alt

আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের চেষ্টা করব : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

শিক্ষামন্ত্রী ডা, দীপু মনি বলেছেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের চেষ্টা করব। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে (দোতলায়)একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সকল মাদ্রাসার শিক্ষা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সহসভাপতি ও ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মওলানা হাসান রফিক এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর।বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মওলানা এয়াকুব বাদশা এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কওমি মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ফরহাদ হোসেন ফাহাদ।

ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে অনেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিল একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসনামলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পাকিস্তানিকরণ শুরু হয়। ২০০৯ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার পর আমরা সেটি বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি। যুগোপযুগী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা আমরা প্রণয়ন করার চেষ্টা করছি। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আলাদা। আমাদের মূলধরার শিক্ষাব্যবস্থার অনেক কিছুই তারা গ্রহণ করতে চায় না। কোনও কিছুই চাপিয়ে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, মাদ্রাসায় যে নির্যাতনগুলো হয় সেগুলো আইনবিরুদ্ধ। তাই আইন অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, ছাত্র-শিক্ষকদের সাথেও কথা বলতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি বিজ্ঞানমুখী-যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, কওমি মাদ্রাসায় এখন কি চলছে তা আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি কওমি মাদ্রাসা স্থাপন করছে বেহেস্ত লাভের জন্য। কওমি মাদ্রাসা তো রাষ্ট্রের মধ্যেই। তাই রাষ্ট্র চাইলেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মাদ্রাসা বোর্ডের সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও কীভাবে দেশের জনশক্তি, সম্পদ হয়ে উঠতে পারে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মওলানা হাসান রফিক বলেন, কওমি মাদ্রাসায় পড়াকালীন শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ভয়াবহতা সচক্ষে দেখেছি। কওমি মাদ্রাসায় কমলসতি শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি খুবই নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত। কওমি মাদ্রাসার এসব নির্যাতন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। মাদ্রাসায় পড়াকালীন দেখেছি ওয়াজ মাহফিলের নামে সমাজে ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং নারীদের বিরুদ্ধে হিংসাবিদ্বেষ ছড়ানোর বাস্তবতা। ওয়াজের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূলে জঙ্গি মৌলবাদের যে বিস্তার ঘটছে তা একদিকে যেমন বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসায় সাধারণত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। একদিন একটি মাদ্রাসার ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা জাতীয় সঙ্গীত গাও? ছাত্রটি গর্ব নিয়ে উত্তর দেয়, না আমরা কাফের কবির গান গাই না। যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদেরকে এরকমভাবে তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা এরকম না। তাদেরকে বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে রাখা হয়। তারা অফিস, আদালতে, বড় কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে না কেন? তাদেরও তো অধিকার আছে। তাই মাদ্রাসার এই শিক্ষাকে যুগোপযুগী করে তাদেরকে দেশের দক্ষ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, একটি ছেলের বিজ্ঞানী হওয়ার শখ কিন্তু সে কওমি মাদ্রাসায় পড়ে বলে বিজ্ঞানী হতে পারবে না, এরকম হতাশামাখা অনেকগুলো মেইল আমার কাছে এসেছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা একটি জীবনব্যবস্থা যাতে পিষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। তাই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করা উচিৎ। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারকে অবশ্যই অবহিত হতে হবে। মাদ্রাসাশিক্ষা নেয়ার পর তারা জনশক্তি হিসেবে তৈরি হয় না। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা আনন্দময় করার পাশাপাশি তাদেরকে মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে, যেন তারা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মওলানা এয়াকুব বাদশা বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সংস্কারে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম। কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে আমার মাতৃভাষা বাংলাকে নিজ আয়ত্তে আনতে পারিনি কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদানের মাধ্যম ছিল উর্দু, ফার্সি ও আরবি। বাংলা ভাষা ছিল সাধারণ ছাত্রদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বাংলা ভাষাকে কোনরুপ মূল্যায়ন করা হতো না। আর ইংরেজি শেখা ছিল হারাম। যে কারণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজিতে খুবই দূর্বল।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কওমি মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ফরহাদ হোসেন ফাহাদ বলেন, মাদ্রাসায় শৈশব থেকেই একটি শিশুকে সাম্প্রদায়িকতা শেখানো হয়। অমুসলিম তো পরের কথা, মুসলিমদের মধ্যে যারা স্কুলে পড়ে তাদের প্রতি শেখানো হয় বিদ্বেষ এবং করা হয় বিভক্তি; শেখানো হয় লৈঙ্গিক বৈষম্য। মাদ্রাসার আরেকটি সমস্যা হলো অমুসলিম বিদ্বেষ। সবসময় অমুসলিমদের নিয়ে বিষোদগার করা হয় এবং শেখানো হয় যে অমুসলিম মানে খুব খারাপ।

