alt

রাজনীতি

দুর্যোগের মধ্যে তারেককে ফেরানোর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ: বিএনপি র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে ফেরানোর আলোচনা তুলবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপি নেতার দাবি, দুর্যোগ আর দুর্ভোগ থেকে বাঁচানো সরকারের ‘প্রধান কাজ না।’

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) ঢাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রো স্টেশনের নিচে এক মানববন্ধনে অংশ নেন নজরুল। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সদস্য ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং ঘূর্ণিঝড় রেমালের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যখন উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে, আমরা পত্রিকায় দেখলাম তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে আছেন, তাকে আমরা বলতে শুনলাম, ‘এখন আমাদের একমাত্র কাজ হল তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব’।

“ভাবুন, দেশ যখন দুর্যোগের মুখে, তখন দেশের মানুষকে বাঁচানো প্রধান কাজ নয়, জনগণের সম্পদ রক্ষা প্রধান কাজ নয়।”

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “জনগণকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দুর্ভোগ থেকে বাঁচানো সরকারের প্রধান কাজ না। কারণ, সরকারের প্রশ্রয়ভুক্ত সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতিবাজ মানুষরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে। এটা তাদের জন্য সমস্যা না।

“আপনি অসন্তুষ্ট হবেন, তাতে সরকারের কিচ্ছু আসে যায় না। এই সরকারের ভোটের কোনো প্রয়োজন নাই।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও তিনি ফেরেননি। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছর, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় ২ বছর এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ৯ বছরের সাজা হয়েছে তার।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানকে দেখতে হাসপাতালে তার মা খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় তারা দুইজনই সাজাপ্রাপ্ত। তারেকের সাজা হয়েছে পাঁচটি মামলায়। তবে তিনি যুক্তরাজ্যে আছে ১৬ বছর ধরে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানকে দেখতে হাসপাতালে তার মা খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় তারা দুইজনই সাজাপ্রাপ্ত। তারেকের সাজা হয়েছে পাঁচটি মামলায়। তবে তিনি যুক্তরাজ্যে আছে ১৬ বছর ধরে

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার রাতেই তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি। এরপর থেকে দল চালাচ্ছেন তিনিই। আইনের চোখে তিনি পলাতক এবং এ জন্য তিনি কোনো মামলায় আপিল করতে পারেননি।

রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তারেককে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এখন একটাই কাজ, ওই কুলাঙ্গারটাকে ফেরত নিয়ে আসা।… গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন তারেক জিয়া যেখানেই থাক, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনব।

“ইতোমধ্যে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, ওই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়াকে যেন বাংলাদেশে ফেরত দেয়। আমরা তাকে নিয়ে এসে সাজা কার্যকর করব।”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মূল ‘রাগের’ কারণটা এই যে, তারেক রহমান ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ আন্দোলনকে বেগবান করেছেন, জোরদার করেছেন। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ডানপন্থি, বামপন্থি, সমাজতন্ত্রী, ইসলামি দল, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন যে আন্দোলনের ফলে ’১০ শতাংশ’ লোকও ভোট দিতে যায়নি। এই হলো রাগ।

“যার জন্য এই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক লুট, রাষ্ট্রীয় দেনা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণের কারণে দেশের সাবেক সেনা প্রধান, সাবেক পুলিশ প্রধান, তারা আন্তর্জাতিক স্যাংশনের মুখে পড়ার পরেও সেগুলোর কোনোটাই প্রধান কাজ নয়। একমাত্র কাজ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া।”

আওয়ামী লীগ কি তার ইতিহাস ভুলে গেছে? বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হবে না দাবি করে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের উদাহরণও টানেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়ে যাই, আওয়ামী লীগ কী করে ভুলে যায় তাদের নিজেদের ইতিহাস? ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকেই পাকিস্তানিরা বন্দি করে রেখেছিল, কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ঠেকানো যায় নাই।

“মাওলানা ভাসানীসহ নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই গণঅভ্যুত্থানে মুখে আইয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে হয়েছে, সত্তরে নির্বাচন দিতে হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিজয় হয়েছে আওয়ামী লীগ।”

মানেটা কী দাঁড়াল- সে প্রশ্ন করে বিএনপি নেতা বলেন, “বিরোধী দলকে এবং তাদের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে রেখে, তাদের শাস্তি দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঠেকানো যায় না।

“কারণ লড়াই সংগ্রাম করে জনগণ বিজয় হয় এবং যাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তারাই আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস বার বার এটা প্রমাণ করেছে, আগামী দিনেও প্রমাণ করবে ইনশাল্লাহ।”

তারেক রহমান ‘গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে সফল করেই’ বীরের বেশে দেশে আসবেন বলেও মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা। বলেন, “ব্যাংকগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রং দিচ্ছে, কোনোটা সবুজ, কোনোটা হলুদ, কোনোটা লাল।

