বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হাজারীবাগে বন্ধ করা হয়েছিল চামড়া পরিশোধন কারখানা বা ট্যানারি। এখন এসব কারখানা দূষিত করছে ধলেশ্বরী নদীকে। অন্যদিকে হাজারীবাগ থেকেও ট্যানারি পুরোপুরি সরে যায়নি। এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘বালু-পাথর উত্তোলন ও দখল-দূষণে নদ-নদীর বিদ্যমান জীর্ণদশা এবং পরিবেশ সংকট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বেলা ও পানি অধিকার ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘কোন প্রকার জরিপ ছাড়াই দেশের বিভিন্ন নদ-নদীকে বালুমহাল ঘোষণা করা হচ্ছে। গত ২০ বছরে নদ-নদী ও নদ-নদীসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১৩০-১৪০ ফুট গর্ত করে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমি, বাড়িঘড় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বালুমহাল থেকে গত চার বছরে আয় হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। ছয়টি নদী ধ্বংস হয়েছে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে। জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের নামে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব পায় ছয় কোটি টাকা। সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং জাদুকাটা নদীর বিষয়ে দফায় দফায় আদালতে গিয়েছি। পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘নদী সংরক্ষণের নামে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছিলেন চাঁদপুরের সেলিম খান। অথচ নিজের স্বার্থে তিনি তা ব্যবহার করেছেন। উচ্চ আদালত বালু উত্তোলনের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। কী পরিমাণ বালু উত্তোলন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী উত্তোলন করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করার কেউ নেই।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাথর উত্তোলনে মারা গিয়েছেন ১০২ জন, সরকারি হিসাবে যদিও ৮১ জন। বালু তুলতে হলে বালুমহাল আইন-২০১০ চালু থাকলেও কার্যকর নয়। ডিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। বালু উত্তোলনে শব্দদূষণ, নদীভাঙন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে সেই কমিটি বালু উত্তোলন করে দেবে। অথচ সেই কমিটি পরিদর্শনেই যায় না।’
হাইকোর্টের রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, নদীর ক্ষতি হলে সরকার অভিভাবক হিসেবে দায়ী। হাইকোর্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন, অথচ সরকার কর্মপরিকল্পনা দেয়নি করোনার অজুহাতে। কিন্তু বালুমহাল চালানোর অনুমতি ঠিকই দিচ্ছে। পরিবেশ বিভাগ এক-দুটি বাদে সব প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক ইটিপি চলছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। নদী ধ্বংসের দায় দিচ্ছে ভারত থেকে আসা বর্জ্যরে।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬ বছরে সিলেটের পাথরমহালগুলো থেকে সরকার রাজস্ব অর্জন করেছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ। বছরে মাত্র সাড়ে ছয় কোটি টাকার জন্য জাফলং-বিছনাকান্দির নদীগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
নদীকে অস্বীকার করে দেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়, উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, ‘বালুমহাল আইনের ৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী কেউ একক সিদ্ধান্তে বালুমহাল ঘোষণা করতে পারেন না। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি জেলা কমিটি পরিবেশ ও সার্বিক ঝুঁকির বিষয়গুলো তদারক করার কথা। কিন্তু কমিটি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না। উল্টো অভিযোগ দিলে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করে।
এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পাশের দেশ বাঁধ দিচ্ছে, নদীর প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী ট্যানারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চামড়ার ব্যবসা করে অনেক মানুষ ধনী হয়েছেন। অথচ অর্থনৈতিক বিবেচনায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা পরিমাপ করা হয়নি।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, রাজশাহী রুলফাও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হাজারীবাগে বন্ধ করা হয়েছিল চামড়া পরিশোধন কারখানা বা ট্যানারি। এখন এসব কারখানা দূষিত করছে ধলেশ্বরী নদীকে। অন্যদিকে হাজারীবাগ থেকেও ট্যানারি পুরোপুরি সরে যায়নি। এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘বালু-পাথর উত্তোলন ও দখল-দূষণে নদ-নদীর বিদ্যমান জীর্ণদশা এবং পরিবেশ সংকট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বেলা ও পানি অধিকার ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘কোন প্রকার জরিপ ছাড়াই দেশের বিভিন্ন নদ-নদীকে বালুমহাল ঘোষণা করা হচ্ছে। গত ২০ বছরে নদ-নদী ও নদ-নদীসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১৩০-১৪০ ফুট গর্ত করে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমি, বাড়িঘড় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বালুমহাল থেকে গত চার বছরে আয় হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। ছয়টি নদী ধ্বংস হয়েছে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে। জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের নামে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব পায় ছয় কোটি টাকা। সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং জাদুকাটা নদীর বিষয়ে দফায় দফায় আদালতে গিয়েছি। পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘নদী সংরক্ষণের নামে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছিলেন চাঁদপুরের সেলিম খান। অথচ নিজের স্বার্থে তিনি তা ব্যবহার করেছেন। উচ্চ আদালত বালু উত্তোলনের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। কী পরিমাণ বালু উত্তোলন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী উত্তোলন করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করার কেউ নেই।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাথর উত্তোলনে মারা গিয়েছেন ১০২ জন, সরকারি হিসাবে যদিও ৮১ জন। বালু তুলতে হলে বালুমহাল আইন-২০১০ চালু থাকলেও কার্যকর নয়। ডিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। বালু উত্তোলনে শব্দদূষণ, নদীভাঙন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে সেই কমিটি বালু উত্তোলন করে দেবে। অথচ সেই কমিটি পরিদর্শনেই যায় না।’
হাইকোর্টের রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, নদীর ক্ষতি হলে সরকার অভিভাবক হিসেবে দায়ী। হাইকোর্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন, অথচ সরকার কর্মপরিকল্পনা দেয়নি করোনার অজুহাতে। কিন্তু বালুমহাল চালানোর অনুমতি ঠিকই দিচ্ছে। পরিবেশ বিভাগ এক-দুটি বাদে সব প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক ইটিপি চলছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। নদী ধ্বংসের দায় দিচ্ছে ভারত থেকে আসা বর্জ্যরে।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬ বছরে সিলেটের পাথরমহালগুলো থেকে সরকার রাজস্ব অর্জন করেছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ। বছরে মাত্র সাড়ে ছয় কোটি টাকার জন্য জাফলং-বিছনাকান্দির নদীগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
নদীকে অস্বীকার করে দেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়, উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, ‘বালুমহাল আইনের ৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী কেউ একক সিদ্ধান্তে বালুমহাল ঘোষণা করতে পারেন না। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি জেলা কমিটি পরিবেশ ও সার্বিক ঝুঁকির বিষয়গুলো তদারক করার কথা। কিন্তু কমিটি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না। উল্টো অভিযোগ দিলে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করে।
এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পাশের দেশ বাঁধ দিচ্ছে, নদীর প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী ট্যানারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চামড়ার ব্যবসা করে অনেক মানুষ ধনী হয়েছেন। অথচ অর্থনৈতিক বিবেচনায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা পরিমাপ করা হয়নি।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, রাজশাহী রুলফাও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ।