ইসরায়েল নতুন অভিযানের নামে নতুন করে হামলা জোরদারের পর গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষদের আবার ছুটতে হচ্ছে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে
গাজা উপত্যকায় একটি নতুন বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ।’ এক্স অ্যাকাউন্টে হিব্রু ভাষায় আইডিএফ লিখেছে, হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
গাজার প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার,(১৭ মে ২০২৫) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৪৫৯ জন আহত হয়েছে। কয়েক দিনের তীব্র ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্সের তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে। সর্বশেষ রাতভর বিমান হামলায় অন্তত ৫৮ জন প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
মার্চ মাসে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্যের ওপর অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ১৫০টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামাস নির্মূল ও সব জিম্মি ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত অভিযান বন্ধ হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেন, ‘গাজায় প্যালেস্টাইনিদের জন্য পরিস্থিতি বর্ণনার বাইরে, নৃশংসতার বাইরে এবং অমানবিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবরোধ ও ক্ষুধার যে নীতি ইসরায়েল নিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনকে উপহাস করার শামিল। মানবিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এখনই নৈতিক অবস্থান নেয়ার ও কার্যকর পদক্ষেপের সময়।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘গাজায় মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তর, অবকাঠামোর ধ্বংস এবং মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দেয় ইসরায়েলিরা গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করতে চায়।
এদিকে, কাতারে ইসরায়েল ও
হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চললেও সেগুলো এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, তার সরকার গাজা উপত্যকায় তীব্র গতিতে ঢুকে পড়ার জন্য অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান শুরু করা হয়নি। গতকাল শুক্রবার এ অঞ্চল ত্যাগ করেছেন ট্রাম্প।
গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বহু বাসিন্দাকে তাদের ঘর বা আশ্রয়স্থল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, বহু মানুষ ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত। তাই এই নির্দেশ আলাদা কোনো অর্থ বহন করে না।
জাতিসংঘের সহায়তায় প্রণীত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার মানুষরা বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। গাজায় কর্মরত ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়া রোজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ক্লান্ত। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে এবং তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
তবে গাজায় খাদ্য ঘাটতির অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হামাস ধ্বংসে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই জিম্মিদের ৫৮ জন এখনও রয়েছেন হামাসের কাছে।
আর গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় সেখানে প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে,
যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইসরায়েল নতুন অভিযানের নামে নতুন করে হামলা জোরদারের পর গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষদের আবার ছুটতে হচ্ছে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
গাজা উপত্যকায় একটি নতুন বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ।’ এক্স অ্যাকাউন্টে হিব্রু ভাষায় আইডিএফ লিখেছে, হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
গাজার প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার,(১৭ মে ২০২৫) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৪৫৯ জন আহত হয়েছে। কয়েক দিনের তীব্র ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্সের তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে। সর্বশেষ রাতভর বিমান হামলায় অন্তত ৫৮ জন প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
মার্চ মাসে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্যের ওপর অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ১৫০টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামাস নির্মূল ও সব জিম্মি ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত অভিযান বন্ধ হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেন, ‘গাজায় প্যালেস্টাইনিদের জন্য পরিস্থিতি বর্ণনার বাইরে, নৃশংসতার বাইরে এবং অমানবিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবরোধ ও ক্ষুধার যে নীতি ইসরায়েল নিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনকে উপহাস করার শামিল। মানবিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এখনই নৈতিক অবস্থান নেয়ার ও কার্যকর পদক্ষেপের সময়।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘গাজায় মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তর, অবকাঠামোর ধ্বংস এবং মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দেয় ইসরায়েলিরা গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করতে চায়।
এদিকে, কাতারে ইসরায়েল ও
হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চললেও সেগুলো এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, তার সরকার গাজা উপত্যকায় তীব্র গতিতে ঢুকে পড়ার জন্য অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান শুরু করা হয়নি। গতকাল শুক্রবার এ অঞ্চল ত্যাগ করেছেন ট্রাম্প।
গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বহু বাসিন্দাকে তাদের ঘর বা আশ্রয়স্থল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, বহু মানুষ ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত। তাই এই নির্দেশ আলাদা কোনো অর্থ বহন করে না।
জাতিসংঘের সহায়তায় প্রণীত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার মানুষরা বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। গাজায় কর্মরত ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়া রোজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ক্লান্ত। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে এবং তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
তবে গাজায় খাদ্য ঘাটতির অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হামাস ধ্বংসে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই জিম্মিদের ৫৮ জন এখনও রয়েছেন হামাসের কাছে।
আর গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় সেখানে প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে,
যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।