alt

রাজনীতি

নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ভয় দেখায় ফখরুল : কাদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, কেরানীগঞ্জ : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন ভিসা নীতি ইস্যুতে বিএনপি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর ভয় দেখাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমেরিকা কি মির্জা ফখরুলকে ভয় দেখানোর এজেন্সি দিয়েছে? এমন প্রশ্নও রেখেছেন তিনি।

মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা পুরাতন বাসরোড এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচান করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ভয় আমরা যারা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, যারা রক্ত দিয়ে মাতৃভূমির বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করেছি, একাত্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের থামাতে পারেননি। আজও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে থামানো যাবে না। আমরা কারও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি সংবিধান। আমরা কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা মানি না, মানবো না।’

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞায় ভেনেজুয়েলায় সরকারের পতন হয়নি। তাদের রাজধানী শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা গানম্যানদের (বন্ধুকধারী) দখল করে। নিষেধাজ্ঞায় সেখানে কোন কাজ হয়নি। নিষেধাজ্ঞার পরও ফিলিস্তিন ভেসে গেছে রক্তে। ইজরাইলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ তো বন্ধ হয়নি। নিষেধাজ্ঞায় সুদানে দুই জেনারেলের যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। আপনাদের নিষেধাজ্ঞায় সোমালিয়ায় প্রতি মিনিটে ১ জন মানুষ না খেয়ে মরে। বন্ধ করতে পারেননি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পারেন না গ্যাবনের বিদ্রোহ দমন করতে। কারফিউ জারি করে ভোট বন্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না, আপনাদের নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, আর নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায় মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল কি এজেন্সি পেয়েছে?’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নিজেরাই রাজনীতি করছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য যেই কথা বলছে, তার চেয়ে বেশি রাজনীতি করেছে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছে। সেটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেই মির্জা ফখরুলের চোখে কেবল কান্নায় কান্নায় বুক ভেসে যায়। কত মানুষকে কাঁদিয়েছেন আপনারা। আপনারা ক্ষমতায় থাকতে কান্নায় ভারী করিয়েছেন। এখন নিজেরা কাঁদেন। আরও কান্না আছে। কাঁদতে কাঁদতে বাংলাদেশ দরিয়া হয়ে যাবে। তবুও আপনাদের ক্ষমা নাই।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, মাতৃহত্যার প্রতিশোধ আমরা নেব। বঙ্গবন্ধুকে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছেন। খুনিদের বিচার করেননি, ক্ষমা করেছেন। আপনাদের ক্ষমা নেই। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে ক্ষমা করবে না। একজন কাঁদে আর মির্জা আব্বাস খুলনায় দাঁড়িয়ে বলেন, আজ চাঁদরাতের আনন্দ। কিছু লোকজন দেখে মির্জা আব্বাস আপ্লুত হয়ে চাঁদরাত দেখেছেন। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখতেছেন।’

বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই খেলা শুরু হয়ে যাবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্যাপ্টেন (শেখ হাসিনা) আসতেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে ক্যাপ্টেন এখন ওয়াশিংটনে আছেন। প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে।’

আওয়ামী লীগ কর্মীদের গায়ে আঘাত করলে এবার পাল্টা আঘাত করা হবে জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোন অবস্থাতেই কোন ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ কারো কাছে মাথা নত করবে না। বিএনপি কীভাবে ঢাকা দখল করে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। লাল সবুজের পতাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ সারাদেশ দখল করবে।

সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বারবার আসতে পারব না, ভোটের জন্য তৈরি হয়ে যান। ভোট জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বারবার আসব না, আপনারাই শেখ হাসিনার হয়ে জনগণের কাছে যাবেন। নৌকার হয়ে শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাইবেন। শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলবেন।’

তিনি বলেন, ‘খেলা হবে, কেরানীগঞ্জে খেলা হবে। এটা খেলার আসল মাঠ। কেরানীগঞ্জের মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষ করে ক্যাপ্টেন আসছেন। তৈরি হয়ে যান। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পতাকা হাতে বিজয়ের মিছিল হবে।’

তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের চোখে খালেদা জিয়ার জন্য কান্না। ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার জন্য আপনারা আন্দোলনে ৪৮ মিনিটও দাঁড়াতে পারেননি। শেখ হাসিনার দয়ায় খালেদা জিয়া আজ বাসায়। রেডি হয়ে যান ফখরুল সাহেব। আওয়ামী লীগের কর্মীদের কারও গায়ে, বাড়িতে আঘাত লাগলে, পাল্টা আঘাত করা হবে। কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না।’

দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের কোন দোষ নেই দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সব দেশেই বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এতে আমাদের কোন দোষ নেই। এর কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। আমরা দোষ না করেও শাস্তি পাচ্ছি। আমি দোষ না করেও আমার জনগণ শাস্তি পাচ্ছে। আমি আশ্বস্ত করছি, এ দুঃসময় কেটে যাবে।’