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

tab

আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের চেষ্টা করব : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

শিক্ষামন্ত্রী ডা, দীপু মনি বলেছেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের চেষ্টা করব। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে (দোতলায়)একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সকল মাদ্রাসার শিক্ষা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সহসভাপতি ও ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মওলানা হাসান রফিক এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর।বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মওলানা এয়াকুব বাদশা এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কওমি মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ফরহাদ হোসেন ফাহাদ।

ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে অনেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিল একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসনামলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পাকিস্তানিকরণ শুরু হয়। ২০০৯ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার পর আমরা সেটি বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি। যুগোপযুগী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা আমরা প্রণয়ন করার চেষ্টা করছি। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আলাদা। আমাদের মূলধরার শিক্ষাব্যবস্থার অনেক কিছুই তারা গ্রহণ করতে চায় না। কোনও কিছুই চাপিয়ে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, মাদ্রাসায় যে নির্যাতনগুলো হয় সেগুলো আইনবিরুদ্ধ। তাই আইন অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, ছাত্র-শিক্ষকদের সাথেও কথা বলতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি বিজ্ঞানমুখী-যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, কওমি মাদ্রাসায় এখন কি চলছে তা আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি কওমি মাদ্রাসা স্থাপন করছে বেহেস্ত লাভের জন্য। কওমি মাদ্রাসা তো রাষ্ট্রের মধ্যেই। তাই রাষ্ট্র চাইলেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মাদ্রাসা বোর্ডের সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও কীভাবে দেশের জনশক্তি, সম্পদ হয়ে উঠতে পারে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মওলানা হাসান রফিক বলেন, কওমি মাদ্রাসায় পড়াকালীন শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ভয়াবহতা সচক্ষে দেখেছি। কওমি মাদ্রাসায় কমলসতি শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি খুবই নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত। কওমি মাদ্রাসার এসব নির্যাতন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। মাদ্রাসায় পড়াকালীন দেখেছি ওয়াজ মাহফিলের নামে সমাজে ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং নারীদের বিরুদ্ধে হিংসাবিদ্বেষ ছড়ানোর বাস্তবতা। ওয়াজের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূলে জঙ্গি মৌলবাদের যে বিস্তার ঘটছে তা একদিকে যেমন বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসায় সাধারণত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। একদিন একটি মাদ্রাসার ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা জাতীয় সঙ্গীত গাও? ছাত্রটি গর্ব নিয়ে উত্তর দেয়, না আমরা কাফের কবির গান গাই না। যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদেরকে এরকমভাবে তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা এরকম না। তাদেরকে বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে রাখা হয়। তারা অফিস, আদালতে, বড় কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে না কেন? তাদেরও তো অধিকার আছে। তাই মাদ্রাসার এই শিক্ষাকে যুগোপযুগী করে তাদেরকে দেশের দক্ষ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, একটি ছেলের বিজ্ঞানী হওয়ার শখ কিন্তু সে কওমি মাদ্রাসায় পড়ে বলে বিজ্ঞানী হতে পারবে না, এরকম হতাশামাখা অনেকগুলো মেইল আমার কাছে এসেছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা একটি জীবনব্যবস্থা যাতে পিষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। তাই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করা উচিৎ। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারকে অবশ্যই অবহিত হতে হবে। মাদ্রাসাশিক্ষা নেয়ার পর তারা জনশক্তি হিসেবে তৈরি হয় না। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা আনন্দময় করার পাশাপাশি তাদেরকে মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে, যেন তারা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মওলানা এয়াকুব বাদশা বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সংস্কারে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম। কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে আমার মাতৃভাষা বাংলাকে নিজ আয়ত্তে আনতে পারিনি কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদানের মাধ্যম ছিল উর্দু, ফার্সি ও আরবি। বাংলা ভাষা ছিল সাধারণ ছাত্রদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বাংলা ভাষাকে কোনরুপ মূল্যায়ন করা হতো না। আর ইংরেজি শেখা ছিল হারাম। যে কারণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজিতে খুবই দূর্বল।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কওমি মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ফরহাদ হোসেন ফাহাদ বলেন, মাদ্রাসায় শৈশব থেকেই একটি শিশুকে সাম্প্রদায়িকতা শেখানো হয়। অমুসলিম তো পরের কথা, মুসলিমদের মধ্যে যারা স্কুলে পড়ে তাদের প্রতি শেখানো হয় বিদ্বেষ এবং করা হয় বিভক্তি; শেখানো হয় লৈঙ্গিক বৈষম্য। মাদ্রাসার আরেকটি সমস্যা হলো অমুসলিম বিদ্বেষ। সবসময় অমুসলিমদের নিয়ে বিষোদগার করা হয় এবং শেখানো হয় যে অমুসলিম মানে খুব খারাপ।

back to top