alt

একে একে নিবন্ধন পাচ্ছে আগে বাতিল দলগুলো

ফয়েজ আহমেদ তুষার : মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আবেদন করে ব্যর্থ হওয়া দলগুলো একে একে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পাচ্ছে। গত ১২ দিনে এরকম তিনটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ইসির নিবন্ধন পেয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)। একই দিনে নিবন্ধন পেয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। সোমবার এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে। প্রাথমিক বাছাই শেষে যে ১২ দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন তার মধ্যে এই তিনটি দলও ছিল। তবে দলগুলো নিবন্ধন পায়নি।

ওই সময় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শুধু দুই দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দেয়। নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন দেয়ায় সমালোচনাও হয় সে সময়।

আটকে গেছেন রেজা কিবরিয়া
ডাকসুর ভিবি নুরের গণ অধিকার পরিষদ-জেওপি ইসির নিবন্ধন পেলেও হাইকোর্টে মামলা থাকায় আটকে গেছে রেজা কিবরিয়ার গণ অধিকার পরিষদের নিবন্ধন। ইসি নিবন্ধন না দেয়ায় রেজা কিবরিয়া এই মামলা (রিট আবেদন) করেছিলেন।

এক সময় গণ অধিকার পরিষদ নামে একটিই দল ছিল; নেতৃত্বে ছিলেন নুর ও রেজা কিবরিয়া। ভেঙে দুই দল হলেও তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল আবার এক হওয়ার।

১ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই দাবি তুলে ধরেন দলটির দুই পক্ষের তৃণমূল কর্মীরা।

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের বিরোধের কারণে বিভক্ত গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষকে এক হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তারা। এক না হলে দল দুটি ছোট ছোট দোকানে রূপ নেবে বলেও সতর্ক করেন তারা। দাবি মানা না হলে তারা গণ-অবস্থানসহ কর্মসূচির পালন করবেন বলেও জানান।

দুই দিনের মাথায় নুরের দলকে নিবন্ধন দিয়ে দেয়ায় রেজার সঙ্গে পুনরায় এক হওয়ার প্রত্যাশা শেষ হয়ে যায়।

‘চাপ দিয়ে’ নিবন্ধন
রেজা কিবরিয়ার অংশের অভিযোগ, আদালত থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ইসি অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। তবে নুরের দলকে নিবন্ধন দিতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে ইসির ওপর চাপ ছিল।

রেজার অংশের এক নেতার অভিযোগ ‘নুর নিবন্ধন নিতে আইন উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়েছেন।’

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ থেকে জানা যায়, গণ অধিকার পরিষদের এককর্মী অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে বলছেন, যেহেতু আফিস নজরুলের নাম করে নুর ইসিকে চাপ দিচ্ছে, তাই তিনি (আসিফ নজরুল) যেন ইসিকে ফোন করে বলে দেন, নুর বা রেজা কিবরিয়া কারো জন্য তার কোন সুপারিশ নেই।

ফোনালাপে আইন উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, তিনি যেহেতু এখন সরকারি দায়িত্বে আছেন, এ সংক্রান্ত শপথ নিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে ইসিকে ফোন করতে পারেন না।

আইন উপদেষ্টা ওই কর্মীকে উপদেশ আকারে বলেন, ওই কর্মী যেন ইসিকে এই ফোন রেকর্ড (কল লিস্ট) দেখায় এবং বলে ‘আসিফ নজরুল স্যার বলেছেন কারো জন্য তার কোন সুপারিশ নেই।’

ছাত্রলীগ থেকে ডাকসু
এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসা নুরুল হক নুর ২০১৭ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমে নিজ সংগঠনের বিরাগভাজন হন। ২০১৮ সালে সরকার প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে কোটা তুলে দেয়া পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন করে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন নুর।

এরপর তিনি কোটা সংস্কারের জন্য গঠন করা কমিটিকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলে রূপ দেন। ২০২১ সালে গঠন করেন ‘গণ অধিকার পরিষদ’।

নুর বনাম রেজা
একপর্যায়ে দলের আহ্বায়ক হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। তবে দল গঠনের দুই বছর হওয়ার আগেই শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের মধ্যে বিরোধে দেখা দেয়। গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব ও অপসারণের ঘটনা ঘটে।

২০২৩ সালের ১ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করেন। এর ৯ দিন পর ১০ জুলাই দলের জাতীয় কাউন্সিলে নুরুল হক সভাপতি ও মুহাম্মদ রাশেদ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্য পক্ষ এই কাউন্সিল মানেনি।

