জাতীয় নির্বাচন দোরগোড়ায়। মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় আছে ৯ দিন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জোটগত ভোটের কথা জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দল। তবে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়নি।
মাসখানেক আগে জোটের বৈঠকে আসন বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা তুলেছিল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ শরীক কয়েকটি দল। আগেভাগে ফয়সালার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি।
ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘এখানে বিএনপির অংশ নেয়া, না নেয়ার একটা বিষয় আছে। আর জাতীয় পার্টি (জাপা) তো আছেই। সেটা তো বুঝতে হবে। তারা (জাপা) যদি একসঙ্গে আসে.... না হলে আমরা যারা আছি, ১৪ দলের, সবাই মিলেমিশে আগের মতোই নির্বাচন করব। জাতীয় পার্টিকেও আগের মতো করে দেয়া হবে।’
জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে না, এটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৪ দল। তাই আগের চেয়ে বেশি আসন দাবি করবে সবাই। তবে কে কতটি আসন চায়, সেটা কয়েকটি স্পষ্ট করলেও কয়েকটি দল জানিয়েছে, তারা এখনই সেটা প্রকাশ করতে চায় না।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রোববার (১৯ নভেম্বর) সংবাদকে বলেন, ‘এটা তো নেগোসিয়েশনের (আলাপ-আলোচনা) বিষয়। এখনই বলা যাবে না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী প্রতীক ‘হাতুড়ি’
দলের সভাপতি মেনন একাদশ সংসদে ভোট করেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচিতও হন এই রাজনীতিক। ওই নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
গতবারের চেয়ে এবার (দ্বাদশ) বেশি আসন চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘তা তো অবশ্যই।’
আপনারা কী সব আসনেই নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, তা নয়। যেগুলো জোটের পক্ষ থেকে পাবো, সেগুলো নৌকা; বাকীগুলো আমাদের প্রতীকে (হাতুড়ি) হবে।’
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী রোববার রাতে সংবাদকে বলেন, ‘জোটনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে গত ১৯ জুলাই আমরা বৈঠক করেছিলাম। সেখানে আসন বণ্টনের বিষয়ে কথা হয়েছে।’
জোটের নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দ নিজবুল বশর বলেন, ‘আমি অনেক আগেই বলেছিলাম বিএনপি এই নির্বাচনে আসবে না। জামায়াতও নিবন্ধন ফিরে পাবে না। আজ সুপ্রীম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পায়নি।’
চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য নজিবুর বশর বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরে নিয়েই আমরা নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। তাই এবার আমরা বেশি আসন চাইব। আমাদের দাবি ১৫টি আসন।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আপনাদের দুটি আসন দেয়া হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ আপনাদের ১৫টি আসনে ছাড় দেবে বলে মনে করেন, ‘সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি ৭-৮টা আসন আমরা পাবো। বিএনপি না এলে এটা তো আমদের দেয়াই উচিৎ।’
আসন বণ্টনের বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই হবে। এরপর তো একটা সময় আছে প্রত্যাহরের আগ পর্যন্ত। যথা সময়ে সব ঠিকমতই হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ্।’
একাদশ সংসদে ১৪ দলের শরীকদের ছাড়া হয় ১৩টি আসন
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৩টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জেপি মঞ্জু ১টি ও তরিকত ফেডারেশন ২টি আসনে জোটগত মনোনয়ন পায়।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনে, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার ফেনী-১ আসনে ও রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়।
জাসদের অন্য অংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়াকে নড়াইল-১ (কালিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। একদিন আগে নবম সংসদের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বি এম কবিরুল হক মুক্তিকে মনোনয়ন দিয়েও পরে তা বাতিল করে আওয়ামী লীগ।
আম্বিয়ার দল থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান মইনুদ্দিন খান বাদল। জাসদের এই নেতা দশম সংসদে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা রাজশাহী-২ আসনে, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ সাতক্ষীরা-১ আসনে, টিপু সুলতান বরিশাল-৩ আসনে, ইউনুস আলী ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মনোনয়ন পান।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ এবং তরিকত ফেডারেশনের সদস্য আনোয়ার হোসেন খানকে লক্ষ্মীপুর-১ আসন দেয়া হয়।
একটি আসন পায় জাতীয় পার্টি (জেপি); পিরোজপুর-২ আসনে লড়তে দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে এই আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
জোট শরীক গণতন্ত্রী পার্টিকে একাদশ সংসদে কোনো আসন দেয়নি আওয়ামী লীগ। নিবন্ধিত এই দলটি (গণতন্ত্রী পার্টি) ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। জানতে চাইলে পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ সেলিম রোববার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত ভোট করবো। এবার বেশ কয়েকটি আসন চাওয়া হবে। যে কয়টা পাওয়া যাবে, সেগুলোতে নৌকা প্রতীকে অন্যগুলোতে দলীয় (কবুতর) প্রতীকে ভোট করবো আমরা।’
