alt

news » national

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ফয়েজ আহমেদ তুষার : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। জমি স্বল্পতা, অপ্রতুল সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ নানা কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খুব একটা অগ্রগতি নেই। বায়ুতে কিছুটা সম্ভবনা থাকলেও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তেমন একটা নেই।

শ্রীলঙ্কার উৎপাদন সক্ষমতা ৬৩ শতাংশ

পাকিস্তানের ৪৭, ভারতের ৪৮ শতাংশ

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৫.২৫ শতাংশ (১৬১৬ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

জ্বালানি খাতের আন্তর্জাতিক এই গবেষণা সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ (৩৬৫৭ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। পাকিস্তানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৭ শতাংশ (২৮৫৬০ মেগাওয়াট) এবং ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৮ শতাংশ (২২৬.৭৪ গিগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২৫ অনুযায়ী, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট বিদ্যুতের চাহিদার ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ পূরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর অংশ হিসেবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ৩০০০ মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইইইএফএ’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে (ডিসেম্বর ২০২৫) তিন হাজার মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ (রুফটপ সোলার) উৎপাদনের পরিকল্পনা অতি উচ্চাভিলাষী হতে পারে। কারণ, ২০০৮ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ২৪৫ মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার (আইআরইএনএ) এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়সাশ্রয়ী। তবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল ও মূলধন সংকটে থাকা দেশগুলোতে এ অগ্রগতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

গত মাসে প্রকাশিত আইআরইএনএ’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্লোবাল সাউথ, যেমন- এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির অগ্রগতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্বল বিদ্যুৎ গ্রিড অবকাঠামো, উচ্চ মূলধন ব্যয়, অর্থায়নে সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক জটিলতা।

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত সক্ষমতা ২৭ হাজার ৪২৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৬২৫.৯৫ মেগাওয়াট, যা সর্বমোট সক্ষমতার ৫.৯২ শতাংশ।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের মোট সক্ষমতা ১৬২৫.৯৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্রিডভিত্তিক সক্ষমতা ১২৪৫.৮৩ মেগাওয়াট এবং গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয় (অফ গ্রিড) এমন বিদ্যুতের সক্ষমতা ৩৮০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মোট সক্ষমতার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ ১৩৩১.৯৪ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে ৬২.৯ মেগাওয়াট, হাইড্রো বা পানির শক্তি ব্যবহার করে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ০.৬৯ মেগাওয়াট ও বায়োম্যাস থেকে ০.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

সরকার সংশ্লিষ্টদের মতে, অকৃষি জমির অপ্রতুলতা এবং জমির উচ্চমূল্যের কারণে দেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসার হয়নি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, জমি ছাড়া সৌরবিদ্যুতে উন্নয়ন সম্ভব নয়- এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম সফলতা পেয়েছে।

সম্প্রতি আইইইএফএ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনামূলক চিত্র উপস্থান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ: সেখানে দেখানো হয়েছে, জুন ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৫.২৫ শতাংশ (১৬১৬ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ৪.৩ শতাংশ (১৩২৩ মেগাওয়াট); ছাদ সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ০.৮ শতাংশ (২৪৫ মেগাওয়াট)। স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে গ্যাস, কয়লা ও তেল থেকে উৎপাদন সক্ষমতা যথাক্রমে ৩৮.২৫, ১৮.৪ ও ২০.৩ শতাংশ। ক্যাপটিভ থেকে সক্ষমতা ৯.১ শতাংশ এবং আমদানি করা হয় ৮.৭ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কা: নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ (৩৬৫৭ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে সৌরবিদ্যুৎ হলোÑ ২৬ শতাংশ (১৫০০ মেগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ ২৩ শতাংশ (১৩৪৭ মেগাওয়াট)। দেশটিতে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ শতাংশ এবং তেল থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ২২ শতাংশ।

পাকিস্তান: জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৭ শতাংশ (২৮৫৬০ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে, সৌরবিদ্যুৎ ২৭ শতাংশ (১৬১০০ মেগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ ২৫ শতাংশ (১৫০০০ মেগাওয়াট)। দেশটিতে কয়লা থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ১২ শতাংশ, গ্যাস থেকে ২৭ শতাংশ এবং তেল, পারমাণবিক জ্বালানি ও অন্যান্য উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ শতাংশ।

ভারত: মে ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৮ শতাংশ (২২৬.৭৪ গিগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে, সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ২৩ শতাংশ (১১০.৮৩ গিগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ৪ শতাংশ (১৮.৩৭ গিগাওয়াট বা ১৮৩৭০ মেগাওয়াট)। দেশটির কয়লা থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬ শতাংশ। তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানি থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ৬ শতাংশ।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা সোলার সিস্টেমে মডেল হয়ে গেলাম বিশ্বে, চোখের সামনে দেখলাম সেই সোলার সিস্টেম অপ্রচলিত হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, ‘আসলে সোলার সিস্টেম দিয়ে আমাদের দেশের তৃণমূল মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যেত এবং তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত- যদি প্রযুক্তিগতভাবে যথাযথ এর মান উন্নয়ন করতাম।’

