জ্বালানি পরিবহনে বছরে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে: বিপিসি
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইন চালু হলে প্রতি বছর জ্বালানি পরিবহনে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশ জ্বালানি পরিবহনে নতুন একটি মাইলফলক স্পর্শ করবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে রেল ও সড়ক ও নৌপথে দেশের অন্যান্য স্থানে ডিজেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনের সময় প্রায়ই তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে জ্বালানি পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়। এতে প্রায়ই জ্বালানি সরবরাহে বিঘœ ঘটে।
বিপিসির তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারাদেশে নৌপথে ৫৪ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে ২৭ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিবহন করা হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে প্রতি মাসে ১১০টি জাহাজ জ্বালানি পরিবহন করে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঢাকা-চট্টগ্রাম ডিজেল পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। এই পাইপলাইন দিয়ে বছরে ২৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ডিজেল পরিবহন করা যাবে। ধাপে ধাপে এর সক্ষমতা পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত করা যেতে পারে। তবে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বছরে ২১ লাখ টনের মতো ডিজেল পরিবহন করা হবে।
এই পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে: একটি ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। এটি পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত তেল পৌঁছাবে। অন্য অংশটি ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই অংশে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন দিয়ে গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত তেল পরিবহন করা হবে।
পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ২২টি নদী ও খালের তলা দিয়ে এই পাইপলাইন গেছে।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সোমবার,(৩০ জুন ২০২৫) বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি সপ্তাহ দুই-তিনেকের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাইপলাইন প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তারপর পরই আমরা বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করবো।’
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে ৬ হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের এই সচিব বলেন, ‘আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল প্রায় ৬১-৬২ শতাংশ। সেটা সরবরাহ নিশ্চিত হবে পাইপলাইনটি চালু হলে। তবে পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো, কখনও রেলওয়ে ওয়াগনে করে, কখনও নদীপথে ট্যাঙ্কারে করে; সেভাবেই আসবে।’
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে পরবর্তী পাঁচদিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইনে মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সরবরাহ শতভাগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে বিপিসি।
বিপিসি জানায়, এর অনেক আগেই পাইপলাইনে হাইড্রো টেস্ট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পাইপলাইনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সফলভাবে পানি পাঠানো হয়েছে। পাইপলাইনে নয়টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বছরে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। এর ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে ডিজেল পরিবহনের জন্য আগে যে টাকা ব্যয় হতো, তা আর হবে না। এতে বছরে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। ডিজেল পরিচালন, পাইলাইন রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় উঠে আসতে সময় লাগবে ১১ বছরের মতো।
বিপিসির একটি সূত্র বলছে, নদীপথে লাইটারেজে করে ডিজেল পরিবহনে চট্ট্রগ্রামে লোড এবং গোদনাইলে আনলোডের সময় নানা পন্থায় তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। পাইপলাইন হয়ে গেলে সেই বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ (গোদনাইল ডিপো) থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট ফুয়েল পরিবহনে যে পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে, সেই প্রকল্পটি সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এখন প্রতিদিন জেট ফুলে সড়কপথে গোদনাইল থেকে এয়ারপোর্টে নেয়া হয়।
জ্বালানি পরিবহনে বছরে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে: বিপিসি
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইন চালু হলে প্রতি বছর জ্বালানি পরিবহনে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশ জ্বালানি পরিবহনে নতুন একটি মাইলফলক স্পর্শ করবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে রেল ও সড়ক ও নৌপথে দেশের অন্যান্য স্থানে ডিজেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনের সময় প্রায়ই তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে জ্বালানি পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়। এতে প্রায়ই জ্বালানি সরবরাহে বিঘœ ঘটে।
বিপিসির তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারাদেশে নৌপথে ৫৪ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে ২৭ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিবহন করা হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে প্রতি মাসে ১১০টি জাহাজ জ্বালানি পরিবহন করে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঢাকা-চট্টগ্রাম ডিজেল পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। এই পাইপলাইন দিয়ে বছরে ২৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ডিজেল পরিবহন করা যাবে। ধাপে ধাপে এর সক্ষমতা পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত করা যেতে পারে। তবে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বছরে ২১ লাখ টনের মতো ডিজেল পরিবহন করা হবে।
এই পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে: একটি ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। এটি পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত তেল পৌঁছাবে। অন্য অংশটি ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই অংশে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন দিয়ে গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত তেল পরিবহন করা হবে।
পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ২২টি নদী ও খালের তলা দিয়ে এই পাইপলাইন গেছে।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সোমবার,(৩০ জুন ২০২৫) বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি সপ্তাহ দুই-তিনেকের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাইপলাইন প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তারপর পরই আমরা বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করবো।’
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে ৬ হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের এই সচিব বলেন, ‘আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল প্রায় ৬১-৬২ শতাংশ। সেটা সরবরাহ নিশ্চিত হবে পাইপলাইনটি চালু হলে। তবে পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো, কখনও রেলওয়ে ওয়াগনে করে, কখনও নদীপথে ট্যাঙ্কারে করে; সেভাবেই আসবে।’
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে পরবর্তী পাঁচদিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইনে মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সরবরাহ শতভাগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে বিপিসি।
বিপিসি জানায়, এর অনেক আগেই পাইপলাইনে হাইড্রো টেস্ট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পাইপলাইনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সফলভাবে পানি পাঠানো হয়েছে। পাইপলাইনে নয়টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বছরে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। এর ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে ডিজেল পরিবহনের জন্য আগে যে টাকা ব্যয় হতো, তা আর হবে না। এতে বছরে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। ডিজেল পরিচালন, পাইলাইন রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় উঠে আসতে সময় লাগবে ১১ বছরের মতো।
বিপিসির একটি সূত্র বলছে, নদীপথে লাইটারেজে করে ডিজেল পরিবহনে চট্ট্রগ্রামে লোড এবং গোদনাইলে আনলোডের সময় নানা পন্থায় তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। পাইপলাইন হয়ে গেলে সেই বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ (গোদনাইল ডিপো) থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট ফুয়েল পরিবহনে যে পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে, সেই প্রকল্পটি সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এখন প্রতিদিন জেট ফুলে সড়কপথে গোদনাইল থেকে এয়ারপোর্টে নেয়া হয়।