ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আশপাশে তীব্র যানজট
গাবতলী সড়কে বিএনপির সমাবেশ, পাশে যানজট -সংবাদ
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, শেখ হাসিনাসহ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গাবতলীতে এ সমাবেশ করে বিএনপি। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর এই সমাবেশের আয়োজন করে। তবে ভোগান্তি বাড়িয়ে প্রধান সড়কের ওপর সমাবেশ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
গাবতলীর এস এ খালেক মাঠটি একেবারে প্রধান সড়কের পাশেই। আর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মাঠের প্রবেশমুখে। নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন গাবতলীর প্রধান সড়কে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ মিরপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও বাংলামোটর এলাকায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও এসব এলাকার সড়ক ছিল স্থবির, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তখনও যানজটে আটকে ছিল গাড়ি।
সরেজমিন দেখা যায়, বেলা দুইটার দিকে গাবতলীর পর্বত এলাকায় উভয়পাশের সড়ক আটকে দিয়ে প্রথমে অবস্থায় নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপর মঞ্চ অভিমুখে শুরু করে মিছিল। এতে আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়েই আটকে যায় ঢাকামুখী যানবাহন। একইভাবে টেকনিক্যাল মোড় থেকে আর কোন যানবাহন ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে পারেনি। এতে দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানবাহনের লম্বা জট তৈরি হয়। গাবতলীর প্রধান সড়কের পাশেই এস এ খালেক মাঠ, যার প্রবেশমুখে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন প্রধান সড়কে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল পাঁচটার দিকে যায়, রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পেরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের হেমায়েতপুর ছাড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি। অর্থাৎ, প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে ওই সড়কে। একইভাবে টেকনিক্যাল থেকে গাড়ির যে জট রাজধানীর ভেতরে তৈরি হয়েছে তা ঠেকেছে শ্যামলীর শিশুমেলা পর্যন্ত।
দুপুর তিনটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী বাস ছেড়ে আসে রাজধানীর বঙ্গবাজারের উদ্দেশে। ওই বাসটি বলিয়ারপুরে এসে জ্যামে পরে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই সময়ে ছেড়ে আসা এক বাসের চালক নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, বলিয়ারপুরে জ্যামে পড়ার পর উল্টো পথে আমিনবাজার পর্যন্ত তিনি নির্বিঘ্নে আসতে পারেন। এরপর সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বসে আছেন।
যদিও এই বাসটির আবার বিকেল ৫টার দিকে বঙ্গবাজার থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে জাবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু যে সময়ে তার ফেরার কথা, ওই সময়ে তিনি আমিনবাজারও পার হতে পারেননি।
বেলা আড়াইটার দিকে আমিনবাজারে কথা হয় হানিফ এন্টারপ্রাইজের চালক হারুনের সঙ্গে। তিনি জানান, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাস্তা স্বাভাবিক ছিল। এরপর ধীরে ধীরে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুইটার দিকে পরবতীতে জড়ো হয়ে তারা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই যানজটের শুরু।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফারিহা নামের এক কর্মজীবী নারীর সঙ্গে কথা হয় আসাদগেট এলাকায়। তিনি যাবেন সাভারে। দুপুর একটার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে বাসে উঠেছেন তিনি। অথচ সাড়ে তিন ঘণ্টায় তিনি অর্ধেক রাস্তাও পেরুতে পারেননি। তীব্র গরমের মধ্যে এমন জ্যাম দুর্বিষহ করে তুলেছে তাকে।
বেলা দুইটার দিকে গাবতলীর পর্বত এলাকায় উভয়পাশের সড়ক আটকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মঞ্চ অভিমুখে মিছিল শুরু করে।
