৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে এ জোট গঠিত হয়েছে। তবে এ নতুন জোট নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ডকে।
জোটভুক্ত অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
এদের মধ্যে শুধু ছাত্রদলের দেশের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি আছে। এর বাইরে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রায় সব জেলা পর্যায়ে এবং ৩০০ এর মত উপজেলা পর্যায়ের কমিটি আছে। যদিও চলতি বছরের ২৩ জুলাই সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ তুলে একযোগে পদত্যাগ করেন।
এছাড়া জোটে অংশ নেওয়া বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রায় ৪১টি জেলা পর্যায়ের ও ৭০ এর অধিক উপজেলা পর্যােেয়র কমিটি আছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। এর বাইরে ১২ টি সংগঠনের হাতেগোনা কয়েকটির শুধু নামেমাত্র ৪-৫ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। বেশির ভাগ সংগঠনের নেই কোনো শাখা কমিটি। বাঁকী সংগঠনগুলোর আহবায়ক-সদস্য সচিব ব্যতিত কারো নাম জানা যায়নি। অতীতে তাদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিতেও অংশ নিতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতির একটা বড় ভূমিকা ছিল। সেক্ষেত্রে এ ধরণের ছাত্র জোটের ভূমিকাও ছিল প্রাসঙ্গিক। কিন্তু এ জোটে অনেকগুলো বড় ছাত্র সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিভিন্ন প্রশ্ন স্বত্ত্বেও অতীতে ছাত্রদলের যে সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল সেটি এখন আর নেই। সব মিলিয়ে এ জোট তাদের লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সফল হবে সেটি সময়ই বলে দিবে।
এদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্রসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের ঢাকা কেন্দ্রীক প্রভাব প্রতিপত্তি থাকলেও তাদেরকে জোটে নেওয়া হচ্ছে না । এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলো। যদিও জোটের দরজা কারো জন্য বন্ধ নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
এ বিষয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ইতিহাসের চরম সংকটময় সময় পার করছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ মুহূর্তে একটি কার্যকর ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছিলাম। ছাত্রদল আমাদের তাদের পল্টন অফিসে আমন্ত্রণও করেছিল। আমরা প্রায় ১৬টি ছাত্র সংগঠন স্বৈরাচারবিরোধী জোটজোট গঠনে একমতও হয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম ছাত্রদল একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তারা সেটি করতে পারেনি। এই জোট নিয়ে আমরা একই সাথে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। ছাত্রদল শুরুতেই ছাত্রদের মধ্যে যে ঐক্য গঠন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেটিতে বিরোধের বীজ বপন করে দিয়েছে।
এদিকে ছাত্র জোট হলেও ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনগুলোর কোনো অবস্থান নেই। কর্মসূচি নেই। তাদের নিয়ে জোট হলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলও বিষয়টি এখনো কিছুই জানে না। তাদেরকে এক প্রকার বাইরে রেখে জোটের কার্যক্রম করা হচ্ছে।
ঢাবি ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ছাত্র জোট হচ্ছে আমাদের এখানে রাখা হচ্ছে না, বৈঠকে কি হচ্ছে না হচ্ছে আমরা জানি না। ভালো কয়েকটা সংগঠনকেও রাখা হচ্ছে না। এই জোট নিয়ে আমরা সন্দিহান।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান সংবাদকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বড় কোনো প্রতিবাদ গড়ে উঠলে সেটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা। আমাদের উদ্দেশ্য কি সেটা আগে দেখতে হবে। ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে পেরেছে সেটিই বড় বিষয়। জোটের দরজা বন্ধ নয়। ভবিষ্যতে যারাই আমাদের ৯ দফা দাবির সাথে একমত পোষণ করবে, তারাই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে এ জোট গঠিত হয়েছে। তবে এ নতুন জোট নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ডকে।
জোটভুক্ত অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
এদের মধ্যে শুধু ছাত্রদলের দেশের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি আছে। এর বাইরে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রায় সব জেলা পর্যায়ে এবং ৩০০ এর মত উপজেলা পর্যায়ের কমিটি আছে। যদিও চলতি বছরের ২৩ জুলাই সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ তুলে একযোগে পদত্যাগ করেন।
এছাড়া জোটে অংশ নেওয়া বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রায় ৪১টি জেলা পর্যায়ের ও ৭০ এর অধিক উপজেলা পর্যােেয়র কমিটি আছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। এর বাইরে ১২ টি সংগঠনের হাতেগোনা কয়েকটির শুধু নামেমাত্র ৪-৫ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। বেশির ভাগ সংগঠনের নেই কোনো শাখা কমিটি। বাঁকী সংগঠনগুলোর আহবায়ক-সদস্য সচিব ব্যতিত কারো নাম জানা যায়নি। অতীতে তাদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিতেও অংশ নিতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতির একটা বড় ভূমিকা ছিল। সেক্ষেত্রে এ ধরণের ছাত্র জোটের ভূমিকাও ছিল প্রাসঙ্গিক। কিন্তু এ জোটে অনেকগুলো বড় ছাত্র সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিভিন্ন প্রশ্ন স্বত্ত্বেও অতীতে ছাত্রদলের যে সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল সেটি এখন আর নেই। সব মিলিয়ে এ জোট তাদের লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সফল হবে সেটি সময়ই বলে দিবে।
এদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্রসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের ঢাকা কেন্দ্রীক প্রভাব প্রতিপত্তি থাকলেও তাদেরকে জোটে নেওয়া হচ্ছে না । এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলো। যদিও জোটের দরজা কারো জন্য বন্ধ নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
এ বিষয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ইতিহাসের চরম সংকটময় সময় পার করছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ মুহূর্তে একটি কার্যকর ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছিলাম। ছাত্রদল আমাদের তাদের পল্টন অফিসে আমন্ত্রণও করেছিল। আমরা প্রায় ১৬টি ছাত্র সংগঠন স্বৈরাচারবিরোধী জোটজোট গঠনে একমতও হয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম ছাত্রদল একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তারা সেটি করতে পারেনি। এই জোট নিয়ে আমরা একই সাথে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। ছাত্রদল শুরুতেই ছাত্রদের মধ্যে যে ঐক্য গঠন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেটিতে বিরোধের বীজ বপন করে দিয়েছে।
এদিকে ছাত্র জোট হলেও ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনগুলোর কোনো অবস্থান নেই। কর্মসূচি নেই। তাদের নিয়ে জোট হলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলও বিষয়টি এখনো কিছুই জানে না। তাদেরকে এক প্রকার বাইরে রেখে জোটের কার্যক্রম করা হচ্ছে।
ঢাবি ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ছাত্র জোট হচ্ছে আমাদের এখানে রাখা হচ্ছে না, বৈঠকে কি হচ্ছে না হচ্ছে আমরা জানি না। ভালো কয়েকটা সংগঠনকেও রাখা হচ্ছে না। এই জোট নিয়ে আমরা সন্দিহান।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান সংবাদকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বড় কোনো প্রতিবাদ গড়ে উঠলে সেটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা। আমাদের উদ্দেশ্য কি সেটা আগে দেখতে হবে। ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে পেরেছে সেটিই বড় বিষয়। জোটের দরজা বন্ধ নয়। ভবিষ্যতে যারাই আমাদের ৯ দফা দাবির সাথে একমত পোষণ করবে, তারাই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।