alt

তরুণ গবেষকদের ছোঁয়ায় বদলে যাবে কৃষি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

খনার বচনে আছে, ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত’ অর্থাৎ কলার গাছ লাগানোর পর তার পাতা কাটা যাবে না। তাহলে কলার ফসল ভালো হবে। আর সেই কলা বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্ত নানান রোগের কারণে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

২০ শিক্ষার্থী পেলেন টিস্যু কালচার প্রকল্পের গবেষণায় সহায়তা

রোগমুক্ত-অধিক ফলনসমৃদ্ধ চারা তৈরির উপায় নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন

১৫ ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন হবে, সুফল পাবেন কৃষক

এসব এই রোগ থেকে পরিত্রাণের পাশাপাশি তুলনামূলক কম সময়ে, কম খরচে অধিকসংখ্যক উন্নত জাতের কলার চারা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে টিস্যুকালচারের মাধ্যমে।

পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি অর্কিড ও অর্নামেন্টাল প্লান্টসের চারা উৎপাদন করা সম্ভব টিস্যু কালচারের মাধ্যমে। এ ছাড়া স্ট্রবেরি, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, স্টেভিয়াসহ অর্নামেন্টাল প্লান্টস উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচার প্রয়োগ করে আলুর রোগমুক্ত চারা ও বীজ মাইক্রোটিউবার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পে’র

ল্যাবে এসব গবেষণার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীকে প্রকল্প থেকে গবেষণায় সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাদের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন আর আত্মপ্রত্যয়। কেউ গবেষণা করেছেন জারবেরা ফুলের চারা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে, কেউবা কাজ করেছেন আনারসের চারা উদ্ভাবনের উপায় তৈরিতে। কারও গবেষণায় বাতলে দেয়া হয় মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদনের উপায়, সুগারবিটের চারা তৈরির কৌশল। বাদ পড়েনি অর্কিড, আদা ও কলাসহ অন্য কৃষি পণ্যও। টিস্যু কালচার পদ্ধতি (মূল জীব থেকে আলাদা একটি কৃত্রিম মাধ্যমে টিস্যু বা কোষের বৃদ্ধি) ব্যবহার করে রোগমুক্ত এবং তুলনামূলক কম সময়ে অধিক ফলনসমৃদ্ধ এসব জাতের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন তরুণ গবেষকরা।

তারা ১৫টি ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে উন্নত-রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। পুরো এই গবেষণায় নেয়া হবে কৃষকের অভিজ্ঞতা।

সোমবার,(২৮ এপ্রিল ২০২৫)রাজধানীর কৃষি তথ্য সার্ভিস অডিটরিয়ামে টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে গবেষণার জন্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়। প্রকল্পের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কৃষি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক স্বপ্নবাজের নতুন পথচলা শুরু হলো।

অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(ডিজি) মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘আগামীর কৃষি হবে প্রযুক্তিনির্ভর। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি জ্ঞান, উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এই তরুণ গবেষকরা সেই পরিবর্তনের দূত। তরুণদের হাত ধরে কৃষি পাবে নতুন প্রাণ, নতুন পরিচয়। টিস্যু কালচার ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংÑ এই দুটি শাখাকে সামনে রেখেই উন্মোচিত হচ্ছে আগামীর কৃষির সম্ভাবনার নতুন দ্বার।’

টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, ‘টিস্যু কালচার প্রযুক্তি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। আমাদের দেশে উচ্চফলনশীল, রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন চারা বা প্লান্টলেট উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জারবেরা ফুল, অর্কিড, আনারস, কলা, আদা, মিষ্টি আলুসহ মোট ১৫টি ফসলের টিস্যু কালচার রিজেনারেশন প্রটোকল তৈরি করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই প্রটোকল ব্যবহার করে উন্নতমানের রোগমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন করা হবে এবং কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হবে, যা কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

‘তরুণ গবেষকদের যুক্ত করে আমরা এমন একটি টেকসই গবেষণা-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগবে। একদিকে গবেষণার উৎকর্ষ সাধন হবে, অন্যদিকে কৃষক পাবে উন্নত জাতের সহজলভ্য চারার সুবিধা। কৃষির আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উন্নয়নে এই প্রকল্প একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে,’ বলেও আশাবাদ তার।

