alt

জাতীয়

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ফেরিঘাটে জীবনের অর্ধেক সময় নষ্টের অবসান হলো

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল : শনিবার, ২৫ জুন ২০২২

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে ফেরিঘাটে। আর রাজধানীর মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে রাজপথে। এ দুটি প্রবাদ সবারই জানা। রাজধানীর মানুষের সমস্যার সমাধান না হলেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রবাদটির সমাপ্তি ঘটল বলা চলে। পদ্মা পারাপারে দীর্ঘ অপেক্ষার দিনের ভোগান্তির অবসান ঘটল। কমল ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যুর সংবাদও।

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপলাভের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ আর বঞ্চনার অবসান ঘটল। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু যানবাহনের চলাচলের জন্য উদ্বোধনের পর আজ সকাল থেকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্বাংশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগেরও ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। অবসান ঘটছে বিগত প্রায় ষাট বছরের পদ্মায় ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনার। দেশের বিভাগীয় সদর এবং দ্বীপজেলা ভোলা বাদে সবগুলো জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছে পদ্মা সেতু।

ষাটের দশকে আরিচা ও দৌলতদিয়ার মধ্যে তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন’ কয়েকটি ‘স্মল টাইপ’ ও ‘মিডিয়াম টাইপ’ ফেরির মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ চালু করে। কিন্তু সে ফেরি পারাপার সুখকর ছিল না কখনোই। এমনকি পারাপারের অভাবে ঘরমুখো বহু মানুষ নিকটজনের সঙ্গে ঈদের নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারতেন না। অনেক সময়ই ঘরমুখো মানুষ ফেরিঘাটেই ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ে বাধ্য হয়েছেন।

স্বাধনীতার পর উন্নয়ন সহযোগী অক্সফামের কাছ থেকে ৭টি কে-টাইপ ফেরি নিয়ে যানবাহন পারাপারে কিছুটা গতি আসলেও এ বিশাল সড়কপথে বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। ১৯৮০ সালে ডেনমার্কের সহায়তায় দেশে প্রথম দুটি রো রো ফেরি চালু হলে পরিস্থিতির কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে দেশেই এ ধরনের একাধিক ফেরি তৈরি হয়। কিন্তু তাতেও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দেয়া কখনো সম্ভব ছিল না।

পরবর্তীর্তে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব হ্রাসসহ সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতে ১৯৭৭ সালে বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে চরজানাজাত-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নতুন একটি মহাসড়ক নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৯৮৩ সালে মাওয়া থেকে চরজানাজাত/কাওড়াকান্দির মধ্যে পদ্মায় ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে ওই মহাসড়কটি চালুও হয়।

১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভাঙ্গা থেকে চর জানাজাত পর্যন্ত মহাসড়কটির ব্যাপক ক্ষতির পর ওপেক তহবিলে সড়কটির পুরর্বাসন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে উন্নয়ন সহযোগী ওপেক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং এনডিএফ-এর সহায়তায় এক হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের টাউন নওয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে ওই মহাসড়কটি ২০০৫ সালের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উপযুক্ত করা হয়। ওই মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে বরিশাল ও খুলনার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার করে এবং যশোর ও বেনাপোলের দূরত্বও যথেষ্ট হ্রাস পায়। এমনকি এ মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে ঢাকা-অরিচা মহাসড়কের ওপরও যানবাহনের চাপ প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়।

কিন্তু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্ব তীরের সংক্ষিপ্ত সড়ক নির্মাণ হলেও এ অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি ও দুর্ভোগের শেষ ছিল না খরস্রোতা পদ্মা পারাপারের বিড়ম্বনার কারণে। শীত মৌসুমে নাব্যতা সংকট আর বর্ষাকালে খরস্রোতা পদ্মায় পারপার সব সময়ই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ভোগের। পরে পদ্মা পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লঞ্চ ও স্পিডবোট সার্ভিস চালু হওয়ায় যাতায়াতের খরচ বাড়লেও পদ্মা পারাপারে সময় আরো কমে যায়।

কিন্তু উপমহাদেশের দীর্ঘতম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা পদ্মায় সেতু চালুর মধ্য দিয়ে আজ সকাল থেকে এসব বিড়ম্বনার অবসান হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ এখন সময় গুনছেন কখন রোববার সকাল ৬টা হবে।

তবে ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু হয়ে ২১ জেলার যানবাহন ঢাকাসহ পূর্বঞ্চলে যাবে সে পর্যন্ত পৌঁছানও এখনো যথেষ্ঠ বিড়ম্বনা থেকে যাবে। আর তার কারণ এই অঞ্চলের সড়কের প্রশস্ততা। এ অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই মাত্র ১৮-২৪ ফুট প্রস্থ। এমনকি একমাত্র ঢাকা-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কটি ছাড়া অন্য সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো। এসব মহাসড়ক ভারী যানবাহনের ভার বহনের সক্ষমতাও নেই। এমনকি পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলের মহাসড়কে যে বাড়তি চাপ পড়বে তার ব্যবস্থাপনাও অনুপস্থিত।

এমনকি এ অঞ্চলের সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই ৬ লেনে উন্নীত করার নানা পরিকল্পনার কথা গত দশ বছর ধরে শোনা গেলেও তা এখনও কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। আবার সড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের পাশাপাশি সড়কের প্রস্থ কম হওয়া, সড়কগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, হাটবাজারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে যাওয়া, এই অঞ্চলের নদীগুলোর ওপর নির্মিত দু-একটি সেতু ব্যতীত অন্যান্য বড় বড় সেতুগুলো দুই লেনের হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের অকালে প্রাণ যাওয়ার শঙ্কাও বাড়ল।

