বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর অষ্টম মৃত্যু দিবস আজ। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরে বক্তব্য দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের এই শিল্পী। সেখান থেকে শিল্পীকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাটি ও মানুষের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের মাঝে দৃশ্যমান না থাকলেও সংস্কৃতমনা বাঙালির অন্তরে মহীয়ান থাকবেন অনেক কাল।
১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে গুণী এই শিল্পীর জন্ম। ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে কাইয়ুম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল। স্কুলজীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। তেলরং, জলরং, কালি-কলম, মোমরং, রেশম ছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুুম চৌধুরী কাজ করেছেন। বস্তুত তার ছবি ছিল নকশাপ্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। কাইয়ুম চৌধুরী সবুজ শ্যামল নদীমাতৃক বাংলার প্রকৃতি থেকে রং নিয়ে হৃদয়ের মাধুরী দিয়ে যে ছবি এঁকেছেন সে ছবি কথা বলে। রঙের ভাষা দিয়ে তিনি এ দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, মান-অভিমান, জীবনযুদ্ধে প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই, দেশ বিজয় ও ভালোবাসা আর প্রকৃতির বর্ণাঢ্য গদ্য-পদ্য রচনা করে গেছেন।
কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে ডিগ্রি নেন। জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পীও তিনি। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদও আঁকেন তিনি। কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। এরপর ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে আবার আর্ট কলেজে ফিরে যান কাইয়ুম চৌধুরী। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর এর অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি। দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এর সঙ্গে যুক্ত হন কাইয়ুম চৌধুরী। তার একটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ।
ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি শিল্পচর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন (১৯৬১-৬২)। এই বছর লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিল্পকলা প্রদর্শনীতে ‘বটম’ শীর্ষক ছবির জন্য প্রথম পুরস্কার পান। স্বীকৃতি অর্জনের এই ধারায় তিনি লাভ করেন শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৮৬)। ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১৪ সালে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
সংস্কৃতির সব শাখায় ছিল তার সহজ বিচরণ। সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্র নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না এবং এই সব ক্ষেত্রের শুদ্ধ ও পরিশীলিত চেতনাকে ধারণ করেই তার শিল্প-সৃজন হয়ে উঠেছিল গহন ও গভীর। কাইয়ুম চৌধুরী কবিতা ও ছড়া লেখায় ছিলেন পারদর্শী। তার অসংখ্য কবিতা-ছড়া জাতীয় দৈনিকগুলোতে অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। কাইয়ুম চৌধূরী এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রীয় অংশিদার।
কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গত শুক্রবার সকালে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বয়সভিত্তিক পাঁচটি শ্রেণিতে শতাধিক শিশু ও কিশোর অংশ নেয় এই প্রতিযোগিতায়।
‘বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাসিনা বদর পরিবার ও বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী স্মৃতি শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ২০২২’ শীর্ষক এ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ও বিচারক ছিলেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথি ও বিচারক ছিলেন শিল্পী মনিরুজ্জামান মনির (গ্যালারি চিত্রক) ও বদিউজ্জামান মামুন।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে স্বর্ণপদক, সনদ এবং কাইয়ুম চৌধুরীর লেখা ও শিশু শিল্পী অতনুর প্রচ্ছদ করা প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই ‘তনুর সাথে রঙ রেখাতে’ প্রদান করা হয়।
আজও গুণী এই শিল্পীকে নিয়ে নানা আয়োজন রেখেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর অষ্টম মৃত্যু দিবস আজ। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরে বক্তব্য দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের এই শিল্পী। সেখান থেকে শিল্পীকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাটি ও মানুষের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের মাঝে দৃশ্যমান না থাকলেও সংস্কৃতমনা বাঙালির অন্তরে মহীয়ান থাকবেন অনেক কাল।
১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে গুণী এই শিল্পীর জন্ম। ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে কাইয়ুম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল। স্কুলজীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। তেলরং, জলরং, কালি-কলম, মোমরং, রেশম ছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুুম চৌধুরী কাজ করেছেন। বস্তুত তার ছবি ছিল নকশাপ্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। কাইয়ুম চৌধুরী সবুজ শ্যামল নদীমাতৃক বাংলার প্রকৃতি থেকে রং নিয়ে হৃদয়ের মাধুরী দিয়ে যে ছবি এঁকেছেন সে ছবি কথা বলে। রঙের ভাষা দিয়ে তিনি এ দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, মান-অভিমান, জীবনযুদ্ধে প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই, দেশ বিজয় ও ভালোবাসা আর প্রকৃতির বর্ণাঢ্য গদ্য-পদ্য রচনা করে গেছেন।
কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে ডিগ্রি নেন। জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পীও তিনি। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদও আঁকেন তিনি। কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। এরপর ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে আবার আর্ট কলেজে ফিরে যান কাইয়ুম চৌধুরী। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর এর অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি। দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এর সঙ্গে যুক্ত হন কাইয়ুম চৌধুরী। তার একটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ।
ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি শিল্পচর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন (১৯৬১-৬২)। এই বছর লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিল্পকলা প্রদর্শনীতে ‘বটম’ শীর্ষক ছবির জন্য প্রথম পুরস্কার পান। স্বীকৃতি অর্জনের এই ধারায় তিনি লাভ করেন শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৮৬)। ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১৪ সালে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
সংস্কৃতির সব শাখায় ছিল তার সহজ বিচরণ। সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্র নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না এবং এই সব ক্ষেত্রের শুদ্ধ ও পরিশীলিত চেতনাকে ধারণ করেই তার শিল্প-সৃজন হয়ে উঠেছিল গহন ও গভীর। কাইয়ুম চৌধুরী কবিতা ও ছড়া লেখায় ছিলেন পারদর্শী। তার অসংখ্য কবিতা-ছড়া জাতীয় দৈনিকগুলোতে অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। কাইয়ুম চৌধূরী এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রীয় অংশিদার।
কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গত শুক্রবার সকালে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বয়সভিত্তিক পাঁচটি শ্রেণিতে শতাধিক শিশু ও কিশোর অংশ নেয় এই প্রতিযোগিতায়।
‘বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাসিনা বদর পরিবার ও বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী স্মৃতি শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ২০২২’ শীর্ষক এ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ও বিচারক ছিলেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথি ও বিচারক ছিলেন শিল্পী মনিরুজ্জামান মনির (গ্যালারি চিত্রক) ও বদিউজ্জামান মামুন।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে স্বর্ণপদক, সনদ এবং কাইয়ুম চৌধুরীর লেখা ও শিশু শিল্পী অতনুর প্রচ্ছদ করা প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই ‘তনুর সাথে রঙ রেখাতে’ প্রদান করা হয়।
আজও গুণী এই শিল্পীকে নিয়ে নানা আয়োজন রেখেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।