আষাঢ়ের শুরুতেই মৌসুমের প্রথম ভারীবর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে নগরের প্রধান সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। নিম্নাঞ্চল ও বহু এলাকার বাসাবাড়ি-দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার,(১৭ জুন ২০২৫) দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। মিজানুর রহমান বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ২০ জুন পর্যন্ত চলতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। নগরের নতুন রাস্তা মোড় থেকে আবু নাসের হাসপাতাল এবং মুজগুন্নি সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া আহসান আহমেদ রোড, রয়েল মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, বাস্তুহারা, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা ও টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রূপসা নতুন বাজারের মতো এলাকাগুলোতে প্রায় কোমরসমান পানি জমে যায়। খুলনা-যশোর মহাসড়ক ছাড়া শহরের প্রায় সব রাস্তাই পানির নিচে থাকতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকরা বলছেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খাল দখল ও নিয়মিত নালা পরিষ্কার না করায় এই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। খুলনা নগরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ২২টি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা, নিয়মিত নালা পরিষ্কার না করা এবং জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা জাফর চৌধুরী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের। প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।
মুজগুন্নি এলাকার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।
২০১৮ সালে ও ২০২৩ সালে নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮২৩ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন তিনি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা খরচ করে নগরের বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণ ও সাতটি খাল খনন করা হয়েছে। এরপরও নগরবাসী সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এছাড়া, নগরের পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, চার বছর আগে জেলা প্রশাসন ২৬টি খালে ৪৬০ জন দখলদারকে চিহ্নিত করলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ময়ূর নদ খনন করা হলেও সেই মাটি নদীর পাড়ে রাখায় তা আবার নদীতেই ফিরে যাচ্ছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজজামান বলেন, গত চার দশকে সব মেয়রই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নিলে কোনো লাভ হবে না।
এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের মতো কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে নগরবাসী সুফল পাবে।
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
আষাঢ়ের শুরুতেই মৌসুমের প্রথম ভারীবর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে নগরের প্রধান সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। নিম্নাঞ্চল ও বহু এলাকার বাসাবাড়ি-দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার,(১৭ জুন ২০২৫) দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। মিজানুর রহমান বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ২০ জুন পর্যন্ত চলতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। নগরের নতুন রাস্তা মোড় থেকে আবু নাসের হাসপাতাল এবং মুজগুন্নি সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া আহসান আহমেদ রোড, রয়েল মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, বাস্তুহারা, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা ও টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রূপসা নতুন বাজারের মতো এলাকাগুলোতে প্রায় কোমরসমান পানি জমে যায়। খুলনা-যশোর মহাসড়ক ছাড়া শহরের প্রায় সব রাস্তাই পানির নিচে থাকতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকরা বলছেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খাল দখল ও নিয়মিত নালা পরিষ্কার না করায় এই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। খুলনা নগরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ২২টি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা, নিয়মিত নালা পরিষ্কার না করা এবং জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা জাফর চৌধুরী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের। প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।
মুজগুন্নি এলাকার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।
২০১৮ সালে ও ২০২৩ সালে নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮২৩ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন তিনি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা খরচ করে নগরের বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণ ও সাতটি খাল খনন করা হয়েছে। এরপরও নগরবাসী সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এছাড়া, নগরের পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, চার বছর আগে জেলা প্রশাসন ২৬টি খালে ৪৬০ জন দখলদারকে চিহ্নিত করলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ময়ূর নদ খনন করা হলেও সেই মাটি নদীর পাড়ে রাখায় তা আবার নদীতেই ফিরে যাচ্ছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজজামান বলেন, গত চার দশকে সব মেয়রই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নিলে কোনো লাভ হবে না।
এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের মতো কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে নগরবাসী সুফল পাবে।