তার মতে, দেশে জমির দাম বেশি, কৃষি জমির অভাবসহ নানা কারণে সৌরবিদ্যুতের প্রসার হয়নি। তবে ‘রুফটপ সোলার (ছাদ সৌরবিদ্যুৎ)’ উপেক্ষিত হয়েছে। এম শামসুল আলম বলেন, ‘রুফটপ সোলার বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় এক খাত। প্রয়োজন যুগোপযোগী নীতিমালা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতি দমনে কঠোর নজরদারি।’

ছবি

আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা ১৬ জনের বিচার শুরু, রাজসাক্ষী হচ্ছেন এক সাবেক এসআই

ছবি

২১ আগস্ট: খালাসের রায় বহাল থাকবে কিনা, জানা যাবে ৪ সেপ্টেম্বর

ছবি

এনবিআর সংস্কার অধ্যাদেশে বড় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ১৭৩০ মামলা, অভিযোগপত্র ২৬টির

ছবি

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঁচ বিচারপতির তদন্ত, একজনের চূড়ান্ত শুনানি ২৬ আগস্ট

ছবি

আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে

ছবি

জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা করে গেজেট জারির নির্দেশ হাই কোর্টের

ছবি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্ত ভ্রমণ

ছবি

আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু

ছবি

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল ঢাকায়

ছবি

চার বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি ২৬ আগস্ট

নাজিরপুরে চিরকুট লিখে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ২১ বছর আজ

ছবি

ছয় দিনের সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান

ছবি

পিএসসিতে আরও তিন নতুন সদস্য নিয়োগ

ছবি

জুলাইয়ে সড়কে ৩৮০ মৃত্যুর হিসাব দিলো বিআরটিএ

ছবি

প্রবাসে এনআইডি সেবা: মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট হলেও ভোট দেয়া যাবে

ছবি

বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিসহ তিন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

উপদেষ্টা মাহফুজের দেরি, অনুষ্ঠান বয়কট সাংবাদিকদের

ছবি

ভারতে থেকে ‘বাংলাদেশবিরোধী’ কার্যক্রম বন্ধে দিল্লিকে ঢাকার আহ্বান

ছবি

১৬৭ জুলাই আহতের বেশিরভাগের মাথার খুলি ছিল না: ট্রাইব্যুনালে চিকিৎসক

ছবি

সাবেক মন্ত্রী শাহাব ও পরিবারের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

৭৮ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ

ছবি

জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮০ জন নিহত তথ্য দিলো বিআরটিএ

ছবি

বিতর্কিত ভিডিওর ঘটনায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল ইসলাম

ছবি

জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৮, বেশি মোটরসাইকেলে

ছবি

বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি: যেসব পদক্ষেপের কথা জানালো বিমান

ছবি

এনবিআরের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চায় দুদক

ছবি

৮৫ নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরিতে ফেরানোর পূর্ণাঙ্গ রায়

ছবি

পাটুরিয়ায় নদী ভাঙন: নিঃস্ব ঘাট পাড়ের অন্তত ৩০টি পরিবার

ছবি

ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ

ছবি

একদিনে ৪১ অতিরিক্ত কর কমিশনারকে বদলি

ছবি

ছাদ সৌরবিদ্যুৎ: ৩ হাজার মেগাওয়াট ডিসেম্বরের মধ্যে ‘অসম্ভব ও উচ্চাভিলাষী’ বলছে আইইইএফএ

ছবি

যুক্তরাজ্য থেকে ৩ কার্গো এলএনজি কিনছে সরকার

ছবি

আড়াইহাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০, বাড়িঘর লুট, ভাঙচুর

tab

news » national

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ফয়েজ আহমেদ তুষার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। জমি স্বল্পতা, অপ্রতুল সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ নানা কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খুব একটা অগ্রগতি নেই। বায়ুতে কিছুটা সম্ভবনা থাকলেও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তেমন একটা নেই।

শ্রীলঙ্কার উৎপাদন সক্ষমতা ৬৩ শতাংশ

পাকিস্তানের ৪৭, ভারতের ৪৮ শতাংশ

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৫.২৫ শতাংশ (১৬১৬ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

