পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর একটি কমিটি গঠিত হয়েছে স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, আইন ও বিধিমালার পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এবং অন্যটি গঠিত হয়েছে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখা থেকে প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। সাত সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব, আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের সংশ্লিষ্ট অধিশাখার যুগ্মসচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রয়োজনে কমিটি একজন বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। এই কমিটির দায়িত্ব হবে ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ ও বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধিমালার সংশোধনের প্রস্তাব, ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) সংশোধনের সুপারিশ, এবং একটি জবাবদিহিমূলক, জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে কাঠামোগত সংস্কারের দিকনির্দেশনা প্রদান।
একইসঙ্গে সহায়ক অবকাঠামো, বাজেট, জনবল ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির সুপারিশও করবে কমিটি। বলপ্রয়োগে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে পুলিশ ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় আইনি পরিবর্তনের প্রস্তাবও কমিটির কাজের অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিতে আরেকটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার যুগ্মসচিব।
এই কমিটির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়টি বর্তমানে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এ কারণে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা, ওজন, ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্ট (চঊঞ) এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগ্যতা নিরূপণের প্রক্রিয়া সুপারিশ করা হয়েছে। এতে উপযুক্ত ও আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন নিশ্চিত করা সহজ হবে। এছাড়া পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য ফিট লিস্ট তৈরি, বিশেষায়িত ইউনিট যেমন সিআইডি, সাইবার অপরাধ বা বায়োমেট্রিক সেবায় উপযুক্ত পদায়ন নিশ্চিত করার প্রস্তাবও রয়েছে। কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করে পরবর্তী তিন বছরের জন্য মূল্যায়নভিত্তিক পদোন্নতির সুপারিশও কমিটির কাজের অংশ।
একজন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত একটি জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গঠিত হলে, তা জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং একটি প্রকৃত জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীতে রূপ নিতে পারবে।’
আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অপরাধ দমন, জননিরাপত্তা এবং বিচার ব্যবস্থাকে সহায়তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দীর্ঘদিন ধরে জনমনে পুলিশের প্রতি ভীতি, অবিশ্বাস ও ক্ষোভ জমেছে।’ তিনি আরও বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাত, অমানবিক আচরণ, দুর্নীতি, ‘কাউন্টার কিলিং’ এসবের অভিযোগ রয়েছে। এসব আচরণ একটি স্বাধীন দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।” এ ধরনের প্রেক্ষাপটে পুলিশ সংস্কার এখন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রয়োজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক ও নৈতিক দাবি, যা নাগরিক ভাবনারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এর একটি কমিটি গঠিত হয়েছে স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, আইন ও বিধিমালার পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এবং অন্যটি গঠিত হয়েছে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখা থেকে প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। সাত সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব, আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের সংশ্লিষ্ট অধিশাখার যুগ্মসচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রয়োজনে কমিটি একজন বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। এই কমিটির দায়িত্ব হবে ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ ও বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধিমালার সংশোধনের প্রস্তাব, ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) সংশোধনের সুপারিশ, এবং একটি জবাবদিহিমূলক, জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে কাঠামোগত সংস্কারের দিকনির্দেশনা প্রদান।
একইসঙ্গে সহায়ক অবকাঠামো, বাজেট, জনবল ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির সুপারিশও করবে কমিটি। বলপ্রয়োগে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে পুলিশ ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় আইনি পরিবর্তনের প্রস্তাবও কমিটির কাজের অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিতে আরেকটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার যুগ্মসচিব।
এই কমিটির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়টি বর্তমানে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এ কারণে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা, ওজন, ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্ট (চঊঞ) এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগ্যতা নিরূপণের প্রক্রিয়া সুপারিশ করা হয়েছে। এতে উপযুক্ত ও আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন নিশ্চিত করা সহজ হবে। এছাড়া পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য ফিট লিস্ট তৈরি, বিশেষায়িত ইউনিট যেমন সিআইডি, সাইবার অপরাধ বা বায়োমেট্রিক সেবায় উপযুক্ত পদায়ন নিশ্চিত করার প্রস্তাবও রয়েছে। কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করে পরবর্তী তিন বছরের জন্য মূল্যায়নভিত্তিক পদোন্নতির সুপারিশও কমিটির কাজের অংশ।
একজন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত একটি জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গঠিত হলে, তা জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং একটি প্রকৃত জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীতে রূপ নিতে পারবে।’
আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অপরাধ দমন, জননিরাপত্তা এবং বিচার ব্যবস্থাকে সহায়তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দীর্ঘদিন ধরে জনমনে পুলিশের প্রতি ভীতি, অবিশ্বাস ও ক্ষোভ জমেছে।’ তিনি আরও বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাত, অমানবিক আচরণ, দুর্নীতি, ‘কাউন্টার কিলিং’ এসবের অভিযোগ রয়েছে। এসব আচরণ একটি স্বাধীন দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।” এ ধরনের প্রেক্ষাপটে পুলিশ সংস্কার এখন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রয়োজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক ও নৈতিক দাবি, যা নাগরিক ভাবনারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।