রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা আবারও শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরআগে যেসব সংস্কার সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ করতেই এই সংলাপের আয়োজন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের এই আলোচনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলার ঘোষণা থাকলেও কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আগামী শনিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলতে পারে এ আলোচনা।
সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার বিষয়ে সবাই একমত হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে
সংসদে গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ পাবে বিরোধী দল: সালাহউদ্দিন আহমেদ
সব বিষয়ে না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে একমতে আসতে পারাও অর্জন বলে মনে করি: আলী রীয়াজ
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির দোয়েল হলে মঙ্গলবার,(১৭ জুন ২০২৫) থেকে এই আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় বিএনপি, এনসিপি, সিপিবি, বাসদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ প্রায় ত্রিশটি দলের নেতারা যোগ দিলেও দেখা যায়নি জামায়াতের কোনো নেতাকে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবার সংলাপে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, দ্বিকক্ষ সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগসহ সংবিধানবিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
সংলাপের মুলতবি অধিবেশন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত হয়েছেন।’
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া যাবে না এমন মত দেয়া হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’ এছাড়া নারীদের সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার বিষয়ে সবাই একমত হলেও এটার নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য আছে যা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দল পাবে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা গেছে। সংসদীয় চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ আসনসংখ্যার ভিত্তিতে বিরোধীদলে যাবে। মানে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, ইস্টিমেশন কমিটি, পাবলিক আন্ডার টেকিং কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সভাপতি পদে বিরোধীদলের মধ্যে আসনের সংখ্যানুপাতিক অনুযায়ী পদ পাবে, এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’
আস্থাভোট ও অর্থবিলের বিষয়ে সব দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই দুটি জুলাই সনদে যুক্ত হবে। ৭০ অনুচ্ছেদের বাকিগুলো অর্থাৎ সংবিধান সংশোধন ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যু নির্বাচনী ইশতেহারে দলগুলো যোগ করবে বলেও জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী নেতা। বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা জানান, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির সন্তুষ্টি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্তুষ্ট কিনা, সেটা আলোচনা শেষে বলা যাবে। তবে আমরা চাই, সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেন আমরা আমাদের নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমরা চাই, জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হোক। শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করতে চায়।’
কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সবাইকে ছাড় দেয়ার আহ্বান জানান। সহযোগিতা পেলে
জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ প্রকাশ করার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে সহযোগিতা করছে, তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, আমাদের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত বিষয়গুলোতে আমরা সবাই একমত না হলেও সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে একমতে আসতে পারি।’ অন্তত কিছু বিষয়ে একমতে আসতে পারাও অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
গত অক্টোবরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হয় এবং তাদের প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারিতে জমা পড়ে। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কারসহ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়। এর মধ্যে ৩৩টি দল মতামত দেয়। কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিন আলোচনা চলে। কমিশনের মতে, এতে বেশ কিছু বিষয়ে পূর্ণ বা আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।
আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মোস্তাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
##### যে কারণে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াত #####
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণার প্রতিবাদে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আলোচনায় জামায়াতের অংশ না নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র বলেছে, বৈঠকে জামায়াত থাকবে না বলে আগেই দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবে না। অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, ‘আমরা অন প্রোটেস্ট আজকের বৈঠকে যাইনি।’ পরদিনের বৈঠকে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলতে পারছি না। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা আবারও শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরআগে যেসব সংস্কার সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ করতেই এই সংলাপের আয়োজন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের এই আলোচনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলার ঘোষণা থাকলেও কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আগামী শনিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলতে পারে এ আলোচনা।
সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার বিষয়ে সবাই একমত হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে
সংসদে গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ পাবে বিরোধী দল: সালাহউদ্দিন আহমেদ
সব বিষয়ে না হলেও অন্তত কিছু বিষয়ে একমতে আসতে পারাও অর্জন বলে মনে করি: আলী রীয়াজ
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির দোয়েল হলে মঙ্গলবার,(১৭ জুন ২০২৫) থেকে এই আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় বিএনপি, এনসিপি, সিপিবি, বাসদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ প্রায় ত্রিশটি দলের নেতারা যোগ দিলেও দেখা যায়নি জামায়াতের কোনো নেতাকে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবার সংলাপে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, দ্বিকক্ষ সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগসহ সংবিধানবিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
সংলাপের মুলতবি অধিবেশন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত হয়েছেন।’
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া যাবে না এমন মত দেয়া হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’ এছাড়া নারীদের সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার বিষয়ে সবাই একমত হলেও এটার নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য আছে যা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দল পাবে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা গেছে। সংসদীয় চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ আসনসংখ্যার ভিত্তিতে বিরোধীদলে যাবে। মানে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, ইস্টিমেশন কমিটি, পাবলিক আন্ডার টেকিং কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সভাপতি পদে বিরোধীদলের মধ্যে আসনের সংখ্যানুপাতিক অনুযায়ী পদ পাবে, এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’
আস্থাভোট ও অর্থবিলের বিষয়ে সব দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই দুটি জুলাই সনদে যুক্ত হবে। ৭০ অনুচ্ছেদের বাকিগুলো অর্থাৎ সংবিধান সংশোধন ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যু নির্বাচনী ইশতেহারে দলগুলো যোগ করবে বলেও জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী নেতা। বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা জানান, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির সন্তুষ্টি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্তুষ্ট কিনা, সেটা আলোচনা শেষে বলা যাবে। তবে আমরা চাই, সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেন আমরা আমাদের নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমরা চাই, জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হোক। শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করতে চায়।’
কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সবাইকে ছাড় দেয়ার আহ্বান জানান। সহযোগিতা পেলে
জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ প্রকাশ করার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে সহযোগিতা করছে, তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, আমাদের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত বিষয়গুলোতে আমরা সবাই একমত না হলেও সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে একমতে আসতে পারি।’ অন্তত কিছু বিষয়ে একমতে আসতে পারাও অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
গত অক্টোবরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হয় এবং তাদের প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারিতে জমা পড়ে। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কারসহ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়। এর মধ্যে ৩৩টি দল মতামত দেয়। কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিন আলোচনা চলে। কমিশনের মতে, এতে বেশ কিছু বিষয়ে পূর্ণ বা আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।
আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মোস্তাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
##### যে কারণে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াত #####
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণার প্রতিবাদে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আলোচনায় জামায়াতের অংশ না নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র বলেছে, বৈঠকে জামায়াত থাকবে না বলে আগেই দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবে না। অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, ‘আমরা অন প্রোটেস্ট আজকের বৈঠকে যাইনি।’ পরদিনের বৈঠকে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলতে পারছি না। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’