রাজনৈতিক দল গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে ‘জাতীয়’ নাগরিক কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা। তবে, ভবিষ্যতে এই প্লাটফর্ম রাজনৈতিক দল হবে কি না তা অনেক কিছু ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে এই নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্মের ৫৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবি পার্টির সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে এবি পার্টি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য। সংগঠনের সদস্য সচিব গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন। তিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন। সংগঠনটির শ্লেগান ‘সংহতি-প্রতিরোধ-পুনর্গঠন’।
প্লাটফর্ম হিসেবে প্রাথমিক যাত্রা শুরু করলেও এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে না এই সংগঠন। সংগঠনটি বলছে, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনা থাকা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে এখনও ‘স্বৈরাচারী ধারা ও অব্যবস্থাপনা’ রয়ে গেছে। যাত্রা শুরুর পর ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও মহানগরে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম কাজ হবে সংস্কার।
মূলত প্লাটফর্মটিতে থাকছে তরুণ ও যুব সমাজের প্রতিনিধিরা। যাদের বয়স ২৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে তারাই প্রাধান্য পেয়েছে।
সদস্য সচিব সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম, তবে এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করছি না। দল হিসেবে কার্যক্রম কবে কিংবা কিভাবে হবে সেটা ভবিষ্যতের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’
বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সে সময় নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করলেও তা সফলতার মূখও দেখেনি।
এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা এই প্লাটফর্মটি আগে সংবিধান পরিবর্তন করে রাজনৈতিক কাঠামোতে আগে পরিবর্তন আনতে চায়। এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরুর দিকে নজর দিতে চায় তারা।
কমিটি ঘোষণা করে আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা চাই এই রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে। আমরা চাই জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণ করতে।’
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্ট গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও প্রতিরোধের চেতনা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার শক্তি। এই নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে হবে।’
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির কাজ শুরু করার কথা তুলে ধরে সামান্থা শারমিন বলেন, ‘অচিরেই সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি এই আহ্বায়ক কমিটির আটটি প্রাথমিক কিছু কাজ ঘোষণা করেন। এগুলো হলো : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা; বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাব তৈরি করা এবং সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, এই প্লাটফরমে যারা থাকছে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল হিসেবে চালু হওয়ার পর সবাই রাজনীতি করবে এমন না। কেউ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে যাবে, কেউ কেউ আবার সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে এই প্লাটফর্ম থেকেই।
সদস্য সচিব বলেন, ‘পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান আমরা দেখবো, তারপর এই নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তবে, আমরা এখনও কোনো অরাজনৈতিক সংগঠন না।’
তারা বলছেন, ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদ বন্ধ করতেই তারা অগ্রসর হচ্ছে। এর শেষটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমেই হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্য হলে, আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আবদুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল- মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আবদুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, তানজিল মাহমুদ, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির, আকরাম হুসেইন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হয়। শুরুতে সমন্বয়ক কমিটি ছিল ৬৫ জনের। পরে আগস্টের শুরুতে যখন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় তখন এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয় ১৫৮ সদস্য নিয়ে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যে সরকার গঠন হয়েছে সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও রয়েছে এই সমন্বয়কদের দুই জন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ঘোষণার পর কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় তাদের কার্যক্রম। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারে যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয় গত আটই আগস্ট, সেই কমিটি জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রাজনৈতিক দল গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে ‘জাতীয়’ নাগরিক কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা। তবে, ভবিষ্যতে এই প্লাটফর্ম রাজনৈতিক দল হবে কি না তা অনেক কিছু ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে এই নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্মের ৫৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবি পার্টির সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে এবি পার্টি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য। সংগঠনের সদস্য সচিব গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন। তিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন। সংগঠনটির শ্লেগান ‘সংহতি-প্রতিরোধ-পুনর্গঠন’।
প্লাটফর্ম হিসেবে প্রাথমিক যাত্রা শুরু করলেও এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে না এই সংগঠন। সংগঠনটি বলছে, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনা থাকা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে এখনও ‘স্বৈরাচারী ধারা ও অব্যবস্থাপনা’ রয়ে গেছে। যাত্রা শুরুর পর ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও মহানগরে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম কাজ হবে সংস্কার।
মূলত প্লাটফর্মটিতে থাকছে তরুণ ও যুব সমাজের প্রতিনিধিরা। যাদের বয়স ২৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে তারাই প্রাধান্য পেয়েছে।
সদস্য সচিব সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম, তবে এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করছি না। দল হিসেবে কার্যক্রম কবে কিংবা কিভাবে হবে সেটা ভবিষ্যতের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’
বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সে সময় নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করলেও তা সফলতার মূখও দেখেনি।
এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা এই প্লাটফর্মটি আগে সংবিধান পরিবর্তন করে রাজনৈতিক কাঠামোতে আগে পরিবর্তন আনতে চায়। এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরুর দিকে নজর দিতে চায় তারা।
কমিটি ঘোষণা করে আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা চাই এই রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে। আমরা চাই জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণ করতে।’
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্ট গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও প্রতিরোধের চেতনা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার শক্তি। এই নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে হবে।’
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির কাজ শুরু করার কথা তুলে ধরে সামান্থা শারমিন বলেন, ‘অচিরেই সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি এই আহ্বায়ক কমিটির আটটি প্রাথমিক কিছু কাজ ঘোষণা করেন। এগুলো হলো : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা; বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাব তৈরি করা এবং সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, এই প্লাটফরমে যারা থাকছে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল হিসেবে চালু হওয়ার পর সবাই রাজনীতি করবে এমন না। কেউ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে যাবে, কেউ কেউ আবার সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে এই প্লাটফর্ম থেকেই।
সদস্য সচিব বলেন, ‘পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান আমরা দেখবো, তারপর এই নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তবে, আমরা এখনও কোনো অরাজনৈতিক সংগঠন না।’
তারা বলছেন, ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদ বন্ধ করতেই তারা অগ্রসর হচ্ছে। এর শেষটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমেই হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্য হলে, আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আবদুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল- মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আবদুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, তানজিল মাহমুদ, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির, আকরাম হুসেইন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হয়। শুরুতে সমন্বয়ক কমিটি ছিল ৬৫ জনের। পরে আগস্টের শুরুতে যখন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় তখন এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয় ১৫৮ সদস্য নিয়ে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যে সরকার গঠন হয়েছে সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও রয়েছে এই সমন্বয়কদের দুই জন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ঘোষণার পর কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় তাদের কার্যক্রম। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারে যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয় গত আটই আগস্ট, সেই কমিটি জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।