প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংলাপ হয়েছে, তাতে সব দল ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। তবে সে সময় কতদিন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি কোনো দল।
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি উঠার পর বেশকিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় শুরু হওয়া এই সংলাপ রাত পর্যন্ত চলে
সংলাপে দলগুলোর পক্ষ থেকে আগে সংস্কার করে পরে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। এর পাশাপাশি সরকার পতন আন্দোলনে সংঘটিত হত্যার বিচারে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের দাবি উঠে আসে।
ছয়টি ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আলোচনা। দলগুলো হল : খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম।
এরপর চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ।
শনিবার সংলাপে অংশ নেয় জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাপা) অলি আহমদের নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোট।
দলগুলো তাদের দলীয় প্যাডে নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ও দাবি লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
‘যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন’
সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন করবে, সেটি নেই।
গত ২৪ আগস্ট থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি উঠছে, তবে জামায়াত মনে করে নির্বাচনের সময় ‘এখন নয়’। এ নিয়ে দুই দলের বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটেছে।
তবে বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির যে প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে সেখানে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানানো হয়।
সংলাপ শেষ করে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় করবেন।’
শনিবার অনুষ্ঠিত সংলাপে দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সীমার বদলে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময়’ নেয়ার কথাই বলা হয়েছে।
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখার জন্য একমাত্র অস্ত্র হলো একটা ফোরকাস্ট দিয়ে দেয়া। এটা ছয় মাস পরেও হতে পারে, নয় মাস পরেও হতে পারে। সংস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেয়ার কথা আমরা বলেছি। কিন্তু নির্বাচন তো হতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্যও ভালো, রাজনৈতিক দলের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।’
সংস্কার করার আগে নির্বাচন কোনো অবস্থাতে বাঞ্ছনীয় নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অলি আহমেদ বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, সংসদ নির্বাচন-এগুলোর একটা সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করার কথা বলেছি। ৬ মাস পরও হতে পারে, ৯ মাস পরও হতে পারে, নির্বাচন তো হতে হবে। তবে সংস্কারের আগে নির্বাচন বাঞ্ছনীয় নয়। তবে উনারা যদি বেশি সময় নেন, উনাদের পক্ষে সরকার চালানোও সম্ভব হবে না।’
প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এটাই বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটা বিষয়ে। আমি উত্তর দিকে গেলাম, আপনি দক্ষিণ দিকে গেলেন- তা হলে তো দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সবাইকে একটা ঐক্যমতে আসতে হবে।’
ছয় ইসলামী দলের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা উনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছি যে, তিনি একটি যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে অযথা যেন কাল বিলম্ব না করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। প্রধান উপদেষ্টাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর তারা কালবিলম্ব না করে নির্বাচনে যেতেই তারা আগ্রহী এবং সেই ধরনের তারা প্রস্তুতি এবং আয়োজন করছেন।’
যৌক্তিক সময়টা কতদিনের- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক সময়টি কত দিনের এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়া হয়নি, আমরা মেয়াদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা করিনি।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রায় ১৬ বছর ধরে দলীয়করণ এবং ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর যে প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং এই নির্বাচনগুলো উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যারা প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছেন, যারা বিভিন্ন মিডিয়াসহ সর্বত্র ওই সরকারকে সহযোগিতা করেছে, সেটা অন্যায়। একটা নির্ভরযোগ্য একটা কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই অন্যায়কারীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যবস্থা করার বিষয়টি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলছি।’
‘যোগ্যদের’ দিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেয়ার কথাও বলে ইসলামী আন্দোলন।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সব জায়গাগুলোতে একটা স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেয়া হলে তখন আবার আগের সেই পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, পরিবেশ তৈরি করতে হবে আগে।’
প্রধানমন্ত্রী পদে দুই বারের বেশি নয়
