নতুন নতুন নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির বর্জনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ‘ডামি প্রার্থী’ দিয়ে কৌশলের শুরু। এসেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব। তবে বিভ্রান্তি ছিল তৃণমূলে। নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামা যাবে কিনা। সেই বিভ্রান্তিও দূর করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তৃণমূল কর্মীদের জন্য এসেছে নতুন বার্তা। বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ভোটের মাঠে নামা একান্তই একজন কর্মীর ব্যক্তিগত বিষয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। যাচাই শেষে বৈধ প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল-নিষ্পত্তি ও প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। ‘একতরফা নির্বাচন’ বন্ধ করতে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দুই দিন এবং মঙ্গলবার বিরতি রেখে টানা অবরোধ-হরতাল দিয়ে যাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘কৌশলী’ আওয়ামী লীগ বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, নৌকার বিরুদ্ধে দলের কেউ ভোটে গেলে, তাকে বসিয়ে দিতে কঠোর ভূমিকা নিতো কেন্দ্র। এবার সেটি নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
ফলে সংসদীয় তিনশ’ আসনের দুই-তৃতীয়াংশে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রার্থী হয়েছেন।
এর মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বেশি। তাদের কর্মী-সমর্থকও অনেক। এসব আসেন বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) অনেকেই অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। দলে পদপদবী এবং সরকারি নানা ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন হয়েছেন।
অনেক এমপি আবার স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের ঘটিয়েছেন। দলে বিভাজন ঘটিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। স্থানীয়পর্যায়ে গঠন করেছেন পকেট কমিটি। তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীদের পদপদবী থেকে বঞ্চিত করে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন।
এসব আসনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং সুষ্ঠু ভোট হলে পরিচ্ছন্ন ইমেজের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন- বলছে স্থানীয় সূত্র।
নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে এই আসনগুলো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।
স্থানীয় সরকারের ৬১ জন জনপ্রতিনিধি এবার পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে এসেছেন। এদের মধ্যে ৫২ জন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চারজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য এবং চারজন পৌর মেয়র। এদের অল্প কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত। তবে মনোনয়নবঞ্চিত অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এদের প্রায় সবাই এলাকায় প্রভাবশালী। নৌকার বিরুদ্ধে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে অনেকের। প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের তৃণমূল কর্মীদের একটি অংশ রয়েছে যারা পছন্দের প্রার্থীর প্রচারণায় নামতে চায়। তবে বিভ্রান্তিও আছে। তাদের নেতা মনোনয়ন পাননি। এখন নৌকার বিপক্ষে কাজ করে কেন্দ্রের তোপের মুখে পড়তে হয় কিনা।
এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তৃণমূল কর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবে, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে সবুজ সংকেতের ইঙ্গিত আবার দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই এই বিষয়ে পরিষ্কার বলেছেন। সিদ্ধান্ত সেটাই। কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট যাতে হয়, সেজন্য দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গেও কৌশলী হয়েছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ-৫ ব্যতীত প্রায় সব আসনেই জাপাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। জনগণ যদি ভোট দিতে আসে, ভোটের হার যদি মোটামুটি সন্তোষজন হয়, তাহলেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বিএনপি না এলেও নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি... কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।’
মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
নতুন নতুন নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির বর্জনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ‘ডামি প্রার্থী’ দিয়ে কৌশলের শুরু। এসেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব। তবে বিভ্রান্তি ছিল তৃণমূলে। নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামা যাবে কিনা। সেই বিভ্রান্তিও দূর করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তৃণমূল কর্মীদের জন্য এসেছে নতুন বার্তা। বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ভোটের মাঠে নামা একান্তই একজন কর্মীর ব্যক্তিগত বিষয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। যাচাই শেষে বৈধ প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল-নিষ্পত্তি ও প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। ‘একতরফা নির্বাচন’ বন্ধ করতে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দুই দিন এবং মঙ্গলবার বিরতি রেখে টানা অবরোধ-হরতাল দিয়ে যাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘কৌশলী’ আওয়ামী লীগ বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, নৌকার বিরুদ্ধে দলের কেউ ভোটে গেলে, তাকে বসিয়ে দিতে কঠোর ভূমিকা নিতো কেন্দ্র। এবার সেটি নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
ফলে সংসদীয় তিনশ’ আসনের দুই-তৃতীয়াংশে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রার্থী হয়েছেন।
এর মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বেশি। তাদের কর্মী-সমর্থকও অনেক। এসব আসেন বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) অনেকেই অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। দলে পদপদবী এবং সরকারি নানা ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন হয়েছেন।
অনেক এমপি আবার স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের ঘটিয়েছেন। দলে বিভাজন ঘটিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। স্থানীয়পর্যায়ে গঠন করেছেন পকেট কমিটি। তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীদের পদপদবী থেকে বঞ্চিত করে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন।
এসব আসনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং সুষ্ঠু ভোট হলে পরিচ্ছন্ন ইমেজের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন- বলছে স্থানীয় সূত্র।
নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে এই আসনগুলো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।
স্থানীয় সরকারের ৬১ জন জনপ্রতিনিধি এবার পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে এসেছেন। এদের মধ্যে ৫২ জন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চারজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য এবং চারজন পৌর মেয়র। এদের অল্প কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত। তবে মনোনয়নবঞ্চিত অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এদের প্রায় সবাই এলাকায় প্রভাবশালী। নৌকার বিরুদ্ধে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে অনেকের। প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের তৃণমূল কর্মীদের একটি অংশ রয়েছে যারা পছন্দের প্রার্থীর প্রচারণায় নামতে চায়। তবে বিভ্রান্তিও আছে। তাদের নেতা মনোনয়ন পাননি। এখন নৌকার বিপক্ষে কাজ করে কেন্দ্রের তোপের মুখে পড়তে হয় কিনা।
এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তৃণমূল কর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবে, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে সবুজ সংকেতের ইঙ্গিত আবার দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই এই বিষয়ে পরিষ্কার বলেছেন। সিদ্ধান্ত সেটাই। কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট যাতে হয়, সেজন্য দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গেও কৌশলী হয়েছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ-৫ ব্যতীত প্রায় সব আসনেই জাপাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। জনগণ যদি ভোট দিতে আসে, ভোটের হার যদি মোটামুটি সন্তোষজন হয়, তাহলেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বিএনপি না এলেও নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি... কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।’