alt

রাজনীতি

যেটুকু অর্জন করেছিল, সেটা তারা হারিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সম্প্রতি বিএনপির ‘যেটুক অর্জন’, গত ২৮ অক্টোবর ‘সন্ত্রাস-সহিংসতা’ করে দলটি সেটা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ‘এখন ঘৃণা’ করে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঘণ্টাব্যাপী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন, সংলাপ, নির্বাচনকালীন সরকার, বিদেশিদের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মাঝে কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিল। সরকার তাতে বাধা দেয়নি। কিছু করেনি। শর্ত ছিল অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর করবে না। ... তখন ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে ঘটনা ঘটালো বিশেষ করে পুলিশকে যেভাবে হত্যা করেছে। মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, তাদের পেটালো। এই ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। তারা পুলিশকে তো মেরেছেই। তারপর হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, আমি তো এদের মধ্যে তফাৎ কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে নিজেরাই পালালো। পালিয়ে আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ। যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তখন তাদের কাজটা হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দেখানো যে বাংলাদেশে কিছু হয়নি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগ দিতে ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর বেলজিয়াম সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রাসেলসে ওই সম্মেলনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন, কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেটাই দেবো

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে, একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেয়া উচিত বলে মনে করি। সেই শিক্ষাটাই আমরা দেবো। কারণ এদের জন্য এ দেশ ধ্বংস হোক সেটা সহ্য করা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের (বিএনপি) মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদের সঙ্গে যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের কখনোই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে এরা বিশ্বাস করে। কারণ অস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে এদের জন্ম।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে যেটা আমার ধারণা, এরা তো আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটাই যেন এদের চরিত্র। এখানে আমার বলার কিছু নেই। আমি আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেয়েছি সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় বিএনপি-জামায়াত জোট।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে যখন বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেছি তখন তারা ঢাকায় মানুষের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। মানুষ খুন করেছে। তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর সাংবাদিক। এদের ওপর কিন্তু হামলাটা চালাচ্ছে, যারা করেছে তারা প্রকাশ্যে করেছে। তাদের নাম-ধাম...। গাড়ি পোড়ানো। মঙ্গলবারও লালমনিরহাটে আমাদের যুবলীগের একজনকে পুড়িয়েছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের সম্পদ নষ্ট করা আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এটাই তো তাদের চরিত্র।’

নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে ‘সংশয় আর অনিশ্চয়তা’র বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে।’ গত কিছুদিনে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সময়মতো হবে কি না, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কি না, এসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

প্রধানমন্ত্রী জবাবে আরও বলেন, ‘কে চোখ রাঙালো, আর কে বাঁকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।’

খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব পক্ষ (রাজনৈতিক দল) শর্তহীনভাবে সংলাপে বসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের সিস্টেমে না। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ ফলো করি। সেখানে ওইটিকে বিরোধী দল বলে।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?’

সে বসে ডিনার খাক, ডায়ালগ করুক

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেভাবে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে, এরপর খুনিদের সঙ্গে কিসের বৈঠক? কিসের আলোচনা? যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে, যারা উন্নয়ন কর্মকান্ড ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এটা আমাদের দেশ, স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে। এ কথাটা মনে থাকা উচিত। ওই খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ বাংলাদেশের মানুষও চাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘৃণা করে। বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা সেটা আমরা সুযোগ করে দিয়েছিলাম, সেটা তারা হারিয়েছে।’

যেদিন ট্রাম্প সাহেব-বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব

কোনো বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন? আপনারা বোঝেন না?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা খুন করার পরও বলে, ডায়ালগ (সংলাপ) করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।’

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চুপ কেন

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ আপনারা কোনো সহানুভূতি পেয়েছেন? কোনো বিবৃতি পেয়েছেন? কেন পাননি? তাদের জিজ্ঞাসা করেন এখন তারা চুপ কেন? তারপর মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তারা চুপ কেন? তাদের মানবিকবোধগুলো গেল কোথায়? তাদের কথা, বিবৃতি শুনি না কিসের জন্য, কী কারণে, রহস্যটা কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের যে সংগঠনগুলো যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, বুদ্ধির ভান্ডার খুলে ফেলেন, আজকে সে ভান্ডার বন্ধ কেন? তারা চুপ কেন? তারা কি বুদ্ধিহীন হয়ে গেছেন? সব বুদ্ধি কি চলে গেছে?’