তরুণ গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের অনন্য অবদানের কারণে। কিন্তু সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের লড়তে হবে। লবণাক্ততা, বন্যা, খরা তো আছেই, রোগজীবাণুকে কীটনাশক ছাড়া প্রযুক্তি দিয়ে দমন করার কৌশল বের করতে হবে। আমরা যে যাত্রা শুরু করেছি, তা কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দিতে না পারলে তো এই গবেষণার কোনো মূল্য নেই। আমরাদের আশা কৃষক এই গবেষণার সুফল পাবেন।’

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মাদারিপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ টিস্যুকালচার ল্যাবে চারা তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া বান্দরবান, ভোলা, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও সাভারে বিশ্বমানের টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মো. জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক এস. এম. সোহরা উদ্দিন, পরিকল্পনা ও আইসিটি উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার, টিস্যু কালচার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ একরামুল হক। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফাহমিদা খাতুন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মেহেদি হাসান খান।

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭৫৮ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪

ছবি

জুলাই সনদ: দ্বিমত থাকলেও সইয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন

ছবি

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ

ছবি

হাসিনার ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে’, এআই নয় যুক্তিতর্কে দাবি তাজুলের

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ বৃহস্পতিবার

ছবি

শোনার মানসিকতা রাজনৈতিক দলেরও থাকতে হবে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ছিল কুখ্যাত গডফাদার, বললেন আইন উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

‘আনন্দঘন’ পরিবেশে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আশা আলী রীয়াজের

ছবি

জুলাই সনদ: সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলাম: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

ছবি

হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জানুয়ারি

ছবি

ইতালি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৮৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’: টিআইবি

ছবি

পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

ছবি

বুধবার থেকে অনলাইনে জামিননামা, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: ৫ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: হানিফসহ চারজনকে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার ‘কমান্ড রেসনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হয়েছে দাবি প্রসিকিউশনের

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৬১ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এ বছর প্রাণহানি ২৩৮

ছবি

অনলাইনে বেলবন্ড গ্রহণপ্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে বুধবার

ছবি

বেতনভাতার দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান তৃতীয় দিনে, দুপুরে ‘মার্চ টু সচিবালয়’

ছবি

বাংলাদেশে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে ক্রিকইনফো বন্ধের প্রস্তাব তুললেন তৈয়্যব

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮৫৭ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩

ছবি

নভেম্বরেই গণভোট চায় জামায়াত, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাস্তবায়ন করবে ইসি

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার

ছবি

সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র খসড়া: পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের ভবনকে ‘অস্থায়ী কারাগার’ ঘোষণা

ছবি

একই দিনে একই প্রশ্নে মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা ১২ ডিসেম্বর

tab

তরুণ গবেষকদের ছোঁয়ায় বদলে যাবে কৃষি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

খনার বচনে আছে, ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত’ অর্থাৎ কলার গাছ লাগানোর পর তার পাতা কাটা যাবে না। তাহলে কলার ফসল ভালো হবে। আর সেই কলা বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্ত নানান রোগের কারণে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

২০ শিক্ষার্থী পেলেন টিস্যু কালচার প্রকল্পের গবেষণায় সহায়তা

রোগমুক্ত-অধিক ফলনসমৃদ্ধ চারা তৈরির উপায় নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন

১৫ ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন হবে, সুফল পাবেন কৃষক

এসব এই রোগ থেকে পরিত্রাণের পাশাপাশি তুলনামূলক কম সময়ে, কম খরচে অধিকসংখ্যক উন্নত জাতের কলার চারা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে টিস্যুকালচারের মাধ্যমে।

পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি অর্কিড ও অর্নামেন্টাল প্লান্টসের চারা উৎপাদন করা সম্ভব টিস্যু কালচারের মাধ্যমে। এ ছাড়া স্ট্রবেরি, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, স্টেভিয়াসহ অর্নামেন্টাল প্লান্টস উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচার প্রয়োগ করে আলুর রোগমুক্ত চারা ও বীজ মাইক্রোটিউবার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পে’র