প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি না থাকার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। এছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন? একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে না পারে সেই প্রস্তাব দিয়েছে জাপা।
শনিবার সংলাপে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
চুন্ন জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে জাপা চেয়ারম্যান বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে ব্যাপক হারে সংস্কার করা সম্ভব নয়। আপনি যেহেতু সুযোগটুকু পেয়েছেন তাই ব্যাপক সংস্কার করতে পারবেন। আর এই সংস্কার করতে গিয়ে যতটুকু সময় প্রয়োজন সেই সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেয়া হবে।
সংবিধান সংশোধন
সংলাপ শেষে বের হয়ে এসে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক সুন্দর আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। আলোচনা ভালো হয়েছে।’ গণফোরামের পক্ষ থেকে ২১ দফা দাবি দেয়ার কথা জানান তিনি। পরে তার পক্ষে কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গণফোরামের পক্ষ থেকে ২১ টি দাবি উপস্থাপন করেছি। আমাদের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা গ্রহণ করেছেন।
দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
মিজানুর রহমান বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আ’লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি
আলোচনায় ৮৩ দফা প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান এলডিপি প্রধান। ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতকে যদি ছোট ছোট তুচ্ছ কারণে নিবন্ধন বাতিল করা যায়, আমাদের হাজার ছেলেমেয়েদের হত্যা করার জন্য, ১৫ বছর কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গুম করার জন্য তাদের (আওয়ামী লীগ) বাতিল হবে না? এটা বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। না হলে আগামীতে স্বৈরাচারের জন্ম বাংলাদেশে হবে।’
২০২৪ সাল হচ্ছে নতুন নতুন ঘটনা ঘটেছে এবং আরও ঘটতে পারে বলেও মনে করেন অলি আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকে বৈঠকে সাবধান করে দিয়েছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি, আপনি এখনও বিপদমুক্ত নন। এখনও যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেৃ যারা হাসিনার ‘পদলেহী’ ছিল তারা এখনও চাকরিচ্যুত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়নি- তাদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করলে সমস্যার সমাধান হবে নাৃ. তারা দেশের শত্রুৃ তাদের জেলে নিতে হবে।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের দাবি
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা যেসব চুক্তি করেছেন সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে যেগুলো ‘দেশবিরোধী’, সেগুলো বাতিল করার কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।’;
দলের পক্ষ থেকে সংস্কারের ৭ দফা প্রস্তাবও দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে সরকার ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি না থাকা এবং কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় প্রধান পদে না থাকা, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনিক, আর্থিক, ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আনা দাবি ও পরামর্শ আছে।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস পুনর্বহালের দাবি
মামুনুল হক বলেন, ‘সংবিধানে আল্লাহর ওপরে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের যে ধারাটি ছিল সেটা আবার যেন পুনর্বহাল করা হয়। সংবিধানে এজন্য সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছি। দেশে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী নীতি বা আইন যেন না হয় সে বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে।’
হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি
আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আলেম সমাজ, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীসহ বিরোধী দলগুলোর যে মামলা শেখ হাসিনার সরকার দিয়েছে সেগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহারের একটা টাইমফ্রেমের কথা আমরা বলেছি।’
মামুনুল হক বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালের বহু মামলা ও হতাহত রয়েছে। অনেকের সন্ধানও আমাদের কাছে নেই। আমরা সেই ব্যাপারেও সহযোগিতা চেয়েছি যেন আমাদের সব শহীদ ও নিখোঁজ মানুষের বিষয়ে সুন্দর একটি প্রতিবেদন আমাদের কাছে আসতে পারে। ‘সব হত্যাকা-ের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার প্রস্তাবও আমরা বলেছি।’
হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় তিন শতাধিক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘সেই মামলাগুলো অতি দ্রুত নির্বাহী আদেশ এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি যেন দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। আমরা এক মাসের একটা সময়সীমা উনার (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে চেয়েছি যে, উনি এই সময়ের মধ্যে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন।’
দুর্গা পূজায় সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান
বৈঠকে ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে দুর্গা পূজায় মন্দির ও ম-পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা নেতাদেরকে বলেন, তারাও যেন সতর্ক থাকেন এবং কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে।
সংখ্যানুপাতির ভোটের পরামর্শ