জ্বালানি খাতের আন্তর্জাতিক এই গবেষণা সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ (৩৬৫৭ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। পাকিস্তানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৭ শতাংশ (২৮৫৬০ মেগাওয়াট) এবং ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৮ শতাংশ (২২৬.৭৪ গিগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২৫ অনুযায়ী, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট বিদ্যুতের চাহিদার ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ পূরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর অংশ হিসেবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ৩০০০ মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইইইএফএ’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে (ডিসেম্বর ২০২৫) তিন হাজার মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ (রুফটপ সোলার) উৎপাদনের পরিকল্পনা অতি উচ্চাভিলাষী হতে পারে। কারণ, ২০০৮ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ২৪৫ মেগাওয়াট ছাদ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার (আইআরইএনএ) এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়সাশ্রয়ী। তবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল ও মূলধন সংকটে থাকা দেশগুলোতে এ অগ্রগতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

গত মাসে প্রকাশিত আইআরইএনএ’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্লোবাল সাউথ, যেমন- এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির অগ্রগতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্বল বিদ্যুৎ গ্রিড অবকাঠামো, উচ্চ মূলধন ব্যয়, অর্থায়নে সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক জটিলতা।

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত সক্ষমতা ২৭ হাজার ৪২৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৬২৫.৯৫ মেগাওয়াট, যা সর্বমোট সক্ষমতার ৫.৯২ শতাংশ।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্যানুযায়ী, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের মোট সক্ষমতা ১৬২৫.৯৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্রিডভিত্তিক সক্ষমতা ১২৪৫.৮৩ মেগাওয়াট এবং গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয় (অফ গ্রিড) এমন বিদ্যুতের সক্ষমতা ৩৮০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মোট সক্ষমতার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ ১৩৩১.৯৪ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে ৬২.৯ মেগাওয়াট, হাইড্রো বা পানির শক্তি ব্যবহার করে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ০.৬৯ মেগাওয়াট ও বায়োম্যাস থেকে ০.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

সরকার সংশ্লিষ্টদের মতে, অকৃষি জমির অপ্রতুলতা এবং জমির উচ্চমূল্যের কারণে দেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসার হয়নি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, জমি ছাড়া সৌরবিদ্যুতে উন্নয়ন সম্ভব নয়- এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম সফলতা পেয়েছে।

সম্প্রতি আইইইএফএ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনামূলক চিত্র উপস্থান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ: সেখানে দেখানো হয়েছে, জুন ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৫.২৫ শতাংশ (১৬১৬ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ৪.৩ শতাংশ (১৩২৩ মেগাওয়াট); ছাদ সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ০.৮ শতাংশ (২৪৫ মেগাওয়াট)। স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে গ্যাস, কয়লা ও তেল থেকে উৎপাদন সক্ষমতা যথাক্রমে ৩৮.২৫, ১৮.৪ ও ২০.৩ শতাংশ। ক্যাপটিভ থেকে সক্ষমতা ৯.১ শতাংশ এবং আমদানি করা হয় ৮.৭ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কা: নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ (৩৬৫৭ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে সৌরবিদ্যুৎ হলোÑ ২৬ শতাংশ (১৫০০ মেগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ ২৩ শতাংশ (১৩৪৭ মেগাওয়াট)। দেশটিতে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ শতাংশ এবং তেল থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ২২ শতাংশ।

পাকিস্তান: জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৭ শতাংশ (২৮৫৬০ মেগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে, সৌরবিদ্যুৎ ২৭ শতাংশ (১৬১০০ মেগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ ২৫ শতাংশ (১৫০০০ মেগাওয়াট)। দেশটিতে কয়লা থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ১২ শতাংশ, গ্যাস থেকে ২৭ শতাংশ এবং তেল, পারমাণবিক জ্বালানি ও অন্যান্য উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ শতাংশ।

ভারত: মে ২০২৫ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, ভারতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৮ শতাংশ (২২৬.৭৪ গিগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এরমধ্যে, সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ২৩ শতাংশ (১১০.৮৩ গিগাওয়াট), ছাদ সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে ৪ শতাংশ (১৮.৩৭ গিগাওয়াট বা ১৮৩৭০ মেগাওয়াট)। দেশটির কয়লা থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬ শতাংশ। তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানি থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ৬ শতাংশ।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা সোলার সিস্টেমে মডেল হয়ে গেলাম বিশ্বে, চোখের সামনে দেখলাম সেই সোলার সিস্টেম অপ্রচলিত হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, ‘আসলে সোলার সিস্টেম দিয়ে আমাদের দেশের তৃণমূল মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যেত এবং তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত- যদি প্রযুক্তিগতভাবে যথাযথ এর মান উন্নয়ন করতাম।’

তার মতে, দেশে জমির দাম বেশি, কৃষি জমির অভাবসহ নানা কারণে সৌরবিদ্যুতের প্রসার হয়নি। তবে ‘রুফটপ সোলার (ছাদ সৌরবিদ্যুৎ)’ উপেক্ষিত হয়েছে। এম শামসুল আলম বলেন, ‘রুফটপ সোলার বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় এক খাত। প্রয়োজন যুগোপযোগী নীতিমালা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতি দমনে কঠোর নজরদারি।’

back to top