alt

news » national

২১ আগস্ট: খালাসের রায় বহাল থাকবে কিনা, জানা যাবে ৪ সেপ্টেম্বর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের সবার খালাসের রায় বহাল থাকবে কিনা, তা জানা যাবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর পঞ্চম দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার,(২১ আগস্ট ২০২৫) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বিভাগ রায়ের এ দিন ঠিক করে দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতের দেয়া সাজার রায় বহাল রাখার এবং আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আর্জি জানায়। গত ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট, ২০ আগস্ট শুনানি হয়। পঞ্চম দিনে শুনানি শেষ হলো বৃহস্পতিবার।

গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের সবাইকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। গত ১ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

জজ আদালত এ মামলায় বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়। যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয় হাইকোর্টের রায়ে।

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় গত ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।

‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এ মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এ মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’

আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এ ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।’

অন্যদিকে আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যেভাবে এ মামলায় পুনঃতদন্তের আদেশ দেয়া হয়েছিল, তা ছিল ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’। যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’। হাইকোর্ট বলেছে, ‘সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ মামলায় যেভাবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে, তা অবৈধ এবং আইনের বিচারে তা টেকে না।’

জজ আদালতে কার কী সাজা হয়েছিল?

১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড-সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

১৯ জনের যাবজ্জীবন-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন।

১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড-সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদর ৩ বছরের জেল। সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের ২ বছরের কারাদণ্ড। পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসানের ২ বছরের কারাদণ্ড।

ছবি

আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা ১৬ জনের বিচার শুরু, রাজসাক্ষী হচ্ছেন এক সাবেক এসআই

ছবি

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ছবি

এনবিআর সংস্কার অধ্যাদেশে বড় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ১৭৩০ মামলা, অভিযোগপত্র ২৬টির

ছবি

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঁচ বিচারপতির তদন্ত, একজনের চূড়ান্ত শুনানি ২৬ আগস্ট

ছবি

আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে

ছবি

জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করে গেজেট জারির নির্দেশ হাই কোর্টের

ছবি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্ত ভ্রমণ

ছবি

আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু

ছবি

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল ঢাকায়

ছবি

চার বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি ২৬ আগস্ট

নাজিরপুরে চিরকুট লিখে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ২১ বছর আজ

ছবি

ছয় দিনের সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান

ছবি

পিএসসিতে আরও তিন নতুন সদস্য নিয়োগ

ছবি

জুলাইয়ে সড়কে ৩৮০ মৃত্যুর হিসাব দিলো বিআরটিএ

ছবি

প্রবাসে এনআইডি সেবা: মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট হলেও ভোট দেয়া যাবে

ছবি

বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিসহ তিন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

উপদেষ্টা মাহফুজের দেরি, অনুষ্ঠান বয়কট সাংবাদিকদের

ছবি

ভারতে থেকে ‘বাংলাদেশবিরোধী’ কার্যক্রম বন্ধে দিল্লিকে ঢাকার আহ্বান

ছবি

১৬৭ জুলাই আহতের বেশিরভাগের মাথার খুলি ছিল না: ট্রাইব্যুনালে চিকিৎসক

ছবি

সাবেক মন্ত্রী শাহাব ও পরিবারের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

৭৮ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ

ছবি

জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮০ জন নিহত তথ্য দিলো বিআরটিএ

ছবি

বিতর্কিত ভিডিওর ঘটনায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল ইসলাম

ছবি

জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৮, বেশি মোটরসাইকেলে

ছবি

বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি: যেসব পদক্ষেপের কথা জানালো বিমান

ছবি

এনবিআরের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চায় দুদক

ছবি

৮৫ নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরিতে ফেরানোর পূর্ণাঙ্গ রায়

ছবি

পাটুরিয়ায় নদী ভাঙন: নিঃস্ব ঘাট পাড়ের অন্তত ৩০টি পরিবার

ছবি

ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ

ছবি

একদিনে ৪১ অতিরিক্ত কর কমিশনারকে বদলি

ছবি

ছাদ সৌরবিদ্যুৎ: ৩ হাজার মেগাওয়াট ডিসেম্বরের মধ্যে ‘অসম্ভব ও উচ্চাভিলাষী’ বলছে আইইইএফএ

ছবি

যুক্তরাজ্য থেকে ৩ কার্গো এলএনজি কিনছে সরকার

ছবি

আড়াইহাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০, বাড়িঘর লুট, ভাঙচুর

tab

news » national

২১ আগস্ট: খালাসের রায় বহাল থাকবে কিনা, জানা যাবে ৪ সেপ্টেম্বর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের সবার খালাসের রায় বহাল থাকবে কিনা, তা জানা যাবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর পঞ্চম দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার,(২১ আগস্ট ২০২৫) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বিভাগ রায়ের এ দিন ঠিক করে দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতের দেয়া সাজার রায় বহাল রাখার এবং আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আর্জি জানায়। গত ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট, ২০ আগস্ট শুনানি হয়। পঞ্চম দিনে শুনানি শেষ হলো বৃহস্পতিবার।

গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের সবাইকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। গত ১ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

জজ আদালত এ মামলায় বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়। যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয় হাইকোর্টের রায়ে।

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় গত ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।

‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এ মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এ মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’

আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এ ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।’

অন্যদিকে আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যেভাবে এ মামলায় পুনঃতদন্তের আদেশ দেয়া হয়েছিল, তা ছিল ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’। যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’। হাইকোর্ট বলেছে, ‘সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ মামলায় যেভাবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে, তা অবৈধ এবং আইনের বিচারে তা টেকে না।’

জজ আদালতে কার কী সাজা হয়েছিল?

১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড-সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

১৯ জনের যাবজ্জীবন-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন।

১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড-সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদর ৩ বছরের জেল। সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের ২ বছরের কারাদণ্ড। পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসানের ২ বছরের কারাদণ্ড।

back to top