এই দাবি তোলে ইসলামী আন্দোলন। চরমোনাইয়ের পীর বলেন, ‘আমাদের ৫৩ বছরের বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা আছে সেখানে কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং দলীয়করণ হয়- পেশিশক্তির মাধ্যমে আসলে মূলত যারা নাকি যোগ্য যাদের দেশের প্রতি প্রেম রয়েছে এই ধরনের ব্যক্তিরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় না।’
তিনি বলেন, ‘সংখ্যানুপাতে হারে নির্বাচনটা হতে হবে। সেখানে দল ও প্রতীক থাকবে জনগণ ভোট দেবে এবং সেখানে যে যেই দল যেভাবে ভোট পাবে সেই অনুযায়ী তাদের প্রতিনিধি পার্লামেন্টে থাকবেন। এতে সব পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হলোৃ এখানে আর কোনো বৈষম্যমূলক বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।’
দলের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন, স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই ‘গণহত্যার’ বিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে ব্যক্তি ও সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করাসহ ১৩ দফা দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১২ দফা সুপারিশ করেছে জার্তীয় পার্টি (কাজী জাফর)। একই সঙ্গে বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ আট দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া)। সংলাপ শেষে এ কথা জানান জাপার মোস্তফা জামাল হায়দার এবং বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, সর্বদলীয় সর্বগ্রাসের সঙ্কট মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সরকার অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিরাজমান সঙ্কট সমাধানে সময় লাগবে। এই সময় দিতে দেশবাসীসহ আরও দল প্রস্তুত আছে। এরপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিচারের দাবিসহ তারা যেন আর নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ আট দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ।
এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে শপথ এবং সংলাপ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তার জোট ১৪ দলের শরীকদের ডাকা হয়নি।
গত ১২ আগস্ট মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শাহ আলমের নেতৃত্বে সিপিবি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মঞ্চ, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে এবি পার্টি, নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ, হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে এনডিএম আলাদা আলাদাভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গত ২৯ আগস্ট মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা মতবিনিময় করবেন।
রোববার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংলাপ হয়েছে, তাতে সব দল ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। তবে সে সময় কতদিন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি কোনো দল।
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি উঠার পর বেশকিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় শুরু হওয়া এই সংলাপ রাত পর্যন্ত চলে
সংলাপে দলগুলোর পক্ষ থেকে আগে সংস্কার করে পরে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। এর পাশাপাশি সরকার পতন আন্দোলনে সংঘটিত হত্যার বিচারে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের দাবি উঠে আসে।
ছয়টি ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আলোচনা। দলগুলো হল : খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম।
এরপর চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ।
শনিবার সংলাপে অংশ নেয় জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাপা) অলি আহমদের নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোট।
দলগুলো তাদের দলীয় প্যাডে নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ও দাবি লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
‘যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন’
সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন করবে, সেটি নেই।
গত ২৪ আগস্ট থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি উঠছে, তবে জামায়াত মনে করে নির্বাচনের সময় ‘এখন নয়’। এ নিয়ে দুই দলের বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটেছে।
তবে বৃহস্পতিবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির যে প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে সেখানে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানানো হয়।
সংলাপ শেষ করে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় করবেন।’
শনিবার অনুষ্ঠিত সংলাপে দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সীমার বদলে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময়’ নেয়ার কথাই বলা হয়েছে।
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখার জন্য একমাত্র অস্ত্র হলো একটা ফোরকাস্ট দিয়ে দেয়া। এটা ছয় মাস পরেও হতে পারে, নয় মাস পরেও হতে পারে। সংস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেয়ার কথা আমরা বলেছি। কিন্তু নির্বাচন তো হতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্যও ভালো, রাজনৈতিক দলের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।’
