুল ও রিয়াজুল এসেছে কালীহাতির হাসড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের জমিতে ধান কাটতেন। এ সময় আজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আমরা সারা বছর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বছরে একবার টাঙ্গাইলে চলে আসি বোরো ধান কাটার সময়। এখানে ২০-২২ দিন কাজ করলে ভালো টাকা নিয়ে বাড়িতে যাইতে পারি। তাছাড়া শুরুতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ১২শ’ টাকা পর্যন্ত হয় প্রতিজনের মজুরি। তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইলের মানুষ জমিতে টাকা খরচ করে, কিন্তু সময়মতো টাকা খরচ করতে পারে না। আমরা যেই মালিকের জমিতে ধান কাটতেছি এই জমিতে কিছু কিছু জায়গায় ধান মরে গেছে।

সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের সফিকুল ইসলামের ৪০ শতাংশ বি-৮৯ ধান চাষ করেন। ধান কাটা পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে ২৫ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ ৭০-৮০% শতাংশ ধান মরে গেছে। এখন শুধু ৫ মণ ধান হবে কিনা সম্ভাবনা কম। চকের বিভিন্ন খেতে দেখা যাচ্ছে বি-৮৯ জাতের ধানে পোকার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এলাকায় যে কৃষি ব্লক সুপারভাইজার রয়েছে তাকে কখনও দেখা যায় না। তাদের উচিত কৃষকদের সচেতন করা।

হাসড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির ৮০% ধান ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে। জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান ঘরে তোলা নিয়ে সব খরচ মিলে পুরোটাই লস হবে। ৪৫ শতাংশ জমির পুরো ধান মরে গেছে। জমি পরিষ্কার করতে ৫ জন শ্রমিক এনেছি, প্রতিজনের মজুরি ৭শ’ টাকা করে।

এ সময় ধান কাটার শ্রমিক কুড়িগ্রাম তৈইব আলী, রাশেদুল, আফিজুর, জলু মিয়া, লাল মিয়া বলেন, জমির মালিক আমাদের নিয়ে এসেছেন ধান কাটার জন্য, এসে দেখি সব ধান চিটা হয়ে গেছে। মালিক কান্না করতেছে শ্রমিকের মজুরি কোথা থেকে দেবে। ৪৫ শতাংশ জমিতে ৫ মণ ধানের বেশি হবে না।

একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মণ ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মণ হবে কিনা। তিনি আরও জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারকে কখনও এলাকায় আসতে দেখি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোনো তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদের চোখে পড়ে না।

পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উফশী : বি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছি। জমির আশপাশে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেলকে কখনও দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভ থাকবে। ফলন এবার খুব ভালো হবে বলে আশা করছি। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও

শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পাইকড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পাইকড়া, ২নং ওয়ার্ড হাসড়া উত্তর ও ৩নং ওয়ার্ড হাসড়া দক্ষিণে কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়নি।

সহদেবপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার, ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার, ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার বলেন, আমি নিয়মিতই আমার ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যেই কর্মকর্তারা ঠিকমতো আসেন না তাদের কৃষকের চোখে পড়ে না।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার এ বিষয়ে জানান, আমরাও এখনও কৃষকদের লিফলেট দিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য অবগত করছি। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করলেও হয়, এটা এক ধরনের ছত্রাক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মো. রাসেল এ বিষয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নে আমি একাই কাজ করি। সিদ্দিক নামের আরেকজন আছে সে ছয় মাস ধরে অসুস্থ। আমি একা কয়দিক সামলাবো।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না।

ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমরা কৃষি ব্লক সুপারভাইজাদের নিয়ে কৃষকের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পিং করে তাদের সচেতন করি। যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকদের ৮০% ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

২১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের নাম

আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না: মির্জা ফখরুল

সাবেক আইনমন্ত্রীকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মারধর

ঐকমত্যে আসা সংস্কার সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে: নুর

ছবি

শ্রীমঙ্গলে রোমাঞ্চকর লাসুবন গিরিখাত

ছবি

তরুণ গবেষকদের ছোঁয়ায় বদলে যাবে কৃষি

এ বছর হজে নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন

অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে -আইন উপদেষ্টা

ছবি

হজ অ্যাপ ‘লাব্বায়েক’ এর উদ্বোধন

কেরানীগঞ্জে ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন ও মূল ঘাতক গ্রেফতার

মামলা হলেই গ্রেপ্তার নয়, তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পর ব্যবস্থা: আইজিপি

দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, ঋণমান সংস্থাকে জানালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অন্তত ৫০টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের আগে ভোট চায়: আমীর খসরু

আশুলিয়ায় ‘লাশ পোড়ানোর’ আগে হত্যার ভিডিও পাওয়া গেছে: ট্রাইব্যুনালকে প্রসিকিউশন

খরচ, মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়, শেষ হচ্ছে না খুলনার ৩২ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

ছবি

"সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তি করেছে হাই কোর্ট"

ছবি

পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

ছবি

হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগে প্রতিকারের চেষ্টা চলছে: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

রাখাইনে মানবিক করিডর চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের গেজেট জারি

ছবি

আইজিপি বাহারুল আলমের হতাশা, পুলিশ কমিশনের কাঠামো না দেওয়ায় অপেক্ষা

ছবি

হজযাত্রীদের সেবা সহজ করতে মোবাইল অ্যাপ লাব্বায়েক উদ্বোধন

দায়িত্ব বহির্ভূত কার্যক্রম,সিলেটের ডিসিকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ আদালতের