জাপার অবস্থান বুঝে ব্যবস্থা
একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে ভোট করেছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে দর কষাকষির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের শরিককে ২৯টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত কী করে তা দেখার অপেক্ষায় আছে আওয়ামী লীগ। জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিগত সময়ের মতো এবারও আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন। তবে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখনই সিদ্ধান্ত জানাতে চাচ্ছেন না।
জাপা চেয়ারম্যানের অনুসারিদের একজন সংবাদকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে প্রকৃতপক্ষে যতটুকু মূল্যায়ন করা উচিৎ ছিল, তা করেনি আওয়ামী লীগ। তারা নিজেদের স্বার্থে জাপাকে ব্যবহার করেছে। আমাদের চেয়ারম্যান আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হতে চান না।’
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, জি এম কাদের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলাবে। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হয়, সেটা বুঝেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার মতে, মনোনয়ন জমার শেষ দিকে আসন বণ্টণ চূড়ান্ত করা ক্ষমতাসীনদের জন্য সুবিধাজনক হবে।
মাসখানেক আগেই ‘ফয়সালা’ চেয়েছিল শরিকরা
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবনে জোটের এক সভা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওই সময়ই জোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার কথা বলেছিলেন জোটের শরিক নেতারা। তখন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর, শরিকরা কে কয়টি আসন পাবে, তা চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র ওই সময় সংবাদকে জানায়, বৈঠকের শুরুতেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের কয়টি আসন দেয়া হবে, তা ফায়সালা করার প্রস্তাব দেন।
বৈঠকে মেনন বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, এটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসনের ফায়সালা এখনই করা উচিত। কারণ মাঠে প্রস্তুতির বিষয় আছে।’
মেননের বক্তব্যে সমর্থন দেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘শরিকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থাকলে সমস্যা হয়। ফলে এগুলো আগেই সমাধান করতে হবে।’
আসন বণ্টনের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করার পক্ষে আরও মত আসে।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জোটের মঙ্গলের জন্যই এই কাজটি দ্রুত সেরে ফেলা দরকার।
এ সময় জোটের সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) আগেও বলেছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আসন ভাগাভাগি করা হবে। ফলে এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেকোনো সময় ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তখন বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।’
এরপর নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘দরকার হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোটের শরিকদের একটা বৈঠক হতে পারে। সেখানে আসন বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা করা হোক।’
বিকল্প ধারা ও অন্যান্য
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্প ধারা বাংলাদেশকে তিনটি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ থেকে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং লক্ষীপুর-৪ আসনে মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তবে মৌলভীবাজার-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মনসুর আহমদের কাছে হেরে যান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এম শাহীন।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতীক ‘কুলা’। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটি নৌকা প্রতীকে ভোট করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।
বিকল্পধারা ছাড়াও কয়েকটি দল এবং ইসলামপন্থী কিছু দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে বলে আলোচনা আছে। নতুন দল তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও আছে এই তালিকায়।
বিএনপি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বেশ কয়েকজন এমন আলোচনাও চলছে। ফলে এবার সমঝোতার তালিকা বড় হবে।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সংবাদকে বলেন, ‘শরিকদের কতগুলো আসন ছেড়ে দেয়া হবে এটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের নেত্রী। পরিস্থিতি বুঝে... গতবার তো সব মিলে পঁয়তাল্লিশটির মতো আসনে সমঝোতা হয়েছিল। এবার বিএনপি এলে এক বিষয়... না এলে তো এই সংখ্যা মোটামুটি বড় হবে বলে মনে করি।’