সংস্কার করার আগে নির্বাচন কোনো অবস্থাতে বাঞ্ছনীয় নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অলি আহমেদ বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, সংসদ নির্বাচন-এগুলোর একটা সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করার কথা বলেছি। ৬ মাস পরও হতে পারে, ৯ মাস পরও হতে পারে, নির্বাচন তো হতে হবে। তবে সংস্কারের আগে নির্বাচন বাঞ্ছনীয় নয়। তবে উনারা যদি বেশি সময় নেন, উনাদের পক্ষে সরকার চালানোও সম্ভব হবে না।’
প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এটাই বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটা বিষয়ে। আমি উত্তর দিকে গেলাম, আপনি দক্ষিণ দিকে গেলেন- তা হলে তো দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সবাইকে একটা ঐক্যমতে আসতে হবে।’
ছয় ইসলামী দলের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা উনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছি যে, তিনি একটি যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে অযথা যেন কাল বিলম্ব না করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। প্রধান উপদেষ্টাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর তারা কালবিলম্ব না করে নির্বাচনে যেতেই তারা আগ্রহী এবং সেই ধরনের তারা প্রস্তুতি এবং আয়োজন করছেন।’
যৌক্তিক সময়টা কতদিনের- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক সময়টি কত দিনের এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়া হয়নি, আমরা মেয়াদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা করিনি।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রায় ১৬ বছর ধরে দলীয়করণ এবং ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর যে প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং এই নির্বাচনগুলো উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যারা প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছেন, যারা বিভিন্ন মিডিয়াসহ সর্বত্র ওই সরকারকে সহযোগিতা করেছে, সেটা অন্যায়। একটা নির্ভরযোগ্য একটা কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই অন্যায়কারীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যবস্থা করার বিষয়টি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলছি।’
‘যোগ্যদের’ দিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেয়ার কথাও বলে ইসলামী আন্দোলন।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সব জায়গাগুলোতে একটা স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেয়া হলে তখন আবার আগের সেই পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, পরিবেশ তৈরি করতে হবে আগে।’
প্রধানমন্ত্রী পদে দুই বারের বেশি নয়
প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি না থাকার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। এছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন? একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে না পারে সেই প্রস্তাব দিয়েছে জাপা।
শনিবার সংলাপে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
চুন্ন জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে জাপা চেয়ারম্যান বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে ব্যাপক হারে সংস্কার করা সম্ভব নয়। আপনি যেহেতু সুযোগটুকু পেয়েছেন তাই ব্যাপক সংস্কার করতে পারবেন। আর এই সংস্কার করতে গিয়ে যতটুকু সময় প্রয়োজন সেই সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেয়া হবে।
সংবিধান সংশোধন
সংলাপ শেষে বের হয়ে এসে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক সুন্দর আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। আলোচনা ভালো হয়েছে।’ গণফোরামের পক্ষ থেকে ২১ দফা দাবি দেয়ার কথা জানান তিনি। পরে তার পক্ষে কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গণফোরামের পক্ষ থেকে ২১ টি দাবি উপস্থাপন করেছি। আমাদের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা গ্রহণ করেছেন।
দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
মিজানুর রহমান বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আ’লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি
আলোচনায় ৮৩ দফা প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান এলডিপি প্রধান। ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতকে যদি ছোট ছোট তুচ্ছ কারণে নিবন্ধন বাতিল করা যায়, আমাদের হাজার ছেলেমেয়েদের হত্যা করার জন্য, ১৫ বছর কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গুম করার জন্য তাদের (আওয়ামী লীগ) বাতিল হবে না? এটা বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। না হলে আগামীতে স্বৈরাচারের জন্ম বাংলাদেশে হবে।’
২০২৪ সাল হচ্ছে নতুন নতুন ঘটনা ঘটেছে এবং আরও ঘটতে পারে বলেও মনে করেন অলি আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকে বৈঠকে সাবধান করে দিয়েছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি, আপনি এখনও বিপদমুক্ত নন। এখনও যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেৃ যারা হাসিনার ‘পদলেহী’ ছিল তারা এখনও চাকরিচ্যুত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়নি- তাদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করলে সমস্যার সমাধান হবে নাৃ. তারা দেশের শত্রুৃ তাদের জেলে নিতে হবে।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের দাবি
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা যেসব চুক্তি করেছেন সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে যেগুলো ‘দেশবিরোধী’, সেগুলো বাতিল করার কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।’;
