বিপাকে চাষিরা, ধান কাটা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা, বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষককে, ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বেশিরভাগ জমি তিন ফসলি হওয়ায় ফলন শেষে বোরো ধান ঘরে তুলতে সময় বেশি লাগে। এবার ধান কাটার শ্রমিক সংকট যেন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ অবস্থা। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। বর্তমানে দেড় হাজার টাকায়ও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে, ধান কাটা নিয়ে যেমন শঙ্কা বাড়ছে, তেমনি বাড়তি খরচে আর্থিক সংকটে পড়ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, এ উপজেলায় শ্রমিক সংকটে অন্য জেলার শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। এ কারণে স্থানীয় অনেক বোরো চাষি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হারভেস্টার ভাড়া করছেন। কেউবা চড়া দামে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। হারভেস্টারের সিরিয়াল পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে, অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়েই ধান কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষকরা বলেন, বর্তমান সময়ে শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না ধান কাটার লোক। বাধ্য হয়ে হারভেস্টার ভাড়া করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
জয়মন্টপ এলাকার ধান চাষি আলতাফ হোসেন জানান, আগে মাথাপিছু ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এক বিঘা জমির (৩৩ শতক) ধান কাটতে গেলে কমপক্ষে ৩-৪ জন লোক প্রয়োজন হয়। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। হিসেব করলে থাকে না কিছুই । ধান চাষ করে পড়েছি বিপদে। গোপালনগর গ্রামের ইয়াকুব হোসেন জানান, এবার বোরো মৌসুমে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এক সঙ্গে সব জমির ধান পেকেছে। শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়ে ধান ঘরে তুলতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এতে লাভের কিছুই থাকবে না। জায়গীর গ্রামের আব্দুল মান্নান, নয়াপাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লা, মেদুলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীরসহ একাধিক চাষী বলেন, হারভেস্টার মেশিনের ভাড়া অতিরিক্ত তাছাড়া সিরিয়াল পেতে বেশ সময় লাগছে। বৃষ্টি-বাদল পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে ধান কেটে শেষ করা না গেলে চরম বিপদে পড়তে হবে তাদের।
রংপুর জেলা থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক রমজান আলী জানান, ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা মজুরি পান। উচ্চমূল্যের বাজারে কৃষকরা এই পারিশ্রমিককে বেশি বললেও এ উপার্জনে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রমিক আকবর আলি জানান, ধান কাটার এ মৌসুমে কৃষকের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম। পারিশ্রমিক বেশি না হলে আমাদের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, চলতি বছর ৮ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যা থেকে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। একসঙ্গে সব কৃষকের ধান পেকে যাওয়ায় এবং ঈদে ঘরে ফেরা শ্রমিকরা সবাই না আসাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া হারভেস্টারগুলোরও এক সঙ্গে চাপ সামাল দিতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বিপাকে চাষিরা, ধান কাটা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা, বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষককে, ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বেশিরভাগ জমি তিন ফসলি হওয়ায় ফলন শেষে বোরো ধান ঘরে তুলতে সময় বেশি লাগে। এবার ধান কাটার শ্রমিক সংকট যেন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ অবস্থা। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। বর্তমানে দেড় হাজার টাকায়ও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে, ধান কাটা নিয়ে যেমন শঙ্কা বাড়ছে, তেমনি বাড়তি খরচে আর্থিক সংকটে পড়ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, এ উপজেলায় শ্রমিক সংকটে অন্য জেলার শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। এ কারণে স্থানীয় অনেক বোরো চাষি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হারভেস্টার ভাড়া করছেন। কেউবা চড়া দামে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। হারভেস্টারের সিরিয়াল পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে, অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়েই ধান কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষকরা বলেন, বর্তমান সময়ে শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না ধান কাটার লোক। বাধ্য হয়ে হারভেস্টার ভাড়া করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
জয়মন্টপ এলাকার ধান চাষি আলতাফ হোসেন জানান, আগে মাথাপিছু ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এক বিঘা জমির (৩৩ শতক) ধান কাটতে গেলে কমপক্ষে ৩-৪ জন লোক প্রয়োজন হয়। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। হিসেব করলে থাকে না কিছুই । ধান চাষ করে পড়েছি বিপদে। গোপালনগর গ্রামের ইয়াকুব হোসেন জানান, এবার বোরো মৌসুমে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এক সঙ্গে সব জমির ধান পেকেছে। শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়ে ধান ঘরে তুলতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এতে লাভের কিছুই থাকবে না। জায়গীর গ্রামের আব্দুল মান্নান, নয়াপাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লা, মেদুলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীরসহ একাধিক চাষী বলেন, হারভেস্টার মেশিনের ভাড়া অতিরিক্ত তাছাড়া সিরিয়াল পেতে বেশ সময় লাগছে। বৃষ্টি-বাদল পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে ধান কেটে শেষ করা না গেলে চরম বিপদে পড়তে হবে তাদের।
রংপুর জেলা থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক রমজান আলী জানান, ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা মজুরি পান। উচ্চমূল্যের বাজারে কৃষকরা এই পারিশ্রমিককে বেশি বললেও এ উপার্জনে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রমিক আকবর আলি জানান, ধান কাটার এ মৌসুমে কৃষকের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম। পারিশ্রমিক বেশি না হলে আমাদের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, চলতি বছর ৮ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যা থেকে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। একসঙ্গে সব কৃষকের ধান পেকে যাওয়ায় এবং ঈদে ঘরে ফেরা শ্রমিকরা সবাই না আসাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া হারভেস্টারগুলোরও এক সঙ্গে চাপ সামাল দিতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।