সিলেটে শিক্ষায় অবকাঠামো নির্মাণে ‘অগ্রিম’ ও ‘অতিরিক্ত’ বিল দিয়ে বিভাগীয় মামলায় পড়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) অন্তত ছয়জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় ‘অগ্রিম’ বিল দেয়ার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া একটি জেলায় প্রকৌশলীরা নিজেরাই ‘ঠিকাদারি কাজ’ করছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যেই ওই জেলার শীর্ষ প্রকৌশলীকে সম্প্রতি ঢাকায় ‘প্রাইস পোস্টি’ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অগ্রিম বিল পরিশোধকারী প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের শনাক্ত করতে জেলা পর্যায়ে নিয়মিত ‘পরিদর্শনে’ যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলীসহ ইইডির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে তারা হলেন, ইইডির সিলেট জোনের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম (বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী), একই জোনের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নোমান হাবীব, সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম ও রামীম ইবনে জাহান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুনেদ আহমদ ও মাহমুদুল হাসান।
গত ২৮ মে তাদের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে দশ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন সংবাদকে বলেছেন, ‘বিভাগীয় মামলার অংশ হিসেবে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেন তারা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন। অন্যতায় শাস্তি পাবেন।’
সিলেটের নির্মাণকাজের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ কাজই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, জুলাইয়ের পর কোনো কাজ অবশিষ্ট থাকবে না।’
নজরুল হাকিমকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রসময় উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, সিলেটের ৬তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য মেসার্স ইসহাক অ্যান্ড সন্স কনস্ট্রাকশনকে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আট লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।’
তার বিরুদ্ধে একই প্রকল্পের আওতায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের আতাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৪তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য ‘মেসার্স এসই-এই’ (জেঝি)কে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদান, কানাইঘাটের মুলাগুল হারিছ চৌধুরী অ্যাকাডেমিতে ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও ‘মেসার্স এসই-এই (জেঝি)কে ৭০ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই প্রকল্পের আওতায় সিলেট সদরের শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য মেসার্স হক কনস্ট্রাকশনকে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ এবং জেলার জকিগঞ্জে আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের মেসার্স কুশিয়ারা ট্রেডিংকে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বে ১৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ এনেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
চিঠিতে ‘১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য মেসার্স এসই-এই’কে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও পাঁচ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের লালাবাজার আলিম মাদ্রাসায় অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য ‘মেসার্স এসই-এই’কে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল দেয়ার ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে ইইডির তদন্তে।
এসব কাজের আর্থিক অনিয়মের জন্যই বাকি পাঁচজন সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে বিভাগীয় মামলার শুনানির অংশ হিসেবে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা পৃথকভাবে ওইসব কাজের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
ইইডি সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ অন্তত ২৫টি জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় অবকাঠামো নির্মাণের নামে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া রয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেও এখন ঠিকাদারদের দিয়ে ‘অগ্রিম’ বিলের সমপরিমাণ কাজ করানো যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমার জানামতে, এখন অ্যাডভান্স বিলের কাজ খুব একটা বাকি নেই। সব কাজই দ্রুত হচ্ছে। প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। মনিটরিংও বাড়ানো হয়েছে। অনিয়ম করলে কাউকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
অন্তত ২২টি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জেও কয়েকজন ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শম্পা সাহা। পরে তাদের দু’জনকেই কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠান প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন।
ইইডির একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জেলার ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর আগে জুন-জুলাইয়ে অনেক ঠিকাদারকে ‘অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনের সময় তার দলের ঠিকাদারদের বেশিরভাগই আত্মগোপনে চলে যায়। এর ফলে ওইসব কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়।
কিন্তু অগ্রিম বিল পরিশোধকারী বেশিরভাগ প্রকৌশলী ওইসব ঠিকাদারের দায় নিতে গড়িমসি করতে থাকেন। এর মধ্যে আলতাফ হোসেন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে ওইসব কাজ আদায়ে ‘কঠোর অবস্থান’ নেন। এতে কোনো ঠিকাদার ‘নিজের টাকায়’, কেউ কেউ ঠিকাদারদের স্বজনদের খুঁজে বের করে তাদের দিয়ে কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন বলে ওই প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিগত সময়ে ইইডির সিলেট অঞ্চলে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধের অভিযোগ পাওয়া যায়। অগ্রিম বিল নিয়ে দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন এবং অন্তত তিনজন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাকিরাও কাজ বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যান। এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তত তিনবার তদন্ত করলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত জানুয়ারি ওইসব কাজের কয়েকটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন ইইডির সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান। তার প্রতিবেদনের আলোকেই ৬ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