দলের পক্ষ থেকে সংস্কারের ৭ দফা প্রস্তাবও দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে সরকার ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি না থাকা এবং কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় প্রধান পদে না থাকা, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনিক, আর্থিক, ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আনা দাবি ও পরামর্শ আছে।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস পুনর্বহালের দাবি
মামুনুল হক বলেন, ‘সংবিধানে আল্লাহর ওপরে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের যে ধারাটি ছিল সেটা আবার যেন পুনর্বহাল করা হয়। সংবিধানে এজন্য সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছি। দেশে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী নীতি বা আইন যেন না হয় সে বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে।’
হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি
আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আলেম সমাজ, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীসহ বিরোধী দলগুলোর যে মামলা শেখ হাসিনার সরকার দিয়েছে সেগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহারের একটা টাইমফ্রেমের কথা আমরা বলেছি।’
মামুনুল হক বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালের বহু মামলা ও হতাহত রয়েছে। অনেকের সন্ধানও আমাদের কাছে নেই। আমরা সেই ব্যাপারেও সহযোগিতা চেয়েছি যেন আমাদের সব শহীদ ও নিখোঁজ মানুষের বিষয়ে সুন্দর একটি প্রতিবেদন আমাদের কাছে আসতে পারে। ‘সব হত্যাকা-ের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার প্রস্তাবও আমরা বলেছি।’
হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় তিন শতাধিক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘সেই মামলাগুলো অতি দ্রুত নির্বাহী আদেশ এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি যেন দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। আমরা এক মাসের একটা সময়সীমা উনার (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে চেয়েছি যে, উনি এই সময়ের মধ্যে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন।’
দুর্গা পূজায় সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান
বৈঠকে ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে দুর্গা পূজায় মন্দির ও ম-পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা নেতাদেরকে বলেন, তারাও যেন সতর্ক থাকেন এবং কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে।
সংখ্যানুপাতির ভোটের পরামর্শ
এই দাবি তোলে ইসলামী আন্দোলন। চরমোনাইয়ের পীর বলেন, ‘আমাদের ৫৩ বছরের বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা আছে সেখানে কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং দলীয়করণ হয়- পেশিশক্তির মাধ্যমে আসলে মূলত যারা নাকি যোগ্য যাদের দেশের প্রতি প্রেম রয়েছে এই ধরনের ব্যক্তিরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় না।’
তিনি বলেন, ‘সংখ্যানুপাতে হারে নির্বাচনটা হতে হবে। সেখানে দল ও প্রতীক থাকবে জনগণ ভোট দেবে এবং সেখানে যে যেই দল যেভাবে ভোট পাবে সেই অনুযায়ী তাদের প্রতিনিধি পার্লামেন্টে থাকবেন। এতে সব পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হলোৃ এখানে আর কোনো বৈষম্যমূলক বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।’
দলের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন, স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই ‘গণহত্যার’ বিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে ব্যক্তি ও সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করাসহ ১৩ দফা দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১২ দফা সুপারিশ করেছে জার্তীয় পার্টি (কাজী জাফর)। একই সঙ্গে বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ আট দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া)। সংলাপ শেষে এ কথা জানান জাপার মোস্তফা জামাল হায়দার এবং বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, সর্বদলীয় সর্বগ্রাসের সঙ্কট মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সরকার অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিরাজমান সঙ্কট সমাধানে সময় লাগবে। এই সময় দিতে দেশবাসীসহ আরও দল প্রস্তুত আছে। এরপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিচারের দাবিসহ তারা যেন আর নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ আট দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ।
এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে শপথ এবং সংলাপ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তার জোট ১৪ দলের শরীকদের ডাকা হয়নি।
গত ১২ আগস্ট মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শাহ আলমের নেতৃত্বে সিপিবি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মঞ্চ, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে এবি পার্টি, নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ, হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে এনডিএম আলাদা আলাদাভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গত ২৯ আগস্ট মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা মতবিনিময় করবেন।