হত্যা মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মা ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার মামলায় ৬জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। শনিবার,(০৫ জুলাই ২০২৫) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব জানানো হয়।
লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঢাকার বনশ্রী এলাকা ও কুমিল্লা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার মধ্যরাতে থানায় মামলা হয়। মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- বাচ্ছু মিয়া (৫৫), রবিউল আওয়াল (৫৫), আতিকুর রহমান (৪২), বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও একটি টর্চ লাইট জব্দ করা হয়। লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত ৩ জুলাই সকালে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়ি এলাকায় ভুক্তভোগীদের বাড়ি ও বাড়ির সামনের রাস্তায় রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), জোনাকী (২৪) এবং রাসেলকে (৩৩) নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় রুমা (২৭) ও রিক্তা (৩২) পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে রোকসানার মেয়ে রিক্তা (৩২) বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোকসানার বাড়ি। সেখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ মুঠোফোনটি চুরি করেছেন। এই তরুণ রোকসানার মেয়ে তাসপিয়ার স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে কাজ করেন। তার বাড়ি উপজেলার হায়দরাবাদ এলাকায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রোকসানার খুচরা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেন বোরহান।
শিক্ষকের মুঠোফোন চুরির অভিযোগ এনে মঙ্গলবার আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব বোরহানকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বোরহানকে ছাড়িয়ে নিতে যান রোকসানা। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রোকসানা ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা ও একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুই পক্ষে উত্তেজনা চলছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। এ সময় তাদের সঙ্গে রোকসানা ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য বাচ্চুকে চড় দেন রোকসানা। এরপরই রোকসানার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। একপর্যায়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই রোকসানা, রাসেল ও তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। এলোপাতাড়ি পেটানো হয় এবং কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় প্রাণভয়ে রোকসানার স্বামী খলিল ও আরেক মেয়ে পালিয়ে যান।
এলাকাবাসীর দাবি, রোকসানার পরিবার দুই দশকের বেশি সময় ধরে মাদক কারবারে জড়িত। মাদকের টাকায় তারা ব্যাপক সম্পদ গড়েছেন। একাধিকবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বের হয়ে আবার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তার স্বামী, প্রত্যেক সন্তান এবং মেয়েজামাইও মাদক কারবারে জড়িত। এ জন্য এলাকার মানুষ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘রোকসানা মাদক কারবারি। তার কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু এভাবে তাদের হত্যা করা হবে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখার দাবি জানাচ্ছি।’
রোকসানার বাড়ির পাশে একটি দোকানের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোকসানা ইউপি
সদস্য বাচ্চুকে থাপ্পড় মারার পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘটনা শেষ। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল, বৃহস্পতিবার সেটির বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। রোকসানা অনেক আগে থেকেই বেপরোয়া। তবে ঘটনার জন্য এলাকার মানুষকে উসকে দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
হত্যা মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মা ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার মামলায় ৬জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। শনিবার,(০৫ জুলাই ২০২৫) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব জানানো হয়।
লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঢাকার বনশ্রী এলাকা ও কুমিল্লা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার মধ্যরাতে থানায় মামলা হয়। মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- বাচ্ছু মিয়া (৫৫), রবিউল আওয়াল (৫৫), আতিকুর রহমান (৪২), বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও একটি টর্চ লাইট জব্দ করা হয়। লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত ৩ জুলাই সকালে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়ি এলাকায় ভুক্তভোগীদের বাড়ি ও বাড়ির সামনের রাস্তায় রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), জোনাকী (২৪) এবং রাসেলকে (৩৩) নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় রুমা (২৭) ও রিক্তা (৩২) পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে রোকসানার মেয়ে রিক্তা (৩২) বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোকসানার বাড়ি। সেখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ মুঠোফোনটি চুরি করেছেন। এই তরুণ রোকসানার মেয়ে তাসপিয়ার স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে কাজ করেন। তার বাড়ি উপজেলার হায়দরাবাদ এলাকায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রোকসানার খুচরা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেন বোরহান।
শিক্ষকের মুঠোফোন চুরির অভিযোগ এনে মঙ্গলবার আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব বোরহানকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বোরহানকে ছাড়িয়ে নিতে যান রোকসানা। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রোকসানা ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা ও একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুই পক্ষে উত্তেজনা চলছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। এ সময় তাদের সঙ্গে রোকসানা ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য বাচ্চুকে চড় দেন রোকসানা। এরপরই রোকসানার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। একপর্যায়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই রোকসানা, রাসেল ও তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। এলোপাতাড়ি পেটানো হয় এবং কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় প্রাণভয়ে রোকসানার স্বামী খলিল ও আরেক মেয়ে পালিয়ে যান।
এলাকাবাসীর দাবি, রোকসানার পরিবার দুই দশকের বেশি সময় ধরে মাদক কারবারে জড়িত। মাদকের টাকায় তারা ব্যাপক সম্পদ গড়েছেন। একাধিকবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বের হয়ে আবার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তার স্বামী, প্রত্যেক সন্তান এবং মেয়েজামাইও মাদক কারবারে জড়িত। এ জন্য এলাকার মানুষ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘রোকসানা মাদক কারবারি। তার কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু এভাবে তাদের হত্যা করা হবে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখার দাবি জানাচ্ছি।’
রোকসানার বাড়ির পাশে একটি দোকানের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোকসানা ইউপি
সদস্য বাচ্চুকে থাপ্পড় মারার পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘটনা শেষ। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল, বৃহস্পতিবার সেটির বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। রোকসানা অনেক আগে থেকেই বেপরোয়া। তবে ঘটনার জন্য এলাকার মানুষকে উসকে দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।