আমার নিউজ সবার পরে, কোথাও কোথাও ৪,৫ নম্বরে

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর যারা যেভাবে চড়াও হলো। বুঝতে পারলাম না কেন হঠাৎ... কারণ সাংবাদিকেরা তো তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শোতে... বরং সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে তাদের এত রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর। সব জায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও ৪ নম্বর ৫ নম্বরেও থাকে। কিন্তু তারাও যথেষ্ট ইয়ে (প্রচার) পাচ্ছিল। তারপরও কেন তাদের রাগটা।’ আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার দেখবে বলে এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার

সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ কারণে নির্বাচনের সময়ে সরকারের আকার ছোট করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আকার ছোট করলে দেখা যায়- অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ওই জন্যই বলেছি, আমাদের যেভাবে আছে ওভাবেই চলমান থাকবে। সরকার রুটিন কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আকার-বিকার যেটা হবে, তখন দেখা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার... অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করেছি, সংসদীয় গণতন্ত্র যেভাবে আছে সেভাবে চলবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন প্রচারণা শুরু হয়। নির্বাচন প্রচারণার সময় কোনো মন্ত্রী কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজ রুটিন ওয়ার্ক যেটা বলে, সেগুলো চলবে। নইলে তো স্থবির হয়ে যাবে, দেশ তো চলবে না।’

নিজে প্রার্থী হওয়ায় গণভবনে বসে আর ভিডিও কনফারেন্স করবেন না বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আলাদা একটা অফিস নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হবে

বিএনপির কার্যালয়ে কথিত মার্কিন নাগরিককে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসছে। তার থেকে ওই নামটা আসছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তাকে ছাড়া হচ্ছে না। তাকে ছাড়া হবেও না। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এ রকম ফ্রড সে করলো কেন? সে যেই হোক আইনের কাছে সবাই সমান।’

রুটি-রুজির কারখানা ধ্বংস করলে চাকরিটা থাকবে?

মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় যখন উদ্যোগ নিয়েছে এমন প্রেক্ষাপটে পোশাক শ্রমিকদের মাঠে নামানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার (মজুরি বৃদ্ধি) পর্যায়ে হঠাৎ তাদের (পোশাক শ্রমিক) মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেয়া...যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর টানা তিন মেয়াদে তিনদফায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে ১৬শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার ৩শ’ টাকা করাসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছিল না তখন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি গার্মেন্ট কর্মীর কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি সরকার বেতন পৌঁছে দিয়েছে। পাশাপাশি মালিকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকরা যদি রেশন নিতে চায়, মালিকদের সেই ব্যবস্থা করে দেয়া আছে। তারা কিন্তু অল্প পয়সায় এদের খাদ্যসামগ্রীও দিয়ে থাকে। এই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি। এরপর তারা যখন দাবি করেছে, আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি করে দিয়েছে, আলোচনা চলছে।’

সেই আলোচনায় একটা কথা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ডিসেম্বর থেকেই তারা এই মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেবে, এ বিষয়ে কত বাড়বে না বাড়বে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’

নতুন উচ্চতায় ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে তিনি ব্রাসেলস সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার সফরের মাধ্যমে আমি আশাবাদী যে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।’

গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সংযোগ, শিক্ষা ও গবেষণা, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনে বিনিয়োগের সুযোগের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ।

সংবাদ সম্মেলন শেষে গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও প্রদর্শিত হয়।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেশকিছু টেলিভিশন এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ এবং সরকার সংশ্লিষ্ট অনেকের ফেইসবুকেও (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সংবাদ সম্মেলনের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করা হয়।

৫ দিন জনসংযোগ করবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি

ছবি

তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল

ছবি

চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই : জামায়াতের আমির

ছবি

আর একমুহূর্ত দেরি না করে নির্বাচন দিন: সিপিবি

চিন্ময় কৃষ্ণদাশের গ্রেফতারের পর রংপুরে তান্ডবের ঘটনা,মামলার বাদী জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব, বিএনপির নেতারাই বিব্রত

ছবি

আমরা বিদেশি বন্ধু চাই, প্রভু চাই না: জামায়াত আমির

ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব চুক্তি রিভিউ করা হবে : মির্জা ফখরুল

ছবি

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির ঢাকা সমাবেশ

ছবি

প্রতিদিন জিয়াউর রহমানের নাম নিলে বেহেশত নিশ্চিত : বিএনপি নেতা কামরুল হুদা

ছবি

ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

ছবি

জাতীয় পার্টির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

ছবি

ছাত্রশিবির জুলাই অভ্যুত্থানে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছে: সারজিস আলম

ছবি

আ.লীগ স্বাধীনতার ফসল ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল : জামায়াত আমির

ছবি

হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনুর ফের ৪ দিনের রিমান্ড

ছবি

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার দাবি জামায়াত আমির শফিকুরের