এ সময় ফারিহা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘তারা যেন বন্ধের দিন অথবা রাস্তা ছেড়ে সভাসমাবেশ করেন। এতে তাদের দাবিও যেমন জানাতে পারবে, তেমনি মানুষের ভোগান্তি হবে না।’ মানুষকে জিম্মি করে এমন সমাবেশ কোন দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না বলেও জানান কর্মজীবী এই নারী।
হেঁটে গন্তেব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা
দুপুর দুইটার দিকে গাবতলীর উভয় পাশের সড়ক আটকে দিলে তৈরি হয় যানজট। এতে গন্তেব্যে পৌঁছাতে অধিকাংশ মানুষই বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তেব্যে রওয়ানা দেন। এমন একজন হাবিবুর রহমান। মানিকগঞ্জ থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈকালিক শিফটের চিকিৎসক দেখাবেন বলে। কিন্তু বিএনপির এই সমাবেশ তার সেই যাত্রা অনিশ্চিত করে তুলেছে।
তারা সঙ্গে কথা হয় টেকনিক্যাল মোড়ে। স্ত্রী অসুস্থ, তবুও বহু কষ্টে আমিনবাজার থেকে ধীর পায়ে হেঁটে এসেছেন এ পর্যন্ত। মনে করেছিলেন এখানে আসলে হয়তো কোন যানবাহন পেয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একলা আইলে তো চইলা যাইতাম। কিন্তু এই রোগা মানুষটারে এতদূর হাঁটাইয়া আনছি। একটু আগাইছি, আবার জিরাইছি (রেস্ট নিছি), আবার আগাইছি। এইহানে আইয়া (টেকনিক্যাল) এহন কোন গাড়ি নাই। পুরা রাস্তা ফাঁকা।’ এমন অবস্থায় কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না হাবিবুর রহমান।
বিএনপির সমাবেশের কারণে ঢাকামুখী সড়কে কোন যানবাহন নেই, অন্যপাশে ঢাকা থেকে বের হওয়ার লেনে যানবাহনের সারি। এমন অবস্থায় গন্তেব্যে যেতে পায়ে হেঁটে গন্তেব্যে রওয়ানা দিয়েছেন মানুষ। টেকনিক্যাল মোড় থেকে দুপুর সোয়া ৩টার দিকে তোলা।
টেকনিক্যাল মোড়ের একটু আগেই হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় বিলকিস বেগমের সঙ্গে। তিনিও সাভারের বাইপাইল থেকে গাড়িতে উঠেছিলেন ফার্মগেট আসবেন বলে। কিন্তু যানেজটে আটকে আমিনবাজারের আগেই বাস থেকে নেমে পড়েন। হাঁটতে থাকেন একটি বাহনের আশায়, কিন্তু টেকনিক্যাল চলে আসলেও কোন যানবাহনের দেখা পাননি মধ্যবয়স্ক এই নারী।
বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির খোঁজে মানুষ
রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় থেকে যতই ঢাকার ভেতরে এসেছেন প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টানা তিন দিনের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে কেউ কেউ বুধবার আগেভাগে কাজ শেষ করে বের হয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় নেমেই পড়েছেন ভোগান্তিতে।
একদিকে বিএনপির সমাবেশ, অন্যদিকে টানা তিন দিনের ছুটিতে অনেকেই যাবেন গ্রামের বাড়ি। কিন্তু যানবাহন না থাকায় সময়ের সঙ্গে মোড়ে মোড়ে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেটের বাসস্ট্যান্ডে কয়েকশ মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির অপেক্ষায়। এমনকি সিএনজি ও বাইক সার্ভিসেরও তেমন দেখা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর এলাকার সিগন্যালে গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে দেখা গেছে। খামারবাড়ি সিগন্যাল পার হতেই প্রায় আধাঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এই গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। গাবতলীর সমাবেশকে বিএনপির পক্ষ থেকে অহিংস দাবি করা হলেও তাদের নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠি দেখা গেছে।
যা বলছে বিএনপি
সড়ক আটকে এমন সমাবেশের বিষয়ে গাবতলীর সমাবেশস্থলেই কথা হয় তেজগাঁও থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে মানুষ এমন ভোগান্তি মেনে নেবে বলেও জানান তিনি।
কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবুও সরকার আমাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে হামলা-নির্যাতন-মামলা দিয়েই যাচ্ছে। এখন আর আমাদের হারাবার কিছু নেই। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারকে আর চায় না। তাদের পক্ষে আজকে বিএনপির এই সমাবেশ। এজন্য কিছুটা ভোগান্তি হলেও আমরা মনে করছি মানুষ তা ইতিবাচকভাবেই নেবে।’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আশপাশে তীব্র যানজট