“লাল মানে লালবাতি জ্বালানোর অবস্থা হয়ে গেছে। লুট করে নিয়েছে তার মালিকরা। যাকে তাকে ঋণ দিয়ে ফোকলা করে ফেলেছে ব্যাংকগুলোকে। আর সেই মালিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কিংবা লাভজনক ব্যাংকের সঙ্গে সেগুলোকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা করছে।

“প্রতিনিয়ত টাকার মূল্য কমে যাচ্ছে, মাত্র কয়েকদিন আগে একযোগে এক ডলারের বিপরীতে টাকার দাম সাত টাকা কমানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১২৫ টাকা লাগছে এখন একটা ডলার কিনতে।”

দেশের ঋণের একশ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ঋণ আমি ও আপনি ভোগ করতে পারি নাই। এটা মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক ভোগ করেছে। তারা কোটিপতি হয়েছে, বিদেশে কোটিপতি হয়েছে।”

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ মিন্টু, ঢাকা জেলার তজিমউদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।

কারফিউ প্রত্যাহার করুন, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে নিন : ফখরুল

‘নিষ্ক্রিয়, ব্যর্থদের তালিকা যেন সঠিক হয়’-দাবি আ’লীগ তৃণমূলের

ছবি

খোঁজখবর নিচ্ছি, সত্য বেরিয়ে আসবে : কাদের

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে : কাদের

‘আপনারা ফেইল করেছেন’, রংপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ ২০ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৭৫৮ : পুলিশ

ছবি

বিএনপি কার্যালয়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয় : মির্জা ফখরুল

ছবি

নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসে তালা, চারপাশে পুলিশের অবস্থান

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কারো শেখানো বুলি বলছেন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

দুই দফা বৈঠক করেও আন্দোলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে পারেনি বিএনপির হাইকমান্ড

ছবি

যৌক্তিক দাবি কখনোই উপেক্ষিত হয়নি: ওবায়দুল কাদের

ছবি

জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে গণতন্ত্রী পার্টি: ডা. শাহাদাত

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রই বরদাশত করা হবে নাঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

ছবি

শেখ হাসিনা চীন হতে শূন্য হাতে ফিরেছেন : রিজভী

ছবি

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী: ওবায়দুল কাদের

ছবি

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

ছবি

স্বাধীনতাবিরোধীরা এ আন্দোলনের সঙ্গে মিশে গেছে বলে আমি আপনি সবাই বুঝে গেছি : আিইনমন্ত্রী

ছবি

কোটা সংস্কারের নামে বিএনপি জামায়াতের সন্তানেরা মাঠে নেমেছে - মাইনুল হোসেন নিখিল

ছবি

সরকার মেধাবী জাতি গঠনে অনাগ্রহী: আমির খসরু

ছয় বছর আগের মামলায় ছয় যুবদল নেতার কারাদণ্ড

ছবি

জবি : অভিযুক্তদের প্রটোকলেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি

ছবি

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বললেন ওবায়দুল কাদের

ছবি

জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীমের চাঁদাবাজির মামলা তদন্তে সিআইডি, প্রতিবেদন ২২ জুলাই

ছবি

কোটার সিদ্ধান্ত সরকারের নয়, আদালতের: ওবায়দুল কাদের

ছবি

রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ১

ছবি

প্রশ্নফাঁস ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ : জবি শাখার বিরুদ্ধে কাল তদন্তে নামছে কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি

ছবি

কোটা এবং পেনশনবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন আছে: ফখরুল

ছবি

এখন কারো গায়ে চুলকায়, কারো অন্তরে জ্বালা: কাদের

ছবি

দেশের পক্ষে কথা বলার কোনও সরকার এখানে নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ

ছবি

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ, জবি শাখার তদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

ছবি

অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ছবি

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে জাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

যারা সহিংসতাকে উস্কে দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ: কাদের

ছবি

অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়ে শাহবাগ ছেড়েছে বিক্ষোভকারীরা

ছবি

"জাহাঙ্গীর আলমকে ছাড়া গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা"

tab

রাজনীতি

দুর্যোগের মধ্যে তারেককে ফেরানোর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ: বিএনপি র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে ফেরানোর আলোচনা তুলবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপি নেতার দাবি, দুর্যোগ আর দুর্ভোগ থেকে বাঁচানো সরকারের ‘প্রধান কাজ না।’

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) ঢাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রো স্টেশনের নিচে এক মানববন্ধনে অংশ নেন নজরুল। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সদস্য ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং ঘূর্ণিঝড় রেমালের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যখন উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে, আমরা পত্রিকায় দেখলাম তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে আছেন, তাকে আমরা বলতে শুনলাম, ‘এখন আমাদের একমাত্র কাজ হল তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব’।

“ভাবুন, দেশ যখন দুর্যোগের মুখে, তখন দেশের মানুষকে বাঁচানো প্রধান কাজ নয়, জনগণের সম্পদ রক্ষা প্রধান কাজ নয়।”

