রাজশাহীতে একটি চালের দোকান
রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এতে অস্বস্তি বাড়ছে ক্রেতা পর্যায়ে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে তিন টাকার বেশি।
এদিকে রাজশাহীতে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, কৃষি অফিস বলছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় খুশি বোরো চাষিরা। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ ধানের ফলন পেয়েছেন চাষিরা। এছাড়া বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, বাম্পার ফলনের পরও কারণ ছাড়াই দাম বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মিলগেট-পাইকারি এবং খুচরা সব স্তরেই চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সর্বশেষ গত বুধবার অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সভায় চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজশাহীতে সব ধরনের চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। তবে ঢাকার বাজার থেকে রাজশাহী অঞ্চলের মূল্য চার থেকে পাঁচ টাকা কম আছে। ওই সভা থেকে চালের মজুতবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর কথাও জানানো হয়। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম ও আড়তগুলোতে চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরাও চালের দাম বাড়িয়েছেন। নগরীর উপশহর এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা মতিউর রহমান মতি জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা-চিকন সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বোরো ধানের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। বাজারে মোটা চালের দামও কেজিতে বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা জমি থেকে মাড়াইয়ের পরে দুই রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার জেলায় মোট বোরো চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে পদ্মা নদীর চরে চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে চাষিরা ২৫ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন। তাতে ফলন হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ মণ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা বাজারে প্রতি মণ বোরো ধান বিক্রি করছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
বাজারের ক্রেতারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগের চেয়ে গত রোববার প্রতি কেজি চাল ২-৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮/পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৪ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৬-৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬-৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া স্বর্ণা মোটা ও চিকন, পারিজা, পাইজাম, বাশমতি, নাজিরশাইল চালের দামও
পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। শৃঙ্খলা না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ। কোনো একটি অপশক্তি চালের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বাজারে চাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি। জনজীবনে নেমে আসা তীব্র সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ স্লোগানে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে এ আয়োজন করে পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের ২০২৫ সালের জুন মাসের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও বাজারে প্রত্যাশিত স্বস্তি আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, অবৈধ মজুতদারি এবং বাজারে নজরদারির ঘাটতির কারণেই চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
তারা আরও বলেন, কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অথচ ভোক্তাকে চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল ও সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, জেলা কৃষক দলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত, সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান, রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা আফজাল হোসেন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি এবং পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন।
বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্যমতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি মাসে ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসম্পন্ন খাবার গ্রহণে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্র্যসীমার তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
চালের দামসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির এই সংকট নিরসনে খানি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বাড়াতে হবে। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বাজার, উৎপাদন, মূল্যনির্ধারণ ও ভোগ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধে যথাযথ নজরদারির মাধ্যমে চালের বাজার স্থিতিশীল করে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে এই দাবিগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে, যেন দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কর্মসূচিতে স্থানীয় জনসাধারণ, যুব প্রতিনিধি, পরিবেশ সচেতন মানুষ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও পরিবেশকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
রাজশাহীতে একটি চালের দোকান
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এতে অস্বস্তি বাড়ছে ক্রেতা পর্যায়ে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে তিন টাকার বেশি।
এদিকে রাজশাহীতে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, কৃষি অফিস বলছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় খুশি বোরো চাষিরা। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ ধানের ফলন পেয়েছেন চাষিরা। এছাড়া বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, বাম্পার ফলনের পরও কারণ ছাড়াই দাম বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মিলগেট-পাইকারি এবং খুচরা সব স্তরেই চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সর্বশেষ গত বুধবার অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সভায় চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজশাহীতে সব ধরনের চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। তবে ঢাকার বাজার থেকে রাজশাহী অঞ্চলের মূল্য চার থেকে পাঁচ টাকা কম আছে। ওই সভা থেকে চালের মজুতবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর কথাও জানানো হয়। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম ও আড়তগুলোতে চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরাও চালের দাম বাড়িয়েছেন। নগরীর উপশহর এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা মতিউর রহমান মতি জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা-চিকন সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বোরো ধানের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। বাজারে মোটা চালের দামও কেজিতে বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা জমি থেকে মাড়াইয়ের পরে দুই রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার জেলায় মোট বোরো চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে পদ্মা নদীর চরে চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে চাষিরা ২৫ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন। তাতে ফলন হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ মণ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা বাজারে প্রতি মণ বোরো ধান বিক্রি করছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
বাজারের ক্রেতারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগের চেয়ে গত রোববার প্রতি কেজি চাল ২-৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮/পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৪ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৬-৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬-৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া স্বর্ণা মোটা ও চিকন, পারিজা, পাইজাম, বাশমতি, নাজিরশাইল চালের দামও
পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। শৃঙ্খলা না থাকায় চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ। কোনো একটি অপশক্তি চালের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বাজারে চাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি। জনজীবনে নেমে আসা তীব্র সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ স্লোগানে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে এ আয়োজন করে পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের ২০২৫ সালের জুন মাসের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও বাজারে প্রত্যাশিত স্বস্তি আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, অবৈধ মজুতদারি এবং বাজারে নজরদারির ঘাটতির কারণেই চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
তারা আরও বলেন, কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অথচ ভোক্তাকে চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল ও সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, জেলা কৃষক দলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত, সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান, রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা আফজাল হোসেন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি এবং পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন।
বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্যমতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি মাসে ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসম্পন্ন খাবার গ্রহণে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্র্যসীমার তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
চালের দামসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির এই সংকট নিরসনে খানি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বাড়াতে হবে। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বাজার, উৎপাদন, মূল্যনির্ধারণ ও ভোগ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধে যথাযথ নজরদারির মাধ্যমে চালের বাজার স্থিতিশীল করে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে এই দাবিগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে, যেন দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কর্মসূচিতে স্থানীয় জনসাধারণ, যুব প্রতিনিধি, পরিবেশ সচেতন মানুষ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও পরিবেশকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।