ইসির যাচাই কমিটি
ইসির তথ্য যাচাই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দুটি পৃথক দল। একটি গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি) অন্যটি গণ অধিকার পরিষদ। নুরের দল পূর্বে যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি পরবর্তিতে সেগুলো পূরণ করায় তার দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা থাকায় রেজা কিবরিয়ার দলের বিষয়ে আদলত সিদ্ধান্ত নেবে।

রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করার ক্ষেত্রে গঠণতন্ত্র যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলে ইসির ওই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণফোরাম থেকে গণ অধিকার
বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়ার রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গিয়ে রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট করেছিলেন।

ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রেজা। তবে দ্বন্দ্বের কারণে সেই দল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। পরে তিনি নুরের সঙ্গে মিলে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন।

নিবন্ধন পেতে নুরের দলও হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে’ গত ২৮ আগস্ট দলটি আল্টিমেটাম দেয়। ২ সেপ্টেম্বর দলটিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।

দলের নিবন্ধন না পেয়ে বিভিন্ন বৈঠক ও সভায় ইসির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন নুর। গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিবন্ধনের আবেদন পুনর্বিবেচনা চায় দলটি। ‘সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে’ গত ২৮ আগস্ট দলটি আল্টিমেটাম দেয়ার পর ২ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।

নুরের দলকে দ্রুত নিবন্ধন দিতে ইসিকে বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

ইসির প্রজ্ঞাপন
সোমবার ইসি সচিব শফিউল আজিমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী ‘গণ অধিকার পরিষদ-জিওপি’কে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে। এই দলের জন্য ‘ট্রাক’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। দলের নিবন্ধন নম্বর ৫১।

সোমবার মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্যও ইসির নিবন্ধন পেয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে ইসি জানায়, এই দলের জন্য ‘কেটলি’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। দলের নিবন্ধন নম্বর ৫২।

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির নিবন্ধন নম্বর-৫০, বরাদ্দকৃত প্রতীক ‘ঈগল’।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে। প্রাথমিক বাছাই শেষে যে ১২ দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন তারমধ্যে এই তিনটি দলও ছিল। তবে দলগুলো নিবন্ধন পায়নি।

ওই সময় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শুধু দুই দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দেয়।

নিবন্ধিত দল ৪৭ট
এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। নিবন্ধন না থাকলে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নিবন্ধন পেতে জুড়ে দেয়া হয় বেশকিছু শর্ত; যা প্রতিপালন করা নামসর্বস্ব ছোট দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়।

শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়া এবং আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে পরবর্তীতে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

এখন ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৭টি।

নিবন্ধন ফিরে পেতে পুনরায় উচ্চ আদলতের দ্বারস্থ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শুনানির জন্য আগামী ২১ অক্টোবর তারিখ দিয়েছে আদালত।

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপি ও জামায়াতের বৈঠক বিকালে

ছবি

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর তালা

ছবি

অন্তর্বর্তীকে ‘তত্ত্বাবধায়কে’ রূপ দেয়ার দাবি প্রধান উপদেষ্টাকে জানালো বিএনপি

ছবি

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ছবি

ঢাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ১৩১

বগুড়ায় সারজিস আলমের গাড়িবহরে ককটেল হামলা

ছবি

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপি মহাসচিবের আহ্বান

ছবি

বগুড়ায় এনসিপির সমন্বয় সভাস্থলে ককটেল হামলা, দুইটি বিস্ফোরণ

ছবি

নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা: নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত পরিবেশ আছে ইসি সচিব

ছবি

আওয়ামী লীগের আগে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া উচিত : বুলু

ছবি

ফরিদপুরে সংঘর্ষের অভিযোগে মুখোমুখি এ কে আজাদ ও নায়াব ইউসুফ

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে উদ্যোগ নেবে বিএনপি: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আট দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব

নোয়াখালীর সদরের নেওয়াজ পুরে -বিএনপি জামাত সংঘর্ষ,আহত অন্তত ৪০ জন

নির্বাচন কমিশন ‘চার ভাগ’ হয়ে গেছে, গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা ও দুর্নীতিমুক্ত ইসি না হলে ভোটে যাবে না এনসিপি

জুলাই সনদে সইয়ের পরও রাজপথে: ব্যাখ্যা জামায়াতের

জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ রাজনৈতিক প্রতারণা: নাহিদ ইসলাম