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “জনগণকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দুর্ভোগ থেকে বাঁচানো সরকারের প্রধান কাজ না। কারণ, সরকারের প্রশ্রয়ভুক্ত সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতিবাজ মানুষরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে। এটা তাদের জন্য সমস্যা না।

“আপনি অসন্তুষ্ট হবেন, তাতে সরকারের কিচ্ছু আসে যায় না। এই সরকারের ভোটের কোনো প্রয়োজন নাই।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও তিনি ফেরেননি। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছর, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় ২ বছর এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ৯ বছরের সাজা হয়েছে তার।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানকে দেখতে হাসপাতালে তার মা খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় তারা দুইজনই সাজাপ্রাপ্ত। তারেকের সাজা হয়েছে পাঁচটি মামলায়। তবে তিনি যুক্তরাজ্যে আছে ১৬ বছর ধরে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানকে দেখতে হাসপাতালে তার মা খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় তারা দুইজনই সাজাপ্রাপ্ত। তারেকের সাজা হয়েছে পাঁচটি মামলায়। তবে তিনি যুক্তরাজ্যে আছে ১৬ বছর ধরে

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার রাতেই তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি। এরপর থেকে দল চালাচ্ছেন তিনিই। আইনের চোখে তিনি পলাতক এবং এ জন্য তিনি কোনো মামলায় আপিল করতে পারেননি।

রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তারেককে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এখন একটাই কাজ, ওই কুলাঙ্গারটাকে ফেরত নিয়ে আসা।… গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন তারেক জিয়া যেখানেই থাক, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনব।

“ইতোমধ্যে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, ওই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়াকে যেন বাংলাদেশে ফেরত দেয়। আমরা তাকে নিয়ে এসে সাজা কার্যকর করব।”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মূল ‘রাগের’ কারণটা এই যে, তারেক রহমান ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ আন্দোলনকে বেগবান করেছেন, জোরদার করেছেন। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ডানপন্থি, বামপন্থি, সমাজতন্ত্রী, ইসলামি দল, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন যে আন্দোলনের ফলে ’১০ শতাংশ’ লোকও ভোট দিতে যায়নি। এই হলো রাগ।

“যার জন্য এই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক লুট, রাষ্ট্রীয় দেনা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণের কারণে দেশের সাবেক সেনা প্রধান, সাবেক পুলিশ প্রধান, তারা আন্তর্জাতিক স্যাংশনের মুখে পড়ার পরেও সেগুলোর কোনোটাই প্রধান কাজ নয়। একমাত্র কাজ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া।”

আওয়ামী লীগ কি তার ইতিহাস ভুলে গেছে? বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হবে না দাবি করে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের উদাহরণও টানেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়ে যাই, আওয়ামী লীগ কী করে ভুলে যায় তাদের নিজেদের ইতিহাস? ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকেই পাকিস্তানিরা বন্দি করে রেখেছিল, কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ঠেকানো যায় নাই।

“মাওলানা ভাসানীসহ নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই গণঅভ্যুত্থানে মুখে আইয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে হয়েছে, সত্তরে নির্বাচন দিতে হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিজয় হয়েছে আওয়ামী লীগ।”

মানেটা কী দাঁড়াল- সে প্রশ্ন করে বিএনপি নেতা বলেন, “বিরোধী দলকে এবং তাদের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে রেখে, তাদের শাস্তি দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঠেকানো যায় না।

“কারণ লড়াই সংগ্রাম করে জনগণ বিজয় হয় এবং যাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তারাই আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস বার বার এটা প্রমাণ করেছে, আগামী দিনেও প্রমাণ করবে ইনশাল্লাহ।”

তারেক রহমান ‘গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে সফল করেই’ বীরের বেশে দেশে আসবেন বলেও মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা। বলেন, “ব্যাংকগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রং দিচ্ছে, কোনোটা সবুজ, কোনোটা হলুদ, কোনোটা লাল।

“লাল মানে লালবাতি জ্বালানোর অবস্থা হয়ে গেছে। লুট করে নিয়েছে তার মালিকরা। যাকে তাকে ঋণ দিয়ে ফোকলা করে ফেলেছে ব্যাংকগুলোকে। আর সেই মালিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কিংবা লাভজনক ব্যাংকের সঙ্গে সেগুলোকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা করছে।

“প্রতিনিয়ত টাকার মূল্য কমে যাচ্ছে, মাত্র কয়েকদিন আগে একযোগে এক ডলারের বিপরীতে টাকার দাম সাত টাকা কমানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১২৫ টাকা লাগছে এখন একটা ডলার কিনতে।”

দেশের ঋণের একশ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ঋণ আমি ও আপনি ভোগ করতে পারি নাই। এটা মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক ভোগ করেছে। তারা কোটিপতি হয়েছে, বিদেশে কোটিপতি হয়েছে।”

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ মিন্টু, ঢাকা জেলার তজিমউদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।

back to top