ছবি

সংবিধান কবর দেওয়ার কথা বললে আমাদের কষ্ট লাগে: মির্জা আব্বাস

ছবি

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ঝর্ণা রায়ের মৃত্যু

ছবি

জামিন না পেয়ে আদালতে জয় বাংলা স্লোগান দিলেন সাবেক মেয়র

ছবি

মানুষের ধারণা, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্ব করছে সরকার: ফখরুল

ছবি

অর্থ পাচারের ফাইলপত্র নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী

ছবি

ইসলামি দলগুলোর মাথার ওপরে কেউ যেন কাঁঠাল ভেঙে খেতে না পারে : জামায়াতে আমির

বিএনপি সবসময়ই প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে : মির্জা ফখরুল

সচিবালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে তদন্ত করতে হবে-জুনায়েদ সাকি

ছবি

জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক শক্তি: সারজিস

ছবি

নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে

ছবি

জানুয়ারির প্রথমার্ধে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

ছবি

নির্বাচন অতিসত্বর হওয়া দরকার : আমীর খসরু

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

ছবি

গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিএনপিতে নেওয়া হবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

১৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু

ছবি

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে জবি ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি

ছবি

প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামতে হবে : মির্জা ফখরুল

ছবি

রংপুরে জিএম কাদের, রাজনীতিকে দুভাগ করা হয়েছে একটা ভাগ দেশ প্রেমিক আর একটা ভাগ দেশ প্রেমিক নয়

ছবি

হাসিনার অপকর্মের দায় ভারত নিজেই নিয়েছে: রিজভী

ছবি

সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

tab

রাজনীতি

যেটুকু অর্জন করেছিল, সেটা তারা হারিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সম্প্রতি বিএনপির ‘যেটুক অর্জন’, গত ২৮ অক্টোবর ‘সন্ত্রাস-সহিংসতা’ করে দলটি সেটা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ‘এখন ঘৃণা’ করে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঘণ্টাব্যাপী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন, সংলাপ, নির্বাচনকালীন সরকার, বিদেশিদের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মাঝে কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিল। সরকার তাতে বাধা দেয়নি। কিছু করেনি। শর্ত ছিল অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর করবে না। ... তখন ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে ঘটনা ঘটালো বিশেষ করে পুলিশকে যেভাবে হত্যা করেছে। মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, তাদের পেটালো। এই ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। তারা পুলিশকে তো মেরেছেই। তারপর হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, আমি তো এদের মধ্যে তফাৎ কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে নিজেরাই পালালো। পালিয়ে আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ। যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তখন তাদের কাজটা হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দেখানো যে বাংলাদেশে কিছু হয়নি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগ দিতে ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর বেলজিয়াম সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রাসেলসে ওই সম্মেলনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন, কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেটাই দেবো

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে, একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেয়া উচিত বলে মনে করি। সেই শিক্ষাটাই আমরা দেবো। কারণ এদের জন্য এ দেশ ধ্বংস হোক সেটা সহ্য করা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের (বিএনপি) মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদের সঙ্গে যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের কখনোই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে এরা বিশ্বাস করে। কারণ অস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে এদের জন্ম।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে যেটা আমার ধারণা, এরা তো আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটাই যেন এদের চরিত্র। এখানে আমার বলার কিছু নেই। আমি আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেয়েছি সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় বিএনপি-জামায়াত জোট।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে যখন বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেছি তখন তারা ঢাকায় মানুষের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। মানুষ খুন করেছে। তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর সাংবাদিক। এদের ওপর কিন্তু হামলাটা চালাচ্ছে, যারা করেছে তারা প্রকাশ্যে করেছে। তাদের নাম-ধাম...। গাড়ি পোড়ানো। মঙ্গলবারও লালমনিরহাটে আমাদের যুবলীগের একজনকে পুড়িয়েছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের সম্পদ নষ্ট করা আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এটাই তো তাদের চরিত্র।’

নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে ‘সংশয় আর অনিশ্চয়তা’র বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে।’ গত কিছুদিনে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সময়মতো হবে কি না, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কি না, এসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

প্রধানমন্ত্রী জবাবে আরও বলেন, ‘কে চোখ রাঙালো, আর কে বাঁকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।’

খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব পক্ষ (রাজনৈতিক দল) শর্তহীনভাবে সংলাপে বসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের সিস্টেমে না। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ ফলো করি। সেখানে ওইটিকে বিরোধী দল বলে।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?’

