alt

রাজনীতি

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দল গঠন করলে জনগণ হতাশ হবে: তারেক রহমান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণেরা নতুন পথ রচনা করবেন। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথ নয়। পথটি অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই সমাবেশে যুক্ত হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রতি ইঙ্গিত করে সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণেরা রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এসব তরুণই গত দেড় দশকে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এসব তরুণের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেন, অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেওয়া হলে তা জনগণকে হতাশ করবে। কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য–মন্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয়, সেটিও জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হবে।

সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি

সংবিধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি বলেও মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, পলাতক যে স্বৈরাচার, তারা তাদের ইচ্ছেমতো সেটিকে কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে প্রায় দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছে। ঠিক একইভাবে নির্বাচন কমিশন কিংবা দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা একদম অকার্যকর করে দিয়েছিল। দুদক সম্পর্কে তারা নিজেরাই দন্তহীন বাঘ বলেছে।’

নির্বাচন কমিশন, দুদক এবং সংবিধানসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচিও একই রকম বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে দু-একটি মৌলিক বিষয় ছাড়া, প্রক্রিয়াগত বিষয় ছাড়া তেমন কোনো ভিন্নমত বা বিরোধ নেই। সংস্কার এবং নির্বাচন—দুটিরই পক্ষে বিএনপি, দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন—কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন তুলে কূটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভুল–বোঝাবুঝি কিংবা অযথা কূটতর্ক সময়ের অপচয় বলে মনে করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মেনে নিতে পারে, তাহলে যাঁরা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজের অজান্তে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ‘সংসার’

দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অপর দিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছেও সংসার টেকানো অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

তারেক রহমান বলেন, কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়; কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টের আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায়; কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব; জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় এ বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন প্রশ্ন অন্তর্বর্তী সরকার এত দিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।’

রাজনীতি শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া জরুরি

কোনো বিষয়কেই রাজনীতির বাইরে রাখা সমীচীন হবে না বলে মনে করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে আমরা একটা কথা প্রায়ই বলি যে এ বিষয়টাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে, ওই বিষয়টিকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। আমি এমন ধারণার সঙ্গে নীতিগতভাবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করি। কারণ, আমরা যা–ই বলি না কেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই সবকিছু পরিচালিত হয়।’

এই যুক্তি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘সুতরাং কোনো কিছুকে শুদ্ধ রাখার জন্য রাজনীতির বাইরে রাখা বা রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা—এটি না করে বরং রাজনীতিটাই আমাদের শুদ্ধ করা প্রয়োজন। রাজনীতিটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা কমিশন করবে বিএনপি

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা কমিশন গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা কমিশন গঠন করবে। নৈতিকতা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে জীবননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করবে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এই শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকেরা।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের হাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন: মঈন খান

ছবি

মৌলিক সংস্কার না হলে স্বৈরাচারী কাঠামো বিরাজমান থাকবে: বদিউল মজুমদার

ছবি

চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই বিএনপি কর্মীকে কারাদণ্ড, প্রতিবাদে থানা ভাঙচুর

ছবি

বিভাগীয় শহরে হাই কোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

ছবি

‘তড়িঘড়ি’ টেলিকম নীতিমালা ঘোষণার সিদ্ধান্তে বিএনপির উদ্বেগ

ছবি

জুলাই পদযাত্রার ভ্যানে ‘হাতবোমা’ বিস্ফোরণের অভিযোগ, এনসিপির বিক্ষোভ

ছবি

দেশের প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া যখন ডাক দিবেন মানুষ রাজপথ প্রকম্পিত করে ছুটে আসবে : মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন

ছবি

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন: বিভক্তি ও অস্থিরতার আশঙ্কায় তারেক রহমান

ছবি

গুম-খুনের তালিকা তৈরির তাগিদ, আন্দোলনে নিহতদের পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব খালেদা জিয়ার

ছবি

নির্বাচনের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: বিএনপির আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি থাকবেন খালেদা-তারেক

ছবি

জুলাই সনদ আদায় করেই ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

ছবি

আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু

ছবি

রংপুরের পথে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

ছবি

‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা ২০২৫’ প্রকাশ, বাদ ডিসি-এসপি, ইভিএম সংশ্লিষ্ট ধারা