শাহজালালে অগ্নিকাণ্ড: জনগণ ‘পরিকল্পিত’ বলে বিশ্বাস করছে বললেন ফখরুল

জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়ায় সই করেনি এনসিপি

ছবি

সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ নাহিদ ইসলাম, ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান এনসিপির

ছবি

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

জুলাই সনদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের শুরু: ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ: বাস্তবায়নে দেরি হলে রাজনৈতিক সংকটের ঝুঁকি দেখছে জামায়াত

ছবি

কিছু দল ‘ঐকমত্যের’ নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি ‘কাগজে’ সই করছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

জুলাই সনদে সই না করার সিদ্ধান্ত এনসিপির

ছবি

আমলাতন্ত্র চলবে না, প্রয়োজনে ডিসি অফিস ঘেরাও করবেন: মির্জা ফখরুল

জুলাই সনদ সইয়ে অনিশ্চয়তা: সিপিবি, এনসিপি, গণফোরামের আপত্তি

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস

ছবি

সংশোধিত খসড়া না পেলে জুলাই সনদে সই করবে না বাম ধারার চার দল

ছবি

জাতির কাছে সব কিছু স্পষ্ট করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আহ্বান এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেনের

ছবি

‘প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভারসাম্য নষ্ট হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়বে’ — প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সতর্কবার্তা

ছবি

সৈয়দপুরে সিপিবির পথসভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তয়নে তারেক মুন্সীর গণসংযোগ

ছবি

তফসিলের আগেই গণভোটের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

ছবি

জামায়াতের নভেম্বরে গণভোট দাবি ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান কি না’: প্রশ্ন রিজভীর

tab

একে একে নিবন্ধন পাচ্ছে আগে বাতিল দলগুলো

ফয়েজ আহমেদ তুষার

মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আবেদন করে ব্যর্থ হওয়া দলগুলো একে একে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পাচ্ছে। গত ১২ দিনে এরকম তিনটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ইসির নিবন্ধন পেয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)। একই দিনে নিবন্ধন পেয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। সোমবার এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে। প্রাথমিক বাছাই শেষে যে ১২ দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন তার মধ্যে এই তিনটি দলও ছিল। তবে দলগুলো নিবন্ধন পায়নি।

ওই সময় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শুধু দুই দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দেয়। নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন দেয়ায় সমালোচনাও হয় সে সময়।

আটকে গেছেন রেজা কিবরিয়া
ডাকসুর ভিবি নুরের গণ অধিকার পরিষদ-জেওপি ইসির নিবন্ধন পেলেও হাইকোর্টে মামলা থাকায় আটকে গেছে রেজা কিবরিয়ার গণ অধিকার পরিষদের নিবন্ধন। ইসি নিবন্ধন না দেয়ায় রেজা কিবরিয়া এই মামলা (রিট আবেদন) করেছিলেন।

এক সময় গণ অধিকার পরিষদ নামে একটিই দল ছিল; নেতৃত্বে ছিলেন নুর ও রেজা কিবরিয়া। ভেঙে দুই দল হলেও তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল আবার এক হওয়ার।

১ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই দাবি তুলে ধরেন দলটির দুই পক্ষের তৃণমূল কর্মীরা।

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের বিরোধের কারণে বিভক্ত গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষকে এক হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তারা। এক না হলে দল দুটি ছোট ছোট দোকানে রূপ নেবে বলেও সতর্ক করেন তারা। দাবি মানা না হলে তারা গণ-অবস্থানসহ কর্মসূচির পালন করবেন বলেও জানান।

দুই দিনের মাথায় নুরের দলকে নিবন্ধন দিয়ে দেয়ায় রেজার সঙ্গে পুনরায় এক হওয়ার প্রত্যাশা শেষ হয়ে যায়।

‘চাপ দিয়ে’ নিবন্ধন
রেজা কিবরিয়ার অংশের অভিযোগ, আদালত থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ইসি অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। তবে নুরের দলকে নিবন্ধন দিতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে ইসির ওপর চাপ ছিল।

রেজার অংশের এক নেতার অভিযোগ ‘নুর নিবন্ধন নিতে আইন উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়েছেন।’

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ থেকে জানা যায়, গণ অধিকার পরিষদের এককর্মী অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে বলছেন, যেহেতু আফিস নজরুলের নাম করে নুর ইসিকে চাপ দিচ্ছে, তাই তিনি (আসিফ নজরুল) যেন ইসিকে ফোন করে বলে দেন, নুর বা রেজা কিবরিয়া কারো জন্য তার কোন সুপারিশ নেই।