সে বসে ডিনার খাক, ডায়ালগ করুক

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেভাবে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে, এরপর খুনিদের সঙ্গে কিসের বৈঠক? কিসের আলোচনা? যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে, যারা উন্নয়ন কর্মকান্ড ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এটা আমাদের দেশ, স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে। এ কথাটা মনে থাকা উচিত। ওই খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ বাংলাদেশের মানুষও চাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘৃণা করে। বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা সেটা আমরা সুযোগ করে দিয়েছিলাম, সেটা তারা হারিয়েছে।’

যেদিন ট্রাম্প সাহেব-বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব

কোনো বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন? আপনারা বোঝেন না?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা খুন করার পরও বলে, ডায়ালগ (সংলাপ) করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।’

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চুপ কেন

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ আপনারা কোনো সহানুভূতি পেয়েছেন? কোনো বিবৃতি পেয়েছেন? কেন পাননি? তাদের জিজ্ঞাসা করেন এখন তারা চুপ কেন? তারপর মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তারা চুপ কেন? তাদের মানবিকবোধগুলো গেল কোথায়? তাদের কথা, বিবৃতি শুনি না কিসের জন্য, কী কারণে, রহস্যটা কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের যে সংগঠনগুলো যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, বুদ্ধির ভান্ডার খুলে ফেলেন, আজকে সে ভান্ডার বন্ধ কেন? তারা চুপ কেন? তারা কি বুদ্ধিহীন হয়ে গেছেন? সব বুদ্ধি কি চলে গেছে?’

আমার নিউজ সবার পরে, কোথাও কোথাও ৪,৫ নম্বরে

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর যারা যেভাবে চড়াও হলো। বুঝতে পারলাম না কেন হঠাৎ... কারণ সাংবাদিকেরা তো তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শোতে... বরং সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে তাদের এত রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর। সব জায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও ৪ নম্বর ৫ নম্বরেও থাকে। কিন্তু তারাও যথেষ্ট ইয়ে (প্রচার) পাচ্ছিল। তারপরও কেন তাদের রাগটা।’ আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার দেখবে বলে এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার

সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ কারণে নির্বাচনের সময়ে সরকারের আকার ছোট করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আকার ছোট করলে দেখা যায়- অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ওই জন্যই বলেছি, আমাদের যেভাবে আছে ওভাবেই চলমান থাকবে। সরকার রুটিন কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আকার-বিকার যেটা হবে, তখন দেখা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার... অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করেছি, সংসদীয় গণতন্ত্র যেভাবে আছে সেভাবে চলবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন প্রচারণা শুরু হয়। নির্বাচন প্রচারণার সময় কোনো মন্ত্রী কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজ রুটিন ওয়ার্ক যেটা বলে, সেগুলো চলবে। নইলে তো স্থবির হয়ে যাবে, দেশ তো চলবে না।’

নিজে প্রার্থী হওয়ায় গণভবনে বসে আর ভিডিও কনফারেন্স করবেন না বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আলাদা একটা অফিস নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হবে

বিএনপির কার্যালয়ে কথিত মার্কিন নাগরিককে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসছে। তার থেকে ওই নামটা আসছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তাকে ছাড়া হচ্ছে না। তাকে ছাড়া হবেও না। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এ রকম ফ্রড সে করলো কেন? সে যেই হোক আইনের কাছে সবাই সমান।’

রুটি-রুজির কারখানা ধ্বংস করলে চাকরিটা থাকবে?

মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় যখন উদ্যোগ নিয়েছে এমন প্রেক্ষাপটে পোশাক শ্রমিকদের মাঠে নামানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার (মজুরি বৃদ্ধি) পর্যায়ে হঠাৎ তাদের (পোশাক শ্রমিক) মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেয়া...যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর টানা তিন মেয়াদে তিনদফায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে ১৬শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার ৩শ’ টাকা করাসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছিল না তখন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি গার্মেন্ট কর্মীর কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি সরকার বেতন পৌঁছে দিয়েছে। পাশাপাশি মালিকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকরা যদি রেশন নিতে চায়, মালিকদের সেই ব্যবস্থা করে দেয়া আছে। তারা কিন্তু অল্প পয়সায় এদের খাদ্যসামগ্রীও দিয়ে থাকে। এই সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি। এরপর তারা যখন দাবি করেছে, আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি করে দিয়েছে, আলোচনা চলছে।’

সেই আলোচনায় একটা কথা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ডিসেম্বর থেকেই তারা এই মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেবে, এ বিষয়ে কত বাড়বে না বাড়বে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’

নতুন উচ্চতায় ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে তিনি ব্রাসেলস সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার সফরের মাধ্যমে আমি আশাবাদী যে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।’

গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সংযোগ, শিক্ষা ও গবেষণা, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনে বিনিয়োগের সুযোগের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ।

সংবাদ সম্মেলন শেষে গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও প্রদর্শিত হয়।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেশকিছু টেলিভিশন এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ এবং সরকার সংশ্লিষ্ট অনেকের ফেইসবুকেও (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সংবাদ সম্মেলনের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করা হয়।

back to top