সিলেটে শিক্ষায় অবকাঠামো নির্মাণে ‘অগ্রিম’ ও ‘অতিরিক্ত’ বিল দিয়ে বিভাগীয় মামলায় পড়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) অন্তত ছয়জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় ‘অগ্রিম’ বিল দেয়ার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া একটি জেলায় প্রকৌশলীরা নিজেরাই ‘ঠিকাদারি কাজ’ করছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যেই ওই জেলার শীর্ষ প্রকৌশলীকে সম্প্রতি ঢাকায় ‘প্রাইস পোস্টি’ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অগ্রিম বিল পরিশোধকারী প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের শনাক্ত করতে জেলা পর্যায়ে নিয়মিত ‘পরিদর্শনে’ যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলীসহ ইইডির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে তারা হলেন, ইইডির সিলেট জোনের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম (বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী), একই জোনের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নোমান হাবীব, সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম ও রামীম ইবনে জাহান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুনেদ আহমদ ও মাহমুদুল হাসান।
গত ২৮ মে তাদের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে দশ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন সংবাদকে বলেছেন, ‘বিভাগীয় মামলার অংশ হিসেবে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেন তারা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন। অন্যতায় শাস্তি পাবেন।’
সিলেটের নির্মাণকাজের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ কাজই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, জুলাইয়ের পর কোনো কাজ অবশিষ্ট থাকবে না।’
নজরুল হাকিমকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রসময় উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, সিলেটের ৬তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য মেসার্স ইসহাক অ্যান্ড সন্স কনস্ট্রাকশনকে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আট লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।’
তার বিরুদ্ধে একই প্রকল্পের আওতায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের আতাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৪তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য ‘মেসার্স এসই-এই’ (জেঝি)কে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদান, কানাইঘাটের মুলাগুল হারিছ চৌধুরী অ্যাকাডেমিতে ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও ‘মেসার্স এসই-এই (জেঝি)কে ৭০ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই প্রকল্পের আওতায় সিলেট সদরের শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য মেসার্স হক কনস্ট্রাকশনকে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ এবং জেলার জকিগঞ্জে আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের মেসার্স কুশিয়ারা ট্রেডিংকে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বে ১৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ এনেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
চিঠিতে ‘১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য মেসার্স এসই-এই’কে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও পাঁচ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের লালাবাজার আলিম মাদ্রাসায় অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য ‘মেসার্স এসই-এই’কে কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিল দেয়ার ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে ইইডির তদন্তে।
এসব কাজের আর্থিক অনিয়মের জন্যই বাকি পাঁচজন সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে বিভাগীয় মামলার শুনানির অংশ হিসেবে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা পৃথকভাবে ওইসব কাজের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
ইইডি সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ অন্তত ২৫টি জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় অবকাঠামো নির্মাণের নামে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া রয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেও এখন ঠিকাদারদের দিয়ে ‘অগ্রিম’ বিলের সমপরিমাণ কাজ করানো যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমার জানামতে, এখন অ্যাডভান্স বিলের কাজ খুব একটা বাকি নেই। সব কাজই দ্রুত হচ্ছে। প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। মনিটরিংও বাড়ানো হয়েছে। অনিয়ম করলে কাউকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
অন্তত ২২টি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জেও কয়েকজন ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শম্পা সাহা। পরে তাদের দু’জনকেই কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠান প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন।
ইইডির একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জেলার ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর আগে জুন-জুলাইয়ে অনেক ঠিকাদারকে ‘অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনের সময় তার দলের ঠিকাদারদের বেশিরভাগই আত্মগোপনে চলে যায়। এর ফলে ওইসব কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়।
কিন্তু অগ্রিম বিল পরিশোধকারী বেশিরভাগ প্রকৌশলী ওইসব ঠিকাদারের দায় নিতে গড়িমসি করতে থাকেন। এর মধ্যে আলতাফ হোসেন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে ওইসব কাজ আদায়ে ‘কঠোর অবস্থান’ নেন। এতে কোনো ঠিকাদার ‘নিজের টাকায়’, কেউ কেউ ঠিকাদারদের স্বজনদের খুঁজে বের করে তাদের দিয়ে কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন বলে ওই প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিগত সময়ে ইইডির সিলেট অঞ্চলে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধের অভিযোগ পাওয়া যায়। অগ্রিম বিল নিয়ে দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন এবং অন্তত তিনজন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাকিরাও কাজ বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যান। এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তত তিনবার তদন্ত করলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত জানুয়ারি ওইসব কাজের কয়েকটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন ইইডির সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান। তার প্রতিবেদনের আলোকেই ৬ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।