alt

রাজনীতি

ভিসা নিষেধাজ্ঞা : সচিবালয়ে নিত্য আলোচনা, মিশ্র অনুভূতি

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা শঙ্কিত নয়। তবে মধ্যম ও নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের অনেকেই শঙ্কিত। তাদের আশঙ্কা, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও সরকারি-বেসরকারি নানা কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়তে পারে।

সরকারের অতিরিক্ত ও যুগ্ম এবং উপসচিব পর্যায়ের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা এখন আমেরিকায় যেতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে ভবিষ্যতে যেতে পারবেন কী না সেটি নিয়ে চিন্তিত।

তবে উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাকেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বিশেষ করে- বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন, কূটনৈতিক প্রয়োজন ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকেন্দ্রিক কার্যক্রমের যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে যেতে হয়। এই ধরনের কার্যক্রম ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ব্যাহত হতে পারে বলে অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন।

গত তিন দিন সরকারি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই সহকর্মী ও ব্যাচমেটদের সঙ্গে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। কেউ কেউ ব্যাচমেট ও ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, বুঝার চেষ্টা করছেন এ নিষেধাজ্ঞায় কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ বিষয়ে ভিসানীতি ঘোষণা করে। এর প্রায় চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে।

অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ভিসানীতির অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও এর আওতায় পড়েন। এ নিষেধাজ্ঞায় থাকা লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা পান না। ভিসা দেয়া থাকলেও তা বাতিল করে দেয়া হয়।

যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। কারণ সরকারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সচিবালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশটির পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কিছু দেশ তা অনুসরণ করে থাকে।

বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও যদি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো এই নিষেধাজ্ঞার পন্থা অনুসরণ করে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘নানামুখী’ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হতে পারে বলে কোন কোন কর্মকর্তা ধারণা করছেন।

একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েই বসে থাকবে বিষয়টি তা নয়। তারা এর পেছনে লেগে থাকবে। তারা বাংলাদেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব ‘সুবিধা’ দিচ্ছে সেখানেও সমস্যা পাঁকাতে পারে।

সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে কর্মরত একজন উপসচিব বলেন, জাতিসংঘ, বিশ^ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্থার সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নানা সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের প্রায়ই যেতে হয়। কিন্তু ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন ওইসব সভা ও কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা যেতে পারবেন কি না বা সহজে ভিসা মিলবে কি না সে বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলেও ওই উপসচিব জানান।

সচিবালয়ে ৪ নম্বর ভবনে কর্মরত একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, গত দুটি সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। আমেরিকা খুব একটা ‘ডিস্টার্ব’ করেনি। এবার কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা সরকারের ‘খুব বেশি’ সমস্যা হবে না।

তবে এবার তারা নির্বাচনের আগেই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ কারণে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সরকারের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। নির্বাচনের পর যদি তারা নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধি করে সেক্ষেত্রে সরকারের ওপর ‘বড়’ ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে রাজনীতি সচেতন ওই কর্মকর্তা মনে করেন।

সরকারের সাবেক একজন সিনিয়র সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এখনই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দু-একজন কর্মকর্তা নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে। নিচের স্তরের কেউ নিষেধাজ্ঞায় পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ নিষেধাজ্ঞা এসেছে রাজনৈতিক দৃষ্টি কোন থেকে। এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় এক সমাবেশে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ চলবে সংবিধান অনুযায়ী। কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা মানি না। ৭১ সালে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের হারাতে পারেনি, আজও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শেখ হাসিনাকে থামানো যাবে না। আমরা কারও নিষেধাজ্ঞা পরোয়া করি না।’

সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিচলিত নন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও দিন আমেরিকা যাইনি, যাবোও না।’

ভিসানীতি নিয়ে মাথা ঘামান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাধীন সার্বভৌম একটা রাষ্ট্র। একাত্তরে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তখন যারা ভয় দেখিয়েছে, তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।’

ছবি

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় আইভী কারাগারে

ছবি

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবি: যমুনার সামনে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক

ছবি

আ. লীগকে নিষিদ্ধের দাবি: রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সকালেও চলছে

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায়, দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সিইসি ও বিচারপতিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

ছবি

“জাতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নয়: মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারকে বিএনপির হুঁশিয়ারি”

ছবি

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক এমপি তুহিনের আপিল গ্রহণ, জামিন মঞ্জুর

ছবি

দল গোছাতে দুই মাসে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য বিএনপির

ছবি

কবিগুরুর গান জাতীয় সংগীত হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত: তারেক রহমান

ছবি

আজহারের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় ২৭ মে

ছবি

সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোটে দ্বিমত নাগরিক ঐক্যের, অধিকাংশ প্রস্তাবে একমত

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রণীত সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি গণতন্ত্রী পার্টির

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক মতপার্থক্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে: এনসিপি

ছবি

লন্ডনে চিকিৎসার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফিরোজায় ফিরলেন

ছবি

হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ: মহাসমাবেশে দুই বক্তার আপত্তিকর বক্তব্য নিয়ে বিবৃতি

ছবি

দুই ঘণ্টায় ‘ফিরোজা’য় পৌঁছালেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ভিড়ে সড়কজুড়ে উচ্ছ্বাস

ছবি

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, যাচ্ছেন ‘ফিরোজায়’

ছবি

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ঢল বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত

ছবি

কিছু সংস্কার প্রস্তাব ধর্ম ও নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে: এনসিপি