ফোনালাপে আইন উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, তিনি যেহেতু এখন সরকারি দায়িত্বে আছেন, এ সংক্রান্ত শপথ নিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে ইসিকে ফোন করতে পারেন না।

আইন উপদেষ্টা ওই কর্মীকে উপদেশ আকারে বলেন, ওই কর্মী যেন ইসিকে এই ফোন রেকর্ড (কল লিস্ট) দেখায় এবং বলে ‘আসিফ নজরুল স্যার বলেছেন কারো জন্য তার কোন সুপারিশ নেই।’

ছাত্রলীগ থেকে ডাকসু
এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসা নুরুল হক নুর ২০১৭ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমে নিজ সংগঠনের বিরাগভাজন হন। ২০১৮ সালে সরকার প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে কোটা তুলে দেয়া পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন করে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন নুর।

এরপর তিনি কোটা সংস্কারের জন্য গঠন করা কমিটিকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলে রূপ দেন। ২০২১ সালে গঠন করেন ‘গণ অধিকার পরিষদ’।

নুর বনাম রেজা
একপর্যায়ে দলের আহ্বায়ক হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। তবে দল গঠনের দুই বছর হওয়ার আগেই শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের মধ্যে বিরোধে দেখা দেয়। গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব ও অপসারণের ঘটনা ঘটে।

২০২৩ সালের ১ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করেন। এর ৯ দিন পর ১০ জুলাই দলের জাতীয় কাউন্সিলে নুরুল হক সভাপতি ও মুহাম্মদ রাশেদ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্য পক্ষ এই কাউন্সিল মানেনি।

ইসির যাচাই কমিটি
ইসির তথ্য যাচাই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দুটি পৃথক দল। একটি গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি) অন্যটি গণ অধিকার পরিষদ। নুরের দল পূর্বে যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি পরবর্তিতে সেগুলো পূরণ করায় তার দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা থাকায় রেজা কিবরিয়ার দলের বিষয়ে আদলত সিদ্ধান্ত নেবে।

রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করার ক্ষেত্রে গঠণতন্ত্র যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলে ইসির ওই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণফোরাম থেকে গণ অধিকার
বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়ার রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গিয়ে রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট করেছিলেন।

ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রেজা। তবে দ্বন্দ্বের কারণে সেই দল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। পরে তিনি নুরের সঙ্গে মিলে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন।

নিবন্ধন পেতে নুরের দলও হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে’ গত ২৮ আগস্ট দলটি আল্টিমেটাম দেয়। ২ সেপ্টেম্বর দলটিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।

দলের নিবন্ধন না পেয়ে বিভিন্ন বৈঠক ও সভায় ইসির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন নুর। গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিবন্ধনের আবেদন পুনর্বিবেচনা চায় দলটি। ‘সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে’ গত ২৮ আগস্ট দলটি আল্টিমেটাম দেয়ার পর ২ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।

নুরের দলকে দ্রুত নিবন্ধন দিতে ইসিকে বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

ইসির প্রজ্ঞাপন
সোমবার ইসি সচিব শফিউল আজিমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী ‘গণ অধিকার পরিষদ-জিওপি’কে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে। এই দলের জন্য ‘ট্রাক’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। দলের নিবন্ধন নম্বর ৫১।

সোমবার মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্যও ইসির নিবন্ধন পেয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে ইসি জানায়, এই দলের জন্য ‘কেটলি’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। দলের নিবন্ধন নম্বর ৫২।

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির নিবন্ধন নম্বর-৫০, বরাদ্দকৃত প্রতীক ‘ঈগল’।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে। প্রাথমিক বাছাই শেষে যে ১২ দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন তারমধ্যে এই তিনটি দলও ছিল। তবে দলগুলো নিবন্ধন পায়নি।

ওই সময় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শুধু দুই দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দেয়।

নিবন্ধিত দল ৪৭ট
এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। নিবন্ধন না থাকলে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নিবন্ধন পেতে জুড়ে দেয়া হয় বেশকিছু শর্ত; যা প্রতিপালন করা নামসর্বস্ব ছোট দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়।

শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়া এবং আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে পরবর্তীতে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

এখন ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৭টি।

নিবন্ধন ফিরে পেতে পুনরায় উচ্চ আদলতের দ্বারস্থ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শুনানির জন্য আগামী ২১ অক্টোবর তারিখ দিয়েছে আদালত।

back to top