‘সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি’ গঠনের সুযোগ রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
খসড়া আইনে ‘সার্চ কমিটি’র কথা বলা হয়েছে, যা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েই গঠন করা হবে। গঠিত কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্য কমিশনারদের (পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক) নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি নামের তালিকা থেকে সিইসি এবং অন্য কমিশনার নিয়োগ দেবেন। গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন, যার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পক্ষে মত দিয়েছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দল। সংলাপে অংশ নেয়া এবং অংশ না নেয়া বেশকিছু দল বলেছিল, ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কোন প্রয়োজন নেই। তবে খসড়া আইনে ‘সার্চ কমিটি’ রাখা হয়েছে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের কমিশনগুলোর বৈধতা দিতেই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক নির্বাচনী বিশ্লেষক ও রাজনীতিক। এটি নির্বাচন কমিশন গঠনে নয় ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের আইন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন একজন।
খসড়া আইনে, সিইসি এবং অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্চ কমিটি কিভাবে গঠন করা হবে, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের শেষ দিন আওয়ামী লীগ বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইসি গঠন সংক্রান্ত একটি আইনের’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
এরপর অনুমোদিত খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে। সেখান থেকে সংসদে, এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাবে। এরপর জাতীয় সংসদে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে আইনটি পাস করতে হবে। বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সব প্রক্রিয়া শেষে আইনটি পাস হলে, আইনের অধীনেই নতুন ইসি গঠন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, এ সংক্রান্ত একটি আইন থাকবে। ওই আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি সিইসি এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। তবে গত পাঁচ দশকে কোন সরকারই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেনি।
আইন না থাকায় রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ (আলোচনা, মতবিনিময়) করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। যে কমিটি সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করে। এরপর রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন। কেএম নূরুল হুদা কমিশন এভাবেই গঠন করা হয়েছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানও একই প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন করেছিলেন।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। এজন্য বিগত দুইবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন। নিবন্ধিত ৩২টি দলকে সংলাপের জন্য বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার মধ্যে ২৫টি দল অংশ নেয়। সংলাপ বর্জন করে বিএনপি, সিপিবিসহ সাতটি দল। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হয়।
এবারের সংলাপে প্রায় সব দলই সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইসি গঠনের পক্ষে মত দেয়। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কেউ কেউ এ প্রক্রিয়ার ‘কোন দরকার নেই’ বলেও মন্তব্য করে। কয়েকটি দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিও জানায়। আবার একটি দল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেয়।
আইনের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আইনটা খুব ছোটো আইন। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ প্রদানের নিমিত্তে একটা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে, যেটা অন্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেইভাবেই।’
‘অনুসন্ধান কমিটিও একটা করা হবে এবং সেটাও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে এবং সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলি... সুইটেবল কেন্ডিডেটের নাম রেকোমেন্ড করবে।’
সিইসি এবং কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন বা সে বিষয়গুলো নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই খসড়ায়। আগে এ বিষয়টি নির্ধারণ করা ছিল না।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, অন্তত ৫০ বছর বয়সী হতে হবে এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
তবে কোন পর্যায়ের (গ্রেড) পদে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এই সেক্টরগুলোতে উনি কাজ করেছেন কিনা, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।’
অযোগ্যাতা
আর অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোন আদালতের মাধ্যমে অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পরে দায়মুক্ত না হয়ে থাকলে, বিদ্যমান নিয়মের বাইরে অন্য কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ফৌজদারি আইনে দুই বছরের সাজা হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কখনো দন্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোন পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়া যাবে না।
নাগরিকত্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইনে যেসব দেশের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার সুযোগ আছে, সেসব দেশের নাগরিকত্ব কেউ নিয়ে থাকলে তা ইসিতে আসার পথে বাধা হবে না। কিন্তু যারা এর বাইরে অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছেন, তাদের সে সুযোগ হবে না।
কেউ একবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করলে আবার ওই পদে যেতে পারবেন না। তবে কেউ আগে নির্বাচন কমিশনার পদে থাকলে পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।
আইন সংক্ষিপ্ত, হবে বিধি
এ আইন সংক্ষিপ্ত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত বিধি করে দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আরেকটা জিনিস হলো, এর আগে যেসব নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর এক্সট্রা প্রটেকশন দেয়া। যেহেতু এর আগে আইন ছিল না, ইতোপূর্ব যেসব ইলেকশন কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেগুলো এ আইনের অধীনেই করা হয়েছে বলে ধরে সেগুলোকে হেফাজত করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনের কোন সদস্যকে অপসারণের প্রশ্ন উঠলে সেক্ষেত্রে নিয়ম কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তো যতদূর মনে পড়ে, যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের জাজদের অপসারণ হয়, ঠিক একই পদ্ধতি এখানে প্রযোজ্য। বাকিগুলো বিধিতে বিস্তারিত রয়েছে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগও ইসি গঠনে আইন চায়। তবে যেহেতু কমিশন গঠনে হাতে খুব একটা সময় নেই তাই পরবর্তীতে সংসদে এ সংক্রান্ত আইনের প্রস্তাব তোলা হবে।
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মতে, সরকার চাইলে আইন করতে সময় লাগে না। একদিনেই আইন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন এক রাতেই করা হয়েছিল।
সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
‘সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি’ গঠনের সুযোগ রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
খসড়া আইনে ‘সার্চ কমিটি’র কথা বলা হয়েছে, যা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েই গঠন করা হবে। গঠিত কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্য কমিশনারদের (পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক) নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি নামের তালিকা থেকে সিইসি এবং অন্য কমিশনার নিয়োগ দেবেন। গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন, যার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পক্ষে মত দিয়েছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দল। সংলাপে অংশ নেয়া এবং অংশ না নেয়া বেশকিছু দল বলেছিল, ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কোন প্রয়োজন নেই। তবে খসড়া আইনে ‘সার্চ কমিটি’ রাখা হয়েছে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের কমিশনগুলোর বৈধতা দিতেই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক নির্বাচনী বিশ্লেষক ও রাজনীতিক। এটি নির্বাচন কমিশন গঠনে নয় ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের আইন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন একজন।
খসড়া আইনে, সিইসি এবং অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্চ কমিটি কিভাবে গঠন করা হবে, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের শেষ দিন আওয়ামী লীগ বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইসি গঠন সংক্রান্ত একটি আইনের’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
এরপর অনুমোদিত খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে। সেখান থেকে সংসদে, এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাবে। এরপর জাতীয় সংসদে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে আইনটি পাস করতে হবে। বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সব প্রক্রিয়া শেষে আইনটি পাস হলে, আইনের অধীনেই নতুন ইসি গঠন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, এ সংক্রান্ত একটি আইন থাকবে। ওই আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি সিইসি এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। তবে গত পাঁচ দশকে কোন সরকারই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেনি।
আইন না থাকায় রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ (আলোচনা, মতবিনিময়) করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। যে কমিটি সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করে। এরপর রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন। কেএম নূরুল হুদা কমিশন এভাবেই গঠন করা হয়েছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানও একই প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন করেছিলেন।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। এজন্য বিগত দুইবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন। নিবন্ধিত ৩২টি দলকে সংলাপের জন্য বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার মধ্যে ২৫টি দল অংশ নেয়। সংলাপ বর্জন করে বিএনপি, সিপিবিসহ সাতটি দল। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হয়।
এবারের সংলাপে প্রায় সব দলই সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইসি গঠনের পক্ষে মত দেয়। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কেউ কেউ এ প্রক্রিয়ার ‘কোন দরকার নেই’ বলেও মন্তব্য করে। কয়েকটি দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিও জানায়। আবার একটি দল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেয়।
আইনের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আইনটা খুব ছোটো আইন। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ প্রদানের নিমিত্তে একটা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে, যেটা অন্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেইভাবেই।’
‘অনুসন্ধান কমিটিও একটা করা হবে এবং সেটাও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে এবং সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলি... সুইটেবল কেন্ডিডেটের নাম রেকোমেন্ড করবে।’
সিইসি এবং কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন বা সে বিষয়গুলো নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই খসড়ায়। আগে এ বিষয়টি নির্ধারণ করা ছিল না।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, অন্তত ৫০ বছর বয়সী হতে হবে এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
তবে কোন পর্যায়ের (গ্রেড) পদে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এই সেক্টরগুলোতে উনি কাজ করেছেন কিনা, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।’
অযোগ্যাতা
আর অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোন আদালতের মাধ্যমে অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পরে দায়মুক্ত না হয়ে থাকলে, বিদ্যমান নিয়মের বাইরে অন্য কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ফৌজদারি আইনে দুই বছরের সাজা হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কখনো দন্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোন পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়া যাবে না।
নাগরিকত্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইনে যেসব দেশের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার সুযোগ আছে, সেসব দেশের নাগরিকত্ব কেউ নিয়ে থাকলে তা ইসিতে আসার পথে বাধা হবে না। কিন্তু যারা এর বাইরে অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছেন, তাদের সে সুযোগ হবে না।
কেউ একবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করলে আবার ওই পদে যেতে পারবেন না। তবে কেউ আগে নির্বাচন কমিশনার পদে থাকলে পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।
আইন সংক্ষিপ্ত, হবে বিধি
এ আইন সংক্ষিপ্ত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত বিধি করে দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আরেকটা জিনিস হলো, এর আগে যেসব নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর এক্সট্রা প্রটেকশন দেয়া। যেহেতু এর আগে আইন ছিল না, ইতোপূর্ব যেসব ইলেকশন কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেগুলো এ আইনের অধীনেই করা হয়েছে বলে ধরে সেগুলোকে হেফাজত করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনের কোন সদস্যকে অপসারণের প্রশ্ন উঠলে সেক্ষেত্রে নিয়ম কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তো যতদূর মনে পড়ে, যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের জাজদের অপসারণ হয়, ঠিক একই পদ্ধতি এখানে প্রযোজ্য। বাকিগুলো বিধিতে বিস্তারিত রয়েছে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগও ইসি গঠনে আইন চায়। তবে যেহেতু কমিশন গঠনে হাতে খুব একটা সময় নেই তাই পরবর্তীতে সংসদে এ সংক্রান্ত আইনের প্রস্তাব তোলা হবে।
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মতে, সরকার চাইলে আইন করতে সময় লাগে না। একদিনেই আইন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন এক রাতেই করা হয়েছিল।