বিএনপি ভোটে না এলে শরিকদের কী একশ’র মতো আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এতোটা না। তবে একেবারে কমও না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘আগে সবার মনোনয়ন পত্র জমা হোক। এরপর শরিকদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হবে।’ তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহার তো ১৭ ডিসেম্বর। শেষ সময়ে এসে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে কিছু আসনে সমঝোতা করে শরিকদের চাহিদা মতো অন্য আসনে নিজ নিজ প্রতীকে উন্মুক্ত ভোট করার পরামর্শ দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নবম ও দশম সংসদে শরীকরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে জাসদ ২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫টিতে জয় পেয়েছিল জাসদ। এর মধ্যে ৩টিতে জিতেছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ওয়ার্কার্স পার্টি ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৬টিতে জয় পেয়েছিল। এর মধ্যে ২টিতে তারা জয় পায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে ২৮ আসনের মধ্যে ২টিতে জয় পেয়েছিল। তরীকত ফেডারেশন ৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২টিতে জয় পেয়েছিল। অন্য শরিকেরা কোনো আসন পায়নি। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি ও শরীকদের নির্বাচন বর্জনে দশম সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের জায়গা পায়।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলকে নিয়ে মহাজোট গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে জাসদ ৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ৪টিতে নৌকা প্রতীকে ভোট করে ৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
নবম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ছিল ৫টি আসনে। এর মধ্যে ২টিতে নিজেদের প্রতীক হাতুড়ি এবং ৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তরীকত ফেডারেশন ও জেপি ১টি করে আসন পায়।
কেন্দ্রীয় ১৪ দল
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বর্তমান শরিক দলগুলো হলো- ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল (এমএল), তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাপ (মোজাফফর), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ, রেজাউর), জাতীয় পার্টি (জেপি, মঞ্জু), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং গণ-আজাদী লীগ।
এগুলোর মধ্যে ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ এবং তরিকত ফেডারেশ ভাঙনের শিকার হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ার কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। ওইদিন থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচরণার সময় পাবেন।
রোববার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
জাতীয় নির্বাচন দোরগোড়ায়। মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় আছে ৯ দিন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জোটগত ভোটের কথা জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দল। তবে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়নি।
মাসখানেক আগে জোটের বৈঠকে আসন বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা তুলেছিল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ শরীক কয়েকটি দল। আগেভাগে ফয়সালার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি।
ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘এখানে বিএনপির অংশ নেয়া, না নেয়ার একটা বিষয় আছে। আর জাতীয় পার্টি (জাপা) তো আছেই। সেটা তো বুঝতে হবে। তারা (জাপা) যদি একসঙ্গে আসে.... না হলে আমরা যারা আছি, ১৪ দলের, সবাই মিলেমিশে আগের মতোই নির্বাচন করব। জাতীয় পার্টিকেও আগের মতো করে দেয়া হবে।’
জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে না, এটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৪ দল। তাই আগের চেয়ে বেশি আসন দাবি করবে সবাই। তবে কে কতটি আসন চায়, সেটা কয়েকটি স্পষ্ট করলেও কয়েকটি দল জানিয়েছে, তারা এখনই সেটা প্রকাশ করতে চায় না।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রোববার (১৯ নভেম্বর) সংবাদকে বলেন, ‘এটা তো নেগোসিয়েশনের (আলাপ-আলোচনা) বিষয়। এখনই বলা যাবে না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী প্রতীক ‘হাতুড়ি’
দলের সভাপতি মেনন একাদশ সংসদে ভোট করেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচিতও হন এই রাজনীতিক। ওই নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
গতবারের চেয়ে এবার (দ্বাদশ) বেশি আসন চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘তা তো অবশ্যই।’
আপনারা কী সব আসনেই নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, তা নয়। যেগুলো জোটের পক্ষ থেকে পাবো, সেগুলো নৌকা; বাকীগুলো আমাদের প্রতীকে (হাতুড়ি) হবে।’
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী রোববার রাতে সংবাদকে বলেন, ‘জোটনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে গত ১৯ জুলাই আমরা বৈঠক করেছিলাম। সেখানে আসন বণ্টনের বিষয়ে কথা হয়েছে।’
জোটের নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দ নিজবুল বশর বলেন, ‘আমি অনেক আগেই বলেছিলাম বিএনপি এই নির্বাচনে আসবে না। জামায়াতও নিবন্ধন ফিরে পাবে না। আজ সুপ্রীম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পায়নি।’
চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য নজিবুর বশর বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরে নিয়েই আমরা নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। তাই এবার আমরা বেশি আসন চাইব। আমাদের দাবি ১৫টি আসন।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আপনাদের দুটি আসন দেয়া হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ আপনাদের ১৫টি আসনে ছাড় দেবে বলে মনে করেন, ‘সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি ৭-৮টা আসন আমরা পাবো। বিএনপি না এলে এটা তো আমদের দেয়াই উচিৎ।’
আসন বণ্টনের বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই হবে। এরপর তো একটা সময় আছে প্রত্যাহরের আগ পর্যন্ত। যথা সময়ে সব ঠিকমতই হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ্।’
একাদশ সংসদে ১৪ দলের শরীকদের ছাড়া হয় ১৩টি আসন
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৩টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জেপি মঞ্জু ১টি ও তরিকত ফেডারেশন ২টি আসনে জোটগত মনোনয়ন পায়।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসনে, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার ফেনী-১ আসনে ও রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়।
জাসদের অন্য অংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়াকে নড়াইল-১ (কালিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। একদিন আগে নবম সংসদের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বি এম কবিরুল হক মুক্তিকে মনোনয়ন দিয়েও পরে তা বাতিল করে আওয়ামী লীগ।
আম্বিয়ার দল থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান মইনুদ্দিন খান বাদল। জাসদের এই নেতা দশম সংসদে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা রাজশাহী-২ আসনে, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ সাতক্ষীরা-১ আসনে, টিপু সুলতান বরিশাল-৩ আসনে, ইউনুস আলী ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মনোনয়ন পান।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ এবং তরিকত ফেডারেশনের সদস্য আনোয়ার হোসেন খানকে লক্ষ্মীপুর-১ আসন দেয়া হয়।
একটি আসন পায় জাতীয় পার্টি (জেপি); পিরোজপুর-২ আসনে লড়তে দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে এই আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
জোট শরীক গণতন্ত্রী পার্টিকে একাদশ সংসদে কোনো আসন দেয়নি আওয়ামী লীগ। নিবন্ধিত এই দলটি (গণতন্ত্রী পার্টি) ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। জানতে চাইলে পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ সেলিম রোববার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত ভোট করবো। এবার বেশ কয়েকটি আসন চাওয়া হবে। যে কয়টা পাওয়া যাবে, সেগুলোতে নৌকা প্রতীকে অন্যগুলোতে দলীয় (কবুতর) প্রতীকে ভোট করবো আমরা।’
জাপার অবস্থান বুঝে ব্যবস্থা
একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে ভোট করেছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে দর কষাকষির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের শরিককে ২৯টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত কী করে তা দেখার অপেক্ষায় আছে আওয়ামী লীগ। জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিগত সময়ের মতো এবারও আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন। তবে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখনই সিদ্ধান্ত জানাতে চাচ্ছেন না।
জাপা চেয়ারম্যানের অনুসারিদের একজন সংবাদকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে প্রকৃতপক্ষে যতটুকু মূল্যায়ন করা উচিৎ ছিল, তা করেনি আওয়ামী লীগ। তারা নিজেদের স্বার্থে জাপাকে ব্যবহার করেছে। আমাদের চেয়ারম্যান আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হতে চান না।’
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, জি এম কাদের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলাবে। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হয়, সেটা বুঝেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার মতে, মনোনয়ন জমার শেষ দিকে আসন বণ্টণ চূড়ান্ত করা ক্ষমতাসীনদের জন্য সুবিধাজনক হবে।
মাসখানেক আগেই ‘ফয়সালা’ চেয়েছিল শরিকরা
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবনে জোটের এক সভা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওই সময়ই জোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার কথা বলেছিলেন জোটের শরিক নেতারা। তখন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর, শরিকরা কে কয়টি আসন পাবে, তা চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র ওই সময় সংবাদকে জানায়, বৈঠকের শুরুতেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের কয়টি আসন দেয়া হবে, তা ফায়সালা করার প্রস্তাব দেন।
বৈঠকে মেনন বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, এটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসনের ফায়সালা এখনই করা উচিত। কারণ মাঠে প্রস্তুতির বিষয় আছে।’
মেননের বক্তব্যে সমর্থন দেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘শরিকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থাকলে সমস্যা হয়। ফলে এগুলো আগেই সমাধান করতে হবে।’
আসন বণ্টনের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করার পক্ষে আরও মত আসে।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জোটের মঙ্গলের জন্যই এই কাজটি দ্রুত সেরে ফেলা দরকার।
এ সময় জোটের সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) আগেও বলেছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আসন ভাগাভাগি করা হবে। ফলে এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেকোনো সময় ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তখন বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।’
এরপর নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘দরকার হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোটের শরিকদের একটা বৈঠক হতে পারে। সেখানে আসন বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা করা হোক।’
বিকল্প ধারা ও অন্যান্য
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্প ধারা বাংলাদেশকে তিনটি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ থেকে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং লক্ষীপুর-৪ আসনে মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তবে মৌলভীবাজার-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মনসুর আহমদের কাছে হেরে যান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এম শাহীন।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতীক ‘কুলা’। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটি নৌকা প্রতীকে ভোট করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।
বিকল্পধারা ছাড়াও কয়েকটি দল এবং ইসলামপন্থী কিছু দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে বলে আলোচনা আছে। নতুন দল তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও আছে এই তালিকায়।
বিএনপি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বেশ কয়েকজন এমন আলোচনাও চলছে। ফলে এবার সমঝোতার তালিকা বড় হবে।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সংবাদকে বলেন, ‘শরিকদের কতগুলো আসন ছেড়ে দেয়া হবে এটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের নেত্রী। পরিস্থিতি বুঝে... গতবার তো সব মিলে পঁয়তাল্লিশটির মতো আসনে সমঝোতা হয়েছিল। এবার বিএনপি এলে এক বিষয়... না এলে তো এই সংখ্যা মোটামুটি বড় হবে বলে মনে করি।’
বিএনপি ভোটে না এলে শরিকদের কী একশ’র মতো আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এতোটা না। তবে একেবারে কমও না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘আগে সবার মনোনয়ন পত্র জমা হোক। এরপর শরিকদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হবে।’ তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহার তো ১৭ ডিসেম্বর। শেষ সময়ে এসে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে কিছু আসনে সমঝোতা করে শরিকদের চাহিদা মতো অন্য আসনে নিজ নিজ প্রতীকে উন্মুক্ত ভোট করার পরামর্শ দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নবম ও দশম সংসদে শরীকরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে জাসদ ২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫টিতে জয় পেয়েছিল জাসদ। এর মধ্যে ৩টিতে জিতেছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ওয়ার্কার্স পার্টি ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৬টিতে জয় পেয়েছিল। এর মধ্যে ২টিতে তারা জয় পায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে ২৮ আসনের মধ্যে ২টিতে জয় পেয়েছিল। তরীকত ফেডারেশন ৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২টিতে জয় পেয়েছিল। অন্য শরিকেরা কোনো আসন পায়নি। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি ও শরীকদের নির্বাচন বর্জনে দশম সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের জায়গা পায়।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলকে নিয়ে মহাজোট গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে জাসদ ৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ৪টিতে নৌকা প্রতীকে ভোট করে ৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
নবম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ছিল ৫টি আসনে। এর মধ্যে ২টিতে নিজেদের প্রতীক হাতুড়ি এবং ৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তরীকত ফেডারেশন ও জেপি ১টি করে আসন পায়।
কেন্দ্রীয় ১৪ দল
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বর্তমান শরিক দলগুলো হলো- ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল (এমএল), তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাপ (মোজাফফর), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ, রেজাউর), জাতীয় পার্টি (জেপি, মঞ্জু), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং গণ-আজাদী লীগ।
এগুলোর মধ্যে ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ এবং তরিকত ফেডারেশ ভাঙনের শিকার হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ার কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। ওইদিন থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচরণার সময় পাবেন।