গাবতলী সড়কে বিএনপির সমাবেশ, পাশে যানজট -সংবাদ
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, শেখ হাসিনাসহ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গাবতলীতে এ সমাবেশ করে বিএনপি। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর এই সমাবেশের আয়োজন করে। তবে ভোগান্তি বাড়িয়ে প্রধান সড়কের ওপর সমাবেশ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
গাবতলীর এস এ খালেক মাঠটি একেবারে প্রধান সড়কের পাশেই। আর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মাঠের প্রবেশমুখে। নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন গাবতলীর প্রধান সড়কে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ মিরপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও বাংলামোটর এলাকায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও এসব এলাকার সড়ক ছিল স্থবির, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তখনও যানজটে আটকে ছিল গাড়ি।
সরেজমিন দেখা যায়, বেলা দুইটার দিকে গাবতলীর পর্বত এলাকায় উভয়পাশের সড়ক আটকে দিয়ে প্রথমে অবস্থায় নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপর মঞ্চ অভিমুখে শুরু করে মিছিল। এতে আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়েই আটকে যায় ঢাকামুখী যানবাহন। একইভাবে টেকনিক্যাল মোড় থেকে আর কোন যানবাহন ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে পারেনি। এতে দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানবাহনের লম্বা জট তৈরি হয়। গাবতলীর প্রধান সড়কের পাশেই এস এ খালেক মাঠ, যার প্রবেশমুখে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন প্রধান সড়কে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল পাঁচটার দিকে যায়, রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পেরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের হেমায়েতপুর ছাড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি। অর্থাৎ, প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে ওই সড়কে। একইভাবে টেকনিক্যাল থেকে গাড়ির যে জট রাজধানীর ভেতরে তৈরি হয়েছে তা ঠেকেছে শ্যামলীর শিশুমেলা পর্যন্ত।
দুপুর তিনটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী বাস ছেড়ে আসে রাজধানীর বঙ্গবাজারের উদ্দেশে। ওই বাসটি বলিয়ারপুরে এসে জ্যামে পরে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই সময়ে ছেড়ে আসা এক বাসের চালক নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, বলিয়ারপুরে জ্যামে পড়ার পর উল্টো পথে আমিনবাজার পর্যন্ত তিনি নির্বিঘ্নে আসতে পারেন। এরপর সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বসে আছেন।
যদিও এই বাসটির আবার বিকেল ৫টার দিকে বঙ্গবাজার থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে জাবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু যে সময়ে তার ফেরার কথা, ওই সময়ে তিনি আমিনবাজারও পার হতে পারেননি।
বেলা আড়াইটার দিকে আমিনবাজারে কথা হয় হানিফ এন্টারপ্রাইজের চালক হারুনের সঙ্গে। তিনি জানান, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাস্তা স্বাভাবিক ছিল। এরপর ধীরে ধীরে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুইটার দিকে পরবতীতে জড়ো হয়ে তারা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই যানজটের শুরু।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফারিহা নামের এক কর্মজীবী নারীর সঙ্গে কথা হয় আসাদগেট এলাকায়। তিনি যাবেন সাভারে। দুপুর একটার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে বাসে উঠেছেন তিনি। অথচ সাড়ে তিন ঘণ্টায় তিনি অর্ধেক রাস্তাও পেরুতে পারেননি। তীব্র গরমের মধ্যে এমন জ্যাম দুর্বিষহ করে তুলেছে তাকে।
বেলা দুইটার দিকে গাবতলীর পর্বত এলাকায় উভয়পাশের সড়ক আটকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মঞ্চ অভিমুখে মিছিল শুরু করে।
এ সময় ফারিহা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘তারা যেন বন্ধের দিন অথবা রাস্তা ছেড়ে সভাসমাবেশ করেন। এতে তাদের দাবিও যেমন জানাতে পারবে, তেমনি মানুষের ভোগান্তি হবে না।’ মানুষকে জিম্মি করে এমন সমাবেশ কোন দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না বলেও জানান কর্মজীবী এই নারী।
হেঁটে গন্তেব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা
দুপুর দুইটার দিকে গাবতলীর উভয় পাশের সড়ক আটকে দিলে তৈরি হয় যানজট। এতে গন্তেব্যে পৌঁছাতে অধিকাংশ মানুষই বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তেব্যে রওয়ানা দেন। এমন একজন হাবিবুর রহমান। মানিকগঞ্জ থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈকালিক শিফটের চিকিৎসক দেখাবেন বলে। কিন্তু বিএনপির এই সমাবেশ তার সেই যাত্রা অনিশ্চিত করে তুলেছে।
তারা সঙ্গে কথা হয় টেকনিক্যাল মোড়ে। স্ত্রী অসুস্থ, তবুও বহু কষ্টে আমিনবাজার থেকে ধীর পায়ে হেঁটে এসেছেন এ পর্যন্ত। মনে করেছিলেন এখানে আসলে হয়তো কোন যানবাহন পেয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একলা আইলে তো চইলা যাইতাম। কিন্তু এই রোগা মানুষটারে এতদূর হাঁটাইয়া আনছি। একটু আগাইছি, আবার জিরাইছি (রেস্ট নিছি), আবার আগাইছি। এইহানে আইয়া (টেকনিক্যাল) এহন কোন গাড়ি নাই। পুরা রাস্তা ফাঁকা।’ এমন অবস্থায় কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না হাবিবুর রহমান।
বিএনপির সমাবেশের কারণে ঢাকামুখী সড়কে কোন যানবাহন নেই, অন্যপাশে ঢাকা থেকে বের হওয়ার লেনে যানবাহনের সারি। এমন অবস্থায় গন্তেব্যে যেতে পায়ে হেঁটে গন্তেব্যে রওয়ানা দিয়েছেন মানুষ। টেকনিক্যাল মোড় থেকে দুপুর সোয়া ৩টার দিকে তোলা।
টেকনিক্যাল মোড়ের একটু আগেই হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় বিলকিস বেগমের সঙ্গে। তিনিও সাভারের বাইপাইল থেকে গাড়িতে উঠেছিলেন ফার্মগেট আসবেন বলে। কিন্তু যানেজটে আটকে আমিনবাজারের আগেই বাস থেকে নেমে পড়েন। হাঁটতে থাকেন একটি বাহনের আশায়, কিন্তু টেকনিক্যাল চলে আসলেও কোন যানবাহনের দেখা পাননি মধ্যবয়স্ক এই নারী।
বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির খোঁজে মানুষ
রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় থেকে যতই ঢাকার ভেতরে এসেছেন প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টানা তিন দিনের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে কেউ কেউ বুধবার আগেভাগে কাজ শেষ করে বের হয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় নেমেই পড়েছেন ভোগান্তিতে।
একদিকে বিএনপির সমাবেশ, অন্যদিকে টানা তিন দিনের ছুটিতে অনেকেই যাবেন গ্রামের বাড়ি। কিন্তু যানবাহন না থাকায় সময়ের সঙ্গে মোড়ে মোড়ে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেটের বাসস্ট্যান্ডে কয়েকশ মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির অপেক্ষায়। এমনকি সিএনজি ও বাইক সার্ভিসেরও তেমন দেখা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর এলাকার সিগন্যালে গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে দেখা গেছে। খামারবাড়ি সিগন্যাল পার হতেই প্রায় আধাঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এই গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। গাবতলীর সমাবেশকে বিএনপির পক্ষ থেকে অহিংস দাবি করা হলেও তাদের নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠি দেখা গেছে।
যা বলছে বিএনপি
সড়ক আটকে এমন সমাবেশের বিষয়ে গাবতলীর সমাবেশস্থলেই কথা হয় তেজগাঁও থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে মানুষ এমন ভোগান্তি মেনে নেবে বলেও জানান তিনি।
কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবুও সরকার আমাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে হামলা-নির্যাতন-মামলা দিয়েই যাচ্ছে। এখন আর আমাদের হারাবার কিছু নেই। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বর্তমান সরকারকে আর চায় না। তাদের পক্ষে আজকে বিএনপির এই সমাবেশ। এজন্য কিছুটা ভোগান্তি হলেও আমরা মনে করছি মানুষ তা ইতিবাচকভাবেই নেবে।’