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশ না পাঠালে দায়-দায়িত্ব সব আওয়ামী লীগের’- বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সকাল-বিকেল রাস্তায় বসে নাটক বন্ধ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনারা নাটকবাজি করছেন। যদি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়- তাহলে এর দায়-দায়িত্ব বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বহন করতে হবে, অন্য কারো নয়।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নতুন করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা সমাবেশের নামে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে দেশের জনগণ ও দেশের সম্পদের ওপর আঘাত আনছে। এরা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এরা বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে বিনষ্ট করতে চায়।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘অক্টোবরে সরকার পতনের সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি-জামায়াত। বাড়িঘর ভেঙে ফেলাসহ জীবননাশেরও হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। তাই অক্টোবর মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে না উল্লেখ করে মির্জা আজম দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, একসময় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। প্রতিটি জায়গায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠেঘাটে পরীক্ষিত। আর বিএনপি কর্মী জোগাড় করে বিরিয়ানি দিয়ে।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি সাকুর হোসেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন, হাজি ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

ছবি

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় আইভী কারাগারে

ছবি

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবি: যমুনার সামনে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক

ছবি

আ. লীগকে নিষিদ্ধের দাবি: রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সকালেও চলছে

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায়, দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সিইসি ও বিচারপতিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

ছবি

“জাতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নয়: মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারকে বিএনপির হুঁশিয়ারি”

ছবি

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক এমপি তুহিনের আপিল গ্রহণ, জামিন মঞ্জুর

ছবি

দল গোছাতে দুই মাসে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য বিএনপির

ছবি

কবিগুরুর গান জাতীয় সংগীত হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত: তারেক রহমান

ছবি

আজহারের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় ২৭ মে

ছবি

সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোটে দ্বিমত নাগরিক ঐক্যের, অধিকাংশ প্রস্তাবে একমত

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রণীত সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি গণতন্ত্রী পার্টির

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক মতপার্থক্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে: এনসিপি

ছবি

লন্ডনে চিকিৎসার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফিরোজায় ফিরলেন

ছবি

হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ: মহাসমাবেশে দুই বক্তার আপত্তিকর বক্তব্য নিয়ে বিবৃতি

ছবি

দুই ঘণ্টায় ‘ফিরোজা’য় পৌঁছালেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ভিড়ে সড়কজুড়ে উচ্ছ্বাস

ছবি

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, যাচ্ছেন ‘ফিরোজায়’

ছবি

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের ঢল বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত

ছবি

কিছু সংস্কার প্রস্তাব ধর্ম ও নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে: এনসিপি

ছবি

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, হিথ্রোতে আবেগঘন বিদায়

ছবি

গয়েশ্বরের মন্তব্য: ‘আদালত বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে’

ছবি

গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা

ছবি

৬ মে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, পথে পথে অভ্যর্থনার প্রস্তুতি বিএনপির

ছবি

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কথা বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশে পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া

ছবি

কাতারের রাজকীয় বিমানে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত: জামায়াতে আমির

ছবি

বিশেষ বিমানে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, অভ্যর্থনায় প্রস্তুত বিএনপি

ছবি

সাকিবকে আওয়ামী লীগে যোগ না দিতে বলেছিলাম, না শুনে বিপদে পড়েছে: হাফিজ উদ্দিন

ছবি

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি: বাসদ

ছবি

চার দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে মহাসমাবেশ শেষ করলো হেফাজতে ইসলাম

ছবি

মামলা প্রত্যাহারের দাবি, হুঁশিয়ারি ও যুদ্ধের প্রস্তুতির আহ্বান মামুনুল হকের

ছবি

এই ভূখণ্ডে আওয়ামী লীগের আর পুনর্বাসন হবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

ছবি

জোবাইদা রহমানের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে আইজিপিকে বিএনপির চিঠি

ছবি

দীর্ঘ মেয়াদে অনির্বাচিত সরকারে ‘নানা সমস্যা’: সংলাপে জাতীয়তাবাদী জোট

ছবি

নির্বাচনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়: জামায়াত আমির

tab

রাজনীতি

নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ভয় দেখায় ফখরুল : কাদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, কেরানীগঞ্জ

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন ভিসা নীতি ইস্যুতে বিএনপি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর ভয় দেখাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমেরিকা কি মির্জা ফখরুলকে ভয় দেখানোর এজেন্সি দিয়েছে? এমন প্রশ্নও রেখেছেন তিনি।

মঙ্গলাবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা পুরাতন বাসরোড এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচান করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ভয় আমরা যারা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, যারা রক্ত দিয়ে মাতৃভূমির বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করেছি, একাত্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের থামাতে পারেননি। আজও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে থামানো যাবে না। আমরা কারও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি সংবিধান। আমরা কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা মানি না, মানবো না।’