ল্যাবে এসব গবেষণার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীকে প্রকল্প থেকে গবেষণায় সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাদের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন আর আত্মপ্রত্যয়। কেউ গবেষণা করেছেন জারবেরা ফুলের চারা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে, কেউবা কাজ করেছেন আনারসের চারা উদ্ভাবনের উপায় তৈরিতে। কারও গবেষণায় বাতলে দেয়া হয় মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদনের উপায়, সুগারবিটের চারা তৈরির কৌশল। বাদ পড়েনি অর্কিড, আদা ও কলাসহ অন্য কৃষি পণ্যও। টিস্যু কালচার পদ্ধতি (মূল জীব থেকে আলাদা একটি কৃত্রিম মাধ্যমে টিস্যু বা কোষের বৃদ্ধি) ব্যবহার করে রোগমুক্ত এবং তুলনামূলক কম সময়ে অধিক ফলনসমৃদ্ধ এসব জাতের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন তরুণ গবেষকরা।

তারা ১৫টি ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে উন্নত-রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। পুরো এই গবেষণায় নেয়া হবে কৃষকের অভিজ্ঞতা।

সোমবার,(২৮ এপ্রিল ২০২৫)রাজধানীর কৃষি তথ্য সার্ভিস অডিটরিয়ামে টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে গবেষণার জন্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়। প্রকল্পের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কৃষি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক স্বপ্নবাজের নতুন পথচলা শুরু হলো।

অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(ডিজি) মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘আগামীর কৃষি হবে প্রযুক্তিনির্ভর। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি জ্ঞান, উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এই তরুণ গবেষকরা সেই পরিবর্তনের দূত। তরুণদের হাত ধরে কৃষি পাবে নতুন প্রাণ, নতুন পরিচয়। টিস্যু কালচার ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংÑ এই দুটি শাখাকে সামনে রেখেই উন্মোচিত হচ্ছে আগামীর কৃষির সম্ভাবনার নতুন দ্বার।’

টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, ‘টিস্যু কালচার প্রযুক্তি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। আমাদের দেশে উচ্চফলনশীল, রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন চারা বা প্লান্টলেট উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জারবেরা ফুল, অর্কিড, আনারস, কলা, আদা, মিষ্টি আলুসহ মোট ১৫টি ফসলের টিস্যু কালচার রিজেনারেশন প্রটোকল তৈরি করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই প্রটোকল ব্যবহার করে উন্নতমানের রোগমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন করা হবে এবং কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হবে, যা কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

‘তরুণ গবেষকদের যুক্ত করে আমরা এমন একটি টেকসই গবেষণা-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগবে। একদিকে গবেষণার উৎকর্ষ সাধন হবে, অন্যদিকে কৃষক পাবে উন্নত জাতের সহজলভ্য চারার সুবিধা। কৃষির আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উন্নয়নে এই প্রকল্প একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে,’ বলেও আশাবাদ তার।

তরুণ গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের অনন্য অবদানের কারণে। কিন্তু সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের লড়তে হবে। লবণাক্ততা, বন্যা, খরা তো আছেই, রোগজীবাণুকে কীটনাশক ছাড়া প্রযুক্তি দিয়ে দমন করার কৌশল বের করতে হবে। আমরা যে যাত্রা শুরু করেছি, তা কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দিতে না পারলে তো এই গবেষণার কোনো মূল্য নেই। আমরাদের আশা কৃষক এই গবেষণার সুফল পাবেন।’

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মাদারিপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ টিস্যুকালচার ল্যাবে চারা তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া বান্দরবান, ভোলা, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও সাভারে বিশ্বমানের টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মো. জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক এস. এম. সোহরা উদ্দিন, পরিকল্পনা ও আইসিটি উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার, টিস্যু কালচার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ একরামুল হক। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফাহমিদা খাতুন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মেহেদি হাসান খান।

back to top