alt

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২৩ জুন ২০২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রোববার(২৩ জুন)। বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম।

গৌরব উজ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যধারণকারী আওয়ামী লীগ নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে এবং আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ৭৫ বছরের পথ পরিক্রমায় এই দলটিকে ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন দিক থেকে কখনও সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আবার অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে আলোর দিগন্তে পৌঁছেছে, দেশের জন্য সফলতা অর্জন বয়ে এনেছে। জন্মলগ্ন থেকেই দলটিকে সংকট ও সম্ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে।

বাংলার এ ভূখণ্ডের ক্রান্তিকালে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম নিয়ে দলটির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন এ দল গঠন করেন।

সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ব বাংলা) শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার প্রসার ঘটতে থাকে। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা এ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে দলটি আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রমের ব্রত নিয়ে আওয়ামী লীগ নামের এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এই আওয়ামী লীগ।

প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপর ভিত্তি করে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হতে থাকে। এই অসাম্প্রদায়িক নীতিই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিযে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক।

বঙ্গবন্ধুর যোগ্য নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলে রূপান্তরিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসন-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবংমুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি জাতি এ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে যায়। বাঙালির মুক্তি সনদ ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, এর পর ১১ দফার ভিত্তিতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ’৭১-এর মহানমুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর এক জেঁকে বসা সামরিক স্বৈরশাসন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই দল।

এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সামরিক, স্বৈরশাসকদের রক্ত চক্ষু, কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো দমন পীড়ন নির্যাতনের শিকার, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন, গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়। দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।

শেখ হাসিনা ওই বছর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার পর তাঁর নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। গত ৪ দশকের বেশি ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি ৫ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে, আন্দোলন-সংগ্রামে। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর এবং বর্তমানে টানা সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগের এই ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। আওয়ামী লীগের এই টানা ক্ষমতার মেয়াদে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন সাধিত হয়েছে আওয়ামী লীগের এই শাসনামলে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্র ক্ষসতায় অধিষ্ঠিত থেকেও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মতাদর্শগত অবস্থানে অনড় থাকার সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আর দীর্ঘ ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সভাপতির দায়িত্বে থেকে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

তরুণদের আওয়ামী লীগে যোগদানের আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের

ছবি

সরকারের আশ্রয়ে আরও দুর্নীতিবাজ আছে: ফারুক

ফতুল্লায় রাস্তার উপর আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে খুন, আহত দুই ছেলেসহ ৪ জন

ছবি

৬ মাস করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা সরকারের আরেক খেলা : ফখরুল

ছবি

বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ : শেখ হাসিনা

ছবি

কাঞ্চন পৌরসভা মেয়র আবুল বাশার, ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ

ছবি

আজিজের ভাইদের এনআইডি জালিয়াতি তদন্তে আরও ২ সপ্তাহ

ছবি

খালেদার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় সমাবেশসহ তিনদিনের কর্মসূচী ঘোষণা বিএনপির

ছবি

বর্তমান প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের প্রতি প্রতিমন্ত্রী পলকের আহ্বান

ছবি

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনীতি করছেন : ওবায়দুল কাদের

ছবি

সরকারের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখা: ফখরুল

ছবি

হার্টে পেসমেকার বসানোর পর খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর

ছবি

‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অর্জন অনেক’- ওবায়দুল কাদের

ছবি

আওয়ামী লীগ কর্মীদের দল আর বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মধ্যরাতে পদায়নের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

ভারসাম্য ঠিক নেই বলে বিএনপি দোষারোপ করছে

ছবি

শেখ হাসিনা রাজনীতির জাদুকর : ওবায়দুল কাদের

ছবি

খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হচ্ছে

ছবি

ভস্ম থেকে জেগে উঠেছে আওয়ামী লীগ: শেখ হাসিনা

ছবি

ভারতের স্বার্থেই ১০ টি চুক্তি করেছেন : ফখরুল

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভার ম‌ঞ্চে‌ শেখ হাসিনা

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ছবি

দুদকে হাজির হননি বেনজীর, দিয়েছেন লিখিত বক্তব্য

ছবি

আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর: নেতাকর্মীদের ঢল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

ছবি

খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে : মির্জা ফখরুল

ছবি

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় নতুন আবেদন পাইনি : আইনমন্ত্রী

ছবি

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার-শপথ নিয়ে আ.লীগের সৃষ্টি

ছবি

দোয়া চাইলেন ফখরুল,খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘বেশ ক্রিটিক্যাল’

ছবি

সিসিইউতে ভর্তি খালেদা জিয়া

ছবি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে আ’লীগের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

ছবি

বাংলাদেশের সব অর্জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে: পলক

ছবি

বিএনপি ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করে দেশের ক্ষতি করেছিল : কাদের

ছবি

বিএনপি সরকারকে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর উসকানি দিচ্ছে : কাদের

ছবি

নানা পদে রদবদল, আরও কমিটি বিলুপ্ত করবে বিএনপি

ছবি

আক্রান্ত হলে আমরাও জবাব দেবো: সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের

ছবি

বিএনপির টপ টু বটম- সবাই দুর্নীতিবাজ : কাদের

ছবি

দেশে ফিরেছেন ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রোববার(২৩ জুন)। বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম।

গৌরব উজ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যধারণকারী আওয়ামী লীগ নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে এবং আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ৭৫ বছরের পথ পরিক্রমায় এই দলটিকে ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন দিক থেকে কখনও সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আবার অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে আলোর দিগন্তে পৌঁছেছে, দেশের জন্য সফলতা অর্জন বয়ে এনেছে। জন্মলগ্ন থেকেই দলটিকে সংকট ও সম্ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে।

বাংলার এ ভূখণ্ডের ক্রান্তিকালে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম নিয়ে দলটির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন এ দল গঠন করেন।

সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ব বাংলা) শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার প্রসার ঘটতে থাকে। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা এ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে দলটি আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রমের ব্রত নিয়ে আওয়ামী লীগ নামের এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এই আওয়ামী লীগ।

প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপর ভিত্তি করে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হতে থাকে। এই অসাম্প্রদায়িক নীতিই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিযে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক।

বঙ্গবন্ধুর যোগ্য নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলে রূপান্তরিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসন-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবংমুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি জাতি এ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে যায়। বাঙালির মুক্তি সনদ ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, এর পর ১১ দফার ভিত্তিতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ’৭১-এর মহানমুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর এক জেঁকে বসা সামরিক স্বৈরশাসন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই দল।

এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সামরিক, স্বৈরশাসকদের রক্ত চক্ষু, কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো দমন পীড়ন নির্যাতনের শিকার, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন, গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়। দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।

শেখ হাসিনা ওই বছর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার পর তাঁর নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। গত ৪ দশকের বেশি ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি ৫ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে, আন্দোলন-সংগ্রামে। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর এবং বর্তমানে টানা সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগের এই ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। আওয়ামী লীগের এই টানা ক্ষমতার মেয়াদে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন সাধিত হয়েছে আওয়ামী লীগের এই শাসনামলে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্র ক্ষসতায় অধিষ্ঠিত থেকেও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মতাদর্শগত অবস্থানে অনড় থাকার সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আর দীর্ঘ ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সভাপতির দায়িত্বে থেকে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

back to top