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞায় ভেনেজুয়েলায় সরকারের পতন হয়নি। তাদের রাজধানী শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা গানম্যানদের (বন্ধুকধারী) দখল করে। নিষেধাজ্ঞায় সেখানে কোন কাজ হয়নি। নিষেধাজ্ঞার পরও ফিলিস্তিন ভেসে গেছে রক্তে। ইজরাইলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ তো বন্ধ হয়নি। নিষেধাজ্ঞায় সুদানে দুই জেনারেলের যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। আপনাদের নিষেধাজ্ঞায় সোমালিয়ায় প্রতি মিনিটে ১ জন মানুষ না খেয়ে মরে। বন্ধ করতে পারেননি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পারেন না গ্যাবনের বিদ্রোহ দমন করতে। কারফিউ জারি করে ভোট বন্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না, আপনাদের নিষেধাজ্ঞা কেউ শোনে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, আর নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায় মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল কি এজেন্সি পেয়েছে?’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নিজেরাই রাজনীতি করছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য যেই কথা বলছে, তার চেয়ে বেশি রাজনীতি করেছে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছে। সেটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেই মির্জা ফখরুলের চোখে কেবল কান্নায় কান্নায় বুক ভেসে যায়। কত মানুষকে কাঁদিয়েছেন আপনারা। আপনারা ক্ষমতায় থাকতে কান্নায় ভারী করিয়েছেন। এখন নিজেরা কাঁদেন। আরও কান্না আছে। কাঁদতে কাঁদতে বাংলাদেশ দরিয়া হয়ে যাবে। তবুও আপনাদের ক্ষমা নাই।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, মাতৃহত্যার প্রতিশোধ আমরা নেব। বঙ্গবন্ধুকে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছেন। খুনিদের বিচার করেননি, ক্ষমা করেছেন। আপনাদের ক্ষমা নেই। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে ক্ষমা করবে না। একজন কাঁদে আর মির্জা আব্বাস খুলনায় দাঁড়িয়ে বলেন, আজ চাঁদরাতের আনন্দ। কিছু লোকজন দেখে মির্জা আব্বাস আপ্লুত হয়ে চাঁদরাত দেখেছেন। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখতেছেন।’

বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই খেলা শুরু হয়ে যাবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্যাপ্টেন (শেখ হাসিনা) আসতেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে ক্যাপ্টেন এখন ওয়াশিংটনে আছেন। প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে।’

আওয়ামী লীগ কর্মীদের গায়ে আঘাত করলে এবার পাল্টা আঘাত করা হবে জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোন অবস্থাতেই কোন ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ কারো কাছে মাথা নত করবে না। বিএনপি কীভাবে ঢাকা দখল করে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। লাল সবুজের পতাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ সারাদেশ দখল করবে।

সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বারবার আসতে পারব না, ভোটের জন্য তৈরি হয়ে যান। ভোট জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বারবার আসব না, আপনারাই শেখ হাসিনার হয়ে জনগণের কাছে যাবেন। নৌকার হয়ে শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাইবেন। শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলবেন।’

তিনি বলেন, ‘খেলা হবে, কেরানীগঞ্জে খেলা হবে। এটা খেলার আসল মাঠ। কেরানীগঞ্জের মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষ করে ক্যাপ্টেন আসছেন। তৈরি হয়ে যান। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পতাকা হাতে বিজয়ের মিছিল হবে।’

তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের চোখে খালেদা জিয়ার জন্য কান্না। ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার জন্য আপনারা আন্দোলনে ৪৮ মিনিটও দাঁড়াতে পারেননি। শেখ হাসিনার দয়ায় খালেদা জিয়া আজ বাসায়। রেডি হয়ে যান ফখরুল সাহেব। আওয়ামী লীগের কর্মীদের কারও গায়ে, বাড়িতে আঘাত লাগলে, পাল্টা আঘাত করা হবে। কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না।’

দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের কোন দোষ নেই দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সব দেশেই বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এতে আমাদের কোন দোষ নেই। এর কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। আমরা দোষ না করেও শাস্তি পাচ্ছি। আমি দোষ না করেও আমার জনগণ শাস্তি পাচ্ছে। আমি আশ্বস্ত করছি, এ দুঃসময় কেটে যাবে।’

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশ না পাঠালে দায়-দায়িত্ব সব আওয়ামী লীগের’- বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সকাল-বিকেল রাস্তায় বসে নাটক বন্ধ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনারা নাটকবাজি করছেন। যদি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়- তাহলে এর দায়-দায়িত্ব বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বহন করতে হবে, অন্য কারো নয়।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নতুন করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা সমাবেশের নামে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে দেশের জনগণ ও দেশের সম্পদের ওপর আঘাত আনছে। এরা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এরা বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে বিনষ্ট করতে চায়।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘অক্টোবরে সরকার পতনের সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি-জামায়াত। বাড়িঘর ভেঙে ফেলাসহ জীবননাশেরও হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। তাই অক্টোবর মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে না উল্লেখ করে মির্জা আজম দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, একসময় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। প্রতিটি জায়গায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠেঘাটে পরীক্ষিত। আর বিএনপি কর্মী জোগাড় করে বিরিয়ানি দিয়ে।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি সাকুর হোসেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন, হাজি ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

back to top