শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংবাদ কার্যালয়ে কেক কেটে ৭৫-এ পদার্পণ অনুষ্ঠানে সম্পাদকসহ সংবাদ পরিবার -সোহরাব আলম
অসাম্প্রদায়িক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার যে আদর্শ নিয়ে দেশের প্রাচীনতম দৈনিক ‘সংবাদ’- এর যাত্রা শুরু, সেই আদর্শে অবিচল থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন সংবাদ পরিবারের সদস্যরা।
প্রকাশনার ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে শনিবার,(১৭ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় ঢাকার পুরানা পল্টনে সংবাদ কার্যালয়ে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংবাদ পরিবারের নবীন ও প্রবীণ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ সময় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংবাদ- এর নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম।
বক্তব্যে আলতামাশ কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা গণমাধ্যম শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন, বিশেষ করে যারা নেতৃত্বস্থানীয় বা প্রবীণ রয়েছেন, তারা সব সময়ই এ কথা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতার সূচনা যে অল্প কয়েকটি পত্রিকার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে সংবাদ উল্লেখযোগ্য। এর পর মুক্ত সাংবাদিকতার যতটুকু বিকাশ, তাতেও সংবাদের অবদানের অগ্রগণ্য অবদানের কথা সবাই স্বীকার করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অঙ্গীকার সমুন্নত রাখতে চাই।’
দেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক ‘সংবাদ’ ১৯৫১ সালের ১৭ মে ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন সে সময়ের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় ‘দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি’। এরপরই সংবাদ- এর প্রগতিশীল রূপান্তর ঘটে। ২০০৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’- এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘকাল পরিক্রমায় সংবাদ দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক জীবনের তথ্য প্রকাশ-প্রচার করে এই ভূ-খন্ডে অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক বাংলাদেশে কমই আছেন যারা গত ৭৪ বছরে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসেননি। ‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শাণিত করেছে ‘সংবাদ’। ১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’
তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।
দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করেছিল। একাত্তরের মার্চে পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১০ সংবাদ আবার প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রথমবারের মত সংবাদকে দেয়া হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংবাদ কার্যালয়ে কেক কেটে ৭৫-এ পদার্পণ অনুষ্ঠানে সম্পাদকসহ সংবাদ পরিবার -সোহরাব আলম
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
অসাম্প্রদায়িক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার যে আদর্শ নিয়ে দেশের প্রাচীনতম দৈনিক ‘সংবাদ’- এর যাত্রা শুরু, সেই আদর্শে অবিচল থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন সংবাদ পরিবারের সদস্যরা।
প্রকাশনার ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে শনিবার,(১৭ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় ঢাকার পুরানা পল্টনে সংবাদ কার্যালয়ে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংবাদ পরিবারের নবীন ও প্রবীণ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ সময় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংবাদ- এর নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম।
বক্তব্যে আলতামাশ কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা গণমাধ্যম শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন, বিশেষ করে যারা নেতৃত্বস্থানীয় বা প্রবীণ রয়েছেন, তারা সব সময়ই এ কথা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতার সূচনা যে অল্প কয়েকটি পত্রিকার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে সংবাদ উল্লেখযোগ্য। এর পর মুক্ত সাংবাদিকতার যতটুকু বিকাশ, তাতেও সংবাদের অবদানের অগ্রগণ্য অবদানের কথা সবাই স্বীকার করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অঙ্গীকার সমুন্নত রাখতে চাই।’
দেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক ‘সংবাদ’ ১৯৫১ সালের ১৭ মে ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন সে সময়ের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় ‘দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি’। এরপরই সংবাদ- এর প্রগতিশীল রূপান্তর ঘটে। ২০০৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’- এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘকাল পরিক্রমায় সংবাদ দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক জীবনের তথ্য প্রকাশ-প্রচার করে এই ভূ-খন্ডে অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক বাংলাদেশে কমই আছেন যারা গত ৭৪ বছরে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসেননি। ‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শাণিত করেছে ‘সংবাদ’। ১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’
তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।
দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করেছিল। একাত্তরের মার্চে পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১০ সংবাদ আবার প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রথমবারের মত সংবাদকে দেয়া হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক।