পাথর লুটপাটের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র সচিব ড. মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল শুক্রবার,(২২ আগস্ট ২০২৫) সিলেটে সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি পাথর ‘লুটপাট নয় বরং হরিলুট হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক, লুটপাটে উৎসাহের অভিযোগ
এপ্রিল মাসে কোয়ারি ইজারা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার
৪২ জনের সংশ্লিষ্টতাঃ কী আছে দুদকের প্রতিবেদনে
ভাগ পান প্রশাসনের লোক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন। এ ছাড়া লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল বলেও জানানো হয়েছে।
এই ‘হরিলুটের’ শুরুটা কীভাবে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, পতিত সরকারের আমলে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে কিছু লুটপাট হতো। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর তা বেড়ে যায়। দুদকের প্রতিবেদনেও তা বলা হয়েছে।
গত ১২ জুন সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ মো. ফাওজুল কবির খান। ফেরার পথে গোয়াইনঘাট বল্লাঘাট এলাকায় তাদের গাড়ির বহর আটকে দেন পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা। এরপরে কঠোর অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় বিভিন্ন ক্রাশার মেশিন উচ্ছেদ এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
এতে অনেকের বিরাগভাজন হন জেলা প্রশাসক। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে জেলা প্রশাসকের প্রতি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন।
পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের নেতারা। একটা পর্যায়ে এসে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপর ডাক দেয়া হয় পরিবহন ধর্মঘটসহ আন্দোলনের।
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গড়ায় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। তার ডাকা বৈঠকে কমিশনার বলেন, ‘সারাদেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন?’ এমন মন্তব্যের পর প্রশাসন কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
এরপর থেকেই সব রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পাথর লুটপাটে হিড়িক শুরু হয়। এই পাথরকাণ্ডে ওএসডি হন জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
দুদকের এক প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারি সব কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে পাথর লুটে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে নাম আসেনি সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হকের। তবে তিনি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলনে প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন। এরপর থেকে নীরব তিনি।
গত এপ্রিল মাসে এক সভায় ‘লুটপাট ঠেকাতে’ পাথর কেয়ারিগুলো ইজারা দেয়ার পক্ষে ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। সে সময় চলতি বছরে লুটপাটের এক কোটি ফুট পাথর জব্দের তথ্যও দেন তিনি।
গত ২ জুলাই সকালে নগরীর আদালত চত্বরে এক সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক কোনো নোটিশ ছাড়া বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাথরভাঙা যন্ত্র (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
আন্দোলন ও পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্যের মধ্যে গত ৯ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা ডাকেন বিভাগীয় কমিশনার বিভাগী কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। ওই সভাতেও উচ্ছেদ কার্যক্রমের কারণে জেলা প্রশাসকের কাছে অনেকটা জেরার মতো নানা প্রশ্ন করতে দেখা যায় দু’একজন রাজনৈতিক নেতা ও পাথর ব্যবসায়ীদের।
সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘সিলেট কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, দেশের একটা অংশ। সারাদেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। সনাতন পদ্ধতিতে সিলেট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হলো কেন? এটাও একটা বড় প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘যদি আইন মেনে বালু বা পাথর উত্তোলন করা হয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? নিশ্চয় কোনো না কোনো সমস্যা ছিল বলে বেলা রিট করেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। পুরো বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার এই ম্যারাথন বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
সিলেট পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পাথর ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে রাজনৈতিক ছত্রছায়া তো ছিলই, বিশেষ করে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বৈঠকে তার বক্তব্য সরকার এবং আদালত অবমাননার শামিল।’
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘গত ৮ জুলাই আমরা ইজারা নিয়ে কথা বলেছি। পাথর চুরি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পাথরচোরদের উৎসাহিত করার মতো কিছু আমি বলিনি। তেমন কিছু কেউ বললে বা ছড়ালে সেটা ভুল মেসেজ।’কী আছে দুদকের প্রতিবেদনে
ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুদক এসব তথ্য জানতে পেরেছে। ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ অভিযান চালায়। পরে অভিযানে পাওয়া যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়। এটি গত বুধবার জানাজানি হয়।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অসাধু ব্যক্তিরা যোগসাজশ করে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে, বিশেষ করে তিন মাস ধরে, পাথর উত্তোলন চলতে থাকে। এ বছর আগস্টে এসে নির্বিচার লুট চলে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে নেয়া হয়। বর্তমানে এলাকাটি অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নিষ্ক্রিয়তা, লুটেরাদের কাছ থেকে কমিশন নেয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক পাথর লুটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার বিবরণ প্রতিবেদনে লিখেছে। তাতে প্রথমেই আছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, রাজনীতিবিদ ও অন্যরা। এর মধ্যে বিএমডি ও বিজিবির বিষয়ে পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হবে বলে দুদক উল্লেখ করেছে।
‘ডিসি-ইউএনওর ভাগও আছে’
দুদকের দল সাদা পাথর এলাকায় দর্শনার্থী, ব্যবসায়ীসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), তহসিলদার বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাসহ অনেকেই পাথরবাণিজ্যের কমিশন পান। প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার এবং প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা কমিশন পায় স্থানীয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট সোর্স ও কর্মচারীর মাধ্যমে কমিশনের টাকা সংগ্রহ করা হয়।
‘ভাগ পান এসপি-ওসিও’
এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে দুদক জানতে পেরেছে, প্রতি ট্রাকে অবৈধভাবে উত্তোলিত প্রায় ৫০০ ঘনফুট পাথর লোড করা হয়। পরিবহন ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাক পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। প্রতি ঘনফুট পাথরের দাম ১৮২ টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার টাকা পুলিশ এবং ৫ হাজার টাকা প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
দুদক জানিয়েছে, পুলিশের কমিশনের টাকা এসপি, সার্কেল এএসপি, ওসি ও আরও কিছু পুলিশ সদস্য পান। এ ছাড়া অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে পুলিশের কমিশন বাবদ ৫০০ টাকা তোলা হয়। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এ চাঁদা সংগ্রহ করে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করে সাদা পাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে দুদক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে।
#লুটে কাদের নাম#
পাথর লুটপাটে ৪২ জন রাজনীতিক, পাথর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে পাওয়া গেছে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির ২১ জন (একজন বহিষ্কৃত নেতা), জামায়াতের ২ জন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২ জন, আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ৭ জন রয়েছেন। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিনের নাম আছে।
পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী কামাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি লাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের নাম রয়েছে।
তালিকায় আছেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও তাঁর ভাই সাজন মিয়া, উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী ও মানিক মিয়া, আওয়ামী লীগের কর্মী মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান ও বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স উল্লেখযোগ্য।
এই ৩১ জন ছাড়াও ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরিতে আরও ১১ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা হলেন- আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ২ নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম ও সিলেট নগরের মীরবক্সটুলা এলাকার জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুকাররিম আহমেদ।
সাদা পাথর লুটে জড়িত ও সুবিধাভোগী হিসেবে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার মানুষের জড়িত থাকার তথ্য কথা দুদক প্রতিবেদনে জানালেও তালিকায় তাদের নাম নেই।
#পাথর কোয়ারির সংখ্যা#
সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৫টি জেলায় গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারির সংখ্যা ৫১। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশের পাথর কোয়ারি ইজারা, খাস কালেকশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ করে সিদ্ধান্ত দেয়। এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন পাথর কোয়ারি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা যেমন সিলেটের জাফলং, মামলাভুক্ত শাহ-আরেফিন টিলা এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়ি ঝিরি-ছড়া এলাকার ১০টিসহ মোট ১২টি পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। পরে এসব কোয়ারির বাইরে ৩৬টি পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)।
শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
পাথর লুটপাটের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র সচিব ড. মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল শুক্রবার,(২২ আগস্ট ২০২৫) সিলেটে সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি পাথর ‘লুটপাট নয় বরং হরিলুট হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক, লুটপাটে উৎসাহের অভিযোগ
এপ্রিল মাসে কোয়ারি ইজারা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার
৪২ জনের সংশ্লিষ্টতাঃ কী আছে দুদকের প্রতিবেদনে
ভাগ পান প্রশাসনের লোক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন। এ ছাড়া লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল বলেও জানানো হয়েছে।
এই ‘হরিলুটের’ শুরুটা কীভাবে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, পতিত সরকারের আমলে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে কিছু লুটপাট হতো। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর তা বেড়ে যায়। দুদকের প্রতিবেদনেও তা বলা হয়েছে।
গত ১২ জুন সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ মো. ফাওজুল কবির খান। ফেরার পথে গোয়াইনঘাট বল্লাঘাট এলাকায় তাদের গাড়ির বহর আটকে দেন পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা। এরপরে কঠোর অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় বিভিন্ন ক্রাশার মেশিন উচ্ছেদ এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
এতে অনেকের বিরাগভাজন হন জেলা প্রশাসক। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে জেলা প্রশাসকের প্রতি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন।
পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের নেতারা। একটা পর্যায়ে এসে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপর ডাক দেয়া হয় পরিবহন ধর্মঘটসহ আন্দোলনের।
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গড়ায় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। তার ডাকা বৈঠকে কমিশনার বলেন, ‘সারাদেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন?’ এমন মন্তব্যের পর প্রশাসন কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
এরপর থেকেই সব রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পাথর লুটপাটে হিড়িক শুরু হয়। এই পাথরকাণ্ডে ওএসডি হন জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
দুদকের এক প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারি সব কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে পাথর লুটে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে নাম আসেনি সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হকের। তবে তিনি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার আন্দোলনে প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন। এরপর থেকে নীরব তিনি।
গত এপ্রিল মাসে এক সভায় ‘লুটপাট ঠেকাতে’ পাথর কেয়ারিগুলো ইজারা দেয়ার পক্ষে ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। সে সময় চলতি বছরে লুটপাটের এক কোটি ফুট পাথর জব্দের তথ্যও দেন তিনি।
গত ২ জুলাই সকালে নগরীর আদালত চত্বরে এক সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক কোনো নোটিশ ছাড়া বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাথরভাঙা যন্ত্র (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
আন্দোলন ও পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্যের মধ্যে গত ৯ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা ডাকেন বিভাগীয় কমিশনার বিভাগী কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। ওই সভাতেও উচ্ছেদ কার্যক্রমের কারণে জেলা প্রশাসকের কাছে অনেকটা জেরার মতো নানা প্রশ্ন করতে দেখা যায় দু’একজন রাজনৈতিক নেতা ও পাথর ব্যবসায়ীদের।
সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘সিলেট কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, দেশের একটা অংশ। সারাদেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। সনাতন পদ্ধতিতে সিলেট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হলো কেন? এটাও একটা বড় প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘যদি আইন মেনে বালু বা পাথর উত্তোলন করা হয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? নিশ্চয় কোনো না কোনো সমস্যা ছিল বলে বেলা রিট করেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। পুরো বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার এই ম্যারাথন বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
সিলেট পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পাথর ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে রাজনৈতিক ছত্রছায়া তো ছিলই, বিশেষ করে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বৈঠকে তার বক্তব্য সরকার এবং আদালত অবমাননার শামিল।’
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘গত ৮ জুলাই আমরা ইজারা নিয়ে কথা বলেছি। পাথর চুরি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পাথরচোরদের উৎসাহিত করার মতো কিছু আমি বলিনি। তেমন কিছু কেউ বললে বা ছড়ালে সেটা ভুল মেসেজ।’কী আছে দুদকের প্রতিবেদনে
ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুদক এসব তথ্য জানতে পেরেছে। ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ অভিযান চালায়। পরে অভিযানে পাওয়া যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়। এটি গত বুধবার জানাজানি হয়।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অসাধু ব্যক্তিরা যোগসাজশ করে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে, বিশেষ করে তিন মাস ধরে, পাথর উত্তোলন চলতে থাকে। এ বছর আগস্টে এসে নির্বিচার লুট চলে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে নেয়া হয়। বর্তমানে এলাকাটি অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নিষ্ক্রিয়তা, লুটেরাদের কাছ থেকে কমিশন নেয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক পাথর লুটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার বিবরণ প্রতিবেদনে লিখেছে। তাতে প্রথমেই আছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, রাজনীতিবিদ ও অন্যরা। এর মধ্যে বিএমডি ও বিজিবির বিষয়ে পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হবে বলে দুদক উল্লেখ করেছে।
‘ডিসি-ইউএনওর ভাগও আছে’
দুদকের দল সাদা পাথর এলাকায় দর্শনার্থী, ব্যবসায়ীসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), তহসিলদার বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাসহ অনেকেই পাথরবাণিজ্যের কমিশন পান। প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার এবং প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা কমিশন পায় স্থানীয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট সোর্স ও কর্মচারীর মাধ্যমে কমিশনের টাকা সংগ্রহ করা হয়।
‘ভাগ পান এসপি-ওসিও’
এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে দুদক জানতে পেরেছে, প্রতি ট্রাকে অবৈধভাবে উত্তোলিত প্রায় ৫০০ ঘনফুট পাথর লোড করা হয়। পরিবহন ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাক পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। প্রতি ঘনফুট পাথরের দাম ১৮২ টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার টাকা পুলিশ এবং ৫ হাজার টাকা প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
দুদক জানিয়েছে, পুলিশের কমিশনের টাকা এসপি, সার্কেল এএসপি, ওসি ও আরও কিছু পুলিশ সদস্য পান। এ ছাড়া অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে পুলিশের কমিশন বাবদ ৫০০ টাকা তোলা হয়। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এ চাঁদা সংগ্রহ করে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করে সাদা পাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে দুদক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে।
#লুটে কাদের নাম#
পাথর লুটপাটে ৪২ জন রাজনীতিক, পাথর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে পাওয়া গেছে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির ২১ জন (একজন বহিষ্কৃত নেতা), জামায়াতের ২ জন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২ জন, আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ৭ জন রয়েছেন। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিনের নাম আছে।
পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী কামাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি লাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের নাম রয়েছে।
তালিকায় আছেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও তাঁর ভাই সাজন মিয়া, উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী ও মানিক মিয়া, আওয়ামী লীগের কর্মী মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান ও বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স উল্লেখযোগ্য।
এই ৩১ জন ছাড়াও ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরিতে আরও ১১ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা হলেন- আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ২ নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম ও সিলেট নগরের মীরবক্সটুলা এলাকার জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুকাররিম আহমেদ।
সাদা পাথর লুটে জড়িত ও সুবিধাভোগী হিসেবে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার মানুষের জড়িত থাকার তথ্য কথা দুদক প্রতিবেদনে জানালেও তালিকায় তাদের নাম নেই।
#পাথর কোয়ারির সংখ্যা#
সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৫টি জেলায় গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারির সংখ্যা ৫১। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশের পাথর কোয়ারি ইজারা, খাস কালেকশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ করে সিদ্ধান্ত দেয়। এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন পাথর কোয়ারি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা যেমন সিলেটের জাফলং, মামলাভুক্ত শাহ-আরেফিন টিলা এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়ি ঝিরি-ছড়া এলাকার ১০টিসহ মোট ১২টি পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। পরে এসব কোয়ারির বাইরে ৩৬টি পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)।