alt

জাতীয়

কয়লা সংকটে বিপদে পায়রার বিদ্যুৎ

একটি ইউনিট বন্ধ, দ্বিতীয় ইউনিটও ৩ জুন বন্ধ হয়ে যাবে

ফয়েজ আহমেদ তুষার : রোববার, ২৮ মে ২০২৩

কয়লার জোগান না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট; প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াট করে; যা পুরোপুরি আামদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে চলে। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ আছে তাতে দ্বিতীয় ইউনিটটি আগামী ৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অঙ্কের বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।

এই কথা গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হয়েছিল।

বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’

বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম রোববার (২৮ মে) সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সিএমসির চিঠি এসেছে। আমরা কয়লা পাব। তবে, ১ (জুন) তারিখে যদি এলসি ওপেন হয়, সেটা (কয়লা) আসতেও তো ২৫ দিন লেগে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি সরকারও এক ধরনের চাপে আছে। পরিস্থিতিটা আমাদেরও বুঝতে হবে। সরকার আমাদের ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা ৫৮ মিলিয়ন পেয়েছি, সেটা আমরা সিএমসিকে দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন দিয়ে দেবে। সেটা আমরা সিএমসিকে জানিয়েছি।’

‘৫৮ মিলিয়ন দেয়ার পরও এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের সিএমপির কাছে বকেয়া আছে ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার। বাকি ৪২ মিলিয়ন দিলে বাকি থাকবে আরও ২৯৩ মার্কিন ডলার।’

‘সিএমসি বলেছে, ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন পাঠিয়ে দিতে। ওটা দিলে তারা এলসি খুলে দেবে। আর অবশিষ্ট বকেয়া নিয়মিত যাতে পরিশোধ করা হয়।’

বিপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১ জুন যদি কয়লা আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়, তাতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাতে আগামী মাসের ২২-২৫ তারিখ পর্যন্ত সময় লাগবে।

সে হিসেবে আগামী ৩ জুনের পর থেকে অন্তত তিন সপ্তাহ পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগে জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে।

তিন সপ্তাহের জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেনিট সংস্থাটি।

তবে খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় এখনও লোডশেডিং হচ্ছে। তিন সপ্তাহের জন্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করবে।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।

গত ১০ মে দৈনিক সংবাদে ‘বন্ধের পথে পায়রা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ডলার সংকটে আমদানি করা কয়লার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চালানো যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর মধ্যে কয়লা আনা না গেলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিসিপিসিএলের পাঠানো এক চিঠির বরাত দিয়ে এসব কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।

ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে সেই কোম্পানির কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি।

বিসিপিসিএলের এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো- আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কোল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’

এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএমসি বলছে, টাকা না দিলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই টাকা কিস্তিতে নিতে রাজি আছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৩ এপ্রিল বিসিপিসিএলকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সিএমসি। দুই সপ্তাহ পর, গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ইমেইলের মাধ্যমে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দেয়।

ওই দিনই (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, ইতিপূর্বে বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর একাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হলেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

উৎপাদনে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট

ছবি

সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হকের বিছানায় বান্ডেল টাকার ছড়াছড়ি, ছবি ভাইরাল

ছবি

বাংলাদেশ ‘পুনর্গঠন, সংস্কারে’ সহযোগিতায় ‘আগ্রহী’ যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে: উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী আ:লীগ নেতা বুদ্দিন আটক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ভালুকায় রাজমিস্ত্রী তফাজ্জল হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরকে আসামী করে মামলার আবেদন

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজন চাকরি হয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি, চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যু

ছবি

মাজারে শান্তি বজায় রাখতে ডিসিদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারে সহযোগিতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনা

ছবি

দেশ পুনর্গঠনে মার্কিন সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ছাত্রদের উপর অস্ত্র ও রাম দা নিয়ে গুলি,হামলা, ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত

ছবি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ ৫ দিনের রিমান্ডে

ছবি

অগ্রাধিকার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সারাদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

বিকেল থেকে কমতে পারে বৃষ্টি

ছবি

বাংলাদেশকে ২০২.২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

পরিস্থিতির উন্নতি, খুলেছে আরও ২৯ পোশাক কারখানা

ছবি

বাংলাদেশকে ‘সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ যুক্তরাষ্ট্র : দুতাবাস

