চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রিট আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদনকে ‘জুলাই রেভোলিউশন-২০২৪’ নামে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, আগামীতে নির্বাচিত সরকার যাতে বিচারের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য এ রিট মামলাকে চলমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তানভীর আহমেদ বলেন, গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ অগাস্ট তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ এবং গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান দল ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মে মাসে সম্পূরক আবেদন করা হয়। ১৪ মে আরেক সম্পূরক আবেদনে প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার আর্জি জানানো হয়। সে সময় হাই কোর্ট রুল জারি করে এবং বৃহস্পতিবার রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান দল জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সামনে থেকে গুলি চালানো হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণে ওএইচসিএইচআরের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে যে সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হয়ে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজারো বিক্ষোভকারীকে জোরপূর্বক বলপ্রয়োগে দমন করা হয়, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি ও নির্দেশনায় পরিচালিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যান। হাজারো মানুষ গুরুতর আহত হন। পুলিশ ও র্যাবের তথ্যে জানা যায়, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার ও আটক হন। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশুদের হত্যা, পঙ্গু করা, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয়।
এ ছাড়া, নারী ও মেয়েরা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন। তাদের ওপর হামলা, শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি এবং কিছু ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের তথ্য এসেছে।
প্রতিবেদন জানায়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত দমন করতে আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। এতে বিরোধীদের মধ্যে বিক্ষোভ বাড়ে এবং আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি, পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা ও সিটিটিসি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা নজরদারির তথ্য বিনিময় করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার চালায় এবং আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করে। সিটিটিসির সদর দপ্তর বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ডিজিএফআই, এনএসআই ও গোয়েন্দা পুলিশ আহতদের চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত করে, হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহতদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে।
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রিট আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদনকে ‘জুলাই রেভোলিউশন-২০২৪’ নামে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, আগামীতে নির্বাচিত সরকার যাতে বিচারের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য এ রিট মামলাকে চলমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তানভীর আহমেদ বলেন, গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ অগাস্ট তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ এবং গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান দল ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মে মাসে সম্পূরক আবেদন করা হয়। ১৪ মে আরেক সম্পূরক আবেদনে প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার আর্জি জানানো হয়। সে সময় হাই কোর্ট রুল জারি করে এবং বৃহস্পতিবার রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান দল জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সামনে থেকে গুলি চালানো হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণে ওএইচসিএইচআরের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে যে সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হয়ে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজারো বিক্ষোভকারীকে জোরপূর্বক বলপ্রয়োগে দমন করা হয়, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি ও নির্দেশনায় পরিচালিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যান। হাজারো মানুষ গুরুতর আহত হন। পুলিশ ও র্যাবের তথ্যে জানা যায়, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার ও আটক হন। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশুদের হত্যা, পঙ্গু করা, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয়।
এ ছাড়া, নারী ও মেয়েরা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন। তাদের ওপর হামলা, শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি এবং কিছু ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের তথ্য এসেছে।
প্রতিবেদন জানায়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত দমন করতে আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। এতে বিরোধীদের মধ্যে বিক্ষোভ বাড়ে এবং আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি, পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা ও সিটিটিসি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা নজরদারির তথ্য বিনিময় করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার চালায় এবং আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করে। সিটিটিসির সদর দপ্তর বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ডিজিএফআই, এনএসআই ও গোয়েন্দা পুলিশ আহতদের চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত করে, হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহতদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে।