ব্যয় বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী
দেশে প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা দুই শিশুর অস্ত্রোপচার করে আলাদা করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা। এই লক্ষ্যে গতকাল সকালে বিএসএমএমইউতে একটি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর চিকিৎসা ব্যয় বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুড়িগ্রামের আট মাস ১৩ দিন বয়সী দুই নুহা ও নাবার চিকিৎসা নিয়ে ওই বোর্ড সভা শেষে বিএসএমএমইউর ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশু দুটির চিকিৎসায় যা যা করার দরকার সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই শিশু দুইটির সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি তাদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবেন। আর দুই শিশুর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারো সহযোগিতা লাগলে তাদেরও ডাকা হবে।
মেডিকেল বোর্ড সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, শিশু দুইটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। কয়েক ধাপে এর অপারেশন করা লাগবে।
নিউরোসার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের দারকার হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সম্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, শিশু দুইটির কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারছেন। অপারেশন অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এ অপারেশন বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।
ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের মতে, শিশু দুইটির মেরুদণ্ডের জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজ করতে হবে। ইউরোলজিক্যাল কাজও বেশ জটিল।
বিএসএমএমইউ থেকে বলা হয়েছে, শিশু দুইটি নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে ভর্তি আছে। কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ির পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিন দম্পতির ঘরে জন্মে নেয় এই জমজ কন্যা সন্তান। তাদের পেছনে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো আছে।
দেশে কোন মেরুদণ্ড জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচার এটাই প্রথম। জটিল, কঠিন ও স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে আছেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
শিশু দুটির স্পাইন জন্মগতভাবে জোড়া লাগানো। হতদরিদ্র পিতা মাতার পক্ষে এ চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কষ্টকর। তাই এখন পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আজ থেকে পাঁচ মাস আগে তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রামে যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। এরপর তিনি শিশুদের দেখতে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় আনতে অনুরোধ করেন।
৫ মাস ধরে এই মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন আছে। বয়স কম থাকায় তখন অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুই ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। এছাড়া আরও ছোট ছোট অস্ত্রোপচার করার দরকার হতে পারে। অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার পর আরও কয়েক মাস তাদেরকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, জন্মগত অসঙ্গতির পারিবারিক ইতিহাস তাদের নেই। গর্ভবস্থায় ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমালি স্ক্যানে কোন জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভবস্থায় বাকি সময়টা অস্বাভাবিক ছিল। ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে উঠে। ওই সময় তাদের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ ও কৌতুহলপূর্ণ। মূত্রনালী পৃথক হলেও মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি ও ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, জোড়ালাগানো জমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে অন্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন। এই অপারেশন সফল হলে শৈল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এটা দেশের জন্য মাইল ফলক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যয় বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী
শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২
দেশে প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা দুই শিশুর অস্ত্রোপচার করে আলাদা করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা। এই লক্ষ্যে গতকাল সকালে বিএসএমএমইউতে একটি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর চিকিৎসা ব্যয় বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুড়িগ্রামের আট মাস ১৩ দিন বয়সী দুই নুহা ও নাবার চিকিৎসা নিয়ে ওই বোর্ড সভা শেষে বিএসএমএমইউর ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশু দুটির চিকিৎসায় যা যা করার দরকার সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই শিশু দুইটির সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি তাদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবেন। আর দুই শিশুর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারো সহযোগিতা লাগলে তাদেরও ডাকা হবে।
মেডিকেল বোর্ড সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, শিশু দুইটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। কয়েক ধাপে এর অপারেশন করা লাগবে।
নিউরোসার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের দারকার হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সম্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, শিশু দুইটির কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারছেন। অপারেশন অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এ অপারেশন বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।
ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের মতে, শিশু দুইটির মেরুদণ্ডের জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজ করতে হবে। ইউরোলজিক্যাল কাজও বেশ জটিল।
বিএসএমএমইউ থেকে বলা হয়েছে, শিশু দুইটি নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে ভর্তি আছে। কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ির পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিন দম্পতির ঘরে জন্মে নেয় এই জমজ কন্যা সন্তান। তাদের পেছনে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো আছে।
দেশে কোন মেরুদণ্ড জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচার এটাই প্রথম। জটিল, কঠিন ও স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে আছেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
শিশু দুটির স্পাইন জন্মগতভাবে জোড়া লাগানো। হতদরিদ্র পিতা মাতার পক্ষে এ চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কষ্টকর। তাই এখন পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আজ থেকে পাঁচ মাস আগে তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রামে যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। এরপর তিনি শিশুদের দেখতে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় আনতে অনুরোধ করেন।
৫ মাস ধরে এই মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন আছে। বয়স কম থাকায় তখন অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুই ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। এছাড়া আরও ছোট ছোট অস্ত্রোপচার করার দরকার হতে পারে। অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার পর আরও কয়েক মাস তাদেরকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, জন্মগত অসঙ্গতির পারিবারিক ইতিহাস তাদের নেই। গর্ভবস্থায় ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমালি স্ক্যানে কোন জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভবস্থায় বাকি সময়টা অস্বাভাবিক ছিল। ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে উঠে। ওই সময় তাদের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ ও কৌতুহলপূর্ণ। মূত্রনালী পৃথক হলেও মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি ও ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, জোড়ালাগানো জমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে অন্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন। এই অপারেশন সফল হলে শৈল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এটা দেশের জন্য মাইল ফলক বলে তিনি মন্তব্য করেন।