আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে দুটি চিঠি এসেছে।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে, দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
অন্যদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের দলের প্রার্থীরা আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোটের’ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তরিখ দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে তাতে অংশগ্রহণকারী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে লড়তে চাইলে শনিবারের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। এই সময় শেষ হওয়ার শেষ দিনে চিঠি দুটি পৌঁছে নির্বাচন কমিশনে।
মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। তার নমুনা স্বাক্ষরও পাঠানো হয় চিঠিতে।
চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভোটকে সামনে রেখে এ সংক্রান্ত ফর্মালিটিজ জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।"
অন্যদিকে রওশনের চিঠিতে বলা হয়, "এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।"
তবে এটা কেবল ‘নির্বাচনী জোট’ হবে জানিয়ে বলা হয়, “নির্বাচন অন্তে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন।”
চিঠিটি নিয়ে আসা কাজী মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, "জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি পৌছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবে না দেবে সেটা বিষয় নয়।"
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, বিকল্প ধারা, এলডিপি ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গঠন হয় মহাজোট।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অংশগ্রহণে দেশ যখন এরতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। আটকে যায় ভোট। প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের আগে এলডিপি ছেড়ে গেলেও থেকে যায় মহাজোট।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের মধ্যে জাতীয় পার্টির ভোটে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ঘটে নানা নাকটীয়তা।
দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে আগে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোট ভেঙে দিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন।
তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের নেতারা ভোটে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে এরশাদ ‘অসুস্থ’ জানিয়ে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব।
সাবেক রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সে সময় জমা পড়া তিনটি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনেরটি প্রত্যাহার হলেও তার নাম থেকে যায় লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনে। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে তিনি জিতে যান। ব্যালটে নাম থাকলেও লালমনিরহাট-৩ আসনে প্রচারে অংশ নেননি দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
ভোট শেষে এরশাদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বললেও তার আগেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ। পরে শেষ দিনে শপথ নেন এরশাদ। তাকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করে সরকার।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটে এলে জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরিক হয়ে ভোটে যায়।
নির্বাচনের পর মহাজোট আবার ভেঙে দেওয়া হয়। সংসদে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। টানা দ্বিতীয়বার বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক হয়ে যেসব দল ভোটে অংশ নিয়েছিল, সেগুলো এবারও ক্ষমতাসীন দলের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছ।
এর আগে আওমী লীগ, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি দলকেই প্রার্থী মনোনয়নকারীর নাম জানাতে চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে জবে।
প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাম, পদবী, সত্যায়িত নমুনা স্বাক্ষর তফসিল ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠাতে হবে। আর এর অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে দুটি চিঠি এসেছে।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে, দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
অন্যদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের দলের প্রার্থীরা আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোটের’ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তরিখ দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে তাতে অংশগ্রহণকারী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে লড়তে চাইলে শনিবারের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। এই সময় শেষ হওয়ার শেষ দিনে চিঠি দুটি পৌঁছে নির্বাচন কমিশনে।
মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। তার নমুনা স্বাক্ষরও পাঠানো হয় চিঠিতে।
চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভোটকে সামনে রেখে এ সংক্রান্ত ফর্মালিটিজ জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।"
অন্যদিকে রওশনের চিঠিতে বলা হয়, "এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।"
তবে এটা কেবল ‘নির্বাচনী জোট’ হবে জানিয়ে বলা হয়, “নির্বাচন অন্তে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন।”
চিঠিটি নিয়ে আসা কাজী মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, "জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি পৌছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবে না দেবে সেটা বিষয় নয়।"
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, বিকল্প ধারা, এলডিপি ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গঠন হয় মহাজোট।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অংশগ্রহণে দেশ যখন এরতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। আটকে যায় ভোট। প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের আগে এলডিপি ছেড়ে গেলেও থেকে যায় মহাজোট।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের মধ্যে জাতীয় পার্টির ভোটে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ঘটে নানা নাকটীয়তা।
দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে আগে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোট ভেঙে দিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন।
তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের নেতারা ভোটে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে এরশাদ ‘অসুস্থ’ জানিয়ে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব।
সাবেক রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সে সময় জমা পড়া তিনটি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনেরটি প্রত্যাহার হলেও তার নাম থেকে যায় লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনে। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে তিনি জিতে যান। ব্যালটে নাম থাকলেও লালমনিরহাট-৩ আসনে প্রচারে অংশ নেননি দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
ভোট শেষে এরশাদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বললেও তার আগেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ। পরে শেষ দিনে শপথ নেন এরশাদ। তাকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করে সরকার।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটে এলে জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরিক হয়ে ভোটে যায়।
নির্বাচনের পর মহাজোট আবার ভেঙে দেওয়া হয়। সংসদে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। টানা দ্বিতীয়বার বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক হয়ে যেসব দল ভোটে অংশ নিয়েছিল, সেগুলো এবারও ক্ষমতাসীন দলের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছ।
এর আগে আওমী লীগ, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি দলকেই প্রার্থী মনোনয়নকারীর নাম জানাতে চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে জবে।
প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাম, পদবী, সত্যায়িত নমুনা স্বাক্ষর তফসিল ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠাতে হবে। আর এর অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।