ছবি

সাংবাদিক ঊর্মি রহমান আর নেই

ছবি

সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার, জানালো র‍্যাব

ছবি

পানিবন্দী ৩৪ লাখ, আশ্রয় কেন্দ্রে ৭০ হাজার মানুষ

ছবি

মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি

বৈরী আবহাওয়া : ঢাকার সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ছবি

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি, রোববার থেকে কমার সম্ভাবনা

ছবি

সেই এপিবিএন সদস্য পুলিশ হেফাজতে

ছবি

ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু

ছবি

মাজারে হামলার নিন্দা সরকারের, কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ঢাকায় , দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ বাতিলের পরামর্শ

ছবি

মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেলো স্ত্রীসহ সেনা সদস্যের

ছবি

ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৮৭৫, আহত ৩০ হাজারের বেশি: এইচআরএসএস

ছবি

আজ ডোনাল্ড লুর নের্তৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল

রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা ঢাবি শিক্ষার্থীদের

tab

জাতীয়

কয়লা সংকটে বিপদে পায়রার বিদ্যুৎ

একটি ইউনিট বন্ধ, দ্বিতীয় ইউনিটও ৩ জুন বন্ধ হয়ে যাবে

ফয়েজ আহমেদ তুষার

রোববার, ২৮ মে ২০২৩

কয়লার জোগান না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট; প্রতিটি ৬৬০ মেগাওয়াট করে; যা পুরোপুরি আামদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে চলে। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ আছে তাতে দ্বিতীয় ইউনিটটি আগামী ৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অঙ্কের বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।

এই কথা গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হয়েছিল।

বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’

বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম রোববার (২৮ মে) সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সিএমসির চিঠি এসেছে। আমরা কয়লা পাব। তবে, ১ (জুন) তারিখে যদি এলসি ওপেন হয়, সেটা (কয়লা) আসতেও তো ২৫ দিন লেগে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি সরকারও এক ধরনের চাপে আছে। পরিস্থিতিটা আমাদেরও বুঝতে হবে। সরকার আমাদের ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা ৫৮ মিলিয়ন পেয়েছি, সেটা আমরা সিএমসিকে দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন দিয়ে দেবে। সেটা আমরা সিএমসিকে জানিয়েছি।’

‘৫৮ মিলিয়ন দেয়ার পরও এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের সিএমপির কাছে বকেয়া আছে ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার। বাকি ৪২ মিলিয়ন দিলে বাকি থাকবে আরও ২৯৩ মার্কিন ডলার।’

‘সিএমসি বলেছে, ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন পাঠিয়ে দিতে। ওটা দিলে তারা এলসি খুলে দেবে। আর অবশিষ্ট বকেয়া নিয়মিত যাতে পরিশোধ করা হয়।’

বিপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১ জুন যদি কয়লা আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়, তাতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাতে আগামী মাসের ২২-২৫ তারিখ পর্যন্ত সময় লাগবে।

সে হিসেবে আগামী ৩ জুনের পর থেকে অন্তত তিন সপ্তাহ পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগে জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে।

তিন সপ্তাহের জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেনিট সংস্থাটি।

তবে খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় এখনও লোডশেডিং হচ্ছে। তিন সপ্তাহের জন্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করবে।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।

গত ১০ মে দৈনিক সংবাদে ‘বন্ধের পথে পায়রা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ডলার সংকটে আমদানি করা কয়লার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চালানো যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর মধ্যে কয়লা আনা না গেলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিসিপিসিএলের পাঠানো এক চিঠির বরাত দিয়ে এসব কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।

ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে সেই কোম্পানির কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি।

বিসিপিসিএলের এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো- আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কোল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’

এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএমসি বলছে, টাকা না দিলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই টাকা কিস্তিতে নিতে রাজি আছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৩ এপ্রিল বিসিপিসিএলকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সিএমসি। দুই সপ্তাহ পর, গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ইমেইলের মাধ্যমে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দেয়।

ওই দিনই (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, ইতিপূর্বে বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর একাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হলেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

back to top