ছবি

নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক আরও গভীর হবে—চীন সফর শেষে বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পূরণ সম্ভব’: এনসিপি আহ্বায়ক

ছবি

একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: মির্জা ফখরুল

ছবি

“নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার” — জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

ছবি

মুরাদনগরে হিন্দু নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল বিএনপি

ছবি

নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এখনো একমত নয় সব রাজনৈতিক দল

ছবি

নির্বাচনের সময় বিলম্বে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

আনুপাতিক নির্বাচন দেশের উপযোগী নয়: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, চিরস্থায়ী নয়’— বললেন বিএনপি নেতা

ছবি

সংসদের পিআর পদ্ধতি ও আল্লাহর ওপর আস্থার দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

আলোচনা, দোয়া, গণমিছিলসহ ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত

ছবি

সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

ছবি

ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র: হেফাজত

ছবি

হাসনাতের ভিডিও পোস্ট ঘিরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, দুদকের পাল্টা সতর্কতা

ছবি

বটবাহিনীর সহযোগিতায় মুনাফেকি রাজনীতি করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্রদল সভাপতি

ছবি

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তে দুদক

ছবি

স্বৈরাচার ঠেকাতে দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: বিএনপি নেতা

ছবি

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কর্মী সভায় মারধর: এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর কমিটি স্থগিত

ছবি

‘চা-নাস্তার জন্য এক লাখ টাকা’ দাবি: মাহমুদা মিতুর অভিযোগে দুদকের প্রতিবাদ

tab

রাজনীতি

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দল গঠন করলে জনগণ হতাশ হবে: তারেক রহমান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণেরা নতুন পথ রচনা করবেন। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথ নয়। পথটি অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই সমাবেশে যুক্ত হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রতি ইঙ্গিত করে সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণেরা রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এসব তরুণই গত দেড় দশকে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এসব তরুণের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেন, অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেওয়া হলে তা জনগণকে হতাশ করবে। কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য–মন্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয়, সেটিও জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হবে।

সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি

সংবিধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি বলেও মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, পলাতক যে স্বৈরাচার, তারা তাদের ইচ্ছেমতো সেটিকে কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে প্রায় দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছে। ঠিক একইভাবে নির্বাচন কমিশন কিংবা দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা একদম অকার্যকর করে দিয়েছিল। দুদক সম্পর্কে তারা নিজেরাই দন্তহীন বাঘ বলেছে।’

নির্বাচন কমিশন, দুদক এবং সংবিধানসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচিও একই রকম বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে দু-একটি মৌলিক বিষয় ছাড়া, প্রক্রিয়াগত বিষয় ছাড়া তেমন কোনো ভিন্নমত বা বিরোধ নেই। সংস্কার এবং নির্বাচন—দুটিরই পক্ষে বিএনপি, দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন—কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন তুলে কূটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভুল–বোঝাবুঝি কিংবা অযথা কূটতর্ক সময়ের অপচয় বলে মনে করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মেনে নিতে পারে, তাহলে যাঁরা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজের অজান্তে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ‘সংসার’

দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অপর দিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছেও সংসার টেকানো অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

তারেক রহমান বলেন, কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়; কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টের আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায়; কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব; জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় এ বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন প্রশ্ন অন্তর্বর্তী সরকার এত দিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।’

রাজনীতি শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া জরুরি

কোনো বিষয়কেই রাজনীতির বাইরে রাখা সমীচীন হবে না বলে মনে করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে আমরা একটা কথা প্রায়ই বলি যে এ বিষয়টাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে, ওই বিষয়টিকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। আমি এমন ধারণার সঙ্গে নীতিগতভাবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করি। কারণ, আমরা যা–ই বলি না কেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই সবকিছু পরিচালিত হয়।’

এই যুক্তি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘সুতরাং কোনো কিছুকে শুদ্ধ রাখার জন্য রাজনীতির বাইরে রাখা বা রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা—এটি না করে বরং রাজনীতিটাই আমাদের শুদ্ধ করা প্রয়োজন। রাজনীতিটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা কমিশন করবে বিএনপি

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা কমিশন গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা কমিশন গঠন করবে। নৈতিকতা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে জীবননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করবে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এই শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকেরা।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন।

back to top