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে ফিরছে দুই বাংলাদেশির লাশ

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

tab

জাতীয়

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ফেরিঘাটে জীবনের অর্ধেক সময় নষ্টের অবসান হলো

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে ফেরিঘাটে। আর রাজধানীর মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে রাজপথে। এ দুটি প্রবাদ সবারই জানা। রাজধানীর মানুষের সমস্যার সমাধান না হলেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রবাদটির সমাপ্তি ঘটল বলা চলে। পদ্মা পারাপারে দীর্ঘ অপেক্ষার দিনের ভোগান্তির অবসান ঘটল। কমল ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যুর সংবাদও।

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপলাভের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ আর বঞ্চনার অবসান ঘটল। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু যানবাহনের চলাচলের জন্য উদ্বোধনের পর আজ সকাল থেকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্বাংশের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগেরও ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। অবসান ঘটছে বিগত প্রায় ষাট বছরের পদ্মায় ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনার। দেশের বিভাগীয় সদর এবং দ্বীপজেলা ভোলা বাদে সবগুলো জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছে পদ্মা সেতু।

ষাটের দশকে আরিচা ও দৌলতদিয়ার মধ্যে তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন’ কয়েকটি ‘স্মল টাইপ’ ও ‘মিডিয়াম টাইপ’ ফেরির মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ চালু করে। কিন্তু সে ফেরি পারাপার সুখকর ছিল না কখনোই। এমনকি পারাপারের অভাবে ঘরমুখো বহু মানুষ নিকটজনের সঙ্গে ঈদের নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারতেন না। অনেক সময়ই ঘরমুখো মানুষ ফেরিঘাটেই ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ে বাধ্য হয়েছেন।

স্বাধনীতার পর উন্নয়ন সহযোগী অক্সফামের কাছ থেকে ৭টি কে-টাইপ ফেরি নিয়ে যানবাহন পারাপারে কিছুটা গতি আসলেও এ বিশাল সড়কপথে বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। ১৯৮০ সালে ডেনমার্কের সহায়তায় দেশে প্রথম দুটি রো রো ফেরি চালু হলে পরিস্থিতির কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে দেশেই এ ধরনের একাধিক ফেরি তৈরি হয়। কিন্তু তাতেও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দেয়া কখনো সম্ভব ছিল না।

পরবর্তীর্তে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব হ্রাসসহ সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতে ১৯৭৭ সালে বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে চরজানাজাত-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নতুন একটি মহাসড়ক নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৯৮৩ সালে মাওয়া থেকে চরজানাজাত/কাওড়াকান্দির মধ্যে পদ্মায় ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে ওই মহাসড়কটি চালুও হয়।

১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভাঙ্গা থেকে চর জানাজাত পর্যন্ত মহাসড়কটির ব্যাপক ক্ষতির পর ওপেক তহবিলে সড়কটির পুরর্বাসন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে উন্নয়ন সহযোগী ওপেক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং এনডিএফ-এর সহায়তায় এক হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের টাউন নওয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে ওই মহাসড়কটি ২০০৫ সালের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উপযুক্ত করা হয়। ওই মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে বরিশাল ও খুলনার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার করে এবং যশোর ও বেনাপোলের দূরত্বও যথেষ্ট হ্রাস পায়। এমনকি এ মহাসড়কটি নির্মাণের ফলে ঢাকা-অরিচা মহাসড়কের ওপরও যানবাহনের চাপ প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়।

কিন্তু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ পদ্মার পূর্ব তীরের সংক্ষিপ্ত সড়ক নির্মাণ হলেও এ অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি ও দুর্ভোগের শেষ ছিল না খরস্রোতা পদ্মা পারাপারের বিড়ম্বনার কারণে। শীত মৌসুমে নাব্যতা সংকট আর বর্ষাকালে খরস্রোতা পদ্মায় পারপার সব সময়ই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ভোগের। পরে পদ্মা পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লঞ্চ ও স্পিডবোট সার্ভিস চালু হওয়ায় যাতায়াতের খরচ বাড়লেও পদ্মা পারাপারে সময় আরো কমে যায়।

কিন্তু উপমহাদেশের দীর্ঘতম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা পদ্মায় সেতু চালুর মধ্য দিয়ে আজ সকাল থেকে এসব বিড়ম্বনার অবসান হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ এখন সময় গুনছেন কখন রোববার সকাল ৬টা হবে।

তবে ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু হয়ে ২১ জেলার যানবাহন ঢাকাসহ পূর্বঞ্চলে যাবে সে পর্যন্ত পৌঁছানও এখনো যথেষ্ঠ বিড়ম্বনা থেকে যাবে। আর তার কারণ এই অঞ্চলের সড়কের প্রশস্ততা। এ অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই মাত্র ১৮-২৪ ফুট প্রস্থ। এমনকি একমাত্র ঢাকা-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কটি ছাড়া অন্য সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো। এসব মহাসড়ক ভারী যানবাহনের ভার বহনের সক্ষমতাও নেই। এমনকি পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলের মহাসড়কে যে বাড়তি চাপ পড়বে তার ব্যবস্থাপনাও অনুপস্থিত।

এমনকি এ অঞ্চলের সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই ৬ লেনে উন্নীত করার নানা পরিকল্পনার কথা গত দশ বছর ধরে শোনা গেলেও তা এখনও কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। আবার সড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের পাশাপাশি সড়কের প্রস্থ কম হওয়া, সড়কগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, হাটবাজারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে যাওয়া, এই অঞ্চলের নদীগুলোর ওপর নির্মিত দু-একটি সেতু ব্যতীত অন্যান্য বড় বড় সেতুগুলো দুই লেনের হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের অকালে প্রাণ যাওয়ার শঙ্কাও বাড়ল।

back to top