ছবি

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, হিথ্রোতে আবেগঘন বিদায়

ছবি

গয়েশ্বরের মন্তব্য: ‘আদালত বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে’

ছবি

গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা

ছবি

৬ মে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, পথে পথে অভ্যর্থনার প্রস্তুতি বিএনপির

ছবি

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কথা বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশে পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া

ছবি

কাতারের রাজকীয় বিমানে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত: জামায়াতে আমির

ছবি

বিশেষ বিমানে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, অভ্যর্থনায় প্রস্তুত বিএনপি

ছবি

সাকিবকে আওয়ামী লীগে যোগ না দিতে বলেছিলাম, না শুনে বিপদে পড়েছে: হাফিজ উদ্দিন

ছবি

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি: বাসদ

ছবি

চার দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে মহাসমাবেশ শেষ করলো হেফাজতে ইসলাম

ছবি

মামলা প্রত্যাহারের দাবি, হুঁশিয়ারি ও যুদ্ধের প্রস্তুতির আহ্বান মামুনুল হকের

ছবি

এই ভূখণ্ডে আওয়ামী লীগের আর পুনর্বাসন হবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

ছবি

জোবাইদা রহমানের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে আইজিপিকে বিএনপির চিঠি

ছবি

দীর্ঘ মেয়াদে অনির্বাচিত সরকারে ‘নানা সমস্যা’: সংলাপে জাতীয়তাবাদী জোট

ছবি

নির্বাচনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়: জামায়াত আমির

tab

রাজনীতি

ভিসা নিষেধাজ্ঞা : সচিবালয়ে নিত্য আলোচনা, মিশ্র অনুভূতি

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা শঙ্কিত নয়। তবে মধ্যম ও নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের অনেকেই শঙ্কিত। তাদের আশঙ্কা, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও সরকারি-বেসরকারি নানা কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়তে পারে।

সরকারের অতিরিক্ত ও যুগ্ম এবং উপসচিব পর্যায়ের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা এখন আমেরিকায় যেতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে ভবিষ্যতে যেতে পারবেন কী না সেটি নিয়ে চিন্তিত।

তবে উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাকেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বিশেষ করে- বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন, কূটনৈতিক প্রয়োজন ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকেন্দ্রিক কার্যক্রমের যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে যেতে হয়। এই ধরনের কার্যক্রম ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ব্যাহত হতে পারে বলে অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন।

গত তিন দিন সরকারি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই সহকর্মী ও ব্যাচমেটদের সঙ্গে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। কেউ কেউ ব্যাচমেট ও ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, বুঝার চেষ্টা করছেন এ নিষেধাজ্ঞায় কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ বিষয়ে ভিসানীতি ঘোষণা করে। এর প্রায় চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে।

অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ভিসানীতির অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও এর আওতায় পড়েন। এ নিষেধাজ্ঞায় থাকা লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা পান না। ভিসা দেয়া থাকলেও তা বাতিল করে দেয়া হয়।

যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। কারণ সরকারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সচিবালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশটির পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কিছু দেশ তা অনুসরণ করে থাকে।

বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও যদি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো এই নিষেধাজ্ঞার পন্থা অনুসরণ করে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘নানামুখী’ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হতে পারে বলে কোন কোন কর্মকর্তা ধারণা করছেন।

একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েই বসে থাকবে বিষয়টি তা নয়। তারা এর পেছনে লেগে থাকবে। তারা বাংলাদেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব ‘সুবিধা’ দিচ্ছে সেখানেও সমস্যা পাঁকাতে পারে।

সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে কর্মরত একজন উপসচিব বলেন, জাতিসংঘ, বিশ^ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্থার সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নানা সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের প্রায়ই যেতে হয়। কিন্তু ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন ওইসব সভা ও কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা যেতে পারবেন কি না বা সহজে ভিসা মিলবে কি না সে বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলেও ওই উপসচিব জানান।

সচিবালয়ে ৪ নম্বর ভবনে কর্মরত একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, গত দুটি সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। আমেরিকা খুব একটা ‘ডিস্টার্ব’ করেনি। এবার কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা সরকারের ‘খুব বেশি’ সমস্যা হবে না।

তবে এবার তারা নির্বাচনের আগেই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ কারণে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সরকারের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। নির্বাচনের পর যদি তারা নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধি করে সেক্ষেত্রে সরকারের ওপর ‘বড়’ ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে রাজনীতি সচেতন ওই কর্মকর্তা মনে করেন।

সরকারের সাবেক একজন সিনিয়র সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এখনই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দু-একজন কর্মকর্তা নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে। নিচের স্তরের কেউ নিষেধাজ্ঞায় পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ নিষেধাজ্ঞা এসেছে রাজনৈতিক দৃষ্টি কোন থেকে। এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় এক সমাবেশে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ চলবে সংবিধান অনুযায়ী। কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা মানি না। ৭১ সালে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের হারাতে পারেনি, আজও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শেখ হাসিনাকে থামানো যাবে না। আমরা কারও নিষেধাজ্ঞা পরোয়া করি না।’

সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিচলিত নন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও দিন আমেরিকা যাইনি, যাবোও না।’

ভিসানীতি নিয়ে মাথা ঘামান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাধীন সার্বভৌম একটা রাষ্ট্র। একাত্তরে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তখন যারা ভয় দেখিয়েছে, তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।’

back to top