alt

জাতীয়

‘জটিল অঙ্কের’ হিসাব মেলাতেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সব খাতে, অর্থনীতিবিদদের মত

রেজাউল করিম : শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২

জটিল অঙ্কের হিসাব মেলাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক দফায় অনেক বাড়াতে হয়েছে বলে মনে করছেন দুজন অর্থনীতিবিদ। একদিকে অর্থ সংকট, আর আইএমএফের ঋণ পাওয়ার প্রস্তুতি, মূলত সে কারণেই দাম এত বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।

তবে এতে সব খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেই অনেকের ধারণা। নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ভোগান্তিতে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেউ কেউ বলছেন ‘এত বেশি’ মূল্যবৃদ্ধি ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলছেন, সরকার ‘বাধ্য হয়েই’ দাম বাড়িয়েছে। তিনি এই দাম বৃদ্ধিকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সঙ্গে তুলনা করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলছেন, ‘এই মুহূর্তে বিপিসির কাছে টাকা নেই। তাই দাম না বাড়ালে নতুন তেল কিনতে পারবে না সরকার। তাই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে বলতে হবে। অন্যদিকে আইএমএফের শর্ত পূরণ হওয়াও দরকার। দুইদিক থেকে চিন্তা করেই সরকার দাম বাড়িয়েছে।’

তবে কারো কারো মতে শুল্ক ‘সমন্বয় করে’ দাম বৃদ্ধি ‘সহনীয় পর্যায়ে’ রাখা যেত। গতকাল শুক্রবার রাতে দেশের জ্বালানি তেলের দাম ৪৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের লিটার ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অকটেন ৮৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৫ আর পেট্রলের লিটার ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘এর প্রভাব উৎপাদক, ভোক্তা থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর পড়বে। তবে বেশি পড়বে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। কারণ বর্তমানে জীবন নির্বাহ করাই যাদের কষ্টকর, সেখানে ফের দাম বৃদ্ধি তাদের ভোগান্তিতে ফেলবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে দাম সব পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাড়ে না। আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে বাড়ে, দেশের বাজারে তার চেয়ে বেশি বাড়ে। সেদিকে নজর দিতে হবে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে বেশি দাম বাড়াবে।’

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যায়িত করে তা আবার বিবেচনার আহ্বান জানান ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে এত বেশি দাম বেড়েছে কি না আমার জানা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি দাম কমেছে। আর বাংলাদেশে বাড়লো। আমাদের আশঙ্কা ছিল দাম বাড়বে, তবে সামান্য বাড়বে। কিন্তু যে হারে বেড়েছে, সেটা একেবারে অযৌক্তিক।’ এই দাম বৃদ্ধি রাজনৈতিকভাবেও ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘এই ভুল সিদ্ধান্ত সরকারের বড় অর্জনগুলোকে ম্লান করে দেবে। এমনকি এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশে যেকোন কিছু ঘটে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত অনেকটাই আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। তার মধ্যে বছরে ৪০ লাখ টন শুধু ডিজেলই আমদানি হয়। দেশে পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি যানবাহন জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতারও ৩৪ শতাংশ নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।

মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘আমরা যদি আগেই কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতাম, তাহলে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। আমদানি-নির্ভরতা কাটাতে যে জায়গাগুলো এক্সপ্লোর করা দরকার, সেগুলো করা হয়নি। আর জ্বালানিতে আমদানি শুল্কও তো আছে। আমরা শুল্ক সমন্বয় করেও দাম বৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারতাম। আমরা সেদিকে যাইনি।’

কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি সরাসরি নিম্মআয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কেরোসিন খুব কম ও নি¤œআয়ের মানুষ ব্যবহার করে। সরকার এই তেলের দাম কম সমন্বয় করলে পারত। তাহলে এই শ্রেণীর মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকত।’

অর্থ সংকটের কারণে দাম বাড়াতে হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব বাড়লে দাম এতটা সমন্বয় করতে হতো না বলে জানান তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল সমস্যা রাজস্ব-জিডিপি রেশিও। এটি নিম্নআয়ের দেশেগুলোর চেয়েও কম, মাত্র ৯ শতাংশ। এটা যদি বাড়ানো যেত তাহলে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার সক্ষমতাও বাড়ত। তখন আরও পলিসি ফ্লেক্সিবিলিটি হতো আমাদের।’

দাম বাড়ানোর সময়টিও খুব সংকটাপন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাম এমন সময় বাড়াতে হলো যখন আন্তর্জাতিক বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সেই প্রভাব আরও বেশি পড়ছে দেশের বাজারে।’

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছে থেকে ঋণ নেয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে সরকার। সেই ঋণ পেতে সংস্থাটির কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো। এই দাম বৃদ্ধি আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন পরই সরকার আইএমএফের সঙ্গে দর কষাকষিতে যাবে। এর আগাম প্রস্তুতি হিসেবেই একটা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য পরিস্থিতি অনুযায়ী সময়টা ভালো হলো না।’

দাম বাড়ার কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানান আহসান এইচ মনসুর। ‘সরকার সংকটের কারণে দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এখন এর প্রভাব যেন নায্যভাবে পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন পরিবহন খাত-সংশ্লিষ্টরা ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। সেটা যেন না হয়। সর্বোচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যেন বাড়ে।’

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি বছরের ৫ জুন গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল।

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

tab

জাতীয়

‘জটিল অঙ্কের’ হিসাব মেলাতেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সব খাতে, অর্থনীতিবিদদের মত

রেজাউল করিম

শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২

জটিল অঙ্কের হিসাব মেলাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক দফায় অনেক বাড়াতে হয়েছে বলে মনে করছেন দুজন অর্থনীতিবিদ। একদিকে অর্থ সংকট, আর আইএমএফের ঋণ পাওয়ার প্রস্তুতি, মূলত সে কারণেই দাম এত বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।

তবে এতে সব খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেই অনেকের ধারণা। নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ভোগান্তিতে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেউ কেউ বলছেন ‘এত বেশি’ মূল্যবৃদ্ধি ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলছেন, সরকার ‘বাধ্য হয়েই’ দাম বাড়িয়েছে। তিনি এই দাম বৃদ্ধিকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সঙ্গে তুলনা করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলছেন, ‘এই মুহূর্তে বিপিসির কাছে টাকা নেই। তাই দাম না বাড়ালে নতুন তেল কিনতে পারবে না সরকার। তাই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে বলতে হবে। অন্যদিকে আইএমএফের শর্ত পূরণ হওয়াও দরকার। দুইদিক থেকে চিন্তা করেই সরকার দাম বাড়িয়েছে।’

তবে কারো কারো মতে শুল্ক ‘সমন্বয় করে’ দাম বৃদ্ধি ‘সহনীয় পর্যায়ে’ রাখা যেত। গতকাল শুক্রবার রাতে দেশের জ্বালানি তেলের দাম ৪৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের লিটার ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অকটেন ৮৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৫ আর পেট্রলের লিটার ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘এর প্রভাব উৎপাদক, ভোক্তা থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর পড়বে। তবে বেশি পড়বে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। কারণ বর্তমানে জীবন নির্বাহ করাই যাদের কষ্টকর, সেখানে ফের দাম বৃদ্ধি তাদের ভোগান্তিতে ফেলবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে দাম সব পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাড়ে না। আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে বাড়ে, দেশের বাজারে তার চেয়ে বেশি বাড়ে। সেদিকে নজর দিতে হবে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে বেশি দাম বাড়াবে।’

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যায়িত করে তা আবার বিবেচনার আহ্বান জানান ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে এত বেশি দাম বেড়েছে কি না আমার জানা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি দাম কমেছে। আর বাংলাদেশে বাড়লো। আমাদের আশঙ্কা ছিল দাম বাড়বে, তবে সামান্য বাড়বে। কিন্তু যে হারে বেড়েছে, সেটা একেবারে অযৌক্তিক।’ এই দাম বৃদ্ধি রাজনৈতিকভাবেও ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘এই ভুল সিদ্ধান্ত সরকারের বড় অর্জনগুলোকে ম্লান করে দেবে। এমনকি এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশে যেকোন কিছু ঘটে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত অনেকটাই আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। তার মধ্যে বছরে ৪০ লাখ টন শুধু ডিজেলই আমদানি হয়। দেশে পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি যানবাহন জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতারও ৩৪ শতাংশ নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।

মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘আমরা যদি আগেই কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতাম, তাহলে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। আমদানি-নির্ভরতা কাটাতে যে জায়গাগুলো এক্সপ্লোর করা দরকার, সেগুলো করা হয়নি। আর জ্বালানিতে আমদানি শুল্কও তো আছে। আমরা শুল্ক সমন্বয় করেও দাম বৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারতাম। আমরা সেদিকে যাইনি।’

কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি সরাসরি নিম্মআয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কেরোসিন খুব কম ও নি¤œআয়ের মানুষ ব্যবহার করে। সরকার এই তেলের দাম কম সমন্বয় করলে পারত। তাহলে এই শ্রেণীর মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকত।’

অর্থ সংকটের কারণে দাম বাড়াতে হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব বাড়লে দাম এতটা সমন্বয় করতে হতো না বলে জানান তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল সমস্যা রাজস্ব-জিডিপি রেশিও। এটি নিম্নআয়ের দেশেগুলোর চেয়েও কম, মাত্র ৯ শতাংশ। এটা যদি বাড়ানো যেত তাহলে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার সক্ষমতাও বাড়ত। তখন আরও পলিসি ফ্লেক্সিবিলিটি হতো আমাদের।’

দাম বাড়ানোর সময়টিও খুব সংকটাপন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাম এমন সময় বাড়াতে হলো যখন আন্তর্জাতিক বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সেই প্রভাব আরও বেশি পড়ছে দেশের বাজারে।’

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছে থেকে ঋণ নেয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে সরকার। সেই ঋণ পেতে সংস্থাটির কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো। এই দাম বৃদ্ধি আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন পরই সরকার আইএমএফের সঙ্গে দর কষাকষিতে যাবে। এর আগাম প্রস্তুতি হিসেবেই একটা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য পরিস্থিতি অনুযায়ী সময়টা ভালো হলো না।’

দাম বাড়ার কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানান আহসান এইচ মনসুর। ‘সরকার সংকটের কারণে দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এখন এর প্রভাব যেন নায্যভাবে পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন পরিবহন খাত-সংশ্লিষ্টরা ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। সেটা যেন না হয়। সর্বোচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যেন বাড়ে।’

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি বছরের ৫ জুন গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল।

back to top