কুয়েটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -সংবাদ
আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ৩৭ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার, (১৩ মে ২০২৫) ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা ‘হামলা-মামলা-বহিষ্কার, মানি না, মানব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো বিচার হয়নি। ওই সময় আন্দোলনের অংশ হিসেবে যেসব শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল, পরে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পর একই শিক্ষার্থীদের আবার শোকজ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে ‘প্রহসন’ বলে মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কেবল তাদেরই কারণ দর্শানো হয়েছে। আগামী ১৫ মে বিকেল ৫টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা জবাব দেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি হবে না, না দিলে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, আমরা প্রশাসন কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।
এদিকে, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার ৭ম দিনে মঙ্গলবার ও ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। ৫ মে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে অধ্যাপক ফারুক হোসেন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। শিক্ষকদের দেয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা ১৫ মে শেষ হবে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।
এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত আসে। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।
রাতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
কুয়েটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ৩৭ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার, (১৩ মে ২০২৫) ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা ‘হামলা-মামলা-বহিষ্কার, মানি না, মানব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো বিচার হয়নি। ওই সময় আন্দোলনের অংশ হিসেবে যেসব শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল, পরে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পর একই শিক্ষার্থীদের আবার শোকজ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে ‘প্রহসন’ বলে মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কেবল তাদেরই কারণ দর্শানো হয়েছে। আগামী ১৫ মে বিকেল ৫টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা জবাব দেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি হবে না, না দিলে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, আমরা প্রশাসন কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।
এদিকে, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার ৭ম দিনে মঙ্গলবার ও ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। ৫ মে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে অধ্যাপক ফারুক হোসেন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। শিক্ষকদের দেয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা ১৫ মে শেষ হবে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।
এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত আসে। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।
রাতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।