ছবি

সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজন করবে ক্যাথলিক চার্চ

ছবি

দেশে ফিরেছেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে দলগুলোর ঐক্য চান আলী রীয়াজ

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার এখনো মানুষের কাছে ভালো সমাধান মনে হয়: মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত, অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার

ছবি

টঙ্গীতে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় শ্রমিক বিক্ষোভ

রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি ১৮ মে

ছবি

শিক্ষার্থীদের নিয়ে থানার কার্যক্রম পরিদর্শন

ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু

ছবি

আড়াই মাসেও অপহৃত লিখনের সন্ধান মেলেনি

নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার অনন্তলোকে

ছবি

২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের নাম

ছবি

ওষুধ কেনার অর্থ নেই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের

tab

জাতীয়

বোরোর আশাজাগানিয়া ফলন, তবে রোগে নষ্ট জমির ৮০ ভাগ ধান

প্রতিনিধি, কালিহাতী (টাঙ্গাইল)

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইল কালিহাতীতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি শুরু হবে ধান কাটার কাজ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় ফলন বাম্পার, ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় কৃষক

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারদের তারা কখনও জমিতে দেখেননি

যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে

জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কৃষকের মুখে ফুটেছে নবান্নের হাসি। তবে কোথাও কোথাও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হতাশায় কৃষক।

এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। কালিহাতীর কৃষকরা শুধু পরিবারে চালের চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দু’বার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর খড় উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত খড় বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২-৩ হাজার টাকা।

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার ধান কাটার শ্রমিক আজিবুর, দিপরুল রহমান, শাহানুর, রাব্বি, আনিসুল হক, জাহিদুল ও রিয়াজুল এসেছে কালীহাতির হাসড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের জমিতে ধান কাটতেন। এ সময় আজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আমরা সারা বছর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বছরে একবার টাঙ্গাইলে চলে আসি বোরো ধান কাটার সময়। এখানে ২০-২২ দিন কাজ করলে ভালো টাকা নিয়ে বাড়িতে যাইতে পারি। তাছাড়া শুরুতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ১২শ’ টাকা পর্যন্ত হয় প্রতিজনের মজুরি। তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইলের মানুষ জমিতে টাকা খরচ করে, কিন্তু সময়মতো টাকা খরচ করতে পারে না। আমরা যেই মালিকের জমিতে ধান কাটতেছি এই জমিতে কিছু কিছু জায়গায় ধান মরে গেছে।

সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের সফিকুল ইসলামের ৪০ শতাংশ বি-৮৯ ধান চাষ করেন। ধান কাটা পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে ২৫ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ ৭০-৮০% শতাংশ ধান মরে গেছে। এখন শুধু ৫ মণ ধান হবে কিনা সম্ভাবনা কম। চকের বিভিন্ন খেতে দেখা যাচ্ছে বি-৮৯ জাতের ধানে পোকার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এলাকায় যে কৃষি ব্লক সুপারভাইজার রয়েছে তাকে কখনও দেখা যায় না। তাদের উচিত কৃষকদের সচেতন করা।

হাসড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, আমার ৪৫ শতাংশ জমির ৮০% ধান ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে। জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান ঘরে তোলা নিয়ে সব খরচ মিলে পুরোটাই লস হবে। ৪৫ শতাংশ জমির পুরো ধান মরে গেছে। জমি পরিষ্কার করতে ৫ জন শ্রমিক এনেছি, প্রতিজনের মজুরি ৭শ’ টাকা করে।

এ সময় ধান কাটার শ্রমিক কুড়িগ্রাম তৈইব আলী, রাশেদুল, আফিজুর, জলু মিয়া, লাল মিয়া বলেন, জমির মালিক আমাদের নিয়ে এসেছেন ধান কাটার জন্য, এসে দেখি সব ধান চিটা হয়ে গেছে। মালিক কান্না করতেছে শ্রমিকের মজুরি কোথা থেকে দেবে। ৪৫ শতাংশ জমিতে ৫ মণ ধানের বেশি হবে না।

একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মণ ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মণ হবে কিনা। তিনি আরও জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজারকে কখনও এলাকায় আসতে দেখি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোনো তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদের চোখে পড়ে না।

পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উফশী : বি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছি। জমির আশপাশে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেলকে কখনও দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভ থাকবে। ফলন এবার খুব ভালো হবে বলে আশা করছি। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও

শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পাইকড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পাইকড়া, ২নং ওয়ার্ড হাসড়া উত্তর ও ৩নং ওয়ার্ড হাসড়া দক্ষিণে কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়নি।

সহদেবপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার, ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার, ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিপা আক্তার বলেন, আমি নিয়মিতই আমার ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যেই কর্মকর্তারা ঠিকমতো আসেন না তাদের কৃষকের চোখে পড়ে না।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদা আক্তার এ বিষয়ে জানান, আমরাও এখনও কৃষকদের লিফলেট দিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য অবগত করছি। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করলে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করলেও হয়, এটা এক ধরনের ছত্রাক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মো. রাসেল এ বিষয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নে আমি একাই কাজ করি। সিদ্দিক নামের আরেকজন আছে সে ছয় মাস ধরে অসুস্থ। আমি একা কয়দিক সামলাবো।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না।

ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমরা কৃষি ব্লক সুপারভাইজাদের নিয়ে কৃষকের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পিং করে তাদের সচেতন করি। যে যে এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যা রয়েছে তাদের ডেকে এনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকদের ৮০% ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

back to top